কখনো বা দেখা হবে পর্ব-০৭

0
1930

#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আজ ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম হতে চলেছে। সিনথিয়া ও ঝর্ণা আজ অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করবে৷ তাই এখন চলছে তাদের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। সিনথিয়াকে অনেক বেশি নার্ভাস লাগছে। কারণ এরকম অনুষ্ঠানে আগে কখনো অংশ নেয়নি সে। জানে না কত ভালো পারফর্ম করতে পারবে। তাই তার মনে যথেষ্ট ভয় কাজ করছে। ঝর্ণাকে উদ্দ্যেশ্য করে ভয়ার্ত গলায় বলে,
‘আমি পারব তো?’

‘পারতে আপনাকে হবেই সিনথিয়া। অল দ্যা বেস্ট।’

কথাটি অভির কন্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়েছে। অভির কন্ঠ শুনে সিনথিয়া তাকালো তার দিকে। সিনথিয়ার কেন জানি অন্যরকম অনুভূতি হয় অভির দিকে তাকালে। তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর মাত্র ৪ দিন পরেই সিনথিয়ার বিয়ে। সিরাজুল হক বলে দিয়েছেন আজকেই সিনথিয়া শেষবারের মতো ভার্সিটিতে আসতে পারবে। সিনথিয়ার মনে এমন সময় অভির জন্য জন্ম নেওয়া এই অনুভূতি তাকে পীড়া দিচ্ছে। সিনথিয়া জানে না এই অনুভূতির নাম কি। শুধু জানে অভি তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। সবসময় তার মন অভিকে দেখার জন্যই ছটফট করে।

নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে অভির থেকে চোখ সরিয়ে নেয় সিনথিয়া। অভি সিনথিয়ার দিকেই নিজের দৃষ্টি স্থির রেখেছে। সিনথিয়ার দিকে তাকানো অবস্থাতেই মৃদু হেসে বলল,
‘আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে সিনথিয়া। অল দ্যা বেস্ট।’

সিনথিয়া সৌজন্যমূলক হাসি দেয়।

ভার্সিটির প্রোগ্রাম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সবাই একে একে নৃত্য, সঙ্গীত এসব কিছু পরিবেশন করছে। যার দরুন খুব মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসে। আজ রাজীবও এসেছে এখানে। উদ্দ্যেশ্য সিনথিয়ার নৃত্য দেখা। রাজীবের এক বন্ধুর বোনও এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। তার থেকেই জানতে পেরেছে এই ব্যাপারে। অতঃপর নিজের বন্ধুর সাথে চলে এসেছে।

স্টেজের পাশে দাড়িয়ে ছিল সিনথিয়া ও ঝর্ণা। আর কয়েকজনের পরেই তাদের পালা। ভয়ে রীতিমতো কাপছিল সিনথিয়া। তার মনে একটাই চিন্তা যদি পারফরম্যান্স ভালো না হয় তাহলে কি হবে? তার বুকে ক্রমশ ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে।

সিনথিয়াকে অবলোকন করছিল অভি। সিনথিয়ার ভয়টা বুঝতে পেরে একটি বোতলভর্তি পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘এই নিন। এই পানিটা খেয়ে নিন। মনে জোর পাবেন।’

সিনথিয়া কিছুটা পানি খেয়ে নিল। এখনও ভয় কমেনি তবে একটু স্বস্তি লাগছে।

অবশেষে সিনথিয়া ও ঝর্ণার পালা এসেই গেল। ❝ফাগুন হাওয়ায়❞ গানে নৃত্য পরিবেশন করল তারা দুজনে। স্টেজে ওঠার আগে ভয় পেলেও স্টেজে উঠে ভয় অনেকটাই কমে গেল সিনথিয়ার। সবাই যখন করতালি দিল তখন যেন মনে সাহস পেলো। বেশ ভালোভাবেই নৃত্য পরিবেশন করল। অভি, রাজীব দুজনেই মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করতে লাগল সিনথিয়ার মনোমুগ্ধকর সেই নৃত্য।

১৩.
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে। সিনথিয়ার ব্যাচ মেটেরা অনেকেই এসে এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সিনথিয়া কারো সাথে না মেশায় সেরকম ভাবে কারো সাথে পরিচিত নয়। তবে সবাই যখন তার প্রশংসা করছে তখন তার অনেক ভালো লাগছে।

ঝর্ণা সিনথিয়াকে আচমকা বলে,
‘চলো তো আমরা একটু ভার্সিটির পেছন দিকে যাই।’

সিনথিয়া অবাক হয়ে জানতে চায়,
‘কেন? ওখানে কি দরকার।’

‘আরে চলোই না তাহলে এমনিই জানবা।’

ঝর্ণা একপ্রকার জোর করেই নিয়ে যেতে থাকে সিনথিয়াকে। রাজীব সিনথিয়ার খোজে এদিকেই আসছিল। ঝর্ণাকে এভাবে সিনথিয়াকে নিয়ে যেতে দেখে তার ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে যার দরুন সে তাদের পিছু নেয়।

ভার্সিটির পেছন দিকে আসতেই চমকে গেলো সিনথিয়া। অভি হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সিনথিয়াকে দেখামাত্রই তার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল,
‘আমি অনেকদিন থেকে তোমায় এটা বলতে চাইছিলাম সিনথিয়া। তোমার প্রতি আমার অন্যরকম মুগ্ধতা কাজ করে। এন্ড আই ক্যান ফিল আই লাভ ইউ আ লট। আমি তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি।’

সিনথিয়া অনুভূতি গুলো ভাষা হারিয়ে ফেলছিল। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করণীয় সেটা বুঝতে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল তার। সিনথিয়ার মনেও যে অভির জন্য অনুভূতির জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি করতে পারে সে? সিনথিয়া বেশ কঠোরভাবে বলল,
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি না অভি। আপনি হয়তো জানেন না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর মাত্র চারদিন পরই আমার বিয়ে। তাই আমি খুশি হবী যদি আপনি এই বিষয় নিয়ে আর কথা না বাড়ান। আজ এই ভার্সিটিতে আমার শে’ষ দিন ছিল। আমি আসছি।’

কথাগুলো বলে আর দাড়ালো না সিনথিয়া। তার চোখে যে বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। আর কিছুক্ষণ পরেই বিনা বাধায় বর্ষণ নামল তার চোখে।

রাজীব সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করল। সিনথিয়ার পেছন পেছন সেও চলে এলো। অন্যদিকে সিনথিয়ার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অভি প্রচণ্ড ভেঙে পড়ল। তার মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর। মিরাজ ও ঝর্ণা তাকে শান্তনা দিলো। অভি মুখে বলল সে ঠিক আছে। কিন্তু তার মন একদমই ঠিক নেই।


সিনথিয়া ভার্সিটির বাইরে এসে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। নিজের কাধে কারো স্পর্শ অনুভব করে পিছনে ফিরলো সিনথিয়া। রাজীবকে দেখে অবাক হলো প্রচুর। চোখের জলগুলো মোছার বৃথা চেষ্টা করল। রাজীব মলিন হেসে বলল,
‘আমি তোমার চোখের জল দেখে ফেলেছি। তাই আর লুকাতে হবে না।’

সিনথিয়া নির্বিকার। রাজীব আচমকা তার হাত ধরে বলল,
‘তুমি ঐ ছেলেটাকে ভালোবাসো তাই না?’

সিনথিয়া চমকালো। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলল,
‘না এমনটা নয়।’

‘তোমার চোখ অন্য কথা বলছে। তোমার এই কান্না অন্য কথা বলছে। ছেলেটা ভাগ্যবান তোমার ভালোবাসা পেলো। যেটা আমি পাইনি। কিন্তু তুমি কেন ওকে অস্বীকার করলে? আমাকে নাহয় পছন্দ করো না কিন্তু ওকে তো পছন্দ করো।’

‘পরিস্থিতি অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।’

সিনথিয়া এই সামান্য বাক্যেই যেন অনেক কিছু বুঝিয়ে দিল। অতঃপর আর কালক্ষেপণ না করে বাড়ির দিকে রওনা দিল সিনথিয়া। রাজীব সেদিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলল,
‘তোমার সুখের জন্য আমি সব করতে পারি সিনথিয়া। চিন্তা করো না আমি তোমাকে পাই বা না পাই তুমি যাতে সুখের দেখা পাও সেই ব্যবস্থা আমি করে দিবো।’

১৪.
রাজীব আজ পাইকারি বাজার থেকে ফেরার সময় দেখতে পায় রায়হান নামের ছেলেটাকে। সেদিন যখন রায়হান সিনথিয়াকে দেখতে গিয়েছিল তখন তাকে দেখেছিল রাজীব। তাই চিনতে বেশি অসুবিধা হলো না। রাজীব যেন কি মনে করে রায়হানের পিছু নিল।

আর পিছু নিয়ে এমন কিছু জানতে পারল যা জানার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রায়হান দূরে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে দেখা করল। সেই মেয়েটি বলছিল,
‘আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম জন্য তোমার পরিবার তোমার আবার বিয়ে দিতে চাইছে। আর তুমিও নাচতে নাচতে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ?’

রায়হান সেই কথা শুনে বলে,
‘কোন চিন্তা করিও না। আমি মেয়েটাকে শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যেই বিয়ে করছি। ওর বাচ্চা হওয়ার পর ওকে ছেড়ে দেবো।’

‘ছেড়ে দেওয়া কি এতই সহজ?’

‘সেইজন্যই তো একটা অসহায় মেয়েকে বিয়ে করছি। মেয়েটার মা নেই। বাবা আর সৎ মা তাকে দেখতেই পায় না৷ এমন মেয়েকে ছেড়ে দিতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।’

কথাগুলো শুনে রাজীব নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে। রায়হানকে এলোপাতাড়ি মা’রতে লাগল। বলছিল,
‘আমার সিনথিয়ার দিকে হাত বাড়াস। তোকে আমি ছাড়ব না। সিনথিয়ার কোন ক্ষতিই আমি হতে দিবো না।’

কিছু মানুষ এসে ঝামেলা থামায়। রায়হান দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে।


রাজীব সিনথিয়াদের বাড়ির সামনে এসে চিৎকার করতে থাকে। সিরাজুল হক ও লুবনা বেগম বেরিয়ে আসেন। রাজীব বলে,
‘আপনারা সিনথিয়ার সাথে কেমন ছেলের বিয়ে ঠিক করেছেন। যার আগের একটা বউ আছে।’

সিরাজুল হক বলেন,
‘আমার মেয়ের আমি যেখানে ইচ্ছা বিয়ে দেব। তোমার তাতে কি?’

রাজীবকে কিছু বলার সুযোগ দিয়ে তার মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দেয়। রাজীব শপথ করে এই বিয়ে সে হতে দেবে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে