কাঠগোলাপ পর্ব ১৭

0
1705

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব সতেরো

?

বাংলাদেশ,
রুবেলের সামনে একটা লোক দাড়িয়ে আছে,রুবেল তার হাতে থাকা ক্লিপটা নিয়ে লোকটির দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে..লোকটি হাত দুটো তার পেটের মাঝে লোক করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।।

“আমার মেয়ের সাথে এই পাগলের ভিডিও তোমাকে কে দিয়ে পাঠালো??” রুবেল অবাক সুরে জিজ্ঞেস করলো।।

“বস পাঠাতে বলেছে??!!” লোকটি মাথা নিচু করে জবাব দিলো।।

“তোর বস কেডা?” রুবেল দাঁত কিড়মিড় করে জিজ্ঞেস করলো।।

“বসের নাম কিভাবে নি??ভিডিওর মানুষটায় আমার বস??” লোকটি উত্তর দিলো।।

“ওই পাগলের লোক তুই??বাইর হো এখুনি বাড়ি থেকে, তোর সাহস ত কম না??আমার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গেছে,আমাকে বেহুশ করে??আবার ভিডিও ক্লিপ পাঠায়?” রুবেল তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে ওই লোককে মারতে মারতে বললো।।

“স্যার??ও স্যার কি করছেন??আমার কাজ ত আমি করেছি??মাফ করে দেন আর আসবো না??শুধু বস পাঠালে আসবো!!”লোকটি কেমন মিনমিন করে জবাব দিলো।।

” তোর বসের গুষ্টি কিলাই!!”বাইর হ এখান থেকে!!”রুবেল স্যান্ডেল নিয়ে তেড়ে আসলে,তাৎক্ষণিকভাবে দৌড় দিলো লোকটি।।

রুবেল ধড়াস দিয়ে সোফায় বসে পরলো,চোখে পানি আর ঠোটে হাসি, কতক্ষন পর তার পুতুলকন্যাকে তিনি দেখতে পেলো..বুকের মাঝখান দিয়ে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।।

“আমার পুতুলকন্যাকে যে নিয়ে গেছে, সে যেন আমার পুতুলকে আজীবন সুখে যেন আল্লাহ!!তুমি আমার মেয়ের প্রতি সদয় হও!!” রুবেল দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার পুতুলকন্যার জন্য।।

লন্ডন,

রাতের খাবার সেরে নিয়ে ধ্রুভ রাহিকে উপরে নিয়ে যেয়ে তার হাতে লেডিস টাউজার আর ঢোলা টি-শার্ট ধরিয়ে দিলো,রাহি পরবে নার আর ধ্রুভ তাকে ছাড়বে না পরিয়ে।।

“লিসেন?এখন যদি যেয়ে তুমি চেঞ্জ না করো,আমি কিন্তু এক সেকেন্ড ও সময় নিব না তোমাকে চেঞ্জ করতে!!” ধ্রুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

এই কথা শুনে রাহি ঢোক গিললো,এইটুকু সময়ে ধ্রুভকে সে ভালোমতো চিনেছে..তার কথা না শুনলে সত্যি তাকে চেঞ্জ করাবে এখন..ধ্রুভের দিকে তাকালো যখন রাহি তখন দেখে ধ্রুভের চোখের ভেতরে আগুন জ্বল জ্বল করছে..রাহি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেইগুলো নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো।।

রাহির রাতের বেলা এই রকম পোষাক না পরে ঘুমালে,রাতে তার ঘুম হয় না..ধ্রুভ এই কথাটা খুব ভালো করে জানে..তার মীরার যেন কোন কষ্ট না হোক এইজন্য তার উপর এতো জোর খাটায় সে।।

রাহি অস্বস্তি ফিল করছে কারন এই টাউজার আর টি-শার্ট পরে সে তার বাবার সামনেও কখনো যায় নি,এই লোকের সামনে কিভাবে যাবে সে??কোন রকমে ওড়না গায়ে দিয়ে বেরোলে ধ্রুভ তার দিকে ঘাড় কাত করে কেমন ভ্রু কুচকে তাকায়..রাহির কাছে এসে তার কাছে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দিলো,রাহি চোখ বন্ধ করে নিজের টাউজারটা কুচকে ধরলো..ধ্রুভ রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেডে শোয়ালো,পুরো ঘরে লাইট বন্ধ করে দিয়ে হালকা ড্রিমলাইট আলো জ্বালিয়ে দিলো,রাহির উপর আধশোয়া হয়ে ভরে দিলো ধ্রুভ।।

“আমার এইভাবে ঘুম আসে না!!একটু…!” রাহি মিনমিন করে বলার আগে, ধ্রুভ তার দিকে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো।।

“অভ্যাস করো?” ধ্রুভ থম মেরে কথাগুলো বললো।।

রাহি পুরো কথা আর শেষ করতে পারলো না,ধ্রুভের কড়া আওয়াজেই রাহি নিজের কথাগুলো ঢোক গিলে খেয়ে ফেললো।।

ধ্রুভের ঘনঘন নিঃশ্বাস রাহির বুকে পরছে,বুকের মাঝখানটা কেমন গরম হয়ে গেছে ধ্রুভের নিঃশ্বাসের কারনে..ধ্রুভের এক হাত রাহির কোমরের নিচে,অপরহাত রাহির পেটের উপর শক্ত করে ধরে আছে..এক পা তার রাহির পায়ের নিচে,আরেক পা রাহির থাইয়ের উপর উঠিয়ে রেখেছে..সব দিক দিয়ে রাহি লক হয়ে আছে..একটু পরপর ধ্রুভ এমনভাবে তার মাথাটা রাহির বুকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মনে হচ্ছে ও পারে না রাহির বুকের ভিতরে ঢুকে যাক..সরতেও পারে না রাহি এমনভাবে ধ্রুভ তার হাত পা তুলে জাপটে ধরে আছে..এরকম উসখুস করতে করতে রাহি ঘুমের দেশে গভীরভাবে তলিয়ে গেলো।।

সকালবেলা,
একটা পাখির ডাকার আওয়াজের এলার্ম টিউন খুন সুন্দরভাবে বাজছে,রাহির কানে বারবার আসছে..রাহির কানে খুব সুক্ষ্ম ভাবে সেটা বাজছে..চোখ খুললো আস্তে আস্তে করে,পরক্ষনে নিজের উপর ভারী কিছু সে অনুভব করলো,বুকটা ধক করে উঠলো…রাহি চট করে সেদিকে তাকালে,ধ্রুভকে দেখতে পায় সে..ধ্রুভকে দেখে তার মনের ধুকপুকানি টা কমে আসলো,বুঝলো সে ধ্রুভের অধীনে।।

ধ্রুভের মুখে রাহির গলাতে,রাহির উপর হাত পা উঠিয়ে তার উপর অর্ধেক ভর দিয়ে রেখেছে..রাহির উপর কেমন করে সাপের মতো পেচিয়ে শুয়ে আছে,ধ্রুভের ঘুমন্ত নিঃশ্বাস বারবার রাহির মুখে বারি খাচ্ছে..ধ্রুভের মুখটা কি শান্ত লাগছে,চোখের পাপড়িগুলো কি বড়বড়।।

নিঃসন্দেহে উনি যেকোন মেয়ের স্বপ্ন পুরুষ হবে কিন্তু ভাগ্যে তার কপালেই এই পুরুষ রেখেছে..রাহি খুব চেষ্টা করছে উঠার কিন্তু পারছে না,ভারী ভারী হাত পা গুলো কেমন আটার বস্তার মতোন ভারী লাগছে।।

“উমমম!!” ধ্রুভ একটু মুখ থেকে এই আওয়াজ বের করলো,রাহির নড়াচড়া করলো..ধ্রুভের এরকম ঘুমুঘুমু আওয়াজে রাহির বুকের উপর দিয়ে মনে হচ্ছে বরফের পিন্ড ডলে দিলো।।

“ডোন্ট মুভ মীরা!!আই নিড ইউর স্মেল!!’ধ্রুভ বলেই রাহির গলাতে একটা ঘুমের মধ্যে ছোট্ট করে কুটুস করে কামড় দিয়ে,নাক দিয়ে গলার স্মেল টা টেনে ঘুম দিলো।।

রাহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে ধ্রুভের এরকম কাজে যে এখন তার শরীরের গন্ধ ও তাকে দরকার??

সকাল দশটায় উঠলো তারা,রাহিকে আগেই উঠতে হয়েছে কারন আগে গোসল করতে চায়,মাথাটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে আর শরীরটা ভারী লাগছে।।

ধ্রুভও ফ্রেশ হয়ে খালি গায়ে শর্টস পরে ঘরে আসছে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে,রাহিও জামার চেইন লাগানোর জন্য ঘরে এসেছে যে ভিজা পিঠ মুছবে যেহেতু ধ্রুভ নাই,হড়বড়িয়ে ঘরে আসতে যেয়ে ধ্রুভকে দেখে তার চোখ কপালে,আবার উল্টো পথ ধরলে ধ্রুভ তাকে ঝড়ের গতিতে দেয়ালে সেটে ধরে..রাহি যতক্ষনে উল্টা পথ ধরেছে তার আগেই ধ্রুভ যা দেখার দেখে নিয়েছে।।

পুরো ঘর অন্ধকার,জানাল গুলোতে হোয়াইট কার্টন দেয়া,হালকা মিস্টি রোদের আলোতে ঘরটাও কেমন আবেদনময়ী হয়ে উঠেছে..রাহি ত থরথর করে কাপছেই সেই সাথে।।

“এতো কাপাকাপি মনে হয় ড্রিল মেশিনও করে না দেয়াল ভেদ করার সময়!!” ধ্রুভ রাহির কানে ফিসফিস করে বললো,রাহি কাপাকাপি না কমলেও সেই সাথে যোগ হলো লজ্জা।।

ধ্রুভ রাহির খোলা ভিজা পিঠে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা পানিতে টুকরো টুকরো চুমু দিচ্ছে..আর শিউরে উঠছে,এরকম কাপাকাপি মনে হয় হাড় কাপানো শীতেও করে নাই!!

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে