কেন আমি ডাকি তারে পর্ব-৫+৬

0
1854

কেন আমি ডাকি তারে-৫

রেহান নিতুর পাশে বসে নিতুর হাতের দিকে তাকালো৷ নিতু পেছন দিক করে শুয়ে আছে। লতানো ফর্সা হাত ভীষণ সুন্দর, হাতে সেদিনকার আংটিটা
পরে আছে৷ আর একটা স্টোনের ব্রেসলেট৷ সম্পর্কটা স্বাভাবিক হলে রেহান নিতুর হাতটা একটু ছুঁয়ে দিতো৷ রেহান অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ল।

বেশ কিছুক্ষণ পরে মনে হলো দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। নিতু উঠে বসল। রেহানেরও ঘুম ভেঙেছে।
কি হয়েছে নিতু?

একটা শব্দ পেয়েছেন?

হ্যা।

ভয় লাগছে, নিতু অস্বস্তি নিয়ে বলল।

রেহানও চিন্তিত বোধ করল, ফাঁকা বাড়িতে,নতুন বউ আছে, কেয়ারটেকারকে বিশ্বাস করা বোধহয় ঠিক হয় নি।

রেহান নিতুর কাছে এগিয়ে ওকে বলল, ভয় পেও না। আমি আছি তো। অন্তত আমি যতক্ষণ তোমার পাশে আছি, তোমার কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।

নিতুর হঠাৎ একটা পরিবর্তন হলো৷ রেহানের এই কথার মধ্যে কিছু একটা ছিল, যেটা তাকে অনেকটা ভরসা দিলো৷ মনের অজান্তে মনে হলো, রেহান খুব আপন কেউ, দূরের কেউ না।

রেহানের হাতে হাত রাখল নিতু। রেহান নিতুর হাত চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল, নিতু, শুয়ে পড়ো।

আপনি?

আমি বসে আছি,

আপনিও শুয়ে পড়ুন। দরজাটা ভালো করে বন্ধ করা আছে।

রেহান উঠে একটা চেয়ার টেনে দরজার সামনে দিয়ে দিলো। কিছুই না, তবুও বাড়তি সেফটি হিসেবে বিষয়টা নিতুর ভালো লাগল।

বালিশ দুটো ঠিক করে নিতু শুয়ে পড়ল।
রেহানও পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল আবার। নিতু একটু এগিয়ে গেল রেহানের কাছে। নিতুর শরীরের সুগন্ধে রেহান পুরুষালি অস্থিরতা অনুভব করল নিজের মধ্যে।
নিতুকে সরে যেতে বলতে পারল না। বরং ওর কিছুটা কাছে এগিয়ে এলো। রেহানের নিঃশ্বাস নিতুকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।

রেহান আর অপেক্ষা করল না। নিতুর উপরে ঝুঁকে এসে ঠোটের খুব কাছাকাছি চলে এলো। নিতু বাঁধা দিলো না।
রেহান নিচু হয়ে নিতুর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো।
নিতু রেহানকে সাড়া দিয়ে ওকে আঁকড়ে ধরল।

পরের বিষয়টা এতটাই অবস্যম্ভাবী ছিল, যেটা ওরা কেউ চায় নি, কিন্তু নিজেদের সরিয়েও নিতে পারল না।

একসময় সকাল হয়ে গেল। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে বেশ বেলা হয়ে গেল৷ রেহান ঘুম ভেঙে দেখল, নিতুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে শেষ রাতে। আস্তে আস্তে সবই মনে পড়ে যেতেই লজ্জা আর অস্বস্তিতে পড়ে গেল।

এটা কি হলো, এরকম তো কথা ছিল না। নিতু কি মনে করবে তাকে! না না, এরকম তো কথা ছিল না!

নিতু যে তাকে বাঁধা দেয় নি, সেটাও মনে পড়ল না।

নিতু, এই নিতু!

নিতু আস্তে আস্তে চোখ মেলল।

নিতু ওঠো, সকাল হয়ে গেছে।

নিতু উঠে বসল। গতরাতের কথা মনে পড়ে গেছে। নিতু সারা শরীর ব্যাথা করছে, শারিরীক বিষয়টা অভ্যস্ত না হওয়ার ফলাফল, সেটা বুঝতে পারছে খুব!

বিছানা থেকে নামতে যেতেই রেহান ধরে ফেলল।

খুব সমস্যা হচ্ছে?

নিতু তাকাতে পারল না রেহানের দিকে। যা হয়েছে, সেটা পরিবেশ পরিস্থিতিতে হয়েছে, কেউ দায়ী নয়, সেটা নিতু জানে।

নিতু আই এ্যাম সরি! প্লিজ, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি আসলে….

নিতুর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো! পুরো বিষয়টা নিয়ে কোনো অস্বস্তি হচ্ছে না, কিন্তু একটা দ্বিধা হচ্ছে। কিভাবে তুহিনকে ফেস করবে নিতু! তুহিন জানলে কি ভাববে! একা রেহানের তো দোষ নয়!

অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ মুছে, নিতু নেমে বলল, একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।

রেহান বলল, আমি হেল্প করব? কিছু লাগবে?

না৷

নিতু যতক্ষণ ওয়াশরুমে থাকল, রেহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল, এটা কেমন একটা বিষয় ঘটে গেল! সায়রার সাথে রুমডেট করা হয়েছে কিন্তু এরকম ছিল না সেটা! নিতুর সাথের সময়টা একেবারে অন্যরকম!

হোয়াটসএ্যাপে টেক্সট এসেছে, খেয়াল করা হয় নি, নিতু যে তুহিনকে টেক্সট করেছে, সে রিপ্লাই করেছে, কাজ ব্যস্ত ছিল, ওয়ার্কিং আওয়ারে নিতুকে কল না করতে বলেছে তুহিন!

ফেরার পথে নিতুর পাশে বসতে চাইল রেহান। কিন্তু নিতু আগেই উঠে একেবারে পেছনে জানালার পাশে বসে গেল। বার বার আঁড়চোখে নিতুর দিকে খেয়াল রাখতে রাখতে রেহান বাড়িতে পৌঁছে গেল!

চলবে

কেন আমি ডাকি তারে-৬
ফেরার পর থেকে রেহান রুমে ঢোকেনি। নিতু রুম থেকে বের হলো না। দুপুরের দিকে রুমে ঢুকতে হবে, কারন ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। রেহান দ্বিধা নিয়ে রুমে ঢুকল। ঢুকে দেখে নিতু ঘুমাচ্ছে। এই অবেলায় ঘুম! রেহান কাছে যাবে ভেবেও গেল না। আলমারি থেকে পোশাক নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো৷ নিতুর ফোন চার্জে৷
রেহান কাছে গিয়ে ডাকল, নিতু!

নিতু উত্তর দিলো না।

রেহান কিছু একটা মনে করে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখল, অনেক গরম, জ্বর এসেছে।

সায়রা ফোন করেছে কয়েকবার এখনো করছে৷ রেহান ফোন কেটে দিলো।

এ্যাই নিতু, প্যারাসিটামল খেয়েছ?

নিতু বলল, না।

রেহান বলল, ওঠো, লাঞ্চ করে ওষুধটা খাও।

নিতু উঠে বসার চেষ্টা করতে গেলে রেহান ওকে ধরে বসিয়ে দিলো।

নিতু বলল, আমি কিছু খাব না।

রেহান বলল, ওষুধটা খেতে কিছু খাওয়া দরকার। জ্বর কেন এলো, জার্নিতে কষ্ট হয়েছে? আগে আগে পেছনে ঢুকে বসলে!

নিতু বলল, না কষ্ট হয় নি।

আমি খাবার নিয়ে আসছি।

না ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।

না, যেতে হবে না।
বসো।

রেহান কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো।

একটু খাওয়ার চেষ্টা করো।

নিতু খেতে চেষ্টা করল কিন্তু কাজ হলো না। হরবর করে সবটা বমি করে ফেলল। রেহান ওকে ধরে ফেলল।

ঠিক আছে, ডোন্ট ওরি, আমি ক্লিন করে নিব। চলো।

রেহান একটু চিন্তিত বোধ করছে, এমন হচ্ছে কেন, কাল রাতের কোনো সাইড ইফেক্ট না তো! সায়রার তো কোনো সমস্যা হয় নি! বরং খুব এক্টিভ ছিল। নিতুর তো ইচ্ছা ছিল না। তাই কি! জিজ্ঞেস করবে না থাক, দরকার নেই!

রেহান নিতুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে সোফায় শুইয়ে দিলো৷ বেড ক্লিন করে নিতুকে নিয়ে এলো।

ঘুমাও একটু।
ওষুধ খাইয়ে বলল।

নিতু জিজ্ঞেস করল আমার টেক্সট এসেছিল?

হ্যা, তুহিন তোমাকে অফিস টাইমে কল করতে নিষেধ করেছে। এখন কথা বলবে?

না থাক।

আমি একটু বাইরে যাব। মাকে বলে যাব, তোমার পাশে থাকবে।

সমস্যা নেই। শুনুন, একটা এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ নিয়ে আসবেন।

রেহান মাথা নিচু করে বলল, আচ্ছা।

তারপর বলল, আই এ্যাম সরি নিতু। ট্রাস্ট মি৷ আমি এত খারাপ না যে তোমার দিকে খারাপ নজরে তাকাব৷ কালকের বিষয়টা আমার হাতে ছিল না।

নিতু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, বুঝতে পেরেছি।

রেহান বলল, বিষয়টা সিক্রেট রেখো। তুহিনকে বলার দরকার নেই।

নিতু বলল, আপনিও আপনার গার্ল ফ্রেন্ডকে জানিয়েন না।
না। ঠিক আছে৷ আমি নিয়ে আসব।

রেহান বাইরে গেল ঠিকই৷ কিন্তু সায়রার সাথে দেখা করতে গেল না। একটা কাজ ছিল, শেষ করে নিতুর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিসিন আর কিছু ফল নিয়ে বাসায় চলে এলো।

রেহানকে দেখে ওর মা বোনেরা রুম থেকে বের হয়ে গেল। এতক্ষণ নিতুর পাশে সবাই ছিল৷

আপনি এত তাড়াতাড়ি?

জ্বর কমেছে?

হুম!

এমনি ফিরলাম, ঘুম পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে। তুমিও আজ রাত জেগো না।

নিতু কিছু বলল না৷

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে রেহান দেখল নিতু পাশে নেই!

উঠে বসে দেখে নিতু সোফায় বসে তুহিনের সাথে কথা বলছে। কাঁদছে বোধহয়।
রেহানের খুব বিরক্ত লাগল, অসুস্থ মেয়েটা, এটা কথা বলার সময় হলো!

রেহান লাইট জ্বালতেই নিতু পেছন ফিরল।

রেহান বিরক্ত স্বরে বলল, নিতু, এখন ফোন রাখো। এসে শুয়ে পড়ো, এত রাত জেগো না। তোমার শরীরটা ভালো না। কথা পরেও বলতে পারবে।

নিতু বলল, আসছি।

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে