ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৮

0
1273

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৮ ||

স্বর্ণা ধমক খেয়ে ভয়ে চুপসে গেলো। রিকেশ এক সার্ভেন্ট কে ডাকলো এবং বললো যেনো স্বর্ণাকে নিজের ঘরে রেখে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু স্বর্ণা যেতে চাইলো না সে এখানে থাকবে। তার অমতেই সার্ভেন্টরা তাকে জোর করে নিয়ে যায়। যীনাত বুঝলো না এর মানে। আনুস্কা জিজ্ঞেস করে,”স্বর্ণা এমন কেন?”

রিকেশ উত্তর দেয়ার আগেই মল্লিকা দেবী ট্রে তে করে সরবত নিয়ে আসতে আসতে বলে,”স্বর্ণার মানষিক প্রব্লেম আছে। যখন সে ছোট ছিলো তখন ফ্লোরে পিছলিয়ে মাথায় বড়রকম আঘাত পায় যার কারণে সে এরকম আচরণ করে।”

যীনাত অবাক হয়ে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকায়। সেদিন না মল্লিকা দেবী তাকে বললো আর এখন এই কথা বললো কেন? যীনাতের অবাক চাহনী দেখে মল্লিকা দেবী বুঝতে পারে তাই যীনাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি তখনও জানতাম না স্বর্ণার এই সমস্যার কথা কিছুদিন আগেই জাইফ আমায় বলেছে! এতোদিন তো ভাবতাম আমার মেয়েটা আমি এতিম বলে এমন করতো কিন্তু আমার ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল!”

বলেই আঁচল মুখে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো সবাই তারপর রিকেশ মুখ খুলে বলে,”এইজন্যই আমরা কেউ স্বর্ণাকে কিছু বলতে পারিনা। ওর সব কথা চুপচাপ হজম করতে হয়। নইলে সজ্ঞানে কিছু বললে ওকে তো মাইরের উপরে রাখতাম।”

আনুস্কা চোখ মুছে ফেলে৷ তারপর তিশানা আর কিছু কাজিন মিলে কোথায় যেনো চলে যায়। কিছুক্ষণের মাঝে ফিরে আসে। তিশানার হাতে ইয়া বড় স্টিলের কারুকাজ করা বল। সেটায় আছে পানি আর গোলাপের পাঁপড়ি। তিশানা সেটা রিকেশদের সামনে রাখলো এবং বললো,”নতুন করে নিশ্চয়ই বোঝাতে হবে না এসব দিয়ে কি হবে তবুও বলছি। এই বলে একটা রিং ফেলবো আর তোমাদের মধ্যে যেকোনো একজন খুঁজে বের করবে। যেই খুঁজে বের করতে পারবে সেই জিতবে আর যে হারবে তার পক্ষ থেকে আমরা সবাই ট্রিট পাবো কি বলো সবাই?”

সবাই একসাথে ইয়েস” বলে উঠে। রিকেশ বলে,”আচ্ছা যা মানলাম এখন জাইফকে আন ওরে ছাড়া মজা হবে না। এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হলো বলতো?”

তিশানা বলে,”আমি আর আরাদ দা যাচ্ছি দাভাইকে আনতে। ”

বলেই তিশানা আর আরাদ চলে গেলো জাইফকে আনতে। কিছুক্ষণ পর জাইফকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসা হলো। তারপরই আনুস্কার চোখ তিশানা ধরে আর রিকেশের চোখ সোভন ধরে। আর কমলা দেবী রিং টা এই বলে ফেলে হাত দিয়ে দুধের মাঝে গোলাকৃতি সৃষ্টি করে তারপর বলে,”এহন চোখ থেইকা তোরা হাত সরা।”

কমলা দেবীর কথামতো তিশানা আর সোভন রিকেশ, আনুস্কার চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। তিশানা বলে,”লেট’স স্টার্ট আওয়ার কাপল!”

তিশানা বলতেই রিকেশ আর আনুস্কা দুধ পাঁপড়ির মাঝে হাত ঢুকিয়ে রিংটা খুঁজতে শুরু করে। দুজন রিং না খুঁজে হাতে হাতে মারামারি করছে তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। যীনাত চুপচাপ ওদের কান্ড দেখছে। শেষে আনুস্কাই রিং টা পেলো আর খুশিতে আত্মহারা হয়ে ইয়েএএ” বলে চেঁচিয়ে উঠে। রিকেশ একটা দীর্ঘ দম ছাড়লো যেনো সে এতোক্ষণ রিং খুঁজতে নয় যুদ্ধ করছিলো। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানে রিকেশ বেচারা হেরে কুপোকাত! আনুস্কার সাথে সকলেই চেঁচিয়ে উঠে আর হাসতে থাকে। যীনাতও হাসছে রিকেশের ইনোসেন্ট মার্কা ফেস দেখে। হঠাৎ সে নিজের হাতে ঠান্ডা কারো স্পর্শ পেলো! সাথে সাথে শিউরে উঠে যীনাত এবং হাতের দিকে তাকায়। তার হাতে কেউ হাত রেখে আর সেই “কেউ” টা আর কেউ নয় জাইফ। যীনাত চোখ বড় বড় করে জাইফের দিকে তাকালো। কিন্তু জাইফ রিকেশদের দিকে তাকিয়ে। এমন ভাব ধরে আছে যেনো যীনাতের দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। সে রিকেশদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, কথা বলছে যেনো সবটা স্বাভাবিক! যীনাত চোখ সরিয়ে নিয়ে আস্তে ধীরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু জাইফ ছাড়ার বদলে আরও শক্ত করে ধরে। যীনাত শুধু সবার দিকে তাকাচ্ছে আর হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ! শেষে উপায় না পেয়ে হাতটা লুকিয়ে রাখলো যাতে কেউ দেখতে না পায়। যীনাত যেনো লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এতো মানুষের সামনে এভাবে জাইফ তার হাত ধরবে হুট করে যীনাত তো কল্পনা অব্দি করেনি। তবে আগেও ধরেছিলো কিন্তু আজকে তো অনেক বেশি মানুষ!

তিশানা- ইয়েএএ বড়দাভাই আমাদের সবাইকে খাওয়াবে। হুররেএএএ!

রিকেশ- ও ভগবান! আমি ফকির হয়ে গেলাম এবার।

– ওই কিপটার গুরু এতো বড় বিজন্যাস কইরা কি মশা মারিস যে সামান্য কটা টাকা আমাদের জন্য খরচ করলে ফকির হয়ে যাবি?

– তোরা তো একেকটা হাতির চেয়ে কম না তোদের খাওয়ানো মানে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করা একই ব্যাপার!

তিশানাসহ সবাই সেইরকম ক্ষেপে উঠে তারপর সব একসাথে বলে,”ওওওও তাইই ঠিক আছে দেখি তোর ফুলসজ্জার খাট কে সাজায়!”

– আমি কি তোদের সাজাতে বলেছি রুম যেমন আছে তেমনই থাক তাতে আমার কি?

– তাহলে তোর বউকে আর তোর কাছে যেতে দিবো না দেখিস!

– ওরে রাস্তায় ফেলে আসলেও আমার কিছু যাবেও না আসবেও না!!!

এবার আনুস্কা চরম লেভেলের ক্ষেপে গেলো। দুই হাত কোমড়ে গুজে যেই কড়া কথা শুনাতে যাবে তার আগেই কমলা দেবী রিকেশের এক কান ধরে উঠিয়ে নেয়। রিকেশ ব্যথায় জোরে চেঁচিয়ে বলে,”আহ ঠাম্মি ছাড়ো লাগছে!!”

– তুই কইলি কি বদমাইশ আর নাতবউরে রাস্তায় ফেলাইয়া আইবি? এতো সাহস তোর তোরে বিয়ে দিসি কি আর নাতবউকে কষ্ট দেয়ার জন্য হ্যাঁ? মুখপড়া, বদমাইশ পোলা!!!

– ঠাম্মিইইই ভালো হচ্ছে না কিন্তু কান ছাড়ো!

– আগে নাতবউয়ের কাস থেইকা ক্ষমা চাইবি হেয় যদি তোরে ক্ষমা করে তইলেই তোরে ছাড়ুম!!

– এ কেমন বিচার ঠাম্মি!

তিশানা হাত তালি দিয়ে বলে,”এই না হলে আমার নানুমনি!! এক্কেবারে ঠিক সময়ে ঠিকরকম বাশ! হু এখন বুঝো চান্দু আমাদের সাথে লাগার ফল খুব তো বড় বড় কথা বলছিলে এখন কানমলা খাও!!”

বলেই হাসতে থাকে। কমলা দেবী আরও জোরে কান ধরতেই রিকেশ চিল্লিয়ে বলে,”আচ্ছা আচ্ছা ক্ষমা চাচ্ছি, আনুস্কা বউ সরি আর কখনো কিছু বলবো না!!”

আনুস্কা কিছুটা ভাব দেখিয়ে বলে,”সরিতে কাজ হবে না!”

– আবার কি করতে হবে বউ?(অসহায় সুরে)

– সকলকে ট্রিট দিতে তাও অনেক বড়।

– আচ্ছা আচ্ছা ডান এখন তো ঠাম্মিকে বলো কান ছাড়তে!

কমলা দেবী সাথে সাথে কান ছেড়ে দেয়। তিশানা আনন্দে আনুস্কাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সোওঅঅঅঅ মাচচচচ বৌদী! তুমি আমাদের বেস্ট বৌদি!!!!”

– উহু এগুলা তে চলবে না আমাদের ফুলসজ্জা উপলক্ষ্যে পুরো ঘর খুব সুন্দর করে সাজাতে হবে ডান?

– ইয়াপ ডান!

রিকেশ নিজে মুখটাকে বাংলার পাচের মতো করে কান ডলতে ডলতে বলে,”ঠাম্মি এতোগুলা ছোট মানুষদের সামনে তুমি আমার ইজ্জত আর রাখলা না!”

– কি কইলি তুই বদমাইশ!!(চোখ গরম করে)

রিকেশ ভয়ে কাচুমুচু হয়ে একটা লম্বা হাসি দেয়ার চেষ্টা করে বলে,”ইয়ে মানে মজা করছিলাম!”

রিকেশের কান্ডে সকলে হেসে দেয়। হঠাৎ জাইফ বলে উঠে,”আচ্ছা তিশানা তোর না কোন ফ্রেন্ড আসছিলো নাম কি যেনো উমমম… ও হ্যাঁ তিন্নি। ওকে তো দেখছি না!”(ভ্রু কুচকে)

– আর বলিস না ওর কে যেনো অসুস্থ তাই বাসাতে চলে গেছে।

তিন্নি চলে গেছে শুনতেই যীনাতের মনে এক অজানা স্বস্তি অনুভব করলো কিন্তু কেন বুঝতে পারলো না।

আরও কিছুক্ষণ আড্ডা মাস্তি করে যীনাতের সাথে আনুস্কাকে পাঠিয়ে দিলো যেনো আনুস্কা ফ্রেশ হয়ে সব চেঞ্জ করে রেস্ট নিতে পারে। এমনিতেই কিছুদিন অনেক ধকল গেছে সবার। আজ তাদের কালরাত্রি তাই বর-কনে একসাথে থাকতে পারবে না এমনকি একে অপরকে দেখতেও পারবে না। এতে নাকি তাদের অমঙ্গল হয়। আনুস্কা চাইলে তিশানার সাথে থাকতে পারতো কিন্তু আনুস্কা আবদার করেছে যে আজ সে যীনাতের কাছেই থাকবে। তাই যীনাত আনুস্কাকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুমে আসতেই আনুস্কা গিয়ে চেঞ্জ + ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম ঢুকলো। আর যীনাত নিচে চলে গেলো আনুস্কার জামাকাপড় আর জরুরি জিনিসপত্র আনতে।

হাতে একটা জামদানী শাড়ি আর কিছু প্যাকেট নিয়ে যীনাত রুমের দিকে যাচ্ছিলো ওমনি তাকে কেউ পেছন থেকে ডাকলো।

– এইযে মিস!

যীনাত থেমে যায় এবং পিছে ফিরে তাকায়। এইটা সেই ছেলেটা মানে সোভন যে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। যীনাত কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলে,”জ্বী বলুন!”

– বৌদি কি আপনার ঘরে?

– হ্যাঁ কেন শুনেন নি?

– ওহ হ্যাঁ শুনেছি কিন্তু ভুলে গেছিলাম সরি।

– ওহ।

বলে যীনাত রুমের দিকে যেতে নিতেই আবার পিছু ডাকলো সোভন। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সে আবার পিছে ফিরলো কিন্তু বিরক্তি টা মুখে প্রকাশ করলো না।

– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো!

– জ্বী..

– আপনি কি সবসময়ই মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে রাখেন?

সোভনের কথায় যীনাত চরম বিরক্ত হয়ে যায়। তারপর নিজেকে সংগত করে বলে,”জ্বী আর কোনো প্রশ্ন?”

– নাহ সরি এমন প্রশ্ন করার জন্য আর ডিস্টার্ব করার জন্য বাই।

বলেই পিছে ফিরে হাত দিয়ে খুশিতে বিড়বিড়িয়ে “ইয়েস, ইয়েস” করতে করতে নিচে চলে গেলো আর যীনাত বেকুবের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,”আজব ছেলে তো! প্রশ্নও করলো আবার সরিও বললো! এতোই যখন সরি বলার ছিলো তাহলে প্রশ্নই বা কেন করলো আজিব!”

ভ্রু কুচকে যীনাত নিজের রুমে চলে গেলো। জাইফ নিজের রুমের দরজা কিছুটা ফাঁক করে সবটা দেখলো এবং কোনো দ্বিধা ছাড়াই যীনাতের মনের ভেতরের বকরবকর শুনে ফেললো। প্রথমে সোভনের জন্য রাগ লাগলেও এখন নিজেই অবাক হয়ে গেলো! সে কিভাবে যীনাতের মনের কথা শুনলো? কেমনে পসিবল এটা?? মাঝে মধ্যে নিকের শরীরে টুকটাক পরিবর্তন লক্ষ করেছে জাইফ কিন্তু তেমন একটা পাত্তা দেয়নি আর আজ কি হলো? ভেবে পাচ্ছে না জাইফ। ঠাসসস করে দরজা টা লাগিয়ে দেয় সে। মাথা যন্ত্রণা করছে তার কিছুটা ঘুম দরকার তার। তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর সাথে সাথেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

যীনাত আনুস্কার জন্য আনা জামদানী শাড়ি আর প্যাকেট গুলো নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ততোক্ষণে আনুস্কা সব চেঞ্জ করে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে যীনাতের একটা থ্রি পিস পড়ে বেরিয়েও পড়েছে। যীনাতকে দেখে মুচকি হাসি দেয়। যীনাতও মুচকি হাসে তারপর হাতে থাকা সব বেডে রেখে বলে,”আন্টি বলেছে যেনো তুমি এগুলো পড়ো।”

– ওও আচ্ছা ওয়েট পড়ছি তুমি দরজাটা লক করে আসো।

যীনাত দরজা লক করে বেলকনিতে চলে যায় আর দূরের পরিবেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। হালকা মৃদ্যু ঠান্ডা বাতাস যীনাতকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। যীনাত পরম আবেশে চোখ বুজে ঠান্ডা বাতাসটা অনুভব করতে থাকে৷ প্রায় কিছুসময় পরেই রুম থেকে আনুস্কার কন্ঠ ভেসে আসে তাই যীনাত ঘরে চলে আসে এবং দেখে আনুস্কা শাড়ি পড়ে ফেলেছে। যীনাত মুচকি হেসে বলে,”তোমাকে মাহ শা আল্লাহ অনেক কিউট লাগছে!”

আনুস্কা আনন্দিত হয়ে বলে,”সত্যি! তবে এই “মাহশাআল্লাহ” কি যীনাত?(ভ্রু কুচকে)

– এটা একটা আরবি শব্দ কোনো সুন্দর বা ভালো কিছু দেখলে আমি সঙ্গে সঙ্গেই মাহশাল্লাহ বলে থাকি!

– ওওও আচ্ছা বেশ বুঝেছি। তবে তুমি আমার থেকে সবসময় কিউট জানো?

– কি যে বলোনা তুমি!

এমন সময়ই মিনি ডাকলো খাবারের জন্য। আনুস্কাকে যীনাত বললো কিছুক্ষণ পরে যাবে তাই আনুস্কা মিনির সাথে খেতে নিচে চলে যায়। যীনাত চটজলদি ওযু করে রুমে এসে নামাজ সেরে ফেলে। নামাজ শেষে যীনাতও নিচে চলে যায়। সবার সাথে খেতে বসে তবে কোথাও জাইফকে খুঁজে পেলো না। এতে যীনাত কিছুটা হতাশ হয় আবার রেগেও থাকে কারণ পুরোটা সময় সোভন যীনাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খেয়েছে।

রাতের বেলা যীনাত এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। এদিকে যীনাতের পাশে আনুস্কা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে কিন্তু যীনাতের চোখে ঘুম নেই। সেই আড্ডার পর থেকে একবারের জন্যেও যীনাত জাইফকে দেখেনি। কেন জানিনা খুব কষ্ট লাগছে তার। কেন জাইফ একবারের জন্যেও তার সাথে দেখা করলো না? ফোনটাও কয়েকবার চেক করেছে জাইফ কোনো কল বা মেসেজ দিবে এই আশায় কিন্তু কিছুই হলো না।

এদিকে জাইফের বারবার গলা শুকিয়ে আসছে। এই পর্যন্ত ৭লিটারের পানি খতম করেছে সে তবুও যেনো তার তৃষ্ণা মিটছে না। বড় এক কোলাকোলার বোতল সমান পানি আবার ঢকঢক করে গিললো। তবুও তার পিপাসা মিটছে না। এখন সে কি করবে পাগলের মতো তার আচরণ তবুও সে নিজেকে যথেষ্ট সংগত রাখার জন্য করছে কিন্তু সে পারছে না। জাইফ গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে আর এদিক সেদিক পাগলের মতো তাকাচ্ছে।

যীনাত হঠাৎ জাইফের রুম থেকে ধুরুম ধারুম শব্দ শুনতে পায় আর সাথে সাথেই উঠে বসে। তারপর কোনোদিক চিন্তা না করে ওড়নাটা নিয়ে একপ্রকার দৌড় লাগায় জাইফের রুমের দিকে। জাইফের রুমের দরজা ভেজানোই ছিলো ভেতরে গিয়ে দেখতে পায় পুরো রুম পানিতে ছড়াছড়ি আর জাইফ গলায় হাত দিয়ে ছটফট করছে। যীনাত চটজলদি জাইফের কাছে গিয়ে জাইফের গলা থেকে তার হাত সরিয়ে দেখতে পেলো জাইফের গলাটা সম্পূর্ণ হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে। যীনাত কছুটা আতকে উঠে জাইফের গলার এমন রূপ দেখে। শুধু তাই নয় জাইফের ফুল বডি বরফের মতো ঠান্ডা হয়েছে যা কোনো সাধারণ মানুষ এই তাপমাত্রায় বেচে থাকতে পারবে না। এর মানে কি জাইফ মানুষ না? না সে কি করে হবে এসব ভুল ধারণা মনের মধ্যে শুধু শুধুই ভয়ের আছড় দিচ্ছে। যীনাত কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না কারণ হলুদ কালারটা লাইটের মতো চিকচিক করছে।

———————————

চলবে!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে