ওয়াদা ৩৮

0
3530

ওয়াদা
৩৮
যখন চোখ খুললাম দেখলাম আমি একটা রুমের মধ্য বিছানায় শুয়ে আছি। মেঘ আমার হাত ধরে বসে আছে আর ইরা ভাবিসহ আরও অনেকেই আছে।
-তুমি এখন ঠিক আছো তো?(মেঘ)
-হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
-তখন কতবার বললাম কিছু খেয়ে নাও না হলে শরীর খারাপ করবে কিন্তু তুমি আমার কোন কথায় শুনলে না। এখন কে কষ্ট পাচ্ছে শুনি।(মেঘ রেগে বললো)
-সরি আমি বুঝতে পারিনি এমনটা হবে।(যদি তোমায় বলতে পারতাম আমি কেন জ্ঞান হারিয়েছি )
-কিন্তু তুমি কাল থেকে কিছু খাওনি কেন নাশু?(রাত্রি)
ওর কথা শুনে রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। যার জন্য রাগ করে, কষ্ট পেয়ে না খেয়ে আছি সেই বলছে না খেয়ে ছিলে কেন নাশু যতসব ।
-এমনিতেই। কিন্তু রাত্রি আপু তুমি এখানে এই সাজে,,, ঠিক বুঝলাম না।
-আরে তুমি জানো না অরুপের সাথেইতো রাত্রির বিয়ে হচ্ছে।(শাওন ভাইয়া)
-কিহ্?(অবাক হয়ে)
-নাশু মেঘ তোমায় বলেনি আমার আর অরুপের বিয়ের কথা?(রাত্রি)
-না।
-মেঘ তুমি ওকে বলো নি কেন?(রাত্রি)
-এমনিতেই।(মাথা নিচু করে)
-আচ্ছা এসব এখন বাদ দাও। ভাবির এখন কিছু খাওয়ার দরকার। কেউ একজন ওনার জন্য খাবার নিয়ে আসো আর সবাই বাইরে চলো। এখন এখানে এতো ভীর করার কোনো দরকার নেই। আর রাত্রি, অরুপ তোরা চল সবাই অপেক্ষা করছে।(শাওন ভাইয়া)
তারপর সবাই চলে গেলো। রুমে এখন শুধু আমি আর মেঘ আছি। একজন এসে খাবার দিয়ে গেলো। মেঘ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে আমাকে ধরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর আমার সামনে বসে আমায় খাইয়ে দিতে লাগলো। আমিও চুপচাপ ওর হাতে খাচ্ছি। ওর হাতে খেতে বেশ মজা লাগছে। হাতের ছোয়ায় খাবারের স্বাদ যেন বেড়ে গেছে।
-আচ্ছা রাত্রি আপু অরুপ ভাইয়াকে বিয়ে করছে কেন?
-বিয়ে করছে কেন মানে?
-মানে,,,,,
-ওরা দু’জন দু’জনকে পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসে অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে আজ ওরা এক হয়েছে।
-কিহ্?
-হুম।
তাহলে আমি যে এতোদিন ধরে যেটা জানতাম সেটা ভুল। মেঘ আর রাত্রির মধ্য এমন কোন সম্পর্ক ছিলো না।
-আমি জানি তুমি কি ভাবছো এখন এইসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই। পরে আমি তোমায় সবটা বলবো।(মেঘ)
হঠাৎ করেই আমার খুব ঝাল লেগে গেলো।
-কি ঝাল লেগেছে খুব?
-হুম। পানি খাবো।(মেঘ মুচকি হাসলো। আজবতো আমার ঝাল লেগেছে আর ও হাসছে)
-হাসছেন কেন?(বলার সাথে সাথে ও আমার ঠোঁটটা দখল করে নিলো। অনেকটা সময় পরে ছাড়লো)
এমন একটা সময় ও এমন কিছু করতে পারে আমি ভাবতেই পারিনি। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি।
-কি ঝাল কমেছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
-কমে নি?(ভ্রু কুচকে)
আবারও মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
-ওকে এতো ঝাল যখন তখন আর খেতে হবে না।(বলে খাবার নিয়ে চলে গেলো)
আর আমিতো পুরো বেকুব বনে গেলাম। এটা কি হলো আমিতো না বললাম যাতে ও আর একবার আমায়,,,,,,, কিন্তু ও কি করলো। রিতিমত অপমান করে চলে গেলো আমায়। ধ্যাত যেচে অপমানিত হলাম এখন। আর এই ছেলেটা এমন কেন আল্লাহই জানে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে রুমে একা একা বসে আছি। মেঘ সেই যে গেলো আর আসার খোজই নেই। ধুর ভালো লাগছে না। একটু বাইরে যায়। এতো সময়ে নিশ্চয় বিয়ে পড়ানো শেষ। ভাবতে ভাবতেই মেঘ রুমে আসলো।
-কি ব্যাপার তুমি নিচে নেমেছো কেন?(মেঘ)
-(চুপ)
-তোমার শরীর এখন অনেক দুর্বল এই অবস্থায় একা একা হাটাচলা করবে না।(বলে আমায় ধরে বসাতে গেলো আর আমি ওকে সরিয়ে দিয়ে একা একাই বসলাম) ও আমার পাশে বসে আমার হাত ধরলো। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি তখনই ও বললো
-আর একবারও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে দেখ কি করি।(মেঘ রেগে বললো)
আমি তাও ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।
-আমি শেষ বারের মতো বলছি বেশি নাচানাচি করলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। আমার কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে।
আমি ওর কথার তোয়াক্কা না করে নিজের মতো চেষ্টা করেই যাচ্ছি ছাড়ানোর। এবার ও আমায় জোর করে ওর দিকে ঘুরিয়ে খুব জোরে মুখ চেপে ধরে কিস করতে লাগলো। আমি ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায়। মনে হচ্ছে এখনই দম আটকে মারা যাবো। কিন্তু ও আমায় ছাড়ছেই না। আরও কিছু সময় পর ও আমায় ছেড়ে দিলো। আমি হাপাতে লাগলাম। ও চুপ করে বসে আছে। আমার চোখ বেয়ে পানি পরছে। অনেকটা কষ্ট হচ্ছে।
-আমি বাড়ি যাবো। আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।
মেঘও কিছু না বলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলো। আসার পথে একটাও কথা বলিনি ওর সাথে। ও অনেকবার চেষ্টা করেছিলো কথা বলার কিন্তু আমি বলিনি। ও আজ যেটা করলো তার জন্য আমি ওকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। আমরা বাড়ি চলে এলাম। মেঘ আমায় ধরে আনতে যাচ্ছিলো কিন্তু আমি নিজেই চলে এসেছি ওকে ধরতে না দিয়ে।
-কি রে তোরা এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?
-হঠাৎ করেই ওর একটু শরীর খারাপ করেছে তাই ওকে নিয়ে চলে এলাম।(মঘ)
-কেন কি হয়েছে? নাশু কি হয়েছে তোর?(মা)
-মা তেমন কিছু হয়নি। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।(আমি)
-ঠিক হয়ে যাবে বললেই হলো। মেঘ ওকে ডাক্তার দেখিয়েছিস?(মা)
-হুম। তেমন কোনো সমস্যা নেই মা। তুমি চিন্তা করো না।(মেঘ)
-আচ্ছ ঠিক আছে তুই ওকে রুমে নিয়ে যা। একটু বিশ্রাম নিক। (মা)
-ঠিক আছে।(মেঘ)
তারপর আমি আর মেঘ রুমে এলাম। আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বসে রাগে ফুলছি আর মেঘ পায়চারী করছে। হঠাৎ করেই ও আমার সামনে মেঝেতে বসে পরে আমার কোলে মাথা রাখলো। খুব রেগে আছি ওর উপর কিন্তু ওর এইভাবে আমার কোলে মাথা রাখাতে সব রাগ যেন ফুঁস হয়ে গেলো। কিন্তু তবুও ওকে ওঠানোর চেষ্টা করতেই ও বললো
-একটা গল্প শুনবে?
-আমার এখন গল্প শুনতে ভালো লাগছে না।
-প্লিজ একবার শোনো না।(অনেক করুন ভাবে বললো)
-ঠিক আছে বলুন।(তারপর ও বলতে শুরু করলো)
একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতো। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো। মেয়েটি ছেলেটিকে সেটা বলে কিন্তু ছেলেটি তখনও বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। পড়াশোনা শেষ হয়েছিলো অনেক আগেই কিন্তু চাকরির জন্য যে টাকা চাইতো সেটা দেওয়ার সামর্থ্য তাদের ছিলো না কারণ তাদের পারিবারিক অবস্থা ততোটা ভালো নয়। তাই তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিলো না। তারপর মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলেটি মেয়েটিকে খুব ভালোবাসতো আর মেয়েটিও ছেলেটিকে। ছেলেটা বিয়ের কথা শুনে প্রায় পাগল হয়ে গেছিলো কিন্তু সাহস করে মেয়ের বাবা সামনে দাড়াতে পারেনি। মেয়েটির বিয়ের দিন সকালে ছেলেটির বেস্ট ফ্রেন্ড মেয়েটিকে পালিয়ে নিয়ে আসে আর ছেলেটির সাথে বিয়ে দেয়। এই বিয়েটা দুই পরিবারের কেউই মেনে নেয় না। তখন ছেলেটির বেস্ট ফ্রেন্ড ওদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। তার বাবার অনেক টাকা পয়সা ছিলো সে তার বাবাকে বলে ছেলেটির একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। তার নিজেরও একটা তিন বছরের ছেলে ছিলো। ছেলেটির বিয়ের এক বছর পর একটা মেয়ে হয়। তখন ছেলেটির সেই ফ্রেন্ড ছেলেটির কাছে তার মেয়েকে চায় নিজের ছেলের বউ হিসাবে। ছেলেটি তার ফ্রেন্ডের কাছে চির ঋণি তাই কৃতজ্ঞতা বোধ আর তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরো গভীর করতে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ওয়াদা করে তার মেয়ে বড় হলেই ওদের বিয়ে দেবে। তার দুই বছর পর ছেলেটির ব্যাংক এ চাকরি হয় এটাও তার বেস্ট ফ্রেন্ড যোগাযোগ করে দেই। তখন তারা দুজন পাশাপাশি ফ্লাট ভাড়া নেয়। জানো সেই ছেলেটি আর তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে,,,??
-(আমি চুপ করে আছি কারণ বুঝতেই পারছি এটা বাবা আর আংকেলের গল্প। বাবার কাছে শুনেছি।)
-ঠিক ছেলেটি তোমার বাবা আর বেস্ট ফ্রেন্ডটা আমার বাবা। আর তাদের ছেলে মেয়ে আমি আর তুমি।
-হুম। আংকেল মানে বাবা আমার বাবা-মায়ের জন্য যেটা করেছে সেটা সত্যি অতুলনীয়। কিন্তু আপনার আর আমার বিয়ের ব্যাপার টা আমি জানতাম না।
-হুম। সেটা জানি। তারপর শুনো।
-বলুন
-আমার বয়স যখন ছয় বছর তখনও আমি পুতুল নিয়ে খেলতাম। একদিন হঠাৎ করেই আমার পুতুলটা নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন আমি খুব কাঁদছিলাম ওটা আমার সব থেকে প্রিয় পুতুল ছিলো। আমার কান্না দেখে মা আমায় বলে “মেঘ সোনা ছেলে আমার কাঁদে না। চলোতো আজ আমরা তোমার জন্য একটা সত্যি কারের পুতুল নিয়ে আসবো। জানো পুতুলটা আদো আদো কথা বলে, হাটে, হাসে, খেলে। পুতুলটা তোমার তুমি সারাদিন ওর সাথেই খেলবে” তখন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। মা আমায় আমাদের পাশের ফ্লাটে নিয়ে যায়। ওখানে যাওয়ার পর দেখি একটা ছোট্ট পুতুল বসে খেলা করছে। আমি পুতুলটার কাছে যেতেই দেখলাম এটা পুতুল নয় এটা ছোট্ট একটা পরী। আমি মা কে তখন বলেছিলাম মা এটাতো পুতুল নয় এটা তো পরী। তারপর থেকে সেই পরীটাই আমার একমাত্র খেলার সাথী। পরীটাকে আমি কারোর কাছে যেতে দিতাম না। সব সময় আমার কাছেই রেখে দিতাম। আমি সারাদিন পরীর সাথেই থাকতাম। স্কুলে যেতে চাইতাম না মা জোর করে স্কুলে পাঠাতো, স্কুল থেকে এসেই পরীর কাছে চলে যেতাম। আমি মাকে সব সময় বলতাম মা পরীটাতো আমার তাহলে ওকে আমাদের বাড়িতে কেন রাখি না ও এখানে থাকে কেন? মা বলতো বড় হলেই পরীটাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন পরীটাতো ছোট তাই এখন আমরা ওকে নিয়ে যেতে পারবো না। তখন থেকেই আমি শুধু ভাবতাম কখন বড় হবো আর পরীকে নিয়ে যাবো। আস্তে আস্তে আমি পরী দু’জনই বড় হতে থাকি। আমি সব সময় পরীরকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করতাম। ওর মুখের এক ফোটা হাসি দেখার জন্য সব করতে পারি। সারাদিন ওর সাথে দুষ্টামি করতাম। ওকে রাগাতে, ওর বিনুনি ধরে টানতে, ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে, ওর সাথে এক প্লেটে খাবার খেতে, ওকে খাইয়ে দিতে, মাঝে মাঝে বকতে, শাসন করতে, রেগে ওর গালে কামড় দিতে আমার খুব ভালো লাগতো। মন হতো পরীটাতো আমারই আমি যা খুশি করতে পারি। আর পরীটাও সারাদিন আমার কাছেই থাকতো। কখনো কখনো আমার আসতে দেরি হলে বা না আসলে ও কান্না করতো। সারাদিন কিচ্ছু খেতো না। আমি এসে কান ধরে রাগ ভাঙিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম। ওর একটু কষ্ট হলে তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট আমার হতো কারণ পরীটা যে আমার। ও আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝতো না। জানো একবার খেলতে গিয়ে আমার হাত কেটে গেছিলো ও আমার কাটা হাত নিয়ে সারাদিন বসে ছিলো আর কাঁদছিলো। মেঘপরী গান খুব ভালোবাসতো শুধুমাত্র ও ভালোবাসতো বলেই আমি গান শিখি। প্রতিদিন ১/২ টা করে নতুন নতুন গান শোনাতাম ওকে। ও আমার গান শুনতে খুব ভালোবাসতো। আস্তে আস্তে আমরা বড় হতে থাকি আর আমিও বুঝতে পারি পরী শুধু পরী না সে আমার জীবনে আমার মেঘপরী। সে শুধুমাত্র আমার মেঘপরী। আমি তাকে মেঘপরী বলেই ডাকতাম। অন্য কাউকে এই নামে ডাকতে দিতাম না। মেঘপরীকেও মানা করে দিয়েছিলাম যাতে এইনামে ওকে আর কেউ না ডাকে। আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারি আমি নিজের মেঘপরীকে অনেক বেশী ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি, যেটা কোন ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। মেঘপরী তখনো অনেকটাই ছোট তাই ওকে কখনো আমার মনের কথাগুলো বলিনি কারণ ও এই ভালোবাসাটা বুঝবে না। এই ভালোবাসা বোঝার বয়স ওর হয়নি। যখন ও ভালোবাসা কি বুঝবে তখনই নিজের মনের কথাগুলো ওকে বলবো। বলবো ওকে আমি কতটা ভালোবাসি, বলবো ও আমার পুরো অস্থিত্বে মিশে আছে, ও আমার জীবনের অক্সিজেন যেটা ছাড়া আমি এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবো না। আমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর বাবা আমায় পড়াশোনার জন্য লন্ডন পাঠিয়ে দেয়। ও তখন ক্লাস নাইন এ পরতো। যথেষ্ট বড় হয়েছিলো কিন্তু মনটা ছিলো একদম শিশুদের মতো পবিত্র। তখনও ও বাইরের জগৎ সম্পর্কে কিছুই বুঝতো না আমি ওকে কখনো বুঝতে দিনি। আমি চাইতাম আমার মেঘপরীটা সহজ-সরল আর এমন বোকা, আর নামাজী মেয়ে হয়েই থাক। যে আমাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না, জানবে না। যেদিন আমি চলে যাচ্ছিলাম সেদিন আমার মেঘপরীটা সবার সামনে আমায় জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো আর বার বার বলছিলো তুমি না আমায় ওয়াদা করেছিলে সবসময় আমার পাশে থাকবে তাহলে আজ চলে যাচ্ছো কেন আমাকে ছেড়ে। সেদিন ওকে স্বান্তনা দেওয়ার মতো কিছুই বলার ছিলো না আমার। শুধু পারছিলাম না ওকে নিজের বুক চিরে আমার ভালোবাসা আর ওকে ছেড়ে যাওয়া কষ্টটা দেখাতে। সেদিন ওখানে মেঘপরীকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে ওকে আর নিজেকে ওয়াদা করেছিলাম পড়ালেখা শেষ করে বাড়ি ফিরেই ওকে চিরকালের জন্য নিজের করে নিবো। তবে খুব চিন্তা হচ্ছিলো আমি চলে যাওয়ার পর আমার মেঘপরীটা বদলে যাবে না তো। ও এমন দুষ্টু আর বোকাই থাকবে তো? আমায় এইভাবেই ভালোবাসবে তো? আমায় ভুলে যাবে নাতো। আমি লন্ডনে যাওয়ার পর রোজ ওর সাথে ২/৩ বার কথা বলতে হতো না হলে ও রাগ করে কিছু খেতো না। আমার মনে হতো আমি যেমন ওকে ভালোবাসি ঔ আমায় তেমোনি ভালোবাসে। না হলে ও কখনো এমন করতো না। দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে তিন বছর কেটে যায়। আমার মেঘপরী তখনো একটুও বদলায় নি। আগের মতই ফোনে আমার সাথে দুষ্টামি করতো। একদিন সকালে আংকেল নিজে থেকেই আমার কাছে কল দেন। সেদিন উনি আমায় বলেন আমার পরীক্ষার তো আর মাত্র কয়েকমাস বাকি আমি যেন পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি ফিরে আসি। ওনার নাকি শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে