কাঠগোলাপ পর্ব ৯

0
1887

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব নয়

?

রাহি কুলুকুলু করে ঘামছে,কি করবে কি ভাববে কিছুই তার মাথায় এখন আসছে না,আদৌ কি সে এখান থেকে বের হতে পারবে??বাবা কত চিন্তা করছে এই টেনশনে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে,সামনে তাকিয়ে একবার দেখলো ধ্রুভের দিকে সে এখনো তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..মনের সাহস জোগাচ্ছে কিছু ত করা উচিত তার,এইভাবে চেয়ারে বেধে থাকা অবস্থায় মনে হচ্ছে ব্লাড গুলো নিঃশ্চল হয়ে যাচ্ছে।।

“প্লিজ খুলুন আমার হাতে লাগছে!!” রাহি এই দড়ি দিয়ে বাধার ব্যাথা আর সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেললো।।

“শিট!!সরি মীরা!!হাও ক্যান বি আই সো কেয়ারলেস!!ড্যাম ইট” ধ্রুভ অন্য আরেকটা চেয়ারে লাথি মেরে,হন্তদন্ত হয়ে রাহির কাছে গেলো..রাহিকে দড়ি বাধা অবস্থা থেকে মুক্ত করে দিলো কিন্তু রাহির হাত সে ছাড়ে নি..রাহির হাত নিয়ে দেখলো ফর্সা নরম হাতে দড়ির দাগ কেমনে দেবে কালচে হয়ে বসে গেছে,ধ্রুভ তাকে সোফায় বসিয়ে হাত ধরে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।।

রাহির এমন ছোয়া সহ্য করতে পারছে না,সে হাত সরাতে চাইছে কিন্তু ধ্রুভ এতোবেশি শক্ত করে ধরে আছে যে ব্যাথা জায়গাটা মনে হচ্ছে আরও ব্যাথা করে দিচ্ছে..চুমু দিতে দিতে রাহির হাত দুটো ভিজিয়ে দিলো..তার ধারনা চুমু দিলে তার মীরার ব্যাথাটা কমে যাবে।।

ধ্রুভ চুমু হাতের উপর দিতে দিতে এক সময় শান্ত হয়ে গেলো কিন্তু রাহির কাছ থেকে সে নড়লো না..রাহির দুই হাটুর উপর মাথা রেখে তার কোমর দুই হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলো,রাহির অস্বস্তি হচ্ছে অনেক..বেশি নড়াচড়া যখন রাহি শুরু করলো তখন ধ্রুভ রাহির হাটুর উপর একটা কামড় দিলো।।

“আহ!” রাহি আওয়াজ করে উঠলো।।

“ডোন্ট মুভ!আই নিড ইউ!!” ধ্রুভ এই প্রথম ফিসফিসিয়ে আওয়াজের থেকে একটু ভারী গাম্ভীর্যের সাথে কথা বললো।।

রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগে ধ্রুভ ইনসেইন করার মতো একটা কথা বললো,

“দুনিয়া মুঝে ঢুনঢি তি হে মুঝে পানে কে লিয়া”

“ওর মে মেরী মীরা কো ঢুনঢে কে লিয়া উস দুনিয়াকে লোগো কো আন্ধেরো মে ঢাকেল দে তা হু”

রাহির বুকের ভিতরটা ফুড়ুৎ করে উবে গেলো,এরকম করে বলছে কেন??এতোক্ষন ত শুধু ভয় লাগছিলো এখন মনে হচ্ছে চিল্লিয়ে গলা ফাটিয়ে কাদি।।

“জানো সেই সাত বছর থেকে তোমাকে স্বপ্নে দেখে আসছি আমি!!জাস্ট একটু করে তোমাকে ছুতে চেয়েছি কিন্তু তুমি তার আগেই আমার কাছ থেকে সরে যেতে, এইবার তোমাকে পেয়েছি!কোথাও যেতে দিব না!!” এই বলে ধ্রুভ সারা মুখ জুড়ে চুমু খেতে লাগলো,আর তার চুমু টা এতোবেশি দ্রুততম হচ্ছিলো যে রাহির সারামুখ এই চুমুর কারনে গরম হয়ে গেছে।।

“প্লিজ ছাড়েন!!আপনি যাকে খুজছেন আমি সে না আর আমি হতেও পারি না অন্য কেও..আমার নাম ইশরাতুল ইসলাম রাহি,আপনি ভুল মানুষকে এনেছেন” রাহি জোর করে ধ্রুভকে থামিয়ে দিয়ে কথাগুলো বললো।।

রাহির এমন কথা শুনে ধ্রুভের মাথায় দপ করে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলে গেলো,সে চুমু খাওয়া বন্ধ করে স্থির হয়ে গেলো..রাহির দিকে রক্তিম চোখে তাকালো।।

“আমি ভুল??নো নো নো!!আমি আমার মীরাকে চিনতে ভুল করতে পারি না” ধ্রুভ বলেই রাহির গাল দুটো দুই আঙ্গুলের মাঝে চেপে ধরলো..রাহির চোখে টুপ করে জল জমে যেয়ে নিচে গড়িয়ে পরলো।।

রাহির চোখের জল দেখে ধ্রুভের ওই রক্তিম চোখদুটো নিমিষেই ঠান্ডা বরফে পরিনত হলো,ধূসর রাঙা চোখে তার করুনা জন্মালো..সাথে সাথে গাল ছেড়ে রাহির গালে হাত বুলাতে লাগলো আর বিড়বিড় করে সরি বলতে লাগলো..রাহি যখন একটু আওয়াজ করে কাদতে লাগলো তখন ধ্রুভের হুশ আসলো।।

“প্লিজ মীরা কেদো না!!আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!!এই সাতটা বছর তোমার জন্য খাওয়া ঘুম কিছু ঠিক ছিলো না মীরা,তুমি আমার হয়ে যাও মীরা..আমার আর কিছু চাই না!!” রাহির দুই হাত ধরে বললো।।

“প্লিজ আমার বাবা টেনশন করছে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন প্লিজ!!” রাহি অনুনয়ের সাথে বললো।।

“না কোথাও যাবা না তুমি!!তুমি গেলে যদি আবার হারিয়ে যাও??তোমাকে খুজে পেতে আমি যদি আর পাই??আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য আর কষ্ট করতে পারবো না!!দেখো আমার এখানে ব্যাথা হচ্ছে খুব!!” ধ্রুভ কেমন বাচ্চাদের মতো তার বুকে রাহির হাত রেখে কথাগুলো বলছে,রাহির হাত অলরেডি কাপতে শুরু করছে..হাত সরাতে চাইলে সেখানে ধ্রুভ আরো শক্ত করে চেপে ধরে আছে।।

রাহি বুঝতে পারছে না কিছুই যে এখান থেকে সে বেরুবে কি করে,কিভাবে ছাড়া পাবে এই ধ্রুভ নামের লোকটা থেকে..ধ্রুভ তার হাটুতে মাথা রেখে কোমর ধরে নিচে বসে পরলো আবার..দেখে মনে হচ্ছে কোন ছোটবাচ্চার জিনিস হারিয়ে যাবে এইজন্য তা শক্ত করে ধরে আছে সে।।

রাহি তখন অনেক চিন্তাভাবনা করে একটা বুদ্ধি বের করলো..যেহেতু তার মানসিক সমস্যা আছে,আর এই মানসিক সমস্যার পুরোটা জুড়ে মীরা নাম..এখন সেই নামটায় ব্যবহার করবে সে।।

“শুনছেন!!একটু কথা ছিলো!!” রাহি আস্তে করে বললো।।

“উমম!!” রাহির হাটুর মাঝে মাথা রেখে ধ্রুভ আওয়াজ করলো।।

“দেখুন আপনি যেমন আপনার মীরার জন্য চিন্তা করেন ঠিক তেমনি এই মীরার জন্য ও তার বাবা চিন্তা করে,তার বাবার যদি চিন্তায় কিছু হয়ে যায় তখন মীরার যদি নিজেকে কিছু করে ফেলে” রাহি বললো।।

রাহির এমন কথা শুনে ধ্রুভ তড়িৎ গতিতে লাফ দিয়ে উঠলো..তার মীরার কিছু হয়ে যাবে বা নিজেকে কিছু করে দিবে এই কথা তার হজম হচ্ছে না..তার মীরার কিছু হলে সে কি করে বাঁঁচবে??তাৎক্ষণিকভাবে সে রাহির কাছে গেলো।।

“নো নো মীরা!!তুমি নিজেকে কিছু করতে পারো না,আমি তোমার কিছু হতে দিবো না..তুমি নিজেকে কিছু করলে সবাইকে শেষ করে দিব আমি” ধ্রুভ এইসব বলে কেমন বিড়বিড় করতে লাগলো,রাহিকে বুকের সাথে চেপে ধরলো..এমন শক্ত করে চেপে ধরছে যে নিঃশ্বাসটাও আটকে যাচ্ছে তার।।

“আমি নিজেকে কিছু করবো না কিন্তু আমার বাবার যদি আমার কারনে কিছু হয়ে যায়,আমি নিজেকে শেষ করে দিব!!আগে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন,আমি কোথাও যাবো না আপনাকে ছেড়ে” রাহি দম আটকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

“তোমাকে যদি আমার থেকে কেও কেড়ে নেয়??আমি কাওকে ছাড় দিব না মীরা” কেমন ব্যাকুল কন্ঠে বললো ধ্রুভ।।

“কেও নিবে না!!মীরাকে ভরসা করেন না?” রাহি বললো।।

“তুমি এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের সমস্তের অস্বিত্বে বিরাজমান করো!!তোমার কথা শুনবো কিন্তু তোমাকে আমার হতে হবে!” ধ্রুভ বললো।।

“আমি ত আপনারই!!” রাহি আমতাআমতা করে বললো।।

“এইভাবে নয়” ধ্রুভ বাকা হেসে বললো।।

“হাজারো নে তুম চাহা হো গা!!”

“পার মেহসুস অর পিয়ার কারনে কা হাক শিরফ মুঝে হে অর মেহি রাহুন গা !!” হিসহিসিয়ে ধ্রুভ রাহির কানের কাছে বললো এগিয়ে এসে।।

ধ্রুভের এইভাবে নয় কথাটা শুনে রাহির মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো,সে কি চাইছে??প্রশ্নের ঘুরপাক তাকে খেয়ে ফেলছে..এদিকে ধ্রুভের মতিগতি শুরু থেকেই রাহির সুবিধার ঠেকছে না তার,কি করবে তাকে নিয়ে ধ্রুভ!!ধ্রুভের এমন হাসি বুকের ভিতরের কলিজাটা কেমন লাফ দিয়ে উঠছে বারবার।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স করলে আমি দ্রুততার আর উৎসাহর সাথে পরের পর্ব দ্রুত লিখতে পারবো,রহস্য আস্তে আস্তে খুলছে বা খুলবে..ধৈর্য্য হারা হইয়েন না,তাড়াহুড়ো করলে আমি তালগোল পাকিয়ে ফেলবো..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে