ওয়াদা২১

0
3250

ওয়াদা২১
সারাদিন সবাই মিলে অনেক মজা করলাম। একটু পর সন্ধ্যা হবে আর তারপর হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে।
-নাশু চল?(তন্নি)
-কোথায়?
-আমাদের এখান থেকে একটু দূরে একটা পার্লার আছে। সবাই বলছে ওখান থেকে সাজতে। আমরা সবাই যাচ্ছি। তুইও চল।
-আচ্ছা,,,,,,,
-ও কোথাও যাবে না।(মেঘ)
-মানে?(আমি)
-মানে তুমি পার্লারে সাজতে যাবে না।(মেঘ)
-কিন্তু কেন?(আমি)
-কারণ আমি বলছি তাই।(মেঘ)
-এটা আবার কেমন কথা। আপনি বলবেন বলে আমি যাবো না?
-হ্যা যাবে না।
-আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।
-বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করিনা সেটা তুমি ভালো করেই জানো। আমি বলছি তুমি পার্লারে যাবে না। ব্যস।(বলেই চলে গেলো)
-তাহলে আর কি তুই বাড়িতেই থাক। ভাইয়াকে তো চিনিস। আসছি।(বলে ওই চলে গেলো)
ধূর ছাই ভালো লাগেনা। এই লাটসাহেব টা আমার সাথে এমন করে কেন কে জানে। কি এমন হতো সবার সাথে গেলে। সবাই পার্লার থেকে কত সুন্দর করে সেজে আসবে। আর আমি,,,,,,,
-কি ব্যাপার তুমি এখানো এখানে? পার্লারে যাবে না? সবাইতো চলে গেছে।(শুভ)
-না। আমি যাবো না।
-যাবে না? কেন?
-এমনিতেই ভালো লাগছে না।
-শরীর ঠিক আছেতো?
-হুম শরীর ঠিক আছে। এমনি যায়নি। আমি বাড়িতেই সাজবো।
-ও। ওকে। আমি নিচে আছি তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো।
-ওকে।
শুভও চলে গেলো। আর আমি ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে বসে আছি। মা যে কখন আসবে। একটু পর মা এসে শাড়িটা পরিয়ে দিলো। শাড়ি পরা শেষে চুলটা বাধতে যাবো তখনই আবার মেঘ এলো। ওকে দেখে এখন আমার খুব রাগ হচ্ছে পার্লারে যেতে দেয়নি বলে। তাই অন্যদিকে মুখ করে বসে আছি।
-কাকিমা বলছি এই প্যাকেটটা নাও।(মেঘ)
-কি আছে এতে?(মা)
-এতে কিছু ফুলের গয়না আছে। তোমার মেয়েকে পরিয়ে দাও আর মাঝখান থেকে সিতে কেটে চুলগুলো ছেড়ে দিতে বলো আর চোখে একটু মোটা করে কাজল দিতে বলো ভালো লাগবে। আর শারিটা বেড় করে পরিয়ে দাও। ওর এই শাড়ির সাথে এমন সাজটা বেশ মানাবে।(মেঘ)
বাব্বা? আমার জন্য এতো ভাবে। ভাবে না ছাই এইভাবে সাজলেতো আমায় পুরো পেত্নী লাগবে। আর উনি এটাই চান যে আমায় সবার থেকে খারাপ দেখাক।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুই যেমনটা বললি আমি তেমন ভাবেই ওকে সাজাবো।
-ওকে। আমি এখন আসছি।(বলে চলে গেলো)
-মা দেখ আমি কিন্তু ওইভাবে সাজতে পারবো না। আমি জানি ওইভাবে সাজলে আমায় একদম পেত্নী লাগবে।
-তুই একদম চুপ করে থাক।
-মা প্লিজ আমি ওই সব ফুলের গয়না টয়না পরবো না। আর মাঝখান থেকে সিতে? আমি জীবনে মাঝ খান থেকে সিতে করিনা।
-তোকে চুপ করে বসে থাকতে বলেছি। যদি ভালো না লাগে তাহলে সাজ চেন্জ করে ফেলবি।
-কিন্তু মা,,,
-চুপ।
তারপর মা আমাকে শাড়িটা পরিয়ে মেঘ যেমনটা বলেছিলো তেমন ভাবেই সাজিয়ে দিলো। আমি অনেকবার আয়নাতে দেখতে চেয়েছি কেমন লাগছে কিন্তু মা দেখতে দেয়নি। জোর করে নিচে নিয়ে গেলো। নিচে যেতে আমার খুব ভয় করছে কারণ আমি খুব ভালো করেই জানি আমায় এই সাজে খুব বাজে দেখাচ্ছে। সবাই পার্লার থেকে চলে এসেছে। সবাইকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে। সবাই কুচি দিয়ে শাড়ি পরেছে আর আমায় বুড়িদের মতো বেড় দিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। আমি সিড়ি দিয়ে নিচে নামছি। সাবই যে যার মতো রয়েছে। কিন্তু আমার কেমন যেন লাগছে। নামতে নামতে খেয়াল করলাম মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক ভাবে। আমি ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম। ও একটা মুচকি হাসি দিলো। ওর এই হাসিতে অনেকটা সস্তি পেলাম। তারপর সাহস করে নিচে গেলাম। আমি নিচে যাওয়ার সাথে সাথেই সবাই আমার দিকে তাকালো। শুভতো পুরো হা করে তাকিয়ে আছে। একটা মহিলা এসে বললো।
-বাহ। খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। চাচি (অন্য একটা মহিলাকে উদ্দেশ্যে করে বললো) তোমার ছেলের জন্য এমন একটা মিষ্টি বউ দরকার।
ওনার কথা শুনে আমি পুরো ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আর শুভর মুখটা দেখার মতো ছিলো। রাগে ওর মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে। ওকে আর একটু রাগানোর জন্য আমি একটু লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করলাম। ওর নাক কান সব লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি বোমা ফাটবে। কেন জানিনা ওকে রাগাতে বেশ ভালই লাগছে। তন্নিকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি তন্নির পাশে গেলাম।
-আচ্ছা আমি না একটা জিনিস বুঝতে পারছি না।(তন্নি)
-কি বুঝতে পারছিস না?(জয়া)
-এটাই যে আজকে কার হলুদ অনুষ্টান।(বলে আমার গালটা টেনে দিলো)
-হ্যা রে নাশু। তোকে খুব সুন্দর লাগছে। সবার থেকে একদম আলাদা রকম সুন্দর।(তুবা)
-থ্যাংক ইউ।
-আচ্ছা তোকে এইভাবে কে সাজিয়ে দিয়েছে?(জয়া)
-কে আবার মা।(আমি)
-আর সাজার আইডিয়াটা কার? তোর না আন্টির?(জয়া)
-আইডিয়া টা,,,,,(বলতে বলতে সামনের দিকে তাকালাম।)
দেখলাম মেঘ দাড়িয়ে আছে আর রাত্রি ওর দিকেই যাচ্ছে ফোনের দিকে তাকাতে তাকাতে। এইভাবে কেউ হাটে। ধাক্কা খাবে তো। বলতে বলতেই ধপাস। যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো রাত্রি আবার মেঘের উপর পরে গেলো। এই মেয়েটার কি মেঘের উপর পরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই নাকি। এবার তন্নি নয় আমি গেলাম রাত্রিকে ওঠাতে। রাত্রি গলার হার মেঘের জামার বোতামের সাথে আটকে গেছে। অনেক চেষ্টা করার পরও মেঘ ওটাকে ছাড়াতে পারছে না। তারপর রাগ দেখিয়ে নিজের জামার বোতাম টাই ছিড়ে ফেললো। আমি তাড়াতাড়ি রাত্রিকে ওঠালাম। মেঘ চলে গেলো। রাত্রির চোখ দিয়ে পানি পরছে। ঔ তাড়াতাড়ি চলে গেলো। হয়তো নিজের চোখের পানি কাওকে দেখাতে চায়না তাই। মেয়েটি সত্যি মেঘকে খুব ভালোবাসে। যে ভাবেই হোক আমায় ওদের দুজনকে এক করে দিতেই হবে। হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টেনে নিতে যেতে লাগলো। তাকিয়ে দেখি শুভ।
-আরে শুভ তুমি আমায় এইভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
-চুপ।(একটু রাগি ভাবে বললো)
এর আবার কি হলো। ও সোজা আমায় ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদে গিয়েতো আমি অবাক। ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে একটা লাভের মধ্য লেখা I Love u Nasu Buri. ফুল দিয়ে লেখা। এটা দেখে আমি যে কি পরিমান খুশি হয়েছি সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আর যখন ওর হাতটা দেখালো তখন খুশিতে শুভকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছি। ও হাত কেটে আমার নামের প্রথম অক্ষর লিখেছে। এই প্রথম শুভকে জড়িয়ে ধরেছি।
-এই পাগলি তুমি কাদছো কেন হুম?(শুভ)
-জানি না। কিন্তু কাদতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমায় এতোটা ভালোবাসো?
-আমি তোমায় এর থেকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
-তোমার খুব কষ্ট হয়েছে না?
-নাতো একদমি কষ্ট হয়নি। তোমার জন্য আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারি।
-কিন্তু তুমি এমনটা কেন করলে। তুমি জানোনা আমি এইসব পছন্দ করি না। তার থেকে বড় কথা তুমি আমার জন্য নিজেকে এতোটা কষ্ট দিলে কেন?
-ধূর পাগলি। বলছিতো আমার একটুও কষ্ট হয়নি।
-বললেই হলো না। তোমার এখানে ব্যাথা করছে না?(বলে ওকে ছেড়ে দিলাম)
-হুম তাতো করছেই।
-তাহলে মিথ্যে বললে কেন?
-এমনিতেই।
-আচ্ছা তুমি এখানে বসো। আমি তোমার জন্য মলম নিয়ে আসি।
-না থাক লাগবে না।
-লাগবে না মানে? তোমার না ব্যাথা করছে।
-হুম করছে।
-তাহলে?
-তাহলে? তাহলে মলম এ কাজ হবে না।
-তাহলে কিসে কাজ হবে?
-তোমার ওই গোলাপি ঠোট দিয়ে একটা মিষ্টি কিস দিলে ব্যাথা একদমি কমে যাবে।
-যাহ্ দুষ্টু।
-আমি দুষ্টু?
-হুম।
-তাহলে একটু দুষ্টামি করে দেখাই।(বলে আমার দিকে এগিলে এলো)
-নাহ। বিয়ের আগে তোমার কোনো দুষ্টুমি সহ্য করবো না। (বলেই চলে এলাম)
পাগল একটা। মাঝে মাঝে কি যে করে না। হাত কেটে আমার নামের প্রথম অক্ষর লিখে বসে আছে। সত্যি একটা পাগল। এইসব কথা ভেবে মুচকি হাসছি আর হাটছি। হাটতে হাটতে একটা রুমে কারোর কথার আওয়াজ পেলাম। বেশ রেগে কথা বলছে মনে হচ্ছে।
-এইসব কিছুর মানে কি রাত্রি?(মেঘ)
-কোন সবের?
-তুমি তন্নির ভার্সিটি ফ্রেন্ড এসবের মানে কি? তুমি তন্নির ফ্রেন্ড কবে থেকে হলে। আর তুমি তন্নির ঠিকানায় বা পেলে কিভাবে?
-চাইলে কি না পাওয়া যায় মেঘ?
-চাইলেই সব পাওয়া যায় না। তুমিতো আমার সাথে লন্ডনে পড়েছো। তাহলে তুমি তন্নির ভার্সিটি ফ্রেন্ড হলে কিভাবে?
-আমি তন্নিকে তোমার আর আমার বেপারে সব বলেছি।
-তার মানে তন্নি সব জানে? তুমি তন্নিকে কেন বলেছো?
-তন্নিকে সত্যিটা না বললে আমি এখানে কখনো আসতে পারতাম না। ও আমায় হেল্প না করলে তুমি পর্যন্ত কখনো পৌছাতে পারতাম না তাই বলতে বাধ্য হয়েছি।
-এখানে এসে তুমি ভুল করেছো রাত্রি।
-আই এম সরি মেঘ। আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছি। কিন্তু মেঘ আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি। ভালোবাসা কি সেটা আজ আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। তাই আজ তোমার কাছে ছুটে এলাম। সেদিন লোভে পরে যে অন্যায়টা করেছিলাম তার শাস্তি আমি এখনও পাচ্ছি। প্লিজ মেঘ আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমায় একটা সুযোগ দাও। আর একবার আমার উপর বিশ্বাস করে দেখো।
-বিশ্বাস? আর তোমার মতো মেয়েকে। যে কিনা টাকার জন্য কারোর ভালোবাসা নিয়ে এমনভাবে খেলা করে। হাসালে। শোন রাত্রি তোমার মতো মেয়েরা শুধু নিজেকেই ভালোবাসতে পারে। তোমাদের কাছে অন্যের ইমশোনের কোনো দাম নেই। টাকার জন্য তোমরা সব করতে পারো। একটা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও পারো। আমি তোমায় কোনোদিনও ক্ষমা করবো না। চলে যাও এখান থেকে। সকালে উঠে যেন তোমায় না দেখি। (বলেই মেঘ চলে গেলো)
আমিও তাড়িতাড়ি ওখান থেকে চলে আসলাম।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে