এক শহর ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
2878

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৮
#সুরাইয়া_নাজিফা

বিছানা উপর থেকে সবে মাত্র ফোনটা হাতে নিলাম তখনই কেউ আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে সপাটে আমার গালে চড় মেরে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি পুরা হতভম্ভ হয়ে গেলাম।গালের একপাশে শিরশির করছে যেন কোনো সার পাচ্ছিনা। অবশ হয়ে গেলে যেমন হয় তেমন মনে হচ্ছে। এমন হঠাৎ আক্রমণে কেমন প্রতিক্রিয়া দিতে হয় সেটা যেন আমি ভুলেই গেছি। আমি স্থির হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সামনের মানুষটার দিকে।আর সামনের মানুষটা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে।

তখনই আমার মুখের উপর আমার রুমালটা ছুড়ে মেরে বললো,
“তোমাকে কিছু বলি না মানে যা মনে আসে তাই করছো। কি পেয়েছো আমাকে? আমারই ভুল হয়েছিল তোমাকে বিশ্বাস করে তোমার দেওয়া জিনিস নেওয়া।তোমার থেকে কিছু আশা করা। সবসময় আমাকে ছোট করার কথাই মাথায় ঘুরঘুর করে।সেলফিস মেয়ে একটা সবসময় নিজেকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবাবতেই পারো না। এরপর থেকে তুমি একদম আমার থেকে দূরে থাকবে ।জাস্ট স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি স্টুপিড। ”

কথাটা বলেই শান হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো। রাগে শরীর ফেঁটে যাচ্ছে শানের। নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। পাশের দেওয়ালে শান নিজের হাত দিয়ে সজরে একটা ঘুশি মারল। হাতটা পুরো লাল বর্ণ ধারণ করলো। শান একবার নিজের হাতের দিকে তাকালো এইহাত, এইহাত দিয়ে আজ ও ওর পরীকে মেরেছে। ভাবতেই বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।কেন যে ও ওর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারেনা জানা নেই। শান ছাঁদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন আগের কথাই ভেবে যাচ্ছে।

আজকে শানের নতুন অর্ডারের কাজটা শুরু করার কথা ছিল।এজন্যই জরুরী একটা মিটিংও ছিল। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছে তারাসহ ঐশীদের কম্পানির থেকেও সব স্টাফরা উপস্থিত ছিল। ঐশী নেই সব শানকে সামলাতে হবে এজন্যই শান আজকে অন্যদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছিল। এই কাজটা কমপ্লিট হলে অনেক প্রফিট হবে সবারই। শান অনেক খুশি ছিল তারউপর সকালে সোহার দেওয়া উপহার যেটা ওর খুশিটাকে দ্বিগুন করে দিয়েছিল।

অফিসে পৌছাতেই তিমির বললো,
“কি ভাই আজকে এতো খুশি খুশি লাগছে কি ব্যাপার? ”

শান তিমিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুশি তো হতেই হবে আজকে কত ভালো একটা দিন বল। যাইহোক ঐদিকের সব কিছু রেডি তো? ”
তিমির হাত দেখিয়ে বললো,
“সব একদম ফার্স্ট ক্লাস আছে। ”

তখনই শানের পি.এ এসে বললো,
“স্যার সবাই চলে এসেছে মিটিং রুমে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে চলুন। ”

শান মাথা নেড়ে সায় দিলো। তারপর ওরা তিনজনই এগিয়ে গেল মিটিং রুমের দিকে। শান সবার সাথে খানিকটা কুশল বিনিময় করে স্লাইডে চলে গেল। খুব সুন্দর করে স্লাইডটা সবাইকে বুঝিয়ে দিল কিভাবে কি হবে?কে কোন কাজ করবে? কে কোনটার দায়িত্বে থাকবে সবকিছু।স্লাইড শেষ হওয়ার পর শান সবাইকে বললো,

“আশা করি আপনারা সবাই বুঝে গেছেন কিভাবে কি করতে হবে। আমি চাই প্রজেক্টটায় কোনো ভুল ত্রুটি না হয়। একদম পারফেক্ট ভাবে কাজটা শেষ করবো আমরা। আশা রাখছি আপনারা সবাই আমাকে প্রজেক্টটা সাকসেসফুল করতে সাহায্য করবেন। ”

শান কথাটা শেষ করতেই সবাই একসাথে বললো,
“ওকে স্যার। ”

কাজ শেষে শান এসে নিজের চেয়ারে বসল। ম্যানেজার বাকি কাজটুকুও সবাইকে বুঝিয়ে দিল। শান কিছু বলবে তাই সবাই শানের দিকে মনোযোগ দিল। তখনই তিমির শানকে নিচু স্বরে বললো,
“শান তোর গালে মার্কারের লাল কালি লেগেছে এটা মুছে ফেল। ”

তিমিরের কথা শুনে শানের মনে পড়ল তখন স্লাইড বুঝাচ্ছিল সেই কালি হয়তো।শানও নিচু স্বরে বললো,
“বেশী লেগেছে?”
“না হালকা। একটা টিস্যু নিয়ে মুছে নে হয়ে যাবে। ”

শান পাশে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিতে যাবে তখনই মনে হলো সোহার রুমালের কথা। সোহা বারবার বলেছে সেটা যেন ইউজ করে। এই প্রথম সোহা মন থেকে শানকে কিছু দিয়েছে তাও নিজের ওড়না দিয়ে শান সেটা ইউজ করবে না এটা কখনোই হতে পারেনা। তাই শান পকেট থেকে রুমালটা বের করে নিলো।রুমালটার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলো। এতো ভাজ করা কেন বুঝতে পারছে না শান। সকালেও সোহা যখন দিয়েছিল শান খেয়াল করেছিল তবে সময় ছিল না দেখে জিজ্ঞেস করা হয়নি। হঠাৎ তিমির বললো,

“ভাই রে ভাই এটা যে ভাবী উপহার দিয়েছে সেটা তোর মুখের হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।কতো ভালোবাসা। ”
তিমির হাসল কিছুটা সাথে শানও তারপর আবার বললো,
“এবার রুমাল নিয়ে জল্পনাকল্পনা শেষ হলে এইবার মুছে বাকি কাজটাও কম্প্লিট করে মিটিংটা শেষ কর। সবাই ওয়েট করছে। ”

তিমিরের কথা শুনেই শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। রুমালের ভাজ খুলে সেখানে হালকা একটু পানি নিয়ে মুখটা মুছে নিলো। তারপর আবার বলা শুরু করলো। উপস্থিত সবাই শানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথে একে অপরের সাথে কানাঘুষা তো আছেই।অনেকে মিটিমিটি হাসছেও। তিমির পুরা স্পিচলেস হয়ে গেছে শানকে দেখে। সবার হঠাৎ এমন ব্যবহারে শান প্রচন্ড বিরক্ত হলো।

শান বিরক্তি নিয়ে বললো,
“হোয়াট হ্যাপেন? কি হয়েছে সবার?এভাবে আমার দিকে কি দেখছেন। কাজে মনোযোগ দিন। ”

শানের ধমক শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। কেউ মুখ খুলছে না। তখনই তিমির শানকে বললো,
“উঠ এখান থেকে চল আমার সাথে।”

তিমিরের কথা শুনে শান অবাক হলো,
“মিটিং মাঝ পথে রেখে কোথায় যাবো? ”

তিমির আর কোনো কথা না বলে শানের হাত ধরে টানতে টানতে মিটিং রুমের বাহিরে নিয়ে এলো।
“তিমির এটা কেমন ব্যবহার করছিস? কি হয়েছে বলবি তো? ”

“এখনি দেখতে পাবি চল আমার সাথে। ”

তিমির শানকে ওয়াশরুমে নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।শানের চোখ আয়নার দিকে পড়তেই পুরা শকড হয়ে গেল। পুরো মুখে কালি লেগে আছে। তিমির বললো,
“কালি কোথা থেকে লাগলো। নিজেকে নিজেই হাসির পাত্র না বানালে চলছিলো না।দেখে ইউজ করবি তো।”

শান নিজেও বুঝতে পারছে না কালি গুলো কি করে লাগলো। শান পুরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। শান তিমিরকে বললো,
“তুই যা এখান থেকে আর মিটিংটা ক্লোজ কর। আমি পরে কথা বলে নেবো। ”
“বাট শান…..।”
শান হাত দেখিয়ে তিমিরকে থামিয়ে দিলো,
“গো তিমির। আর কথা বলিস না। ”

শানের কথা শেষ হতেই তিমির চলে গেল।শানের আর বুখতে অসুবিধা হলো না এটা সোহারই কাজ।কিন্তু মনটা মানতে চাইছে না। কেন করবে সোহা এমনটা। তারপরও একটা পরীক্ষা করার জন্য শান তাড়াতাড়ি নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে পানির কলটা ছেড়ে তার নিচে রুমালটা ভেজাতেই কালো কালো কালি বের হতে থাকলো।শান নিজের চোখটা বন্ধ করে নিলো। রাগে শানের পুরো শরীরটা কাঁপছিলো। এজন্য না যে সবাই ওর উপরে হেসেছে। কষ্টটা এইজন্য হচ্ছিলো ও আজকে সোহার কাছে প্রথম উপহার পেয়ে যে খুশিটা হয়েছে সেটা একমুহূর্তে শেষ হয়ে গেল।শান ভেবেছিল হয়তো সোহার মনে ওর জন্য একটু একটু ভালো লাগা তৈরী হচ্ছে। কত আশা করেছিল এভার হয়তো ওদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো হবে কিন্তু এক নিমিষেই মনটা ভেঙে খান খান হয়ে গেল। কষ্টটা সেখানেই লাগছে। খুশির জায়গায় সোহার উপরে কিছু অভিমান, রাগ, ক্ষোভ জমা হয়ে গেল। ফলস্বরূপ এই ঘটনা। এসব ভেবেই শানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

আমি এখনো ওখানে ওভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গালে শানের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট পরে গেছে। এতক্ষনে আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরতে লাগলো। আমি সেলফিস? কি এমন করলাম সেলফিসের।আমি তো জাস্ট ওনাকে ফিল করাতে চেয়েছিলাম ঐদিন যখন উনি আমার সাথে এমনটা করেছিল তখন আমার কেমন লেগেছে। শানের কথা গুলো আমার হৃদয়ের এফোড় ওফোড় করে গেছে। না থাকবো না আমি আর উনার সাথে চলে যাবো ওনার থেকে অনেক দূরে। কথাটা বলেই আমি দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।



চারদিক মৃদু বাতাস বইছে তাতেও যেন হাড় কাঁপানো শীত লাগছে শানের। ছাদে যখন এসেছিল তখন সূর্যটা একদম মাথার উপরে ছিল। আর এখন সূর্যটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা বললেই চলে।সময় কত দ্রুত চলে যায়। চারদিকে কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। হাতের ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল সন্ধ্যা ৬টা বাজে। দেখে শান অবাক হলো এতটা সময় ও ছাঁদে ছিল। হঠাৎ শানের সোহার কথা মনে হতেই শান উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলো।কিন্তু রুমের কোথাও সোহা ছিল না। একদম যা ভেবেছিল তাই। কোথায় গেছে এতো রাতে। শান রুমের সব জায়গায় খুজলো। তারপর ওর মায়ের ঘরেও গেল। আশ্চর্যের বিষয় শানের মা রুমে ছিলই না।

শান দ্রুত নিচে নেমে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
“রহিমা আন্টি। ও রহিমা আন্টি। ”

দুইবার ডাক দেওয়ার পরই রহিমা রান্নাঘর থেকে নেমে ছুটে এলো,
“জে মেঝো বাবা। কিছু কইবেন? ”
শান রহিমার সামনে এসে বললো,
“আম্মা কই ঘরে দেখলাম না। ”
“বড় ম্যাডাম তো সকালেই সোহা বউমনির বাপের বাড়ি গেছে। এহনো আসে নাই। ”

শান কথাটা শুনে অবাক হলো সোহাদের বাড়ি গেছে কই মা আমাকে তো বলে নাই।শান আবার বললো,
“আচ্ছা সোহাকে দেখেছো? বাড়ি বাহিরে গিয়েছে নাকি বাড়িতেই আছে। ”
“তা কইতে পারিনা । আমি রান্নাঘরে আছিলাম। ”

কথাটা শুনেই শান হতাশ হলো। শানের চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ঐ মেয়ের যে অভিমান একটা অঘটন ঘটিয়ে বসবে না তো। উফ কেন যে তখন মাথাটা এতো গরম করতে গেলাম। ও তো জানেই সোহা এমনই। তারপরও কেন মাথাটা চট করে গরম হয়ে গেল।শান পুরো বাড়ির প্রত্যেকটা রুম আরেকবার খুজে নিলো।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। মাথা ধরে যাচ্ছে কোথায় যেতে পারে? আচ্ছা সোহা নিজের বাবার বাড়ি যায়নি তো?ভাবতেই পকেট থেকে শান নিজের ফোনটা বের করলো। শান নিজের মায়ের নাম্বার ডায়েল করে কল দিল। সাথে সাথে ফোন রিসিভড হলো।

শান চিন্তিত কন্ঠে বললে,
“আম্মা সোহা কি তোমার সাথে ওই বাড়িতে আছে? ”
“এই বাড়িতে থাকবে কেন?আমি তো একাই আসছি।”
শান মন খারাপ করে বললো,
“ওহ। ”
মায়মুনা (শানের মা) চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“কেন কি হইছে সোহা কি বাড়িতে নাই?তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন? ”
“কই কেমন লাগছে আসলে আমি এখনও অফিসে সকালে সোহা বলছিল তুমি নাকি ওদের বাড়ি যাবে তাই ভাবলাম ও তোমার সাথে গেল কিনা। এজন্যই জিজ্ঞাস করলাম। ”
মায়মুনা বেগম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন,
“তুই যেভাবে বলেছিলি আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। তো তোর আজকে এতো লেইট কেন? ”
“ওই অফিসে একটা জরুরী কাজ ছিল তাই। আচ্ছা আম্মা এখন রাখি বাড়ি ফিরে কথা হবে। ”
“আচ্ছা। ”

মায়ের সাথে কথা বলে আরো চিন্তা বেড়ে গেল। অদ্ভুত বাড়িতে নাই, বাবার বাড়ি যায় নাই তাহলে গেল কই। শান নিজের মাথায় হাত দিলো। সোহাকে দেখতে না পেয়ে যেন নিজের কাছে নিজেকেই পাগল পাগল লাগছে। শান দৌড়ে গেল গেটের কাছে।গিয়ে দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

“সোহাকে যেতে দেখেছো বাহিরে?”
দাঁড়োয়ান জবাব দিলো,
“না স্যার ম্যাডাম বাহিরে যায়নি। ”
শান এইবার রেগেই বলে উঠল,
“অদ্ভুত! একটা মানুষ কি তাহলে উদাও হয়ে যাবে নাকি বাড়ি থেকে।”

শানের চিৎকার শুনে দাঁড়োয়ান প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। শান কি করছে ও নিজেও জানে না। নিজের হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শানের চিৎকার শুনে মালি দৌঁড়ে এলো,
“কি হইছে বাবা? কিছু লাগবো? ”
শানের কান্না আসছে। ধরা গলায় বললো,
“চাচা সোহা কই দেখছেন ওরে। ”
“হয়। সেই সকাল থাইকা বাগানে বইয়া রইছে। ”

কথাটা শেষ হতে না হতেই শান পাগলের মতো ছুটল বাগানের দিকে।

অনেকক্ষন ধরে বাগানে বসে আছি। কান্না করতে করতে আমার চোখ ফুলে গেছে এখন তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে সাথে মাথা ব্যাথা। ঠান্ডা হাওয়া লাগছে গায়ে। কিন্তু এখন শরীরের কষ্টের চেয়ে মনের কষ্টটা বেশী লাগছে। আমার বাবা মা কখনো আমার গায়ে হাত তোলেনি আর উনি…..। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে বাট পারছিনা। মা যদি আমাদের বাড়িতে না যেত তাহলে হয়তো আমি আমার বাড়িতে চলে যেতাম বাট এখন আমার সেই রাস্তাটাও বন্ধ।

শান বাগানে এসে দেখল সোহা বাগানের বেঞ্চিতে দুই হাটুতে মুখ গুজে মাথা নিচু করে দিয়ে বসে আছে। শান আস্তে আস্তে সোহার কাছে এগিয়ে গেল। নিজের গায়ের ব্লেজারটা খুলে সোহার গায়ের উপর দিয়ে দিলো।

হঠাৎ গায়ের উপর গরম কাপড়ের মতো কিছু অনুভব হতেই আমি দ্রুত মাথা তুলে তাকালাম। মাথা তুলে তাকিয়ে শানকে দেখেই আমার ভিতর থেকে কান্নাগুলো ঠেলে আসতে চাইছে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম,

শান আমার পাশে বসে বললো,
“চলো অনেক ঠান্ডা পরেছে। বেশীক্ষণ বসলে অসুস্থ হয়ে যাবে।রুমে চলো। ”

আমি শানের পাশ থেকে উঠে একটু দূরে সরে দাঁড়ালাম। একটা কথাও বললাম না উনার সাথে। শান বেঞ্চ থেকে উঠে আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে বললো,
“চলো। ”

শান আমার হাত ধরতেই আমি ওনার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“হাত ছাড়ুন। ”
শান হেসে বললো,
“ছাড়ব না। ”
আমি আরো গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“হাত ছাড়ুন বলছি।”
“না ছাড়ব না। পারলে তুমি ছাড়িয়ে নেও। ”

কথাটা বলতেই আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে এক ঝাটকা মেরে আমার হাত উনার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর রেগে বললাম,
“একদম আমার হাত ধরবেন না। আমার যা খুশি হোক আপনি কে বলার। কোনো অধিকার নেই আপনার আমার উপর। ”

আমি যেতে নেবো তখনই শান আমার কোমড় ধরে হেচকা টান দিয়ে উনার সাথে মিশিয়ে নিলেন।
আমি কটমট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কি হচ্ছে বললাম না ছাড়ুন আমাকে। ”

আমি যতো ছোটাছুটি করছিলাম উনি আমাকে ততো শক্ত করে চেপে ধরলেন উনার সাথে। আমি উনার চোখের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আর উনি আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ উনি আমার সামনে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুছে দিয়ে বললো,

“ছাড়ব না তোমাকে। এভাবেই শক্ত করে জড়িয়ে রাখব তোমাকে।কারণ তুমি আমার স্ত্রী।তোমাকে সব ভাবে টাচ করার অধিকার আমার আছে। তুমি চাইলেও সেটা কেড়ে নিতে পারবেনা। তোমার সব কিছুর উপর আমার অধিকার আছে। ইনফেক্ট তোমার উপর আমার অধিকার সব চাইতে বেশী।তোমার কিসে ভালো হবে কিসে মন্দ হবে সেটাও দেখার অধিকার আমার আছে। তাই এই অধিকারের প্রশ্নটা কখনো আমাকে করো না ওকে। চলো রুমে। ”

আমি পূর্বের ন্যায় কঠোর গলায় বললাম,
“যাবো না আমি কোথাও। ছাড়ুন আমাকে। ”
“আমি আগেই তো বলেছি ছাড়ব না। ”
“ছাড়বেন না তাই তো। ”
শান মাথা নেড়ে বললো,
“হুম। ”

উনার তখনের চড়টা মনে হতে আমার এতো রাগ উঠলো আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উনার বাহুতে নিজের সমস্ত রাগ নিয়ে জোরে একটা কামড় দিলাম। কামড় দিতেই উনি কুকিয়ে উঠে আমাকে ছেড়ে দিলেন।উনি ছাড়তে আমি উনার থেকে দূরে সরতে নেবো তখনই আবার উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তবে এবার পিছন থেকে। উনার এক হাত আমার পেটে আর একহাত দিয়ে আমার দুইহাত শক্ত কটে ধরে গলার কাছে নিয়ে রেখেছে। উনি আমার কানের কানে মুখ নিয়ে বললো,

“উফ এভাবে কেউ কাউকে কামড় দেয়। বুঝলাম যে লাভ বাইট দিচ্ছো তাই বলে এতো জোরে। আমি যদি দিতে শুরু করিনা পুরো শরীর দাঁগ হয়ে যাবে মনে রেখ তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেন।”

উনার এসব কথা শুনে আমার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি উনার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“তখন আমাকে এতো জোরে চড় মেরেও আপনার মনের শান্তি হয়নি এখন নাটক করছেন। কি করতে এসেছেন এখানে?”

শান আমার ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“ভালোবাসতে এসেছি। একটু শান্ত হয়ে আমার কথাটা শোনো। ”

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
“শুনবো না আপনার কথা। আপনার কথা আপনার প্রেমিকাকে গিয়ে শুনান। ছাড়ুন আমাকে। ”

আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলাম। কিন্তু উনার মধ্যে আমাকে ছাড়ার কোনো হেলদোলই দেখতে পেলাম না। এতক্ষন ধরে উনার সাথে ধস্তাধস্তি করতে করতে আমার যেটুকু শক্তি ছিল সব ফুরিয়ে গেল। যতোই হোক উনার শক্তির কাছে আমি কিছুই না। আমি ক্লান্ত হয়ে ছোটাছুটি করা বন্ধ করে দিলাম,

“শক্তি শেষ সোনা। নাকি আরো দেখানো বাকি আছে। কেন শুধু শুধু এই ছোট্ট শরীর নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসো। জানোই যখন আমার কাছে তোমার হার সুনিশ্চিত। ”
উনার কথাটা শুনেই এতক্ষনের রাগ অভিমান গুলো আমার চোখে কান্না হয়ে বৃষ্টির ধারার মতো বইতে লাগলো। উনি এভার আমাকে ছেড়ে পিছন থেকে সামনে ঘুরালেন। আমি তখনও ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছিলাম। উনি আমার চোখের পানি দুই হাত দিয়ে মুছে ধীর কন্ঠে বললো,

“ডোন্ট ক্রাই পাখি। কেন কাঁদছো। দেখো মুখ চোখ ফুলে কি হয়েছে। আর কেঁদো না।স্যরি তো সোনা। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আমার রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই এমনটা করে ফেলেছি। প্রমিজ আর কখনো এমন হবে না। ”

আমার কান্না তখনও বন্ধ হয়নি। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে।শান আবার বললো,
“প্লিজ কান্না বন্ধ করো না ময়নাপাখি।”

আমি এভার ফুফাতে ফুফাতে বললাম,
“আমি আজকে যেই কাজটা করেছি তাতে আপনার ঠিক যতটা খারাপ লেগেছে আমারও সেদিন আপনার কাজে ঠিক একই রকম খারাপ লেগেছিল। এটা বুঝাতেই আমি কাজটা এক প্রকার মজা করেই করেছি। এজন্য দুঃখিত। বাট আপনি আমাকে শুধু শুধু ব্লেম করেছেন। আমি সেলফিস না। আমি কখনো কারো খারাপ চাইনি।আপনি কি করে আমাকে এতো খারাপ ভাবলেন। ”

কথাগুলো বলতে বলতে আমার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। সত্যি বলতে উনি আমাকে চড় মেরেছে খারাপটা আমার সেখানে লাগেনি। খারাপটা লেগেছে উনার কথা গুলোতে।

শান আমার দুই গালে হাত দিয়ে বললো,
“ওকে ওকে সোনা স্যরি বলছি তো আমি। আমি জানি তুমি কেমন? তাহলে কেন কষ্ট পাচ্ছো। আর যদি সেদিন তোমার সাথে যেটা করেছি সেটার কথা বলো তাহলে আমি বলবো আমার কাছে কারণ ছিল জান।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কি কারণ? ”
উনি ধীর কন্ঠে বললো,
“তোমাকে সেদিন এতো সুন্দর লাগছিলো যে আমি নিজেই তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। আমি চাইনি আমার বউয়ের দিকে আমি ছাড়া অন্য কেউ তাকাক তাই আমি ওরোকমটা করেছি।আর এটা করার জন্য আমি একটুও অনুতপ্ত নই আর না এটাতে কোনো ভুল আছে। ”

উনার এমন দৃঢ় কন্ঠে শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।উনি আর আমি এখন খুব কাছাকাছি বসে আছি বড়জোর হলে এক ইঞ্চি দূর হবে আমাদের। উনি আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।অনুতপ্ত হয়ে বললেন,

“খুব লেগেছে না। উফ কতটা ফুলে গেছে। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো। বিশ্বাস করো আমি এমনটা করতে চাইনি সুইটহার্ট। ওকে অপরাধ যখন আমি করেছি তার ক্ষতিপূরণও আমি দিবো।”

আমি মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনছিলাম। আমার চারপাশে যেন এক মুগ্ধতা ছেয়ে আছে। আমি এখনও তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। ক্ষতিপূরণ মানে? কেমন ক্ষতিপূরণ?

হঠাৎ আমার গালে উনার ঠোঁটের ছোয়া পেতেই আমি শিউরে উঠলাম।উনি আমার যে গালে থাপ্পর মেরেছিলেন সেই গালেই বারবার উনার ঠোঁট ছুয়ে দিচ্ছিলেন। আমার বুকের মধ্যে যেন একসাথে সব ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজছিলো। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল তারপরও আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে উনার থেকে দূরে সরে যেতে নিতেই উনি আমাকে আবার উনার কাছে টেনে নিলেন আর ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,
“উহুম। আজ আর দূরে যাওয়া নয় শুধু কাছে আসা। ”
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে