কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরী পর্ব-০১

0
1890

গল্পঃ কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরী
পর্বঃ সূচনা পর্ব
নিঝুম জামান

কলেজ ফেরার পথে দেখি একটা সিএনজিওয়ালা
মামা তার সিএনজি থেকে একটা ডায়েরি
রাস্তার দিকে ছুড়ে ফেললেন।ডায়েরিটা এসে
আমার পায়ের কাছে পড়ল।আমি ডায়েরিটা
হাতে নেয়ার পর সেই মামা পান খাওয়া দাঁতে
হাসি দিয়ে বললেন,

— কে জানি গাড়িতে ফেলায় গেছে খাতাটার
ভিতরে একটাও খালি পাতা নাই
তাই ফেলায় দিলাম,তুমার নিয়াও লাব হইবো
না।

ডায়েরিটা হাতে নেয়ার পর কভার পেজটা দেখে
বুঝতে পারলাম যে এটা কারো পার্সোনাল ডায়েরি।
আমি সিএনজিওয়ালা মামা দিকে মুচকি হাসি দিয়ে
ডায়েরিটা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাড়ি ফেরার পর থেকেই ডায়েরিটা পড়ার জন্য মনটা উতলা
হয়ে আছে,যদিও কারো পার্সোনাল কিছুতে হাত দেওয়া উচিত নয় তবুও। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ করে হয়ে ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম। মোটামুটি পুরনো, বিবর্ন ডায়েরিটা।
প্রথম পেজটা খুলে পড়া শুরু করলাম, সেখানে
লিখা-

“প্রিয় ডায়েরি”,

সবকথা সবাইকে বলা যায় না। গোপন কথাগুলো
মানুষ জানতে পারলে সে কথাগুলো দিয়ে যে
বড্ড কষ্ট দেয়। আবার কারো
সাথে শেয়ার করতে না পারলেও বুক ভার হয়ে
থাকে।তুমি না হয় আমার সুখ-দুঃখের সাথি
হয়ে থেকো।আজকে থেকে আমার সব
অতীতগুলোর সাক্ষী না হয় তুমিই থাকলে।
আমি জানি একমাত্র তুমিই
আছো যে কিনা আমার সব কথা জেনেও
আমার সাথে বেইমানি করবে না।

– (২৩/০৫/০৭ইং)

তারমানে এই ডায়েরিটা আজ থেকে প্রায় পনেরো
বছর আগের।তারিখের নিচে আবার খুব যত্নে
হালকা ফুল-লতা পাতার একটা নকশা
ডিজাইন করা।বুঝতে পারলাম এটা কোনো
মেয়ের খুব পছন্দের
ডায়েরি ছিল।আমিও একজন মেয়ে,আমিও
মাঝে মাঝে ডায়েরিতে কিছু লিখার
পর শেষে কোনো ফুলের ছবি আকিঁ।যাইহোক,
পরের পেজটা খুলে পড়া শুরু করলাম,

” আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার
বাবা মারা যায়। আমার ছোট ভাইটার বয়স
চার বছর।তখন থেকে মা আমাদের দুই
ভাইবোনকে বহু সংগ্রাম করে মানুষ করেন।
নানাবাড়ি থেকে বহুবার মাকে নিয়ে যেতে চাইলেও
মা নিজের আত্মসম্মানের জন্য যান নি।
তিনি কখনোই ভাই-ভাবীর সংসারের বোঝা হতে
চান নি।আবার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার
দুইচাচা আমাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা
করছিলেন। এইকারনেও মা এবাড়ি ছেড়ে যান নি।কারণ,
মা মনে করতেন একবার বাড়ির দখল ছেড়ে
দিলে আর কখনোই এবাড়িতে ঠাঁই নিতে
পারবেন না।আমার অনেক সুন্দরী ছিলেন।
গ্রামের লোভতুর মানুষের দৃষ্টি পড়ে আমার মায়ের ওপর।প্রায় রাতেই আমাদের দরজায় কে যেন
জোরে জোরে ধাক্কাতো।ঘুমানোর সময়
দেখতাম মা দা-বটি পাশে নিয়ে ঘুমাতেন
আর সবসময় একটা ধারালো ছুরি নিজের কাছে কোমরে গুজে রাখতেন।তখন দা-বটি নিয়ে
ঘুমানোর কারনটা না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝি।
এতো কষ্ট – সমস্যা উপেক্ষা করেও তিনি
এবাড়িতে থেকেছেন শুধু আমাদের সুখের
কথা ভেবে।আমাদের বাইরে বাথরুম হওয়ায়
যখন বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হত তখন মা
আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তারপর বেশ সর্তকতা অবলম্বন
করে বাইরে যেতেন।
একদিন গভীর রাতে মা বাথরুমে গেছেন বাইরে
থেকে শেকল আটকে। আর আমি
ঘুম ঘুম চোখে বসে আছি আর হাই তুলছি।হঠাৎ
দেখি শেকল খুলে হুড়মুড় করে একজন পুরুষ
লোক আমাদের ঘরে, মুখে কালো রংয়ের
মুখোস পড়া।আমি ওনাকে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে
উঠলাম। লোকটা এসে আমার মুখটা চাপা দিয়ে
ধরল।তারপর আমার মুখ, হাত – পা বেঁধে ফেলল।
আমাকে বেঁধে কালো মুখোস পড়া লোকটা
দরজার আড়ালে গিয়ে দাড়ালো।এদিকে আমার মা
আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরে আসলোমা ঘরে
ঢোকার সাথে সাথে ওই লোকটা দরজা লাগিয়ে দিলো।
আমার মা ভয় পেয়ে গেল।ওই লোকটা মায়ের
গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মা ওনার কাছ থেকে
নিজেকে ছোটানোর বিভিন্নরকম চেষ্টা করছে।
কোনোমতেই লোকটার গায়ের সঙ্গে পেরে উঠছেন
না।আমি থরথর করে কাপঁছি।আমার ছোট ভাইটাও
জেগে গেছে, ও ভীষণ ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে
ধরে আছে। এরমাঝেই মা তার কোমর থেকে
ছুড়িটা বহুকষ্টে বের করলেন তারপর মা….

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে