কে আপনি পর্ব-০৯

0
2931

#কে_আপনি
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

রেজিয়া বেগম শ্রেয়ার রুমে আসতেই শ্রেয়া তার চোখের পানি মুছে নিলো। তিনি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন বলে জানালেন। তার কথা শুনে কপাল কুচকে এলো শ্রেয়ার। রেজিয়া বেগম ওকে কোনো মতে ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। বিকেলে শ্রেয়াকে নিয়ে যাবেন বলেও জানালেন।

বিকেলবেলা শ্রেয়া বসে আছে হাসপাতালের একটি চেয়ারে। সামনে থাকা ডাক্তার রাইসার কেবিনে রেজিয়া বেগম কথা বলছেন ডাক্তারের সঙ্গে। শ্রেয়াকে বাহিরেই থাকতে বলা হয়েছে। শ্রেয়া বসে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। তার তাকিয়ে থাকার মাঝেই কেউ একজন ধপ করে তার পাশে বসে। সেইদিকে শ্রেয়ার কোনো হেলদোল নেই। তার দৃষ্টি মেঝেতেই নিবদ্ধ। মাহিন বিরক্তিমাখা সুরে বলল “আরে ইয়ার হাসপাতালের অসহ‍্যকর গন্ধে বমি আসছে আমার। আর তুই কি মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস।”

শ্রেয়াকে এখনো চুপ থাকতে দেখে মাহিনের বিরক্তিকর ভাবটা যেন বেড়ে গেল। সে শ্রেয়াকে জিঙ্গাসা করলো যে সে ফুচকা খাবে নাকি। কিন্তু এতেও তার কোনো হেলদোল দেখা গেল না। এতে মাহিনের বিরক্তিকরভাব যেমন আরো এক ধাপ বেড়ে গেল তেমনি রাগ উঠলো। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুকিয়ে যাওয়া মুখে ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হলেন রেজিয়া বেগম। রেজিয়া বেগমের এমন শুকিয়ে যাওয়া চেহারা দেখেই মাহিনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কি হয়েছে ব‍্যাপার টা। তারা ওখান থেকে শ্রেয়াদের বাসায় রওনা হলো রিক্সায় করে আর মাহিন তার বাইক নিয়ে চলে গেছে তার কি যেন কাজ আছে।

রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। শ্রেয়া উদাসীনভাবে বসে আছে রেজিয়া বেগমের পাশে। হঠাৎ কিছু মনে আসতেই সে রেজিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল “আচ্ছা আম্মু আমার কি বেবি হবে!”

শ্রেয়ার এমন কথায় আতকে উঠে রেজিয়া বেগম। তিনি কি উত্তর দিবেন বুঝতে পারছেন না। শ্রেয়া ছলছল নয়নে ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকালো তার মায়ের দিকে সে বুঝে গেছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার মন খারাপ হয়ে গেল আলিফের কথা ভেবে।

রেজিয়া বেগম ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে চোখ সরালেন শ্রেয়ার দিক থেকে।

বাসায় শ্রেয়া আসতেই নুসরাত ছুটে আসে শ্রেয়ার কাছে। শ্রেয়া নুসরাতকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। শ্রেয়াকে কান্না করতে দেখে উতলা হয়ে পরলো নুসরাত।

শ্রেয়া নুসরাতকে শান্ত করে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো “জানিস আমার না বেবি হবে। আমি আম্মু হবো আর তুই খালামুণি।”

শ্রেয়ার এমন কথা শুনে নুসরাতের চোখমুখ চিকচিক করে উঠে। নুসরাত উত্তেজিত হয়ে বলল “আপুই সত্যি তোর বেবি হবে।”

শ্রেয়া মুচকি হেসে সম্মতি জানায়। এতে নুসরাত খুশিতে লাফাতে লাগলো। নুসরাতের এমন লাফানো দেখে শ্রেয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো।

রেজিয়া বেগম ছলছল নয়নে মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে তার মেয়ের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আজ মেয়েটাকে এতোদিন পরে হাসতে দেখে তিনি ইমোশনাল হয়ে পরেন। আলিফের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার মুখের হাসি নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু শ্রেয়ার ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই আবার মুখ মলিন হয়ে আসে তার।

—————————–

রাত তখন গভীর। শ্রেয়ার মনে হচ্ছে কেউ তার সামনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন যেন সে চোখ খুলতে পারছেনা। যতই চোখ খুলতে চাইছে ততই যেন চোখ বুজে আসছে তার।

হঠাৎ ঘাড়ে চিনচিন ব‍্যথা অনুভব হলো। তারপর আর কিছু মনে পরছেনা শ্রেয়ার।

————————–

চোখ পিটপিট করে শ্রেয়া চোখ খুলতেই নিজেকে একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে আবিষ্কার করে। শ্রেয়া একটা তীব্র পারফিউমের গন্ধে নাক কুচকে ফেলে। সে বুঝতে পারছে এটা তার রুম না। সে হুট করে উঠে বসে। ও উঠে বসতেই সামনে চেয়ারে কারো উপস্থিতি লক্ষ করে। শ্রেয়া কপাল কুচকে বলে উঠে “কে আপনি! আমি কোথায়! আমি এখানে কিভাবে আসলাম?কে আনলো আমায় এখানে?”

শ্রেয়ার এমন উত্তেজিত গলা শুনে সামনে থাকা ব‍্যক্তি রুমে থাকা লাইট অন করে দেয়। লোকটার মুখে মাক্স চোখে সানগ্লাস। গায়ে হুডি আর জিন্স কালো রঙের। হাতে গান দেখে কপাল কুচকে এলো শ্রেয়ার। শ্রেয়া আরো একধাপ উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সামনে থাকা লোকটি গম্ভীর সুরে বলল “কুল বেবি, তুমি তো আলিফের বউ নাটকের বউ তাই না।”

শ্রেয়া দমে গেল। সে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো সামনে থাকা লোকটির দিকে। শ্রেয়া বুঝতে পারছে না কি বলছে লোকটা।

তখনই লোকটা গম্ভীর কন্ঠে বলল “আলিফ তোকে ভালোবেসেই বিয়ে করছিলো। চারবছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও পেল না যেন। কারণ তুই তো আমাকে আই মিন আহমেদ শাওন চৌধুরীর কেসে জরিয়ে স্বার্থে বিয়ে করেছিলিস আলিফকে। ভালোইবাসিস নি ওকে। এমনকি বিয়ের পর ভালোবাসার চেষ্টা ও করিস নি তুই। আজ হয় তোর জন‍্য ছেলেটা আর নেই।”

লোকটার কথা শুনে শ্রেয়া চিৎকার করে বলে উঠে “না আমি ভালোবাসি আলিফকে। আমি ভালোবাসি আলিফকে। আর ও আমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না কখনোই না। ও আসবেই আমার কাছে আসবেই। বলতে বলতে কেঁদে দিলো শ্রেয়া।

শ্রেয়া হুট করে শাওনের পা জরিয়ে ধরে বলল “প্লীজ আলিফকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমি পারছিনা ওনাকে ছাড়া থাকতে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বুক ফেটে যাচ্ছে আমার কষ্টে। আজকের এই খুশির খবরটাও আমি ওনাকে দিতে পারছিনা। আমি ওনাকে বলতে চাই যে আমি ওনাকে অসম্ভব ভালোবাসি।” বলতে বলতেই অজ্ঞান হয়ে পরে শ্রেয়া।

শ্রেয়াকে এমন করে পরে যেতে দেখে শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শ্রেয়াকে সে কোলে তুলে বেডে শুয়ে দেয়। সে একপলক শ্রেয়ার দিকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

——————————-

রেদোয়ান আর শাওন বসে আছে বড় সুইমিংপুলের সামনে পা ভিজিয়ে। শাওনকে কোনো কিছু নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে দেখে রেদোয়ান কপাল কুচকে বলে উঠে “কিরে শাওন কি হয়েছে, কি ভাবছিস?”

শাওন গম্ভীর সুরে বলল “শ্রেয়ার জন্য আলিফের প্রয়োজন।”

রেদোয়ান বলল “কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়। আর তুই হুট করে ওকে এখানে নিয়ে আসলি কেন!”

শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “আফজাল সাহেব আর রেজিয়া বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে শ্রেয়ার বাচ্চাটাকে শেষ করে দিবে। যার খবর আমি পাই। আর তারা হয় তো নিজেদের মেয়ের ভালোর জন‍্য এইরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এতে শ্রেয়া পাগল হয়ে যেত। হিতে বিপরীত হয়ে যেত এতে। তাই আমি ওকে বাঁচাতে এখানে নিয়ে আসি।”

রেদোয়ান চিন্তিত কন্ঠে বলল “ওহ কিন্তু এখন শ্রেয়ার কি হবে।”

রেদোয়ানের কথায় শাওন এক রহস্যময় হাসি দেয়। আর কি যেন বিড়বিড় করে। রেদোয়ানকে তাড়া দিয়ে নিজের মাক্স পরে নেয় সে। কারণ রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

রেদোয়ান শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর নিজ মনেই বিরবির করে বলে উঠে “সত‍্যিই জীবন অদ্ভুত। জীবনের মোড় কখন কোন দিক দিয়ে ঘুরে যায় বলা কঠিন।”

হুট করে ফোনে কারো কল পেয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে ফোনের দিকে তাকায় রেদোয়ান। কলটা রিসিভ করে কথা বলতেই। সে দৌড় লাগায় শাওনের উদ্দেশ্যে।

চলবে….

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে