কে আপনি পর্ব-০৭

0
2939

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

শ্রেয়া মিষ্টি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল আলিফের দিকে। আলিফের এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে মুচকি হাসি দিয়ে বলল “এখন আপনার শরীরটা কেমন!”

আলিফ মুচকি হাসি দিয়ে গোলাপ ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে বলল “তুমি আমার পাশে আছো মানেই আমি বিন্দাস আছি বউপাখি। এখন বাইকে উঠে বসো।”

শ্রেয়াও বাইকে উঠে বসলো। আলিফ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “আমাকে ধরে বসো।”

শ্রেয়া কাঁপাকাঁপা হাতে আলিফের কাধে হাত রাখতে গিয়েও সরিয়ে নিলো। আলিফ মুচকি হেসে শ্রেয়ার হাত বাম হাত দিয়ে নিজের সঙ্গে আকড়ে ধরলো। আর অন‍্য হাত দিয়ে বাইক চালাতে লাগলো। বাইক বাসা বাদে অন‍্যরাস্তায় আসতে দেখে কপাল কুচকে গেল শ্রেয়ার।

আলিফ বলে উঠলো “আমরা আজকে রাত নয়টার বাসে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। এখন বাজে আটটা। তাই ভেবেছি বাসায় না গিয়ে সামনের রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার খেয়ে নিয়ে তারপর বাসস্ট্যান্ড যাবো বুঝলে।”

শ্রেয়ার সন্দেহে চোখমুখ আরো কুচকে গেল। সে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে আলিফকে উদ্দেশ্যে করে বলল “কিন্তু হুট করে এমন করে যাওয়ার মানে বুঝতে পারলাম না। আর আমি তো আজকেই কোচিং শুরু করলাম। এরকম করে পড়াশোনা মিস করা কি ঠিক হবে। আপনিই বলুন।”

আলিফ বলল “আমি রেদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছি তুমি কভার করে নিতে পারবে। সমস্যা হবে না কোনো।”

শ্রেয়া বলল “কিন্তু”

আলিফ বাইক থামিয়ে শ্রেয়ার দিকে ঘুরে ঠোঁট উল্টে করুন চেহারা করে বলল “আমি তোমার একটা মাত্র বর। আমার সঙ্গে তুমি ঘুরতে যাবে না বলো। আমার এই ইচ্ছে পূরণ করবেনা বলো।”

আলিফের এমন চেহারা দেখে ফিক করে হেসে দেয় শ্রেয়া। আলিফের হাত ধরে ওকে নিয়ে শ্রেয়া মুচকি হাসে। আলিফ ও শ্রেয়ার মুচকি হাসি দেখে বুঝে যায়। ওরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্ট‍্যান্ডে ওরা অপেক্ষা করছিল তখন একটা ছেলে ওদের কাছে আছে। শ্রেয়া কপাল কুচকে সেই ছেলের দিকে তাকায়। আলিফ তাকে বাইকে চাবি দিয়ে বলল “বাইক তুই নিয়ে যাহ।”

শ্রেয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় আলিফের দিকে। আলিফ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “ও আমার ফ্রেন্ড ও আমাদের বাসায় রেখে আসবে বাইক।”

শ্রেয়া শুধু ওও বলে তাকিয়ে থাকে সেই ছেলেটির দিকে। আলিফ তাড়া দিয়ে শ্রেয়ার হাত ধরে বাসে উঠে পরে। শ্রেয়ার কেন যেন মনে হচ্ছে কোনো ঘাবলা আছে। সে আলিফকে লুকিয়ে মাহিনকে মেসেজ দেয় যে সে চট্টগ্রাম যাচ্ছে। পরে ফোন দিয়ে কথা বলবে বলেও জানিয়ে দেয়।

আলিফ শ্রেয়া বাসের সিটে দুইজন পাশাপাশি বসে আছে। শ্রেয়ার বাসে খারাপ লাগে। সে আলতো করে মাথা রাখে আলিফের বুকে। আলিফ বাসের লাইটটা অফ করে দেয়। আলতো হাতে সে শ্রেয়ার নেকাব সরিয়ে দেয়। আর শ্রেয়াকে আগলে নেয় নিজের বুকের মাঝে। শ্রেয়া ক্লান্ত থাকায় আর খারাপ লাগায় সে ঘুমিয়ে যায়। আলিফ আলতো হাতে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

——————————-

কেটে গেছে দুইদিন। ভালোই কাটছে শ্রেয়ার দিন। শ্রেয়া বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। এতোদিন তো তার মন মতোই চলছিল কেস। কিন্তু মাহিন ফোন করায় কিছু বুঝতে পারছে না শ্রেয়া। মাহিনের কথা অনুযায়ী কালকে রাতে মাফিয়া কিং আহমেদ শাওন চৌধুরীর এর সঙ্গে তৌফিকের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। কোনো বড় ডিল হয়। কিন্তু কাল রাতে তো আলিফ ওর সঙ্গেই ছিল। যদি আলিফ শাওনের ডান হাতও হয় তাহলেই তো তার ওখানে থাকার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। আর আলিফ তো ছিল তার সঙ্গে চট্টগ্রাম। সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়ার।

শ্রেয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটে পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে। আলিফ শ্রেয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বলল “আমার বউপাখি এতো কি ভাবে বলো তো। হানিমুনে এসে কই বরকে নিয়ে চিল করবে তা না তুমি অন‍্য চিন্তা নিয়ে পরে আছো। ভাবছি তোমাকে আরো আদর দিতে হবে তাহলে তুমি আমার দিকে ঘুরবে তাই না বউপাখি।”

আলিফের এমন ঠোঁটে কাটা কথায় লজ্জায় গুটিয়ে যায় শ্রেয়া। শ্রেয়াকে এমন লজ্জা পেতে দেখে হাসলো আলিফ।

আলিফ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “ভালোবাসো আমায়।”

শ্রেয়া আলিফ এমন হুট করে এমন কথায় চুপ হয়ে যায়। কি বলবে সে আলিফকে। সে কি ভালোবাসে আলিফকে। সে তো বিয়েটা করেছিল পরিস্থিতির চাপে পরে। কেসের জন‍্য হলেও তাকে বিয়ে করতে হতো। কারণ সে খবর পেয়েছে আলিফ আহমেদ শাওন চৌধুরীর গ‍্যাং এর সঙ্গে জরিত।

শ্রেয়াকে চুপ থাকতে দেখে আলিফে শ্রেয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শ্রেয়ার সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলল “আমি কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি ঠিক কতোটা তোমাকে ভালোবাসি আর কতোদিন আগে থেকে ভালোবাসি তা তুমি ধারনাও করতে পারবে না।”

শ্রেয়া বলল “মানে আমাদের বিয়ের তো মাত্র কয়েকদিন হলো। কিন্তু আপনার কথায় তা মনে হচ্ছে না।”

আলিফ গভীর দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো “তুমি বুঝবেনা। যাইহোক চলো সমুদ্রের কিনারা থেকে ঘুরে আসি।”

শ্রেয়াও রাজি হয়ে যায়। তারা রেডি হয়ে সমুদ্রের কিনারায় যায় ঘুরতে। প্রথমে শ্রেয়ার আসতে ভালো না লাগলেও এখন এসে ভালোই লাগছে তার। ঠান্ডা বাতাসে মন জুরিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ। আলিফ শ্রেয়ার হাত ধরে হাটছে। এতে শ্রেয়ার ভিতর এক অন‍্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করছে। এরকম ভালো লাগার অনুভূতির সঙ্গে নতুন পরিচিত হচ্ছে শ্রেয়া। কেন যেন আলিফকে নিয়ে এক অন‍্যরকম ভালা লাগা কাজ করে শ্রেয়ার মধ্যে। অদ্ভুত মায়া কাজ করে লোকটার উপর। আচ্ছা সে কি ভালোবাসতে শুরু করেছে আলিফকে। কিন্তু তার তো এমনটা করা যাবে না। তার উদ্দেশ্য যে ভিন্ন। কেন জানি সে পারছেনা তার লক্ষে স্থির থাকতে। বারংবার হেলে পরছে আলিফের উপর। মন বলছে আলিফকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মস্তিষ্ক যে তার ঠিক উল্টো গান গাইছে। মস্তিষ্ক যে বলছে তার ধারনা ভুল। আলিফের উপর যেটা আছে সেটা শুধুই মোহ। এর বাহিরে কিছু নাহ। কিছু হতেই পারেনা।

শ্রেয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আলিফ বলে উঠলো “বাদাম খাবে!”

শ্রেয়া আলিফের দিকে তাকালো। শ্রেয়ার উত্তরের আশা না করেই আলিফ বাদাম আলাকে ডাক দিয়ে বাদাম কিনলো। সে ঠাস করে বসে পরলো নিচে। শ্রেয়াকেও টেনে বসালো তার পাশে। আলিফ শ্রেয়াকে বাদাম ছিলে দিচ্ছে আর শ্রেয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আলিফের দিকে। আর ভাবছে আসলেই কি লোকটা অপরাধী।

আলিফ বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়তেই বলল “এরকম করে তাকিয়ে থেকো না বউপাখি আমার শরম করে কিন্তু।”

আলিফের কথা লজ্জায় পরে যায় শ্রেয়া। সে চোখ নামিয়ে নেয়। শ্রেয়ার চোখ নামানো দেখে হো হো করে হেসে উঠে আলিফ। আলিফের হাসা দেখে শ্রেয়াও হেসে দেয়। শ্রেয়া হাসতে হাসতে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়।

শ্রেয়া খিলখিল করে হাসতে হাসতে পানি নিয়ে খেলছে। আর আলিফ বসে বসেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার হাসি মাখা চেহারার দিকে। আলিফের তাকিয়ে থাকার মাঝেই শ্রেয়া দৌড়ে এসে আলিফকে ধরে টেনে পানিতে নিয়ে যায়। শ্রেয়া পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আলিফকে। আলিফ ও হাসিমুখে পানি নিয়ে খেলতে লাগলো শ্রেয়ার সঙ্গে। শ্রেয়ার অনেক ভালো লাগছে পাগলামি করতে। আজ শ্রেয়ার পাগলামি দেখে আলিফের মুখেও প্রাপ্তির হাসি ঝুলছে। আজ ওরা দুইজনই যেন একে অন‍্যকে পেয়ে নিজের একঅন‍্যরকম অনুভূতিতে ভাসছে। ভালোবাসার অনুভূতি। দুইজনই যেন বাচ্চা হয়ে গেছে। কিন্তু হুট করে এমন হবে তা কখনোই কল্পনা করে নি। শ্রেয়া যেন হতভম্ব হয়ে গেছে এমনটা হওয়াতে। সে কি বলবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। কি থেকে কি হয়ে গেলে এখনো মাথায় আসছে না তার।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে