এক মুঠো প্রণয় পর্ব-০৫

0
418

#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_০৫
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

মেহেরাজ ভাইদের বাসার প্রত্যেকটা ঘর উঁকিঝুকি দিলাম। অবশেষে গিয়ে মেহু আপুর ঘরটা পাওয়া গেল।দরজা খোলাই আছে।ভেতরে মেহু আপুকে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুঁয়ে থাকতে দেখেই হাসি পেল।তবুও হাসলাম না।নরম গলায় বলে উঠলাম,

” আপু, আসব?”

আপু হঠাৎ হকচকিয়ে উঠল।শোয়া ছেড়ে সোজা উঠে বসে আমার দিকে তাকাল। বলে উঠল,

” এই জ্যোতি, তুই আমার ঘরে আসতে জিজ্ঞেস করে আসবি নাকি?যেকোন সময়, যখন ইচ্ছে তখনই আসতে পারিস। নিষেধ নেই।”

আমি সৌজন্যতামূলক হাসলাম।পা বাড়িয়ে আপুর কাছে গিয়েই বললাম,

” ও ঘরটা মেহেরাজ ভাইয়ের?তুমি আমাকে মেহেরাজ ভাইয়ের ঘরেই রেখে এলে?”

” চাচীরা বলেছিল, তোর আর ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে।সেই হিসেবে তোরা একঘরেই থাকার কথা।হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিয়েটা ঠিক পরিস্থিতিতে হয়নি।তোদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে, কিন্তু হয়েছে তো বিয়েটা। তোরা দুইজন এখন স্বামী-স্ত্রী, এটাই সত্য।তো দুইজনের একঘরে থাকা তো অযৌক্তিক নয় জ্যোতি।”

আমি ছোট্ট শ্বাস ফেললাম।ক্লান্ত চাহনীতে তাকিয়ে শুধালাম,

“যদি তোমার সাথে থাকব বলি অসুবিধা হবে কি আপু?”

আপু চুপ থাকলেন কিছুক্ষন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

” সত্যি বলব?আমার সাথে একঘরে থাকতে গেলে তুই বিরক্ত হয়ে যাবি।রাতে দেখা যাবে ঘুমের মধ্যে হুটহাট লাথি মেরে ফেলে দিব। একবার নাবিলাকে সোজা ফ্লোরে ফেলে দিয়েছিলাম।সে থেকে নাবিলা, সামান্তা কেউই কোথাও গেলেও আর আমার সাথে ঘুমোয় না।”

আপুর কথা সত্য।নাবিলা একবার গ্রামের বাড়ি গিয়ে কথাটা বলেছিল আমায়।নাবিলা হলো মেহেরাজ ভাইয়ের মেঝ চাচার মেয়ে।আমার সমবয়সীই বলা যায়।আগে গ্রামের বাড়িতেই থাকত বিধায় তার সাথে আমার সখ্যতাও আছে।আমি হতাশ গলায় বললাম,

” আমি যদি মানিয়ে নিতে পারি তোমার সাথে? ”

মেহু আপু আমাকে পুনরায় হতাশ করে দিয়ে জবাব দিলেন,

” চাচীরা দুইদিন পর গ্রাম ছেড়ে শহরে ফেরত আসবে।এসে যদি কিছু বলে তখন সব দোষটাই আমার উপর পড়বে।তুই ভাইয়াকে বিশ্বাস করতে পারিস। ভাইয়ার সাথে একঘরে থাকলে তোকে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।ভাইয়ার ব্যবহার, আচরণ ভালো।বিশ্বাস নাহলে মিলিয়ে নিস৷ ”

আমি চোখ বুঝে বিশ্বাস করলাম সব কথা।কারণ সবটাই আমার জানা।মেহেরাজ ভাই যে মেয়েদের প্রাপ্য সম্মানটা করেন তাও জানা।তাই আর কথা বাড়ালাম না।বসে থাকলাম মেহু আপুর পাশে।আপু আরো নানান রকম কথার আসর জমালেন।আমি সেসব চুপচাপ শুনতে লাগলাম।আর মনে মনে ভাবলাম, সৃষ্টিকর্তা যা কিছু নেন তার পরিবর্তে অবশ্যই কিছু ফেরত দেন।এই যেমন দাদীর ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়ে তটস্থ থাকা আমাকে আরো একটা ভালোবাসা ফেরত দিলেন।তা হলো মেহু আপু!এইটুকু সময়েই মনে হলো কতোটা ভালোবাসা উপহার দিলেন আমায়।আমি চোখ বুলিয়ে আপুর রুম দেখছিলাম। মুহুর্তেই চোখে পড়ল দেওয়ালে টাঙ্গানো চারকোণা ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবি।ছবিটা আমাদেরই ছোটবেলার।আমি, মিথি, মেহু আপু, নাবিলা চারজনই উপস্থিত ছবিতে।মিথির তখন বোধ হয় দুই বছর বয়স।আর আমি তখন সাত বছরের বালিকা। আমার কোলে কি সুন্দর মানিয়েছে মিথিকে।ফর্সা ধবধবে প্রাণবন্ত ছোট্ট মেয়ে!সেই ছোট্ট মিথিকে দেখে আমার মায়া হলো৷ কাছে টেনে চুমু খেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু সম্ভব হলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,

“এই ছবিটা কবে তুলেছিলে আপু? মিথিও তো আছে এইখানে।”

আপু ছবিটার দিকে চাইলেন।বললেন,

” অনেক আগেকার ছবি।কবে তোলা হয়েছে তা তো মনে নেই। শৈশবের ছবি!জানি মৃত মানুষের ছবি রাখতে নেই তবুও কেন জানি না ছবিটা আমার খুব প্রিয়।আর ভালো লাগে বিধায়, মিথি থাকা স্বত্ত্বেও ছবিটা টাঙ্গিয়ে রেখেছি।”

আমি হালকা হাসলাম।সত্যিই প্রিয় মানুষদের ক্ষেত্রে অতো নিয়মকানুন মানতে মন চায় না।যেমন, আমার কাছেও মিথির একটা সুন্দর ছবি বাঁধানো আছে।এখনও আছে ব্যাগের মধ্যে।আবার এই যেমন, মেয়েদের কবরে যাওয়া নিষেধ স্বত্ত্বেও আমি মিথির কবরে যেতাম প্রায়শই।কথা বলতাম।দাদীও আমায় নিষেধ করত না কখনো।হয়তো বা দাদীও এই নিয়মকানুনের বেড়াজালে নিজের আবেগ-অনুভূতিকে মুঁছে দিতে পারত না। দু-চারবার দাদীকেও আমি দাদার কবরে খুব ভোরবেলা দেখতে পেয়েছিলাম।মানুষ জাতি সত্যিই কত অদ্ভুত!বিবেকবানরাও অনুভূতি দমাতে পারে না।আবেগ লুকোতে পারে না।আমি এসব ভেবে ভেবেই একপলকে চেয়ে রইলাম ছবিটার দিকে।পর্যবেক্ষন করলাম মিথির মিষ্টি হাসিটা।ঠিক তখনই মেহেরাজ ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠে নিজের নাম শুনতে পেলাম।তৎক্ষনাৎ অবাক হলাম। ভাবনা ছেড়ে দ্রুত বের হয়ে সামনে তাকালাম। চোখের সামনে মেহেরাজ ভাইয়ের জ্বলজ্যান্ত মূর্তি আবিষ্কার করেই উত্তর দিলাম,

” জ্বী।”

মেহেরাজ ভাই আগের ন্যায় গমগমে স্বরে প্রশ্ন করলেন,

” তোর কাছে কি মোবাইল আছে? ”

হঠাৎ প্রশ্ন করায় বুঝে উঠলাম না।আমি অস্পষ্ট স্বরে বললাম,

” হ্ হু?”

উনি আবারও বলে উঠলেন,

” মোবাইল নিয়ে এসেছিস?”

আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম,

” হ্যাঁ, এনেছি।আজই দাদী একটা মোবাইল দিয়েছেন আমায়।নিয়ে এসেছি।”

” তোকে কেউ কল দিয়েছে হয়তো।রিংটোনের আওয়াজ আসছে তোর ব্যাগ থেকে।গিয়ে দেখ। কেউ কল দিয়েছে। ”

আমি উঠে দাঁড়ালাম।কল দেওয়ার কথা আর কারই বা থাকবে? মোবাইল নম্বর তো মিনার ভাই ছাড়া কারো কাছে নেই।হয়তো দাদীই কল দিয়েছেন। কথাটা ভেবেই দ্রুত পা বাড়ালাম।মেহেরাজ ভাইয়ের রুমে ফ্লোরে পড়ে থাকা ব্যাগটা থেকে বাটন ফোনটা বের করতেই কল কেঁটে গেল। আমি হতাশ হলাম। কিয়ৎক্ষন অপেক্ষা করতেই পুনরায় আবার কল এল।মুহুর্তেই খুশি হলাম আমি।উচ্ছ্বাসিত চাহনীতে চাইলাম মোবাইলের দিকে।নাম্বারটা আমি চিনি।এটা মিনার ভাইয়েরই নাম্বার।সঙ্গে সঙ্গে কল তুলে কানের কাছে নিয়েই বললাম,

” আসসালামুয়ালাইকুম মিনার ভাই।কেমন আছো তুমি?”

মিনার ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকলেন।আমার প্রশ্নকে কি সুন্দর এড়িয়ে গিয়েই বলে উঠলেন,

” নানী তোর সাথে কথা বলবে। এতদূর গেলি, এতক্ষন সময় কাঁটল। দাদী চিন্তা করবে তা তো জানতিই, গিয়ে একবার কল দিলি না যে?অন্তত গিয়ে যে পৌঁছাইলি তা তো বলতে পারতি।”

আমি চুপ থাকলাম।কিয়ৎক্ষন পর ওপাশ থেকে দাদীর কন্ঠ ভেসে আসল,

” এই জ্যোতি? আছস তুই?কথা কস না ক্যান?”

আমার মুখে হাসি ফুটল দাদীর গলা শুনে। বাড়িতে এই মানুষটার ভয়েই তটস্থ থাকতাম আমি।এই মানুষটার বকাবকির ভয়ে কোন কাজে ভুল করার সাহসই হতো না।আর আজ এই মানুষটা আমার থেকে কত দূরে।কত বেশি দূরত্ব দুইজনার মধ্যখানে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উত্তর দিলাম,

” আছি দাদী। কেমন আছো তোমরা?”

” কেমন থাকুম?তুই যে গেলি আর কল দিয়া কথা কইছস?আমি এইহানে চিন্তায় শেষ, গিয়া পৌঁছাইছস কিনা।আর তুই? ”

” আসলে আসার পর আর খেয়ালই ছিল না দাদী।কিছুক্ষন আগেই এসেছি। একটু পর কল দিতামই। মাত্রই মুখচোখে পানি দিয়ে মেহু আপুর ঘরে গেলাম।”

দাদী স্পষ্ট গলায় বললেন,

” আইচ্ছা বুইঝলাম।নিজের খেয়াল রাহিস।হাত মুখ ধুঁইয়া জিরাইয়া নে একটু।তারপর ঘুমাইয়া নে।তোর বই খাতা সব কিন্তু আমি মেহেরাজরে গোঁছাইয়া দিছিলাম।কাল থাইকা পড়ালেহাটা শুরু করিস ভালা কইরা। বিয়া দিয়া দিছি বইলা থাইমা যাইস না জ্যোতি।”

দাদীর কথাগুলো শুনে হাসি পেল।বিয়ে দিয়ে এখন বলছে বিয়ে দিয়ে দেওয়াতে থেমে না যেতে।সবথেকে বেশি হাসি আসল আব্বার কথা ভেবে।পড়ার সুযোগ চাইতেই কলেজ জীবনের গন্ডি পার না হওয়া আমাকে আব্বা এখনই বলে দিলেন,” আর পড়ার দরকার নেই।” আমার মাথায় মুহুর্তেই ক্ষোভ জাগল।সূক্ষ্ম জেদ মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে জড়ো হয়ে জানান দিল,” যেভাবেই হোক পড় জ্যোতি।অন্তত তোর আব্বাকে হলেও দেখিয়ে দিতে হবে তুই থেমে নেই।”

আমি ভাবনা ছেড়ে বের হলাম।দাদী আরো কিয়ৎক্ষন বলে গেলেন নিজের মতো।চুপচাপ সেসব শুনে গেলাম।একটা সময় পর দাদী কল রাখলেন।আমি মোবাইলটা আবারও রেখে দিলাম।একনজর চোখ বুলিয়ে মেহেরাজ ভাইয়ের ঘরটা দেখলাম।ছিমছাম সাদামাটাই ঘর।বিছানার উপর একটু আগের পরনে থাকা ঘামে ভেজা জামাকাপড়গুলোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।জানালা সোজা বরাবর একটা টেবিল আর চেয়ার।তার পাশেই আলমারি।একপাশে কাপড় রাখার আলনা।আমি আর দাঁড়ালাম না সে ঘরে।এক নজর চোখ বুলিয়ে দ্রুত বের হয়ে মেহু আপুর ঘরেই ফেরত এলাম।আপু ততক্ষনে ফ্রেশ হয়ে কাপড়চোপড় পাল্টে নিয়েছেন।আমাকে দেখেই হেসে বললেন,

” কথা হয়েছে বাড়িতে?”

মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম,

” হ্যাঁ।”

” দাদীর সাথে কথা হয় নি?”

” আর কার সাথেই বা কথা হবে?দাদীর সাথেই কথা বলে আসলাম।”

মেহু আপু এবার বিনিময়ে কিছু বলল না।আমি চুপচাপ বসে থাকলাম।ছোট থেকে কোনদিন এতটুকু পথ ভ্রমন না করায় শরীর ভেঙ্গে আসছে কেমন।চোখ নিভু নিভু হয়ে এল।মুহুর্তেই মন চাইল ক্লান্তির সাগরে ডুব দিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই। তবুও ঘুমোতে বাঁধা দিল মন।মাথাটা দেওয়ালে হেলান দিয়েই চুপচাপ বসে রইলাম এককোণে।শুনতে লাগলাম মেহু আপুর অল্পস্বল্প কথোপকোথন।

.

আমার চোখ লেগে এল।কখন লেগে এল জানা নেই।তবে মেহু আপুর ডাক পেয়েই হঠাৎ হকচকিয়ে উঠলাম।বুঝলাম যে, ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।মেহু আপু তাড়া নিয়েই বলে উঠল,

” এই জ্যোতি, উঠ উঠ।ভাইয়ার নাকি রান্না করা শেষ। খেতে ডেকে গিয়েছে এক্ষুনিই।”

আমি অতি কষ্টে চোখ মেলে চাইলাম।মেহু আপুকেও খাটের এককোণে হেলেদুলে শুঁয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট হয়ে এল।তার মানে আপুও ঘুম দিয়েছে।কিন্তু হঠাৎ জেগে উঠার কারণ কি?ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বললাম,

” আপু ঘুমাই?সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে।”

আপু ছোট ছোট চোখে মোবাইলের স্ক্রিনে চাইল। ব্যস্ত কন্ঠে বলল,

” এলার্ম বেঁজেছে আরো দশমিনিট আগে।এখন এগারোটা বাঁজে।ভাইয়া রান্না শেষে করে নির্ঘাত তিনবার ডেকে চলে গিয়েছে।আমি বোধহয় শেষ বারই শুনতে পেলাম সেই ডাক।”

আমি কথার আগামাথা বুঝলাম না।ক্লান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়লাম,

” মানে?”

আপু উঠে বসে বললেন,

” আরেহ সন্ধ্যায় ও তো কিছু খাওয়া হয় নি।রাতের খাবার খাবি না?শিমা আপাকে তো বলেছিলাম আমরা গ্রামে থাকব কয়েকদিন। তাই আপাও আসেনি।প্রায় সময় শিমা আপা না থাকলে রান্নাটা ভাইয়াই করে। আজও ভাইয়াই রান্না করেছে।তখন তোকে কল আসার কথা বলে রান্না করতে রান্নাঘরে ডুকল তো।এখন রান্না শেষ করে ডেকে গেল।”

আমি হতবিহ্বল চোখে চেয়ে থাকলাম।মেহেরাজ ভাইয়ের রাগ রাগ চোখ, আর জেদ জেদ চেহারায় কখনো মনেই হয়নি উনি রান্নাও করতে পারেন।আচ্ছা,এতদূর ভ্রমন করে উনি ক্লান্ত হননি? আমার যেমন শরীর ভেঙ্গে আসছে উনারও কি একই অবস্থা না?তবুও রান্না করতে লেগে গেলেন?মেহু আপুর কথা আসলেই সত্যি।সত্যিই উনি দায়িত্ববান।আমি চুপচাপ সেসব ভাবলাম।মুহুর্তেই অন্য চিন্তা মাথায় আসল।ঘুমে বেঘোর থাকা আমি ঠিক কোন অবস্থায় ছিলাম যখন মেহেরাজ ভাই ডেকে গেল?এতটা ঘুমে বেঘোর ছিলাম যে ডেকে যাওয়ার পরও আমি ঘুমেই আছি।আমার অস্বস্তি হলো।তবুও নিজেকে স্থির করলাম। কপালে আসা অগোছাল চুল কানে গুঁজেই সোজা উঠে বসলাম।চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে ঠাঁই আবারও বসতেই মেহেরাজ ভাই রুমে আসলেন।মেহু আপু তখন ওয়াশরুমে। আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে নজর সরাতেই উনি বলে উঠলেন,

” মেহু কোথায়?বেলকনিতে?”

আমি গলা ঝাড়লাম।পরিষ্কার গলায় উত্তর দিলাম,

” না, মেহু আপু ওয়াশরুমে।”

মেহেরাজ ভাই চুপ থাকলেন।কিয়ৎক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে কিছু না বলেই চলে গেলেন।আমি মিনমিনে চোখে চেয়ে থাকলাম।কিয়ৎক্ষন পর মেহু আপু বের হয়েই টেনে নিয়ে আসল বাইরে। খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে বসাতেই আমি অবাক হয়ে চাইলাম।টেবিলের অপর পাশে মেহেরাজ ভাই টানটান মুখ নিয়ে বসে থাকলেন।কপালে ভাজ।আমি তাকালাম না আর।মেহু আপু খাবার বেড়ে প্লেটে রাখতে ব্যস্ত হলেন।তখনই মেহেরাজ ভাই কাঁটকাঁট গলায় বলে উঠল,

” জ্যোতি, তোর বইখাতা সব আলাদা ব্যাগে আছে।গ্যাপ দিস না।দাদী বারবার করে বলে দিয়েছিল বিষয়টা।পরে সব দোষ আমার উপরই উঠবে।এমনিতেও অনেক কথাই উঠেছে আমার নামে।অনেক কিছুই রটে গিয়েছে।”

আমি বিনিময়ে কিছু বললাম না।বুঝেই উঠলাম না মেহেরাজ ভাইয়ের কন্ঠে শাসন নাকি রাগ! নাকি সব রটনার জন্য অস্পষ্টভাবে আমাকেই দায়ী করলেন?

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে