ওয়াদা ৩৫

0
3417

ওয়াদা৩৫
-সেট বেল্টটা বেধে নাও।(মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো)
-না থাক লাগবে না।(মাথা নিচু করেই বললাম)
-আমি বলেছি সিট বেল্টটা বেধে নিতে।
-বলছিতো লাগবে না।
-বুঝেছি তুমি কেন সিট বেল্টটা বাধছো না।
-কেন বাধছি না।(বলে ওর দিকে তাকালাম)
ও মুচকি মুচকি হাসছে। ওর হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর মনে কোনো শয়তানি বুদ্ধি খেলা করছে। কিন্তু কি চলছে বুঝতে পারছি না। আমি ভাবতে ভাবতেই ও আমার দিকে সরে এসে আমার সিট বেল্ট বেধে দিতে লাগলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। আমরা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছি। আর ও বেল্ট বাধছে। বাধা শেষে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে সরে গেলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম। ও আমার তাকিয়ে থাকা দেখে বললো
-কোনো সমস্যা?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
-তাহলে এবার যাওয়া যাক?
-হুম।
তারপর ও গাড়ি স্ট্রাট দিলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়িটা একটি বাড়িতে এসে থামলো। আমি আর মেঘ গাড়ি থেকে নামলাম। বাড়িটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। আমি আর মেঘ ভেতরে গেলাম। ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে কয়েকজন দৌড়ে এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো।
-কি রে তুই এতো দেরি করে আসলি কেন। জানিস তোর জন্য কখন থেকে ওয়েট করছি।(মেঘের ফ্রেন্ড)
-মামা বিয়ে করো তারপর টাইমলি কোথাও পৌঁছিও বুঝছো?(মেঘ হাসতে হাসতে বললো)
আমি মেঘের দিকে রাগি চোখে তাকালাম। কি বলতে চাইছে ও আমার জন্য দেরি হয়েছে। আমিতো একদম ঠিক সময়ে রেডি হয়েছি তারপরও এই কথা বলে কি করে।
-দোস্ত তোর মেঘপরীর কিন্তু রাগে নাক লাল হয়ে গেছে। সময় থাকতে চুপ কর।(অন্য একটা ফ্রেন্ড)
এরা আমায় মেঘপরী কেন বললো। এরা কি জানে মেঘ আমায় মেঘপরী বলে ডাকে। হয়তো মেঘ বলেছে।
-কেমন আছো মেঘপরী?(প্রথম ফ্রেন্ডটা কথাটা জিজ্ঞাসা করেই দৌড় দিলো আর ওনার পিছু পিছু মেঘ। বুঝলাম না কি হলো ব্যাপারটা। আমিতো বেকুব এর মতো দাড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।)
-দোস্ত আজ অরুপ শেষ বুজলি। হা হা হা(দ্বিতীয় ভাইয়াটা অন্য আর একজনকে বললো)
-কি ভাবছেন ভাবি?(দ্বিতীয় ভাইয়াটার কথায় ওনাদের দিকে তাকালাম) তারপর উনি বললেন।
-আমি শাওন আর ও হলো প্রদীপ আর মেঘ যাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে সে হলো অরুপ। আজ ওরই হলুদ অনুষ্টান। আমরা সবাই একসাথে লন্ডন এ পড়াশোনা করতাম। আর ও হলো ইরা আমার ওয়াইফ।(শাওন ভাইয়া)
-ওহ আচ্ছ।
তারপর ওনাদের সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলাম। ইরা ভাবি খুব মিশুকে। ওনার সাথে কথা বলতে বেশ ভালো লাগছে। অনেক সাধা-সিধে। আমরা কথা বলতে বলতে ওরা দু’জন হাপাতে হাপাতে ফিরে এলো।
-আজকের দিনেও তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারলি?(অরুপ ভাইয়া)
-এর জন্য তুই দায়ী।(মেঘ)
-কি এমন বললাম। শুধুতো মেঘপরী বলেই ডেকেছি।(অরুপ ভাইয়া)
-আবার,,,?(মেঘ ওর দীকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো)
-আচ্ছা বাবা সরি। আর বলবো না। জানো ভাবি লন্ডনে থাকতে মেঘ সবসময় তোমার কথা বলতো। ওতো তোমায় মেঘপরী বলে ডাকে কিন্তু ভুল করে যদি আমরা কেউ মেঘপরী বলতাম তাহলে সেদিন আমাদের খবর ছিলো। এইভাবে পুরো ক্যাম্পাসে দৌড়ানি করাতো।(অরুপ ভাইয়া)
আমি ওনার কথা শুনে মুচকি হাসলাম। ও ছোট বেলা থেকেই এমন। মেঘপরী নামটা ও ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু ওখানে গিয়েও যে এমনটা করবে ভাবতেই পারি নি।
-তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দি,,,এরা হলো,,,,,(মেঘ)
-থাক। তোকে আর পরিচয় করাতে হবে না আমাদের অলরেডি আলাপ পরিচয় হয়ে গেছে।(শাওন ভাইয়া)
-ওহ্। তাহলেতো ভালই হলো আমায় আর কষ্ট করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া লাগলো না।(মেঘ)
-একটা কথা ভাবি ওরা কিন্তু জাস্ট ফ্রেন্ড। আমি আর মেঘ কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড। শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে ও আমার কলিজার টুকরা।(অরুপ ভাইয়া বলে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো)
আমি শুধু ওনাদের কথা শুনছি আর হাসছি।
-বাই দা ওয়ে ভাবি তোমাকে কিন্তু সত্যি সত্যি পরীর মতই লাগছে।(অরুপ ভাইয়া)
-হারামি আজ বাদে কাল তোর বিয়ে আর তুই অন্যের বউ এর দিকে নজর দিচ্ছিস?(শাওন ভাইয়া)
-আরে অন্যের বউ মানে এটাতো মেঘের বউ। মেঘের মা আমার মা, মেঘের বাবা আমার বাবা, মেঘের বোন আমার বোন তেমনি মেঘের বউ তো আমারই বউ তাইনা।(অরুপ ভাইয়া)
-হারামি আমার বউ তোর বউ? দাড়া তুই আজকে।(মেঘ)
-আরে রাগিস না আগে পুরা কথাটা শোন। তোর বউ যেমন আমার বউ তেমনি আমার বউও তোর বউ বুঝলি।(অরুপ ভাইয়া)
-শোন আমার বউ তোর ভাবি আর তোর বউ আমার বউ বুজলি।(মেঘ)
মেঘ কথাটা বলার সাথে সাথেই আমি ওর দিকে একটু রাগি চোখে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে ও বললো
-না আমি বলতে চাইছি যে,,, আমার বউ তোর ভাবি আর তোর বউ আমারও ভা,,বি।(মেঘ কিছুটা আমতা আমতা করে বললো। আর সবাই হেসে দিলো)
-তোরা আবার বউ ভাবি নিয়ে বললি।(পেছন থেকে একটা মেয়ে বললো)
আমরা পেছন ফিরে তাকাতেই দেকলাম দুইটা মেয়ে। মেয়ে দুইটা খুবই মডার্ন ড্রেস পরেছে। অনেক ছোট ড্রেস। ইস এদের কি লজ্জা-সরম কিছু নাই নাকি। এমন পোষাক কেউ পরে। সমাজটা কোথায় এসে দাড়িয়েছে। এখানে কত মুরুব্বিরা রয়েছে তাদের সামনে এমন ছোট ছোট ড্রেস পরে,,, ছিঃ ছিঃ।
-মুন, সান তোরা এখানে??(মেঘ অবাক হয়ে বললো)
-Yes darling. তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই বলিনি।(এইটা মনে হয় সান। কি নাম)
-সত্যি আমি ভাবতে পারছিনা তোরা আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস।(মেঘ কথাটা বলার সাথে সাথে সান মেয়েটা মেঘকে জড়িয়ে ধরলো)
এটা দেখে আমারতো রাগে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলছে। ওই মেয়েটা নির্লজ্জের মতো মেঘকে জড়িয়ে ধরলো সবার সামনে আর মেঘ কিছুতো বললই না উল্টা ঔ জড়িয়ে ধরলো। একটাতে তো হলো না পরে মুনও এসে জড়িয়ে ধরলো। চোখের সামনে এটা আমি সহ্য করতে পারছিনা কান্না পাচ্ছে খুব। চোখে পানি টলমল করছে যদি মেঘ দেখে তাহলে বুঝতে পারবে। তাই আমি ইরা ভাবিকে বললাম ওয়াশরুমে যাবো। উনি যেহেতু আগে এসেছেন তাই সব কিছু চেনেন এবাড়ির। উনি আমায় ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় ভাবিকে বললাম একটু দাড়াতে। কারণ এখন রাত আর ওয়াশরুম উপরে এখানে পুরা ফাঁকা সবাই নিচে। আমি ওয়াশরুমে গেলাম। কাঁদতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এখন কান্না করা যাবে না। কান্না করলে কাজল লেপ্টে যাবে তখন সবাই বুঝে যাবে। অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকিয়ে বাইরে বেরোলাম। বাইরে বেরিয়েই দেখলাম ভাবি নেই। কোথায় গেলো আমিতো ওনাকে এখানেই দাড়াতে বললাম। এখন কি করবো? নিচে যাবো নাকি এখানেই ওনার জন্য ওয়েট করবো। যদি কোনো কাজে গিয়ে থাকেন আর এখানে ফিরে এসে না পাই তাহলে আবার খোজা-খুজি করবে। না একটু অপেক্ষা করে। অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পরও যখন এলো না তখন আমি নিচে নামার উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলাম। আমি একটা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ আমার হাত ধরে খুব জোড়ে টান দিয়ে ওই রুমটাই নিয়ে গেলো। আমি চিৎকার দিতে যাবো তখনই আমার মুখ চেপে ধরলো। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে আর চোখ বন্ধ করে আছি। চোখ খুলে দেখলাম এটা আর কেউনা মেঘ। তারপর ও আমায় ছেড়ে দিলো। আমি হাপাতে হাপাতে বললাম
-কি হচ্ছে টা কি? এমনটা কেউ করে? আমিতো আর একটু হলে ভয়ে মরেই যেতাম।(বলার সাথে সাথে আবার আমার মূখ চেপে ধরলো)
-আর কখনো যদি মরার কথা বলোনা তাহলে আমিই তোমায় মেরে ফেলবো।(মেঘ একটু রাগি গলায় বললো)
আমি জোর করে ওর হাত সরিয়ে দিলাম।
-কি করছেন টা কি? লিপিস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে তো।
-তোমার কি মনে হয় আমি তোমায় এখানে কেন এনেছি?
-তাইতো কেন এনেছেন এখানে?
ও আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো
-আমিতো তোমায় এখানে তোমার লিপিস্টিক নষ্ট করার জন্যই এনেছি।(বলে দুষ্টুমির হাসি দিলো)
-মা,,,,নে।(তুতলাতে তুতলাতে বললাম)
-মানে বোঝো না?(হাসতে হাসতে)
-না বুঝি না।
-বাচ্চা মেয়ে?
-হুম।
বলার সাথে সাথে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে ধরে ওর কাছে টেনে নিলো।
-কি করছেন?
ও আবার আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো
-তুমি না বাচ্চা মেয়ে। তাই তোমায় শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে লিপিস্টিক নষ্ট করতে হয়।(বলেই আমার কানের লতিতে একটা চুমু খেলো আর আসতে করে কামড় দিলো তারপর ঠোঁটে খুব আলতো করে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলো। ও আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।)
আর আমি চোখ বন্ধ করে আছি। ও আমার কাছে আসলেই আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। হঠাৎ করেই তখনকার কথা মনে পরে গেলো। ওই সান আর মুনকে জড়িয়ে ধরার কথা। একটু আগেই এই বুকে অন্য কেউ মাথা রেখেছিলো আর এখন আমি। মনে পরতেই আবার রাগ হলো। তাই ওকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছি না। ও খুব শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে। আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছি।
-কি সমস্যা?(মেঘ আমায় জড়িয়ে ধরেই রাগী গলায় বললো)
-কিছু না। ছাড়ুন আমায়।(বলে আবার সরানোর চেষ্টা করলাম)
-চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো প্লিজ।(নরম সুরে বলে আরও শক্ত করে ধরলো)
-আমার ভালো লাগছে না ছাড়ুন প্লিজ।(বলে জোর করে ছাড়িয়ে নিলাম)
-এটা কি হলো। এতো সুন্দর একটা রোমান্টিক মোমেন্ট তুমি এইভাবে নষ্ট করে দিলে?(একটু রাগী গলায়)
আমি চুপ করে আছি।
-কেন করলে এমনটা?
-(চুপ)
-তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করছি। উত্তর দাও।
আমি ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে আসছিলাম তখনই ও আবার পেছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আবার কাছে টেনে নিলো। আমায় ওর দিকে ঘুরিয়েই আমার মুখটা টেনে আমার ঠোঁটের সাথে ওর ঠোঁটটা মিলিয়ে দিলো। অনেকক্ষন পরে ছাড়লো। আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
-ভেবে ছিলাম এই মুহূর্তে এমন কিছু করবো না। কিন্তু তোমার তো তর সইছিলো না।
-তর সইছিলো না মানে?
-বুঝতে পারছো নানা বুঝি?
-না বুঝতে পারছি না।(রেগে বললাম)
-তুমিতো কিছুই বোঝ না। এটা তোমার শাস্তি ছিলো।
-কিসের শাস্তি?
-আমার রোমান্টিক মুডটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য। এবার থেকে যদি ভুল করেও আমার রোমান্টিক মুড নষ্ট করেছো তাহলে এর থেকেও বড় শাস্তি দিবো। আর হ্যা শাস্তি কিন্তু এই টাইপের হবে।
-কিহ্?
-হুম। এবার থেকে ভেবে চিন্তে কাজ করবে। আর হ্যা আমি নিজ থেকে ওদের জড়িয়ে ধরিনি। ওরাই ধরেছিলো আগে। ওরা আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড আমরা একসাথেই লন্ডন এ পরতাম। ওরা জানে আমি বিবাহিত আর তুমি আমার বউ। ওরা জাস্ট ফ্রেন্ড হিসাবেই ধরেছিলো। যদিও আমাদের সমাজে এটা দৃষ্টি কটু কিন্তু ওরা খুবই মডার্ন তাই এইগুলা ওরা মানে না। তাই এতে এমন মন খারাপ কিছু নেই। তোমার বর তোমারই আছে।(মেঘ অনেটা রেগে বললো)
আমি মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম। আসলেই আমি একটু বেশিই ভেবেছি। ওরা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। ওদের চিন্তাধারা আমাদের মত নয়। আমিও না মাঝে মাঝে কি যে করি।
-এখন আর এতো ভাবতে হবে না। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। মাঝখানতে শুধু আমার মুডটাই নষ্ট করলে। যাই এবার নিচে চলো।(বলেই বেরিয়ে গেলো)
আমিও ওর পিছু পিছু নিচে গেলাম।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে