কাঠগোলাপ পর্ব ১৬

0
1837

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ষোলো

?

রাহি শাওয়াররুম থেকে বেরিয়ে এসে ধ্রুভকে সামনে দেখতে পেলো,ধ্রুভ তার দিকে এক ধ্যানে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে আছে.. ধ্রুভের তাকানোটা কেমন আনইজি ফিল করাচ্ছে তাকে..ধ্রুভের চোখ আটকে গেছে রাহির এমন স্নিগ্ধতা দেখে।।

ধ্রুভ ধীর পায়ে তার গতি বাড়াচ্ছে,রাহি ধ্রুভের পা বাড়ানো দেখে উল্টা ঘুরে গেলো..এতে বিপরীত হয়ে গেলো আরো..ধ্রুভ রাহির পিঠ উল্টানো দেখে একটু নাক কুচকালেও রাহির কামিজের ভিতরে ভিজাচুলগুলো দেখে চোখ আটকে গেলো,রাহি চুলগুলো কামিজের নিচেই রেখেছিলো সেইটার কারনে পুরো পিঠটা ভিজে গেছে,সেই সাথে রাহির ভিতরের ইন্টারনাল জিনিসটা হাইলাইট হয়ে গেছে..ধ্রুভ চোখ আটকে গেলো রাহির গালের কুচকুচে তিলের উপর,হালকা পানি লেগে আছে তাতে।।

“উফফ কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে যে??ওয়ান সেকেন্ড আমি কন্ট্রোল করবো কেন??সে আমার মীরা!!আমার বউ!!” ধ্রুভ বাকা হাসি দিয়ে রাহির দিকে যেয়ে তার পিছনে দাড়ালো,রাহি এদিকে ভেবে কুল পাচ্ছে না যে ধ্রুভ আদৌ কি করার চেষ্টা করছে??এই হিম শীতল মতো ঘরেও রাহি কুলুকুলু করে ঘামছে..ওড়নার কোনার দিক নিয়ে বার বার দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুড়ামুড়ি করছে সে।।

ধ্রুভ তার দুই হাত দিয়ে রাহিকে পিছন থেকে জাপটে ধরলো,রাহির মনে হচ্ছে শরীরের রোবট অপশন টা চালু হয়ে গেছে..সটানভাবে সে দাড়িয়ে আছে,ধ্রুভের মতিগতি সে ধরতে পারছে না..ধ্রুভ আস্তে করে রাহির কামিজের ভিতর থেকে চুলগুলো টেনে বের করলো,চুলগুলো বের করার পর সেইগুলো আরেকদিকে করলো.. ডান গালের তিলের উপর সে তাকিয়ে আছে,আর এদিকে রাহি ভাবছে ধ্রুভের এরকম আচরণ তাকে প্রতিবাদ না করে উল্টো চুপ মেরে দাড়িয়ে আছে,মন বলছে বাধা দাও কিন্তু ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে..এই কেমন অসহ্য যন্ত্রনা!!

ধ্রুভ তার শুকনো জীর্ন ঠোট দিয়ে রাহির ডান গালে চুমু খেলো,আর ওমনিতে রাহি লাফিয়ে অন্যদিকে ছিটকে সরে গেলো ধ্রুভের থেকে..ধ্রুভ তার দিকে ছোট ছোট করে তাকাচ্ছে..রাহির হার্টবিট অনেক ফাস্ট হয়ে গেছে,এরকম ধুকপুক করছে কেন??

ধ্রুভ আবারো তার দিকে এগিয়ে গেলো,রাহি সরতে সরতে একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো যখন তখন পিছন ফিরে দেয়ালের দিকে অসহায় মুখ করে তাকালো,অন্যদিকে ফিরতে যাবে তার আগেই ধ্রুভ তার দুই বাহুর মাঝখানে আবদ্ধ করে ফেলেছে..ধ্রুভের মুখের গরম ঘন ঘন নিঃশ্বাস রাহির মুখের উপর পরছে,রাহির এই নিঃশ্বাসেও মনে হচ্ছে ঘেমে গেছে।।

“কি আছে তোমার মাঝে জানার ইচ্ছা নাই??তুমি আমাকে তোমার মাঝে গ্রাস করে ফেলেছো এটাই কথা!!” ধ্রুভ ফিসফিস করে বলে উঠলো।।

ধ্রুভের এমন ফিসফিস আওয়াজ রাহির কান গরম হতে থাকলো,চোখ তুলে তাকানোর সাহস টা নেয় তার..সে চাচ্ছে কোনভাবে এই বিষয়টা এড়িয়ে যাক,সে এতো জলদি নিজেকে বিলীন করতে চায় না..শরীর টা আজকে বিলীন হয়ে গেলেও,মনটা আজো ধোকা খেয়ে বিলীন হয় নি।।

ধ্রুভও গোসল সেরে ঘরে এসেছিলো, পরনে তার এশ কালার শর্টস আর হাত কাটা টি-শার্ট.. ধ্রুভ তার মাথাটাকে আরেকটু নিচু করে রাহির দিকে এগোলো,রাহি তার মুখটা সরিয়ে নিতে যাবে তখুনি ধ্রুভ তার শুকনো ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিলো..রাহির চোখ গুলো বিস্ময়ের কারনে বড় বড় হয়ে গেলো,মাথাটা তুলতে পারছে না..যখন সে তার মুখটা সরানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছিলো তখনই ধ্রুভ তাকে বেডের কাছে নিয়ে যেয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো,রাহি মাথায় হালকা ব্যাথা পেলেও তেমন গুরত্ব দিলো না..তার কাছে জরুরি হলো ধ্রুভের কাছে থেকে নিজেকে সরানোটা,ধ্রুভ কেমন ঘোর লাগা নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে..রাহির উপর নিজের সবটুকু ভর ছেড়ে দিলো..নিজের পাগলামিটা রাহির উপরে প্রকাশ করলো..অনবরত ঠোটে তার চুমু দিয়ে যাচ্ছে,ঠোটে চুমু দিতে ক্লান্ত হলে শুষে নিতে লাগলো সে..এক সময় ধ্রুভ ঠোট ছেড়ে গলায় আক্রমন করা শুরু করলো..অস্থির হয়ে ধ্রুভ তার টি-শার্ট খুলে ফেললো..রাহির গলাতে ছোট ছোট চুমুর মাধ্যমে অনেক লাভ বাইট বসিয়ে দিলো,কামিজের নিচে ধ্রুভ তার হাত রাহির কোমরে রাখলো…রাহি অনেক আকুতিভরা কথা বলছে কিন্তু ধ্রুভের মাথায় এখন অন্য খেলা চলছে..তার মীরা নেশায় আসক্ত হয়ে ডুবে যাওয়ার খেলা..রাহির চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পরছে,তার হাতদুটো ধ্রুভের হাতের মাঝে আবদ্ধ..ধ্রুভের পায়ের মাঝে রাহির পা..সবদিক থেকে রাহি লক হয়ে আছে..ধ্রুভ রাহির পেটে নিজের হাত বিচরণ করে,তার পেটে হালকা চাপ দেয়..মুখ দিয়ে রাহি উম ছাড়া আর কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না..ধ্রুভ এই সময় অস্থিরতা কাটাতে শুধু তার মীরাকে চাই,সর্বক্ষন তার মীরা কে দরকার..ধ্রুভের দিয়ে একসময় রাহির পিঠে চলে যায়,চেইন টা একটা টান মেরে খুলে ফেললো।।

রাহির কাধ থেকে জামা নামাতে যাবে,ওমনিতে একটা বিকট আওয়াজ আসলো..মনে হচ্ছে অনেক টনের জিনিস কেও তুলে আছাড় দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো,রাহিও এমন আওয়াজে ভয় পেয়ে ধ্রুভের বুকের মধ্যে নিজের মুখ লুকিয়ে ধ্রুভের নগ্ন পিঠে রাহির ভয়ার্ত প্রকাশ পেলো নখের আচড়ে।।

ধ্রুভের মেজাজটা চট করে খারাপ হয়ে গেলো..কানের মধ্যে ঝি ঝি করতে শুরু করলো..এই আওয়াজ টা কত সাইড ইফেক্ট ফেলে তার উপর সেটা সে জানে..কিন্তু কে ইচ্ছা করে এমন কাজ করলো যে আমার এরিয়াতে এসে তাও আবার??ধ্রুভের অশান্তি লাগতে শুর করলো,সে তার মীরাকে ছাড়ে নি..তার মাথাটা কেমন যেন ঝিমাচ্ছে, এই আওয়াজ সে কখনো নিতে পারে না..কোনরকম দাড়িয়ে মাথাটা ধরে ধ্রুভ ড্রয়ার খুলে তার প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন খেয়ে নিলো..ধ্রুভের এমন অস্থিরতা রাহি দেখছিলো,কেমন যেন করছে ছেলেটা..এরকম কপালে বারবার আঙ্গুল দিয়ে ঘষছে কেন??

ধ্রুভ মেডিসিন নিয়ে রাহির কাছে এসে তার ঠোটে লম্বা করে চুমু খেয়ে,তার জামার চেইন লাগিয়ে দিলো..নিজেও টি-শার্ট টা পরে নিয়ে, রাহির গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিলো।।

“চলো খাবে!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহিকে নিয়ে নিচে যাচ্ছে,রাহির কাছে অবাক করা বিষয়টা হলো ধ্রুভের এমন এবনরমাল বিহেভিয়ার টা..ধ্রুভকে কেন জানি মনে হচ্ছে অসুস্থ লাগছে..আওয়াজ টা হওয়ার পর থেকে ধ্রুভের আচরণ কিরকম যেন হয়ে গেছে,বিড়বিড় করে কিসব বলছে..রাহির দিকে একবার শান্ত চোখে তাকিয়ে ঠোটে চুমু খেয়ে বললো,”দুনিয়ার মানুষ চাক বা না চাক!!এই মীরা কিন্তু ধ্রুভেরই হয়েছে!!আর হতেই হবে!!মিলন ত হবেই!!”

অন্ধকারে থাকা গার্ডেনের এরিয়াতে একজন হুডি পরা অবয়ব মানুষের দাড়িয়ে আছে এক বিশ্রি হাসি নিয়ে এতোক্ষন এইসব দেখছিলো,তার এক হাতের মাঝে থাকা জিনিস টা কে নিয়ে বারবার হাতে নিয়ে খেলছে।।

“আস্তে আস্তে তোমার থেকে সবকিছু কেড়ে নিব আমি আশরিক!!এমনি তোমার মীরাকেও!!তোমার ঘড়ির উল্টা কাটার দিন গুনা শুরু করে দেও!!” এইটা বলে অন্ধকারে থাকা অবয়বটি সিটি মারতে মারতে দেয়াল টপকে পার হয়ে গেলো।।

ডাইনিং এ তারা বসে ডিনার করতে বসেছে,রাহির সামনে বয়েল করা এগ আর পাউরুটি.. এটা খেয়ে কি হবে??খাবার দেখে তার পেট টাও জানান দিলো সকাল থেকে এক ফোটা পানি তার পেটে পরে নাই..ধ্রুভ ফর্ক নিয়ে নির্বিকার হয়ে সামনে থাকা তার চিকেন সালাদ খেতে শুরু করলো…রাহি তখনও চুপ মেরে বসে আছে।।

“মীরা??” ধ্রুভ খাওয়া দুইবার মুখে পুরে নিয়ে যখন দেখলো রাহি এখনো খায় নি তখন নিজের প্লেটে ফর্কটা রেখে রাহিকে জিজ্ঞেস করলো।।

“হুম!!” রাহি মাথা নিচু করে বললো।।

“খাচ্ছো না যে?” ধ্রুভ বললো।।

রাহি কিছু বললো না,পাউরুটি এক পাশে ছিড়ে মুখে দিলো..শুকনো কোনকিছু সে খেতে পারে না..ছোটবেলা তে রুবেল রাহির জন্য গোশত আর মাছের ঝোল অনেক ঝাল আর ভুনা করে রান্না করতো,ঝোল যেন ঘন হয়ে থাকে..এরকম রান্না তার খুব পছন্দ,শুকনো খাবার রাহি খেতে পারে না এইজন্য সবসময় রান্নাতে ঝোল রাখতেন খুব ঘন করে..একবার মাছের কাটা রাহির গলাতে আটকে যেয়ে কি নাজেহাল অবস্থা হয়েছিলো তার,যে মাছ খেতে যেয়ে তার গলায় কাটা ফুটেছিলো সেই মাছ কিনায় বাদ দিয়েছিলো রুবেল..চোখের এক পাশ থেকে টুপ করে পানি বেরোলো রাহির,ধ্রুভ দেখার আগেই রাহি চোখ মুছে নিলো।।

রাহি পাউরুটির মুখে প্রথম বাইট দিয়ে,অনেক কষ্টে গিললো পানি মুখে দিয়ে..হুট করে রাহির সামনে থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে নিলো ধ্রুভ..রাহি ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিয়ে চেয়ে, ধ্রুভ প্লেট নিয়ে সামনে থাকা একটা ঘরের মধ্যে চলে গেলো..রাহি কিছু বুঝতে পারছে না যে কি হয়ে গেলো যে প্লেট নিয়ে চলে গেলো..রাহি গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে নিলো।।

মিনিট বিশেক পর,ধ্রুভ একটা ব্ল্যাক কালারে বাটিতে কি যে নিয়ে আসলো সেটাতে ধোয়া উঠছে,বুঝায় যাচ্ছে গরম কিছু আছে এর মধ্যে..রাহির সামনে যখন প্লেট রাখলো ধ্রুভ,রাহি বাটির ভিতরের জিনিস দেখে অবাক হলো…কারন বাটির ভিতরে স্যুপ নুডুলস ছিলো।।

“প্রমিস করেছিলাম কখনো কষ্ট দিবো না আর না কাওকে দিতে দিব!!আমি নুডুলস টা মোটামুটি পারি,চিকেন টা ডিপফ্রিজে ছিলো তাই একটু দেরী হয়ে গেলো..তোমার জন্য স্পাইসি চিকেন স্যুপ নুডুলস বানিয়ে নিয়ে এসেছি!!” ধ্রুভ চেয়ার টেনে রাহিকে নিজের কাছে এনে বললো।।

রাহি অবাক হয়েছে অনেক,উনি এতো সহজে বুঝে গেলো?যে আমার শুকনো খাবার খেতে কষ্ট হয়??

“স্টপ লুকিং এট মি মীরা!!টেস্ট ইট!!” ধ্রুভ বললো।।

রাহি স্পুন উঠিয়ে মুখে নিলো আসলে স্বাদ টা অসাধারণ.. পছন্দমতো ঝাল আর স্বাদ পার্ফেক্টভাবে আছে এতে..রাহি ধ্রুভের দিকে তাকালে দেখে,ধ্রুভও তার দিকে খেতে খেতে তাকাচ্ছে।।

“দেখার সময় দিব ত!!এখন খাও??নইত এনার্জি কোথায় পাবে??” ধ্রুভ রাহির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো।।

রাহি তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে নিলো,তা দেখে ধ্রুভ মিটমিট করে হাসছে..কিন্তু পরক্ষনেই মাথার ভেতরটা কেমন ঝি ঝি ডাকতে শুরু করলো,সব ওই আওয়াজটার জন্য..ধ্রুভ চোখ মুখ শক্ত করে খেতে আরম্ভ করলো,তার ঘুম দরকার।।

তিন শব্দের কবুল আর এক তরফা ভালোবাসার জোর অনেক।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে