কাঠগোলাপ পর্ব ৮

0
1955

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব আট

?

সবুজ কলাপাতা রঙের শাড়িতে পরা এক ভয়ার্ত মুখের নারী চেহারা চোখের সামনে জল জল করছে,মনে হচ্ছে আরেকটু বকা দিলে সে কেদে উঠবে।।

“আমার মীরা” ধ্রুভ হাতে থাকা রঙের ডিব্বাটা টেবিলের উপর রেখে বললো..সে আবারো তার মীরার ছবি আকঁতে সক্ষম হয়েছে তবে এটা এবার স্বপ্নের অদৃশ্য নারীর ছবি মীরা নয়,বাস্তবে নারীর ছবির মীরা সে একেঁছে..ডাক্তার স্মিথের কেবিন থেকে যখন হন্তদন্ত হয়ে সে রেগে বের হয়ে গেছিলো তখন এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সেই প্লেনের টিকেট অর্ডার করেছিলো কিন্থ প্লেন কোথাহ ক্র‍্যাশ হবার কারনে সপ্তাহখানেক আকাশপথে চলাচল নাকি বন্ধ থাকবে,নিজের প্রাইভেট চপারটাও নাকি নষ্ট হয়ে গেছে আজকে..তার লোক তাকে সেটা আজ জানালো..সব মিলিয়ে তার মেজাজ আরো বিগড়ে গেছে,তখন তার বাড়ি ফিরে এসে..রঙ আর তুলি নিয়ে যে ওই ঘরে গেছে আজ তিনদিন পর সে আবারো তার মীরার ছবি আঁকতে সক্ষম হয়েছে।।

“আই এম কামিং টু ইউ সুন মীরা” ধ্রুভ পোট্রের্টের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বললো,এমন ফিসফিসানি আওয়াজে ঘরটাও জানান দিলো যে “সে আসছে”।।

বেশ কয়েক সপ্তাহ পর,

রাহি আজকে ইউনিভার্সিটিতে যাবে,সেখানে যেয়ে যে পড়ার ঘাটি জমে আছে তা পূরন করবে..বিয়ে বাড়ি থেকে আসার পর সে এক প্রকার গুরুত্বর জ্বরে ভুগছিলো,তিনদিন হলো সুস্থ হয়েছে..কিন্তু তার বাবা তাকে ভার্সিটি পাঠায় নি..আজকে জোর করে অনুমতি নিয়েছে।।

এদিকে প্রান্ত কোম্পানির কাজে বিডির বাহিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে,বাহিরের কোম্পানির সাথে ডিলটা হলে তার পদোন্নতি টা আরেকটু উপরে উঠে যাবে..নিজের বেষ্ট প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য বাহিরে যেতে হলো তাকে,এদিকে ঘুরাও হবে..রাশনা তার শপিং লিস্ট একপ্রকার দিয়ে দিয়েছে প্রান্তকে,যে ওখানে যেয়ে এইসব আনতেই হবে তবে যা লিখেছে সে বেশিরভাগ চকলেট তা।।

ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে যখন ঢুকছিলো রাহি তখন অনেক বেলা হয়ে গেছিলো,অবশ্য বেলা ১২টায় একটায় ক্লাস তার..ক্লাস করতে ভিতরে যেয়ে দেখলো ধর্ম ঘাট চলছে,ছেলেমেয়েরা কি নিয়ে ধর্ম ঘাট বসিয়েছে তা জানা নাই..পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে মানুষের গিজগিজানিতে ভরে গেছে।।

হুট করে অনেক মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে,মনে হচ্ছে পুলিশের দৌড়ানি লেগেছে..এতো মানুষের দৌড়াদৌড়ির ভিড়ে রাহির কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতেই কারো বুকে বাধা পরলো..বুকে রাহির মুখ পরাতে সেই ঘরের আতরের স্মেলের মতো স্মেল এই বুক থেকে পাওয়া যাচ্ছে।।

রাহি চোখ তুলে উপরে তাকালে যাকে দেখতে পেলো সে তাতে তার সমস্ত হুশ উড়াল দিয়ে দিলো..তার সামনে আর কেও না ধ্রুভ আছে।।

ধ্রুভের বুকের উপর মীরার মাথা,চারদিকে মানুষের হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ আর এদিকে তারা দুজন..ধ্রুভের ধূসর মনির আশেপাশের সাদা অংশগুলোতে কিছুটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে..কপালে কয়েকটা ভাজ পরে আছে,এক ধ্যানে তার মীরার দিকে তাকিয়ে আছে সে।।

রাহির সারামুখ ধ্রুভের উপস্থিতিতে অবাকের অবকাশ ছেয়ে গিয়েছে..রাহি ধ্রুভের বুক থেকে তড়িঘড়ি করে সরে আসতে চাইলে,ধ্রুভ তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরছে..এরকম চেপে ধরাটা রাহির সারা শরীরের বিদ্যুৎ গতিতে ছেয়ে দিলেও সে, ধ্রুভের এরকম ভাবে ছোয়া তার কাছে যেমন কাটাঁদায়ক তেমনি ব্যাথাতুর ও।।

“কি করছেন ছাড়ুন!” রাহি ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো।।

ধ্রুভের কথাটা কানে গেলো কিনা রাহি বুঝতে পারলো না যখন দে দেখলো তার বলার পরও ধ্রুভ তাকে ছাড়ছে না তখন মুখ তুলে তার দিকে তাকালে দেখলো ঠোট তার অনবরত কাঁপছে,কিন্তু তার হাত পা লোহার মতো শক্ত করে রাহিকে ধরে আছে..রাহি কেন জানি ভয় পেতে লাগলো, এই ধ্রুভ নামের ছেলেটাকে..মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলে,ধ্রুভ তার কানের কাছে তার কাঁপা ঠোট নিয়ে যেয়ে বললো ফিসফিস করে,”শিসস”।।

এমন হিসহিসিয়ে বলাটা রাহির বুকের ভেতর কেমন যেন মনে হচ্ছে দশ কেজি ওজনের পাথর বসিয়ে দিয়েছে..ধ্রুভের এমন বিহেভিয়ারে একটু হলেও অবগত তার ফুফুর কাছ থেকে যতটুকু সে শুনেছে..তার বোধগম্য হচ্ছে না এই ধ্রুভ নামক প্রানীটিকে।।

ধ্রুভ হুট করে রাহির কোমর ছেড়ে দিলেও,তার হাতটা ছাড়লো না বরং আগের থেকেও দ্বিগুন শক্তিতে ধরলো..ধুপধাপ পা ফেলে রাহিকে ওই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,এমনভাবে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাওয়াতে রাহি তাল মিলাতে পারছিলো না হোচট খেয়ে পরে যাচ্ছিলো বারবার।।

“আরে আজব লোক আপনি??বলছি কখন থেকে ছাড়েন??প্লিজ ছাড়েন,সবার সামনে এইটা কোন ধরনের পাগলামি??” রাহি হাত ছুটাতে ছুটাতে বললো।।

এইভাবে নানান প্রশ্ন ছুড়তে লাগলো ধ্রুভের দিকে,কিন্তু ধ্রুভের কান অব্দি আদৌ রাহির কোন কথা যাচ্ছে কিনা সন্দেহ!!সে আপনমনে রাহির হাত ধরে হেটেই যাচ্ছে,যখন গাড়ির কাছে গিয়ে থামলো তারা..ধ্রুভ গাড়ির ডোর ওপেন করে রাহিকে বসতে বললে,সে চিৎকার দিয়ে বললো,

“অসম্ভব!!আমি আপনার সাথে একটা সেকেন্ডের জন্য কোথাও!!ছাড়েন!” রাহি এইবার ভয়ার্ত কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো।।

“জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট মীরা!!ডোন্ট ট্রাই টু এস্কেপ ফ্রম মি!!” ধ্রুভ এগিয়ে এসে রাহির দিকে তাকিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,বলার সাথে সাথে ধ্রুভ তার হাতের দুই আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে রাহির কাধেঁ চাপ দিলো…চাপ দেয়ার পরপরই রাহি বেহুশ হয়ে ঢলে পরলো ধ্রুভের দিকে..ধ্রুভ রাহিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,

“সাতটা বছরের শুধু স্বপ্নে না এখন থেকে এই মুহুর্ত থেকে এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছে বদ্ধ থাকবা..আমাকে বদ্ধ বা উন্মাদ তোমার যাই মনে হোক না কেন..আই ডোন্ট কেয়ার..শান্তি চাই আমি!!আর সেটার তোমার মাঝে বাস্তবে পেতে চেয়েছি,এতোদিন শুধু স্বপ্নে ছিলে..সকল কিছু উপেক্ষা আমি করতে পারবো আমি তোমার জন্য”

রাহিকে গাড়িতে ঢুকিয়ে সিট বেল্ট বেধে,রওনা দিলো..কোথায় রওনা দিলো কেও জানে না।।

এদিকে ডাক্তার স্মিথ বারবার ধ্রুভের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছেন কিন্তু বরাবরই তিনি ব্যর্থ্য..ধ্রুভের পাগলামি কতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে সেইটা উনি নিজে স্বচোক্ষে দেখেছেন..লাস্ট টাইম যেটা সে মার্ডার করে সেই বডিকে হান্ড্রেড পিস করে লন্ডনের হান্ড্রেড জায়গাতে নিজে পুতেঁ রেখেছে..তাকে মার্ডার করার কারন হলো,সফল ব্যবসায়ী হওয়ার কারনে ধ্রুভের শত্রুর অভাব ছিলো না তবে কেও কখনো কোন আঘাত করে উঠতে পারে নি কারন একে ত ধ্রুভের পাশে দুইটা গরিলার মতো গার্ড থাকতো আর দুই ধ্রুভের রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত..ক্যাথরিন নামের এক বিদেশি নারী ধ্রুভকে অফার করেছিলো বেড রিলেশনে যাওয়ার জন্য,ক্যাথরিন ছিলো লন্ডনের সবচেয়ে ইয়াংগেস্ট সুন্দরি রিচ মডেল..তাকে পাওয়ার জন্য কত ছেলে হা হয়ে থাকে সেখানে সে ধ্রুভের কাছে বিছানায় যাওয়ার জন্য পাগল ছিলো।।

ক্যাথরিন যখন ধ্রুভকে অফার করে তখন ধ্রুভ তার কথার রেসপন্স ত দূরে থাক তার দিকে চোখে তুলেই তাকায় নি,তখন সে তার মীরার ছবি দেখছিলো ফোনে যা সে পোট্রেট করেছিলো,সেটাই ফোনে তুলে রেখেছে যেন সে বাড়িতে না থাকলেও বাহিরে থেকে তার মীরার ছবি দেখতে পায়..ধ্রুভের এমন আগ্রাহ্য দেখে ক্যাহরিনের অনেক রাগ হয়,সে সেদিন কিছু না বলে চলে যায়..এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাথরিন ধ্রুভের সাথে এই নিয়ে কথা বলতে আসতো কিন্তু কখনো ধ্রুভকে পেতো না আবার কখনো ধ্রুভ তার গার্ডকে দিয়ে তাকে আটকে রাখতো..এইভাবে একদিন ধ্রুভের ইঞ্জেকশনের দিন আসে যা তাকে প্রতি চার মাস পরপর নিতে হয়,না নিলে তাকে কন্ট্রোলে রাখা যায় না…সেদিন ধ্রুভ ডাক্তার স্মিথের চেম্বারে নিজে যেয়ে মিট করতে চায়,ওখানে পৌছানোর পর সে জানতে পারলো স্মিথ একটা টিন এইজ বাচ্চার লেসন নিচ্ছে,সেই টিন এইজ বাচ্চাটা তার ফ্রেন্ডকে চাকু দিয়ে খুন করে ফেলার চেষ্টা করছিলো তাই তার বাবা মা তাকে একটা সাইকোলজিস্টের আন্ডারে নিয়ে এসেছে..স্মিথ সেখানে ব্যস্ত থাকার কারনে,ধ্রুভ উনার চেম্বারে বসে উনার ওয়েট করতে লাগলো..বসে থাকতে বিরক্ত লাগায়,সে রুমের ভিতরে পায়চারী করতে শুরু করলো..ক্যাথরিন কিভাবে জেনেছে ধ্রুভ হসপিটালে এসেছে,তাই সে সেখানেও যেয়ে উপস্থিত হলো..ক্যাথরিন চেম্বারে আসলে,ধ্রুভ পিছন ফিরে দেখলো কে আসছে,দেখে নিয়ে সে আবারো ব্যাক করলো।।

এদিকে ক্যাথরিন তার সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হতে চাইছে বারবার,এক সময় ধ্রুভ সহ্য করতে না পারে কষিয়ে দিয়েছে এক থাপ্পড় ক্যাথরিনকে..থাপ্পড় খেয়ে ক্যাথরিনের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেছে।।

“ইউ ব্লাডি বিচ সাইকো!!হাও ডেয়ার ইউ!! ” ক্যাথরিন দাঁত কিড়মিড় করে বলতে বলতে ধ্রুভের হাতের কব্জিতে তার হাতে নখ দিয়ে আচড়ে দেয়।।

আর এই নখের দাগের আচড়ানোটা ক্যাথরিনের কাল হয়ে দাড়ায়,একে ত আজকে তার ইঞ্জেকশন শরীরে পুশ করা হয় নি আবার দ্বিতীয়ত ক্যাথরিনের এমন বিহেভিয়ার।।

“সো ইউ ওয়ান্ট টু সি মাই সাইকোনেস??দ্যান সি” বলেই পাশে টেবিলে থাকা একুরিয়াম টা তুলে ক্যাথরিনের মাথায় ফেললো,ক্যাথরিন এমন আক্রমনে মাথা দিয়ে দরদর রক্ত বেরুতে লাগলো..সে সেখানে বেহুশ হয়ে পরলো।।

ক্যাথরিন যখন হুশে আসলো,তখন সে দেখলো নিজেকে একটা টেবিলে বাধা অবস্থায়..তার সামনে বসে আছে ঠোটে বাকা হাসি দিয়ে ধ্রুভ,ধ্রুভ এসে ক্যাথরিনকে কিছু করতে যাবে তার আগেই স্মিথ এসে তাকে থামিয়ে দেয়..ইঞ্জেকশন পুশ করে বেহুশ করে ফেলে।।

ক্যাথরিন সেদিন চলে গেলেও তার হিংসার উত্তাপে সে ঝলসে যাচ্ছিলো দিনের পর দিন,তার লোক ঠিক করলো ধ্রুভকে মারার জন্য..লোকটা যখন ধ্রুভকে মারতে গেলো তখন ধ্রুভের পুরোনো পাগলামি নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো,লোকটা জ্যান্ত থাকা অবস্থায় ধ্রুভ তার শরীর হান্ড্রেড পিসে কাটলো এবং নিজে ড্রাইভ করে লন্ডনে হান্ড্রেড জায়গাতে রেখে আসছে।।

ক্যাথরিন যখন শুনলো তার পাঠানো লোককে খুজে পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে,উল্টো লন্ডনের ব্রেকিং নিউজে তাকে খুজে বেড়াচ্ছে পুলিশ ফোর্স যে এই লোক গুম হওয়ার পিছনে য়ার হাত কারন ওই লোকের সাথে লাস্ট সিন ছিলো ক্যাথরিনের..সব মিলিয়ে ক্যাথরিন লন্ডন ত্যাগ করে,এখন পর্যন্ত তাকে খুজে পাওয়া যায় নি কোথায় আছে সে।।

ব্রেকিং নিউজ,

ইয়াংগেস্ট রিচ মডেল ক্যাথরিন রাতারাতি গায়েব!!

এরপর থেকে স্মিথ আরো বেশি ভয় ধ্রুভকে নিয়ে,ধ্রুভের এমন পাগলামি জান নেয়ার কারন যদি হয় কারো,তাহলে সেটা অনেক বিপ্পজনক।।

রাহি যখন চোখ খুললো তখন সে নিজেকে চেয়ারের সাথে দড়ি বাধা অবস্থায় পেলো..এমন অবস্থায় নিজেকে পেয়ে রাহির বুক দুরুদুরু করতে লাগলো,চোখটা ভীষণ জ্বালা করছে..চারপাশ অন্ধকার একটা লাইট মাথার উপরে জ্বলছে।।

“হ্যালো মাই বিউটিফুল মীরা!”ধ্রুভ পিছনে দাড়িয়ে রাহির কানে হিসহিসিয়ে বললো।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনারা না জানালে আমি বুঝতে পারবো না কেমন লিখছি..রেসপন্স দেখলে উৎসাহ আসে লিখার,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে