কেন আমি ডাকি তারে পর্ব-৩+৪

0
2520

কেন আমি ডাকি তারে-৩

অফিস থেকে বের হয়ে রেহান সায়রার সাথে দেখা করবে বলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। সায়রা আসতে দেরী করছে। রেহান বসে বসে নিতুর ফেসবুক প্রোফাইল স্টক করতে শুরু করল। মেয়েটা ভীষণ সুন্দর। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সৌন্দর্যটা মুখ্য বিষয় নয়, সায়রা অনেক আপডেটেড৷ ফ্যাশনেবল। নিতু তেমন নয়।
এটা ভাবতেই রেহানের মনে হলো৷ সে কেন নিতুর সাথে সায়রার তুলনা করছে। নিতু আপাতত তার স্ত্রী হলেও এটা একটা টাইম পিরিয়ডের জন্য ডিল ছাড়া আর কিছুই নয়৷ রেহান সায়রাকেই ভালোবাসে।

সায়রা এলো প্রায় এক ঘন্টা দেরী করে।
কি খবর? খুব ভালো চলছে দিনকাল?

সায়রার বাঁকা করে বলা কথা রেহানের বুঝতে অসুবিধা হয় না।

এভাবে কেন বলছ? তুমি তো জানো, আমার পক্ষে মা কে ইগনোর করা সম্ভব না। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা যেভাবে স্ট্রাগল করে আমাকে আগলে রেখেছেন, আমি তাকে কষ্ট দিতে পারব না।
বাট আই লাভ ইউ সায়রা, আমি তোমাকেও ছাড়তে পারব না।এই কৌশল করা ছাড়া আর কিছুই মাথায় এলো না। আর নিতুরও তো ফিয়ান্সে আছে।

সায়রা কিছু না বলে এদিক ওদিকে তাকালো। সত্যি বলতে রেহানের সাথে তার এ্যাফেয়ার প্রায় বছর দুই চলছে, বিয়েও করত, রেহান ভালো জব করে, অনেক টাকা পয়সাও খরচ করে। সায়রা বলতে গেলে রেহানের উপরই চলছে, দামী হ্যান্ডসেট সহ, জামাকাপড়, কসমেটিকস সবই রেহানের দেওয়া। একটু বোকা আছে ছেলেটা, মিষ্টি করে কথা বললেই খুশি! একটা চুমু খেলে তো আর কথাই নেই! একে বিয়ে করে ইচ্ছে মত চলাফেরা করলেও কিছু বলবে না। সায়রার অনেক ফ্রেন্ডস, সবার সাথে ডে নাইট আউটিংয়েও রেহান কিছু মনে করে নি। সায়রার আরো দুয়েকজন জাস্ট ফ্রেন্ড আছে৷ তারাও সায়রার লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে হেল্প করে৷ এগুলো অবশ্য রেহান জানে না।

সায়রা হঠাৎ বলল, রেহান, তুমি যাকেই বিয়ে করো৷ আমার তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।

রেহান খুশি হয়ে সায়রার হাতটা চেপে ধরল। সায়রা বলল, লুক, নেইলগুলো ভালো লাগছে না? নিউ আর্ট করিয়েছি!

হ্যা, ভীষণ সুন্দর!

ইউ নো বেবি, একটা ডায়মন্ড রিং খুব মানাবে।

রেহান বলল, চলো, আজই নিই!

রিয়েলি, সায়রার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে ঢুকে রেহান আর সায়রা রিং দেখতে লাগল৷ সায়রা পছন্দ করে নিলো একটা। দেখতে দেখতে রেহানের পছন্দ হলো আরেকটা। রেহান দুটোই নিলো।

সায়রা জিজ্ঞেস করল, এটা কার জন্য নিলে? বউ?

রেহান বলল, পছন্দ হলো, তাই নিলাম। দেখা যাক, মাকেও দিতে পারি।

সায়রা নিজের পছন্দ মত আংটি কিনেই খুশি। ডিনার করতে ঢোকা হলো না৷ সায়রার ফিরতে হলো।

আসলে পাভেলদের গ্রুপের সাথে মাওয়া যাওয়ার কথা। ওখানে একটা রিসোর্টে নাইট আউট করবে। তাই একটু দেরী হয়েছে আসতে। এটা রেহানকে বলার প্রয়োজন নেই। সায়রা চলে গেল। রেহান বাসায় ফিরে এলো।

রেহানের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল। নিতু একটু তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ করল, তুহিন কল দিবে।

রুমে ঢুকে রেহান বলল, এত তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ করলে, ঠিক মত তো খাওয়া হলো না।

নিতু বলল, অসুবিধা নেই।

হোয়াটসঅ্যাপে কল ঢুকছে দেখে নিতু সাইলেন্ট করল। ইচ্ছে করছে না রেহানের সামনে কথা বলতে।

রেহান বলল, বুঝেছি কিসের তাড়া। কিন্তু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে কথা বললে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।
আর আমি বাইরে যাচ্ছি। তুমি কথা বলো।

নিতু বলল, না ঠিক আছে, আপনি থাকুন, আমি ম্যানেজ করছি।

কানে ইয়ার ফোন গুঁজে নিতু ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল। রেহান ডিভানে শুয়ে আঁড়চোখে নিতুকে দেখতে লাগল।

নিতু মাঝে মাঝে হাসছে, ওপাশ থেকে কি বলছে কিছু শোনা যাচ্ছে না। প্রায় আধঘন্টা পরে কথা শেষ হতে হতে রেহান ঘুমিয়ে পড়ল।

নিতু উঠে দেখল, রেহান খুব এলোপাতাড়ি ভাবে শুয়েছে, মনে হচ্ছে ঘাড়ে কষ্ট হচ্ছে।

নিতু কাছে গিয়ে ডেকে বলল, শুনছেন?

রেহান ধরফর করে উঠে বসল৷ কি হয়েছে?

আপনি বিছানায় আসুন। আমার অসুবিধা হবে না।

সিওর?

হ্যা সিওর।

রেহান উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তবে একটা অপরিচিত মেয়ের শরীরের সুবাস তাকে একটু বিভ্রান্ত করে দিলো। অস্বস্তি লাগতে শুরু করল।

রেহান উঠে বসে বলল, নিতু তোমার জন্য একটা গিফট আছে।

নিতু অবাক হয়ে বলল, গিফট?

হ্যা, রেহান আংটিটা বের করে দিলো।

ডায়মন্ড ওয়াল্ডের প্যাকেট দেখে নিতু বলল৷ ডায়মন্ড! কিন্তু কি দরকার ছিল? এত দামী জিনিস! আমি তো আপনাদের গয়নাগুলোই নিব না। সব রেখে দিয়েছি আপনার আলমারিতে।

রেহান বলল, এটা ফেরত দিতে হবে না৷ এটা তুমি রেখো।

নিতু ভদ্রতবশত আংটিটা বা হাতের অনামিকায় পরে নিলো।

রেহান অবাক হয়ে দেখল৷ নেইল আর্ট করা নয়, শুধু মেহেদি দেওয়া নখে। ধবধবে ফর্সা হাতটা কী ভীষণ সুন্দর লাগছে! রেহান চোখ ফেরাতে পারছে না!

চলবে

কেন আমি ডাকি তারে -৪
-রেহান, আনু মামা তোকে আর নিতুকে দাওয়াত করেছে। শুক্রবারে।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে মা বললেন।

নিতু একটু টেনশনে পড়ল, এইখানেই ভালো আছে৷ আবার কোথাও যাওয়া লাগবে কেন!

রেহানেরও অবশ্য ইচ্ছে করছে না। বিয়েটাই তো থাকবে না, সব জায়গায় নিতুকে নিয়ে গেলে পরে সায়রাকে নিয়ে যাওয়া ঝামেলা হবে।

রেহান বলল, আমার তো কাজ আছে।

মা বললেন, থাকুক কাজ, আমরাও যাব। সবাই একসাথে গেলে ভালো লাগবে।

আনু মামা থাকে গাজীপুরের ভেতরের দিকে একটা গ্রামে। সেখানে রাস্তাঘাটের ভাংচুর অবস্থা। ওনার খুব বাগান করার শখ, তাই অনেক জমি কিনে সেখানে বাগান করেছেন। ছোট্ট একটা বাড়ি করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু নির্মান সামগ্রীর এত দাম, দুটো রুম কোনো মতে হয়েছে। না হলে ওখানে গিয়ে থাকা যেত দু চার দিন।
নিতুকে অনিচ্ছা স্বত্তেও যেতে হবে। রেহানের মা জোর করছেন। রেহান অবশ্য কিছু বলল না।

বিয়েটা নিতুর অনিচ্ছায় হলেও কেনাকাটা কম হয়নি। নিতু সুন্দর একটা জামা পড়ল, হালকা নীল রঙের। রেহান নিতুকে দেখল তাকিয়ে। মেয়েটা ভীষণ সুন্দর। কেমন যেন মন খারাপ করা সুন্দর। সায়রা অবশ্য এরকম না৷ বারবার কেন সায়রার সাথে তুলনা চলে আসে, রেহান বুঝতে পারে না৷ এই নিতু নামের পুতুল পুতুল মেয়েটা কিন্তু বউ হিসেবে বেশ ভালো হবে, ওর বয়ফেন্ডের কপাল বেশ ভালো।

নিতুর অবশ্য গিয়ে খুব একটা খারাপ লাগল না৷ যাওয়ার পথে রেহান ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিল। নিতু মাঝখানে। রেহান আড় চোখে নিতুকে দেখছিল। দেখতে ভালো লাগছে, তাই দেখেছে, এর মধ্যে কোনো কিন্তু নাই।
আলাদা বসায় নিতুর তেমন সমস্যা হয় নি। সবার সামনে অভিনয় করাটা কষ্টের।

ওখানে নেমে ভীষণ ভালো লাগল, ছায়া ঘেরা সুন্দর একটা জায়গায়৷ রেহানকে মা ডেকে বললেন, নিতুকে নিয়ে ঘুরতে। নিতুর অবশ্য রেহানের সাথে ঘুরতে ইচ্ছে করছিল না। নিতু পুকুর পাড়ে একজায়গায় বসল। রেহান একা একাই কিছুক্ষণ ঘুরল। তারপর মাছ ধরতে নেমে পড়ল।
নিতুর ইচ্ছে করছিল পুকুরে একটু নামতে কিন্তু সাহস হলো না। নতুন বউ, কেমন দেখায়, সেজন্য বললও না।
সারাদিন মোটামুটি আনন্দে কাটলেও বিপত্তি বাঁধল ফেরার সময়৷ একটা কাঠের পোল আছে, সেটা নাকি ভেঙে গেছে৷ রাতে মেরামত করে ফেলবে। তার আগে যাওয়া যাবে না৷ আনু মামার তো দুটো রুম মাত্র। কীভাবে এতজন মানুষ থাকবে৷ আনু মামা তাই নিতু আর রেহানের জন্য একটু দূরে এক বাড়িতে রাতে থাকার ব্যাবস্থা করে ফেললেন।
বাড়িতে কেউ থাকে না৷ কেয়ারটেকারকে কিছু বখশিশ দিয়ে ব্যবস্থা করতে হলো।

রাতে খাওয়ার পরে ওদের পৌঁছে দিয়ে সবাই চলে যাওয়ার পরে আবার দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি শুরু হলো। নিতু ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে, এত অপরিচিত জায়গায় রেহানের সাথে একা! কেমন একটা বিষয় হলো! স্বাভাবিক বিয়ে হলে বিষয়টা কত আনন্দের হতে পারত।

তারপর নিতু, ভয় লাগছে? – রেহান তাচ্ছিল্য করেই জানতে চাইল।

আপনার ফোনে চার্জ আছে? – নিতু কথা পাল্টে জিজ্ঞেস করল
হুম, আছে।

মোবাইল ডাটা?

হুম।

আমি একটা টেক্সট করতে পারি? আমার ফোন সুইচড অফ হয়ে গেছে।

হ্যা, নাও।

নিতু হোয়াটসঅ্যাপে তুহিনকে টেক্সট করল বড়সড় একটা।
সেন্ড করে ফোন ফিরিয়ে দিলো।

রিপ্লাই করলে ফোনটা দিয়েন একটু।

ওকে।

রেহান বলল, শুয়ে পড়া দরকার। টায়ার্ড লাগছে।

হুম।
নিতু শুয়ে পড়ল পেছন ফিরে। রেহান বলল, আমি একটু আসছি বারান্দা থেকে।

নিতু কিছু বলল না।

রেহান সায়রাকে ফোন করে কথা বলতে চাইল কিছুক্ষণ কিন্তু সায়রা পার্টিতে আছে মনে হয়। তাড়াতাড়ি করেই রেখে দিলো।

রেহান একটা সিগারেট ধরিয়ে কিছুক্ষণ টানার চেষ্টা করল, আরাম লাগছ না। বাইরে অনেক মশা।

ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল তাই।

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে