এক ফালি চাঁদ পর্ব-০৪

0
1133

#এক_ফালি_চাঁদ
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
অতি শঙ্কা, আতঙ্ক নিয়ে ভার্সিটিতে উপস্থিত হয়েছে অনু। গেইটে দাঁড়ালেই কলেজ ক্যাম্পাস এবং মাঠটা সূক্ষভাবে দৃষ্টিবন্দি হয়। তীক্ষ্ণ চোখে অনু মাঠে খুঁজে বেড়াচ্ছে অনলকে। হতচ্ছাড়া তো বলেছিল ভার্সিটিতে আসলে কড়া র্যাগ দিবে। অনু নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,’এসব র্যাগট্যাগে আমি ভয় করি না। তবুও কেমন জানি লাগে! আচ্ছা এত ভয় কেন পাচ্ছি আমি ঐ ইডিয়টটাকে? একদম ভয় পাব না আমি। এমনিতেই তার ওপর আমার বেজায় মেজাজ খারাপ। আমার বয়ফ্রেন্ডকে হুমকি দেওয়া! শালা শুধু একবার যদি কাল রাতে তোকে বাসায় পেতাম তবে দেখতি হু! আমার ভয়ে লুকিয়ে কেন ছিল বল? বল, বল!’
আদতে অনল লুকিয়ে ছিল না। বরং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছিল। তাসিনের কাছে হুমকির বিবৃতি শুনে তৎক্ষণাৎ ওর বাসায় গিয়েছিল অনু। সকালে পায়নি, বিকেলে পায়নি। এমনকি রাতেও নয়। ঐসময়ে অনলের ওপর রাগ ঝাড়তে না পেরে মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছে যে, অনুর ভয়েই অনল পালিয়েছে। আরে ভাই, মেজাজ ঠান্ডা তো করতে হবে? মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য ভক্করচক্কর বলে মনকে বোঝানো সঠিক কাজ। একদম সঠিক।

কলেজের গেইটের সামনে পায়চারি করতে করতে জেসি এবং শুভার জন্য অপেক্ষা করছে অনু। চাইলে আগেই সে ক্লাসে চলে যেতে পারে। কিন্তু সে খুব ভালো করেই জানে অনলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্লাসে যাওয়া অত সহজ অনুর জন্য হবে না। বরং অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তবেই সে ক্লাসে যেতে পারবে। সাহস অনুর অনেক আছে। কিন্তু সে দেখাতে চাচ্ছে না। শুধু জেসি আর শুভা আসলে মনের সাহস একটু জোর পায় এই আরকি! অনু কি ভয় পায় নাকি? নেহি, কাভি নেহি!
নিজের মনে সংলাপ বুনে যাচ্ছে অনু। অথচ এখনও গাধী দুইটা আসছে না। বিরক্ত হয়ে কল-ই করে। তখন দেখতে পায় ওদের রিকশা সামনে এসে থেমেছে। জেসি কল রিসিভ করে ফেলেছিল। রিকশা নজরে আসার পর কল কেটে দিয়ে অনু বলে,’আমায় দেখেও কল রিসিভ করলি কেন? টাকা কি তোর জামাই রিচার্জ করে দেয়?’

ভাড়া মিটিয়ে দুজনে এগিয়ে আসে। জেসি ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ম্যামের মেজাজ আজ চটে আছে কেন?’
‘ছাড় আমারে! আদিখ্যেতা দেখাবি না একদম। কতক্ষণ ধরে ওয়েট করতেছি?’
‘আমার কী দোষ? শুভারই তো রেডি হওয়া হয় না। ওর বাসায় গিয়ে এক ঘণ্টা ধরে বসে থাকা লাগছে।’
শুভা এ কথায় ফুঁসে উঠে বলে,’একদম মিথ্যা বলবি না ছেম্রি। তুই নিজেই লেট করে আসছিস। আমার রেডি হইতে দশ মিনিটও লাগে নাই।’

অনু চিৎকার করে বলে,’হইছে। থাম দুইটায়। তোরা দুইটায় যে কী পরিমাণ ঢিলা কোম্পানি সেটা আমি ভালো করেই জানি। ভালো সাজা লাগবে না কারো। এখন আর ঝগড়া না করে ভেতরে চল। এমনেই জান প্রায় যায় যায়!’
ধমক খেয়ে দুজনেই মেকি অভিমান করে চুপসে যায়। শেষের কথাটি শুনে শুভা জিজ্ঞেস করে,’জান যাবে কেন?’
‘এতকিছু জানা লাগবে না। চল।’
তিন বান্ধবী মিলে ভেতরে যায়। আল্লাহ্, আল্লাহ্ জপছে অনু। ক্যাম্পাসের কোথাও অনলকে চোখে পড়ল না। যাক বাবা! বাঁচা গেল। কলেজ ভবনে যাওয়ার প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই পেছন থেকে ডাক আসে,’এই নিউ কামার। এদিকে আসো।’

তিনজনই পিছু ফিরে তাকায়। বিড়বিড় করে শুভা বলে,’বেদ্দপ তুই চামার!’
ওরা এগিয়ে যেতেই সামনের ছেলেগুলো জিজ্ঞেস করে,’ফার্স্ট ইয়ার না?’
‘হু।’ মাথা ঝাঁকালো তিনজনে।
‘গুড। ক্লাসে যাওয়ার আগে একটা কাজ করতে হবে।’
‘কী কাজ?’ জিজ্ঞেস করে জেসি।
‘বলছি। তার আগে তোমাদের নামগুলো বলো তো।’
জেসি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,’ওর নাম শুভা, ওর নাম অনু আর আমার নাম জেসি।’
‘তুমি আর শুভা এক সাইডে এসে দাঁড়াও।’

তিনজনই অবাক হয়ে তিনজনের দিকে তাকায়। বুঝতে পারছে না এরা ঠিক কী করতে চাচ্ছে! ‘দাঁড়িয়ে আছো কেন? যা বললাম চুপচাপ তাই করো।’ পূণরায় বলল ছেলেটি। জেসি এবং শুভা এক সাইডে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটি এবার আরাম করে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’অনু এবার একটা গান শোনাও তুমি।’

বাজ পড়ার মতো শব্দ হলো মনে হয় অনুর কানে। এখনই বাংলা সিনেমার মতো চারদিকে বজ্রপাত হবে, ধিম তানা, ধিম তানা শব্দ হবে। না! এ হতে পারে না। এত নিষ্ঠুরতম কাজ কেউ করতে পারে না। কিন্তু হায়! এরকম কিছু হলো না। ধুর! ফিলিংসের দফারফা। অনুর চোখে-মুখে বিস্ময় দেখে উপস্থিত ছেলেগুলো মুচকি মুচকি হাসছে। ভাবনার গহিন অতল থেকে বেরিয়ে এসে অনু প্রশ্ন করে,’গান গাইব কেন? তাছাড়া আমি গান গাইতে পারি না।’
‘গাইতে না পারলেও কিছু করার নেই। গাইতেই হবে। এটা তোমার র্যাগ।’
‘এত নতুন স্টুডেন্টসদের মধ্যে আমাকেই কেন র্যাগ দেওয়া হলো?’
‘কারণ তোমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।লক্ষী একটা মেয়ে তুমি। এখন সময় নষ্ট না করে গান শুরু করো। একটু পরেই তোমাদের ক্লাস শুরু হবে। প্রথমদিনই দেরি করা ঠিক হবে না। তাহলেই স্যার নিকনেম দিয়ে দিবে লেট লতিফ। ক্লাস টিচার কিন্তু ভারী সাংঘাতিক!’ হাতঘড়িতে সময় দেখে কথাগুলো গড়গড় করে বলল পাশের ছেলেটি। কিন্তু অনু তো দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। অনল র্যাগ দিলে ভিন্ন বিষয় ছিল। ঐ ছেলে ঘাড়ত্যাড়া! কথা না শুনে উপায় থাকতো না। কিন্তু এদেরকে ভয় দেখানো যাবে। অনলের কথা বললে ভয় পাবে নিশ্চয়ই! কারণ এই ভার্সিটিতে নাকি অনলের অনেক নামডাক আছে। সে শুনেছে।

গলাটা পরিষ্কার করে ভাব নিয়ে অনু বলল,’আপনারা কোন ইয়ারে পড়েন?’
‘অনার্স ফাইনাল ইয়ার।’
‘অনলকে চিনেন নিশ্চয়ই?’
‘চিনি। সিনিয়র ভাইয়া।’
‘গুড। জানেন সে আমার কে হয়?’ এবার ভাবটা বেড়ে গেল অনুর। উত্তরে ছেলেটি জিজ্ঞেস করল,’কে হয়?’
‘আমার মায়ের বেষ্টফ্রেন্ডের ছেলে।’
‘অনল ভাইয়া তোমার নানুর মেয়ের বেষ্টফ্রেন্ডের ছোটো ছেলের বড়ো ভাই হোক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। যা বললাম তাই করো।’
‘কচুটায় প্যাঁচাইয়া কী সম্পর্কের কথা বলল রে বাল!’ মাথা চুলকে বিড়বিড় করে বলল অনু। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে অনলকে ওরা ভয় পায় না। কচুর নামডাক কলেজে তার। ধুর!

ছেলেগুলো এবার তাড়া দিয়ে বলল,’অনেক সময় নষ্ট করেছ। র্যাগের শাস্তি বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এবার আমাদের সিলেক্ট করা গান গাইতে হবে। তুমি মমতাজের ‘বন্ধু যখন বউ লইয়া’ গানটি গাইবে। এখনই। আর একটা কথাও বাড়াবে না।’
তৃষ্ণায় অনুর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই বানরের দলগুলো দেখি অনলের চেয়েও ডেঞ্জারাস! জেসি আর শুভা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। অনু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,’আমি গান গাইতে পারি না।’
‘এসব কথা শুনব না খুঁকি। যেভাবে পারো সেভাবেই গাও। কোনো সমস্যা নেই।’
‘গাইতেই হবে?’
‘হ্যাঁ খুঁকি।’

অনুর ইচ্ছে করছে এখন হাত-পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতে। যেমনটা ছোটোবেলায় করতো। কিন্তু এখন সে বড়ো হয়ে গেছে। ছোটোবেলায় কেউ না হাসলেও এখন সবাই হাসবে। প্রাণ খুলে হাসবে। বিনা টিকেটে ফ্রি-তে বিনোদন কেই বা না নিতে চায়? যেমনটা এখন চাচ্ছে বান্দরের দলগুলা। অনু মনে মনে ভাবছে, অনেকগুলা বানর পালবে সে। আর এই ছেলেগুলোর নামে বানরের নাম রাখবে। বদ, অসভ্য, নাইজেরিয়া!
আশেপাশে তাকিয়ে অনু প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছেলেগুলো তাড়া দিয়েই চলেছে। গান না গাইলে যে রক্ষে নেই তা হারে হারে বুঝতে পারছে। অবশেষে মান-ইজ্জতের ফালুদা করে অনু গান গাইতে শুরু করে,’বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার চোখের সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাঁইটা যা,
ফাঁইটা যায়, বুকটা ফাঁইটা যায়!’

অনুর চোখ কাঁদো কাঁদো। দুঃখের কথা আর কী বলব, এই সিচুয়েশনে অনুর গান শুনে জেসি আর শুভারও হাসি পাচ্ছে। কিন্তু বান্ধবীর বিপদে হাসাটা অনুচিত। তাই আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে হাসি আটকানোর জন্য। ছেলেগুলো মিটিমিটি হাসছিল। বলল,’সুর হয়নি খুঁকি। আরেকবার গাও। এবার হবে।’
দ্বিতীয়বার গাওয়ার সময় জেসি আর শুভা নিজেদের হাসি আটকে রাখতে পারল না। ফিক করে দুজনে হেসে ফেলল। এবার ছেলেগুলোও শব্দ করে হাসা শুরু করে। আর অনুর ইচ্ছে করছে সবগুলারে মেরে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে। বান্ধবী দুইটা মীর জাফরের বংশধর বোঝা যাচ্ছে! ছেলেগুলো হাসি থামিয়ে ওদের দুজনের উদ্দেশ্যে বলে,’এই তোমরা হাসলে কেন? এখন ওর সঙ্গে তোমরাও গান গাইবে। শুরু করো। অনু খুঁকি আরেকবার গাও তো।’
রাগে গিজগিজ করছে অনু। কিন্তু জেসি আর শুভাকেও গাইতে বলেছে বলে খুশি হয়েছে। মীর জাফরের বংশধর এবার বুঝ মজা। তিনজনের বেসুরা কণ্ঠে গান শুনে ছেলেগুলো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। অনু পারলে চোখের দৃষ্টিতে ওদের ভষ্ম করে দেয়। ক্লাস শুরুর ঘণ্টা পড়ার পর ওরা বলল,’অনেক সুন্দর গেয়েছ তোমরা। মাঝে মাঝে আমাদের একটু গান শুনিও কেমন খুঁকিরা? এখন ক্লাসে যাও। গুড লাক।’
‘গান শুনে মরলি না কেন বান্দরের দলগুলা! গানের সঙ্গে বিষ মেশানোর সুযোগ থাকলে সেই বিষ তোদের গিলাতাম অসভ্য! বেইজ্জতি করে এখন আবার বলে গুড লাক। ইশ! প্রথমদিনই বেইজ্জতি।’ কড়া দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো বলল অনু। তারপর তিন তলায় চলে গেল। হুট করে সিঁড়ির পাশের ক্লাস থেকে অনল বেরিয়ে আসে। অনুর পথ রোধ করে কানে কানে বলে,’র্যাগ কেমন লাগল অনু? ওদেরকে আজই একটা ট্রিট দেবো বুঝলি। একদম আমার শেখানো বুলি তোর ওপর ঝেড়েছে। আহা! আমি কত ভালো প্রশিক্ষণ দেই।’
অনু অবাক হয়ে বলে,’তার মানে আপনিই ওদেরকে এসব শিখিয়ে দিয়েছিলেন?’

অনল ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে হাসতে উপর-নিচ মাথা ঝাঁকায়। রাগে অনু দৌঁড়ানি দেয়।অনলও দৌঁড় শুরু করে। তখন হাতে থাকা কলমটা ছুঁড়ে মারে অনলের দিকে। কিন্তু বিধি বাম! ভাগ্য খারাপ থাকায় অনলের গায়ে কলমটি লাগেনি। লেগেছে স্যারের গায়ে! স্যার কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনু, জেসি আর শুভা দৌঁড়ে ক্লাসে চলে যায়। আল্লাহ্ ভালো জানে মুখ দেখেছে নাকি!

স্যার ক্লাসে আসার আগেই মাঝখানের সারিতে ঘাপটি মেরে বসে ছিল তিনজনে। প্রিন্সিপালসহ সব টিচাররা এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে গেছে। তারা চলে যাওয়ার পর ক্লাস টিচার পরিচয়পর্ব শুরু করে। অনু, জেসি আর শুভা ভয়ে তটস্থ হয়ে রয়েছে। ওদের পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর হাফ ছেড়ে বাঁচে। কারণ স্যার ওদের দেখেনি। দেখলে নির্ঘাৎ এখানেও একটা বেইজ্জতির শিকার হতে হতো। ভার্সিটির প্রথম দিনটাই বাজে ভাবে শুরু হলো। ধ্যাৎ! সব হয়েছে ঐ বজ্জাত অনলের জন্য। শুভা তখন ফিসফিসি করে বলে,’অনল ভাইয়া এটা কীসের প্রতিশোধ নিলো রে?’
‘মরিচ সেদ্ধ শরবত খাওয়ানোর জন্য।’
‘কপাল। সবই কপাল। এসব আজগুবি রেসিপি কেন যে তোর মাথায় আসলো! এই আজগুবি রেসিপির জন্য মান-সম্মান সব শেষ হলো।’ আক্ষেপ করে বলল জেসি। অনু মৃদু ধমক দিয়ে বলে,’চুপ কর মীর জাফরের বংশধর। আমার চেয়ে বেশি বেইজ্জতি তো আর তোদের হয়নি। আর তোরা কেমনে পারলি ঐ সময়ে হাসতে?’
‘কী করব? হাসি পাচ্ছিল তো।’
‘সময় আসুক আমার। তখন বুঝাবো হাসি কাকে বলে, কত প্রকার এবং কী কী।’

তিনটা ক্লাস করার পর ছুটি হয়ে যায়। তাসিন অনুকে নিতে এসেছে। জেসি এবং শুভাকে বিদায় দিয়ে অনু তাসিনের বাইকে করে বাড়ি আসে। অনু বাড়ির ভেতর চলে যাওয়ার পর অনলের মুখোমুখি হয় তাসিন। ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে,’কী খবর ছোটো ভাই? তোমারে না বলছিলাম অনুর সাথে ব্রেকাপ করতে?’
‘আপনার কথায় ব্রেকাপ কেন করব ভাই? তাছাড়া আমি তো এটাই বুঝি না, আপনার সমস্যাটা কী? আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। মাঝখানে আপনি কেন আসছেন?’

অনল অনিকের দিকে তাকিয়ে বলে,’দেখলি সাহস কত এই ছেলের?
এই, এতক্ষণ ভালো করে কথা বললাম ভালো লাগেনি? কীসের ভালোবাসা? অনু তো একটা বোকা, গাধী! ভালো লাগা, ভালোবাসার তফাৎ-ই বোঝে না। আমি ড্যাম শিওর, ভালোবাসা কী সেটা বুঝলে তোমার মতো ক্যারেক্টারলেস একটা ছেলের সঙ্গে কখনোই রিলেশন করতো না। আদারওয়াইজ ও তো জানেও না, তোমার আরও কতগুলা মেয়ের সঙ্গে রিলেশন আছে। তুমি তো একা ওরে ভালোবাসো না। সময় থাকতে এখনও ভালো করে বলতেছি, অনুর পথ থেকে সরে দাঁড়াও।’
‘দেখেন ভাই, আমি আপনার সাথে ঝামেলা করতে আসি নাই। আমি আরও মেয়ের সাথে রিলেশন করি বা যাই করি আপনার তাতে কী? অনুর তো সমস্যা নাই। হুদাই আপনি ঝামেলা পাকাইয়েন না।’
‘বুঝছি। সোজা কথা শোনার মতো ছেলে তুমি না। ঘাড়ত্যাড়া আছো। তবে আমার চেয়ে বেশি না। লাস্ট ওয়ার্নিং দিতেছি, অনুর পথ থেকে না সরলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।’
‘আপনি যা পারেন। কইরেন। আমি অনুকে ছাড়ব না। আর অনুও আমাকে ছাড়বে না।’
‘ওভার কনফিডেন্স হয়ে গেল না? তুমি অনুরে না ছাড়লেও অনু তোমায় ছাড়বে।’
‘পারলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অনেক কষ্টে অনুর মন গলিয়েছি। আমার প্রতি ওর অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা আছে। তাছাড়া আপনাকে এমনিতেও অনু পছন্দ করে না। সহ্যও করতে পারে না। আপনার কথায় অনু আমায় ছাড়বে না।’
‘ছাড়বে, ছাড়বে! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’

তাসিন আর কিছু বলল না। বাইক নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। অনিক তখন বলে,’বাদ দাও না ভাই। কী দরকার অযথা ওদের মাঝে ঝামেলা করার?’
‘দরকার আছে অনিক। ছেলেটা ভালো হলে আমি এমন করতাম না। কিন্তু ছেলেটা প্লে-বয়, ক্যারেক্টারলেস। আরও অনেকগুলো মেয়ের সাথে ওর রিলেশন আছে।’
কিছু্ক্ষণ নিরব থেকে অনিক বলে,’ভাইয়া একটা কথা বলি?’
‘বল।’
‘তুমি কি অনুকে ভালোবাসো?’
অনিকের কথা শুনে অনল ফিক করে হেসে ফেলে। মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল,’হুঁশ! পাগল হলি নাকি তুই? আমি কেন অনুকে ভালোবাসতে যাব?’
‘তাহলে সারাক্ষণ তুমি ওর পেছনে লেগে থাকো কেন? ওর রিলেশনও ভাঙতে চাচ্ছ।’
‘পেছনে লাগি বলতে ওকে জ্বালাতে আমার ভালো লাগে। ও রাগলে আরও বেশি ভালো লাগে। বাকি রইল রিলেশনের কথা। ঐ মাথামোটা মেয়ে ভালো-খারাপ এখনও কিছুই বুঝে না। বড়ো হয়েছে শুধু হাতে-পায়ে। হ্যান্ডসাম হলে,আর কয়েকদিন পিছু পিছু ঘুরলেই ওর মন গলে যায়। ছেলে ভালো নাকি খারাপ সেটা তো মানুষ আগে খোঁজ-খবর করে! ওর ঐ বয়ফ্রেন্ড ভালো না।বললাম না, এক নাম্বারের ক্যারেক্টারলেস। এজন্যই আমি চাচ্ছি না তাসিনের সাথে ওর রিলেশন থাকুক।’

‘বুঝলাম। এখন কথা হচ্ছে ছেলে ক্যারেক্টারলেস হোক অথবা ভালো তাতে তোমার কী? মানে আমাদের কী? জীবন ওর। সিদ্ধান্তও ওর। যার সাথে ইচ্ছে রিলেশন করুক।’
‘এটা সিদ্ধান্ত নয় অনিক। আবেগ। অনু আবেগের বশে কোনো ভুল কাজ করুক কিংবা কারো দ্বারা ওর ক্ষতি হোক এটা আমি চাই না।’
এরপর হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলে,’এখন যাই। এনামুল দেখা করতে বলেছে।’
‘আচ্ছা যাও।’
অনিক বাড়ির ভেতর যাওয়ার পর অনল আসে অনুদের বাসায়। তিনু দরজা খুলে দেয়। ‘অনু কী করে?’ জিজ্ঞেস করে অনল।
‘আপু ঘুমাচ্ছে। এসেই শুয়ে পড়েছে।’
‘অলসের অলস! বিড়ালটা কোথায়?’
‘আপুর ঘরেই।’
‘চলো তো যাই।’

তিনুকে নিয়ে অনল অনুর ঘরে আসে। ঘরে ফ্লোরে বসে আছে বিড়াল ছানাটি। বিড়ালটি হাতে নিয়ে অনল তিনুকে বলল,’ঐ কুম্ভকর্ণটাকে ডেকে তোলো।’
‘উঁহু। আপু বকবে। আপনি ডাকেন।’
‘আমারে ডাকা লাগবে না। তিনু ঐ অসভ্য লোকটাকে বল চলে যেতে।’ বলল অনু।

অনল বিড়ালটির মাথা চুলকে দিতে দিতে বলল,’তুই ঘুমাসনি? নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাছ ধরিস?’
‘একদম বাজে কথা বলবেন না। বিরক্ত লাগতেছে আপনাকে। আপনি চলে যান।’
‘এত রেগে আছিস কেন? র্যাগ দেওয়ার জন্য?’
‘কথাই বলবেন না আপনি। যান বলছি।’ শোয়া থেকে উঠে বসলো অনু। যেন হাতের থাবাতেই অনলকে ঘায়েল করে ফেলবে।
‘উহ্! কী রাগ বাবা! আমার কী দোষ? আমি তো আর তোকে শাস্তি দেইনি।’
‘আপনি দেননি। কিন্তু আপনার কথামতোই তো ওরা কাজ করেছে তাই না?’
‘তা করেছে। আচ্ছা কাল যে তোর টুসটুস পাখিকে সব বললাম। তোকে সাবধান করেনি?’
‘ওর নাম টুসটুস না। তিতুস।’ রাগ দেখিয়ে বলল অনু।
‘ঐ একই হলো। তোর মতোই অদ্ভুত নাম তোর পশু-পাখির। মনে থাক না।’
‘আপনাকে মনে রাখতে বলেছে কে? এক্ষুণী আপনি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যাবেন।’
‘বের হব না।কী করবি?’
অনু বিছানা ছেড়ে তেড়ে আসে অনলের দিকে। অবস্থা বেগতিক থেকে অনল দৌঁড় দেয়। নয়তো হাতের সবগুলো নখ হাতে দাবিয়ে দেবে। পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে অনু ধাক্কা খেল বাবার সঙ্গে। অস্ফুটস্বরে তিনু বলল,’সর্বনাশ!’

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে