একা_তারা_গুনতে_নেই পর্ব-২৮+২৯

0
264

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২৮
ইমাদ ব্যাগ থেকে দীপা আর কাদিনের বিয়ের উপহার বের করল। দুজনের জন্য দুটো ঘড়ি। গিফ্টবক্সটা হাতে নিয়ে দীপার ঘরের দিকে যেতেই আবার কারেন্ট চলে গেল। ইমাদ থমকে দাঁড়াল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে পা এগুতেই দেখল পেছন থেকে কড়ি দ্রুত হেঁটে ওকে ক্রস করে সামনের দিকে গেল। ইমাদ মোবাইল উঁচু করে ধরে কড়ির পথে আলো দিলো। এ বাড়িতে কড়িকে চোখ বন্ধ করে ছেড়ে দিলেও কড়ি দৌড়ে দৌড়ে চলতে পারবে। কোনো সমস্যা নেই। তাই সে পেছনে না তাকিয়েই বলল, “আমার আলো লাগবে না। আপনি সাবধানে হাঁটুন।”
বলতে না বলতেই কড়ির পেছনে ইমাদ ঘরের দাওয়ায় হোঁচট খেয়ে পড়ল। কড়ি পেছন ফিরে তাকাল। ইমাদের হাত থেকে লাল র্যাপিং পেপারে মোড়ানো সুন্দর একটা গিফ্টবক্স ঘরের মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। শক্ত করে ধরে রাখায় মোবাইলটা হাত থেকে পড়ল না। মোবাইলের আলোতে কড়ি দেখল গিফ্টবক্সের উপর লেখা “টু দীপু এন্ড কাদিন ভাইয়া।” ইমাদ উঠে দাঁড়িয়ে বক্সটা তুলল। কাদিন ডাকছিল তাই কড়ি চলে এল।
“কিরে কিসের শব্দ হলো? ঠিক আছিস?”
“মেজো ভাবির ফ্রেন্ড হোঁচট খেয়ে পড়েছে।”
ইমাদ বলল, “আসব?”
কাদিন বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই।”
“চোখ দুইটা কই ছিল তোর? আয় বস।” দীপা সরে জায়গা করে দিলো।
ইমাদ দীপার পাশে বসতেই কাদিন বলল, “একটু চা করে আন, কড়ি। কতক্ষণ ধরে রিমা আপুকে খুঁজছি, পাই না। ওরাও আছে একসাথে খাব।”
দীপা বলল, “আরে ওকে বলছেন কেন? এই গরমে ও এখন রান্নাঘরে চা করতে যাবে? খোকার মা না কে যেন আছেন ওই খালাকে বললেই ত হয়।”
কাদিন বলল, “আমি বাইরের কারো হাতে কিছু খাই না।”
দীপা ফিক করে হেসে ফেলল, “হোটেলে, রেস্টুরেন্টে, দাওয়াতে গেলে কি করেন? ঐগুলাও কি রিমা আপু আর কড়িই রান্না করে দিয়ে আসে?”
কাদিন বলল, “বাইরের খাবার খাই না।”
“দেখি কি করে আজ না খেয়ে বাঁচেন! এই কড়ি তুমি কোথাও যাবে না। এখানেই বসো। আমি চা করে নিয়ে আসি। না খেলে জোর করে খাওয়াব তোমার ভাইকে।”
কড়ি মিটিমিটি হাসতে হাসতে বসল, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
দীপা চা করতে চলে গেল। কাদিন দীপার পিছু নিয়ে রান্নাঘরে এল। রান্নাঘর ফাঁকা পেয়ে কাদিন রাগের স্বরে বলল, “তোমাকে করতে হবে না। সরো তুমি। আমি করছি।”
“কেন? কেন? এত নকশা কেন আপনার? এই অভ্যাস ছাড়েন।”
“তোমার বুঝা উচিত যে আমি তোমার হাতের চা খাব না বলেই কড়িকে ডেকেছি। নাহয় তোমাকেই বলতাম।”
“চা আমার হাতের কি করে হয়? চা তো হবে চা পাতার। আমাকে কি চা পাতা মনে হয়?”
কাদিন বলল, “তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। আমার চা খাওয়ার শখ মিটে গেছে।”
দীপা হঠাৎ খুব কষ্ট অনুভব করল। মনমরা হয়ে মুখভার করে বলল, “আমাকে কেন এত ঘেন্না করেন আমি বুঝে পাই না।”
কাদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “তুমি কিচ্ছু বুঝো না, দীপা। কিচ্ছু না! রাগও বুঝো না। সবকিছু তোমাকে এক্সপ্লেন করতে হয়। নিজ থেকে কিছু বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ তোমার এই ফাঁকা মাথাটায় দেয়নি।”
দীপা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বলে কাদিনের আরো রাগ হলো। সে কঠিন গলায় বলল, “এখনো বুঝোনি? আরো খুলে বলতে হবে? আরো? ওকে ফাইন। তাহলে শুনো। রিমা আপু, কড়ি আর তুমি বাদে আর সবাই বাইরের লোক। তোমার উপর রেগে আছি তাই তুমি এখন চা করে দিলেও খাব না। এখন প্লিজ বলো না যে কেন রেগে আছি তা তুমি জানো না।”
কাদিন এমনভাবে তাকিয়ে, এত শক্ত করে কথাগুলো বলল যে দীপার চোখে জল এসে যাচ্ছিল। এখন মোটেও কাঁদা যাবে না। কেঁদে ফেললে কাদিন আরো বেশি রাগ করবে। কিন্তু দীপা কি করবে? ওকে কেউ একটু কড়া করে কথা বললেই কান্না এসে যায়। না কান্না করা যাবে না। দীপা ঢোক গিলে কান্না আটকাল। কাদিন বলল, “তুমি এখন এখান থেকে যাও।”
দীপা অনেক কষ্টে বলল, “আচ্ছা।”
দীপা চলে যাচ্ছিল। কাদিন বিরক্ত হয়ে গেল, “এখন যেও না। দাঁড়াও এখানে। এখন চা না নিয়ে গেলে তোমার বন্ধুরা কি বলবে?”
কাদিন নিজেই ডেকচিতে পানি বসাল।
দীপা রান্নাঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। নীচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নখ দিয়ে দরজা খুটছে। কাদিন ফিরে তাকিয়ে বলল, “চেহারা এরকম বানিয়ে রেখেছ কেন? তোমাকে আমি এমনকিছু বলিনি যে এরকম থোতা নামিয়ে রাখতে হবে। আর নখ দিয়ে দরজা খুটছ কেন? এগুলো কোনধরনের অভ্যাস? নিজের বয়স দেখেছ? আমার ছোটবোন কড়ি থেকেও তুমি কত সিনিয়র অথচ, আচরণ পনেরো ষোলো বছরের টিনএজারদের মতন। আমার বাচ্চাকাচ্চাগুলো যেন অন্তত তোমার মত নাহয়। হলে মুহূর্তে মুহূর্তে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।”
দীপা এবার কেঁদেই ফেলল। কাদিন বুঝে উঠার আগে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চোখ মুছে ফেলল সে। চা হয়ে যাওয়ার পর কাপে চা ঢেলে ট্রেটা দীপার হাতে দিলো কাদিন। বলল, “নিয়ে যাও। ওদের আবার বলো না যে আমি করেছি।”
দীপা পা বাড়াতেই কাদিন বলল, “সাবধানে।”
কারেন্ট চলে এল। কাদিন বলল, “ভালো হয়েছে। যাও তুমি, আমি আসছি।”
দীপা মাঝপথেই ট্রে হাত থেকে ফেলে দিলো। সবগুলো কাপ ভেঙে গেল। গরম চায়ের কিছু পড়ল দীপার শাড়িতে, পায়ে আর বাকিটুকু মেঝেতে ভেসে গেল। দীপার পা পুড়ে গেল। তবুও টু শব্দ সে করল না। কাদিন রান্নাঘর থেকে দ্রুত এল। দীপা ভাঙা কাপ তুলতে তুলতে অসহায়ের মতন ঘাবড়ানো গলায় বলল, “স্যরি, স্যরি, স্যরি, কীভাবে যেন পড়ে গেছে। স্যরি।”
কাদিন দীপার হাত টেনে ধরে ওকে সরিয়ে আনল, “কিছু হবে না। এগুলো ছাড়ো। দেখি তোমার পায়ে পড়েনি তো?”
কাদিন ঝুঁকে দীপার পায়ের পাতা দেখল। ফোসকা পড়ে গেছে। বাড়ির সবাই শব্দ শুনে ছুটে এল। কাদের সাহেব বললেন, “এখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেন? বৌমাকে ঘরে নে।”
দীপা ঘরে যেতেই কড়ি দ্রুত টুথপেস্ট এনে দিলো। দীপাকে দেখে ইমাদ আর নিলয় ভীষণ অবাক হলো! পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে অথচ, দীপা একদম চুপ। একবারো মরে যাচ্ছি, মরে গেলাম, আহ আমি শেষ জাতীয় কিছু কিংবা চিৎকার চেঁচামেচি, কান্নাকাটি কিছুই করছে না। ঝড়ে কুঁকড়ে যাওয়া পাখির মতন চুপসে বসে আছে। নিলয় ত বলেই ফেলল, “দোস্ত, কি হয়েছে তোর?”
দীপা বলল, “কই কিছু না।”
এভাবে থাকলে নিলয়রা সব বুঝে ফেলবে তাই দীপা মজা করার চেষ্টা করে বলল, “ভাবছিলাম তোরা দুইটা কত বড় কিপ্টা হলে আমার বিয়ের গিফ্ট এখনও আমাকে দিসনি। ছিহ্ শেইম অন ইউ। তোরা মরতে পারিস না? মর। কলা গাছে ফাঁসি দিয়ে মর। এক গ্লাস পানিতে ডুবে মর।”
নিলয় দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “স্যরি দীপু। এই মাসটায় আমি অনেক প্যারায় আছিরে। খুব টানাটানি অবস্থা। তাই তোর বিয়ের গিফ্ট কিনতে পারিনি। ভালো একটা কিছু দিতে চাই। তাই দুই তিন মাস সময় নিচ্ছি।”
কাদিন আরেকদফা বিরক্ত হলো দীপার উপর। যত ভালো বন্ধুই হোক মজার ছলেও এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি ওর। যেহেতু গিফ্ট দেয়নি সেহেতু নিশ্চয় কোনো একটা সমস্যা আছে সেটা তার বুঝা উচিত ছিল। আবার বলল তো বলল কড়ি আর তার সামনে বলল। ছেলেটা লজ্জা পেলো না? আহা অবুঝ বউটা তার!
দীপা কথাটা বলে নিজেও বিপদে পড়ে গেল। এখন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ইমাদ বলল, “আমারো একই হাল।” কড়ি চমকে তাকাল। সে নিজ চোখে গিফ্টবক্স দেখেছে। কড়ি ইমাদের পকেটের দিকে তাকাল। বক্সটা এখনও পকেটে।
নিলয় হেসে দিলো, “হায়রে দীপু তোর ভাগ্য বহুত খারাপ। গরীব গরীব সব বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরিস তুই।”
দীপা বলল, “প্লিজ তুই এইসব ফালতু কথা বলবি না তো। আমাকে চিনিস না? আমি অনেককিছু বুঝি না। মজার ছলে বলেছিলাম।”
ইমাদ বলল, “রেস্ট নে তুই। আমরা যাই।”
ইমাদ আর নিলয় বেরিয়ে যেতেই কড়িও ইমাদের পেছন পেছন গেল। নিলয় সাথে থাকায় ইমাদকে ডাকতে গিয়েও ডাকল না। নিজের ঘরে গিয়ে মোবাইল থেকে মেসেজ লিখল, “একটু বাইরে আসতে পারবেন?”
ইমাদ লিখল, “আচ্ছা।”
চলবে…

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২৯
ইমাদ বাইরে এসে দেখল কড়ি কোথাও নেই। সে মোবাইল বের করে মেসেজ পাঠাল, “কোথায়?”
কড়ির অন্ধকারের গহীন থেকে বেরিয়ে এল, “ভালো আছেন!”
ইমাদ বলল, “জি।”
“উহু ভালো আছেন কিনা জানতে চাইনি। বলেছি আপনি ভালো আছেন। মানে আপনি মানুষ ভালো।”
“আচ্ছা।”
কড়ি প্রশ্ন করল, “উনার মন খারাপ হবে বলেই ত গিফ্টটা দেননি, তাইনা?”
ইমাদ কড়ির দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। কিছু বলল না।
কড়ি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল, “আপনি এত সাধু কেন বলুন তো? শুনেছি অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।”
ইমাদ কড়ির দিকে দু’কদম এগিয়ে এল। রহস্যময় গলায় বলল, “কী চুরি করলাম?”
কড়ি দু’কদম পিছনে গিয়ে বলল, “দয়া করে এই ধরনের সস্তা ফ্লার্ট আপনি করবেন না। এসব আপনার সাথে যায় না। আপনার ব্যক্তিত্বের অপমান হয়।”
ইমাদ হেসে ফেলে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলল। বলল, “সাধু সেজে থাকা চোরদের আবার ব্যক্তিত্বও থাকে নাকি?”
“আপনাকে বান্ধবীর জন্য পাগলপারা হয়ে অচেনা একটা মেয়ের পিছু নিতে দেখতে ভালো লাগে, সবার সামনে নিজেকে পরোয়ানাবিহীন দেখানো অথচ, সবচেয়ে বেশি সবার পরোয়া করা মানুষ হিসেবে আপনাকে বেশ লাগে। বন্ধু গিফ্টট দিতে পারেনি বলে, গিফ্ট এনেও লুকিয়ে রাখা আপনাকে দারুণ লাগে। কিন্তু সদ্য ছ্যাকা খাওয়া একটা মেয়েকে সাডেন প্রপোজ করা আপনাকে বিরক্ত লাগে, ফ্লার্ট করা আপনার উপর রাগ হয়, প্রেমিকা থাকা সত্ত্বেও আমার উপর লাইন মারা আপনাকে নিন্দা না করে পারা যায় না। কেন এমন করেন?”
ইমাদ কিছুই বুঝতে না পেরে বলল, “এক্সকিউজ মি?”
কড়ি হেসে হেসে বলল, “অনামিকার প্রতারক প্রেমিক হিসেবেও আপনাকে মানায় না। প্রতারক শব্দটা কেটে অনামিকার শুধু প্রেমিক হতে পারেন না?”
“আচ্ছা।” ইমাদ নিজের প্যান্টের দু’পকেটে হাত রাখল। নীচে তাকিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়তে নাড়তে ঠোঁট টিপে শব্দহীন হাসতে লাগল।
কড়ি বলল, “ভালো আছেন, ভালো থাকুন।”
ইমাদ পা দিয়ে মাটির রাস্তাটা খুঁড়তে খুঁড়তে বলল, “তারপর কি করব? আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখব?”
এখনো ইমাদের চোখে মুখে হাসি খেলা করছে। কড়ি চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল, “ভাইরে ভাই এই আপনাকে দেখলে আমার মনমেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
ইমাদ মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে উঠল, “ভাই টাই বলবেন না।”
“হোউপলেস!” কড়ি বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছিল। ও ভেবেছিল ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে শুনে ইমাদ পিছু হটেছে। তাই এখন কথা বলাই যায়। কিন্তু এই ছেলে তো আগের মতই আছে। এত ভালো একটা মানুষ সমানতালে এত বেকার কি করে হয়! কড়ি অবাক। ওর মন সায় দিচ্ছিল না তাই কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার করতে এসেছিল। কিন্তু না এই ছেলের সাথে কথা বলার উপায় নেই।
ইমাদ ডাকল, “কড়ি, শুনুন।”
কড়ি চাপা ক্রোধে জবাব দিলো না। পিছনেও তাকাল না। ইমাদ এবার একটু জোরেই ডাকল, “কড়ি?”
কড়ি বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল, “বলে আমায় উদ্ধার করুন।”
“অাপনি একটু দাঁড়াবেন? অনামিকাকে নিয়ে কথা বলতে চাই।”
“দুঃখিত, আমার কাজ আছে ভেতরে।”
“প্লিজ?”
কড়ি কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভাবল। তারপর বলল, “আচ্ছা তাড়াতাড়ি বলুন।”
ইমাদ পকেট থেকে মোবাইল বের করল। ওর মোবাইলে কল রেকর্ডার অ্যাপস আছে, “একটু এদিকে আসুন।”
কড়ি হেঁটে গেল আগের জায়গায়। ইমাদ বলল, “অনামিকা নামের রেকর্ডিংগুলো চ্যাক করুন একটু। চাইলে আমার কল লিস্টের অন্য রেকর্ডিংগুলোও চেক করতে পারেন।”
কড়ি মোবাইল হাতে নিলো। ইমাদ বলল, “আমি কখন, কার সাথে, কি কথা বলি সব আছে। এমনকি অনেক অনেক পুরোনো কলের রেকর্ডিংও আছে। আপনার সাথে ঐ যে নানুয়া দিঘীর পাড় দীপুকে নিয়ে কথা বলার জন্য যে কল দিয়েছিলাম সেটা পর্যন্ত আছে। অবশ্য ওটা অত আগেরও না।”
কড়ি ভলিয়্যুম কমিয়ে রেকর্ডিং অন করল। অনামিকার সাথে সবগুলো রেকর্ডিং শুনলো সে। সবগুলোই প্রায় একইরকম। অনামিকা একতরফাভাবে এটাসেটা বলে যায়। আর ইমাদ বারবার জিজ্ঞাসা করে আপনি কে? কে বলছেন? আপনাকে কি আমি চিনি? ব্যস এইটুকুই।
কড়ি ইমাদের হাতে মোবাইলটা ফিরিয়ে দিলো। ইমাদ মোবাইল পকেটে রাখতে রাখতে বলল, “মেয়েটা আমাকে মেসেজও করে। সময়মত খাওয়া দাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আকাশে মেঘ করলে লিখে, কি মনে হয় বৃষ্টি হবে আজ? চাঁদ দেখা না গেলে লিখে, চাঁদ কি আপনি কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন? বেশি রোদের দিনে লিখে, এত রোদ আজ! বের হওয়ার দরকার নেই।”
কড়ি শেষ কথাটা শুনে হাসতে লাগল। ইমাদ বলল, “আপনি কি করে এই বিষয়টা জানলেন তা জানার প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি আসলে জানি না মেয়েটা কে। না জানা পর্যন্ত ব্লকও করব না। আগে জানব মেয়েটা কে, তারপর ব্লক করব।”
কড়ি হাসতে হাসতেই বলল, “কণ্ঠ শুনে মনে হয় বাচ্চা মেয়ে। অত বেশি বড় না। তবে রোমান্টিক আছে! ব্লক করার দরকার নেই। চালিয়ে যান। কিছু একটা হলেও হতে পারে।”
“আমার যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর হওয়া সম্ভব না।”
কড়ি এত মজা পেল কথাটায় যে ইমাদ ঠিক যেমন করে নির্লিপ্ত গলায় আচ্ছা বলে সেও ঐ ভঙ্গিতেই বলল, “আচ্ছা।”
ইমাদ কড়ির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কড়ি বলল, “শুনুন আপনার কোনো স্টুডেন্ট হতে পারে। টিউশনি করান না?”
“জি।”
“হ্যাঁ, তাহলে আপনার কোনো ছাত্রী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।”
“আচ্ছা।”
“আমি আসলে স্যরি। এজন্যই তো বলি আপনার সাথে না ঠিক এসব যাচ্ছিল না। তাই আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। শুধু শুধু একটা মানুষকে আজীবন মনে মনে ভুল বুঝার চেয়ে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। তাছাড়া, মানুষটা যদি আপনার মত হয় তাহলে তো তা অবশ্যই করতে হয়।”
“আচ্ছা।”
কড়ি ঘুরে যেতে যেতে বলল, “আমি আসছি আর আবারো স্যরি।”
ইমাদ ভাবলেশহীনভাবে বলল, “আমার যা হওয়ার আপনার সাথে হয়ে গেছে। আর হবে না।”
কড়ির হাসি হাসি মুখটা আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল। কড়ি থমকে দাঁড়াল। যেখানে ছিল সেখানে দাঁড়িয়েই বলল, “আপনি খুব ভালো করেই আমার অবস্থাটুকু জানেন। এখন আমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করে থাকলে আপনি বোকামি করছেন। আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি আমার পরিবারের কথার বাইরে এক পাও দিব না। বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করব। আমাকে ভালো না বাসার অনুরোধ রইল। আর বেসে থাকলে আমি আপনার অনুভূতির সম্মান করি। আমাকে ক্ষমা করুন।” কড়ি দু’হাত এক সাথে জড়ো করে ক্ষমা চেয়ে চলে গেল। এই প্রথম ইমাদ দায়সারাভাবে আচ্ছা বলতে পারল না।
ঘরে যেতেই নিলয় বলল, “কোথায় ছিলি, বন্ধু?”
“এদিকেই।”
“আমাদের কুমিল্লা যাওয়া দরকার না? আমার ছাত্রর পরীক্ষা ভাই।”
“আচ্ছা।”
নিলয় মাথা চুলকে বলল, “কাল চল, ফিরে যাই।”
“আচ্ছা।”
“কিন্তু সমস্যা হলো দীপুর শ্বশুর না ছাড়তে চাইছেন না। আমরা চলে যাব জানাতেই শক্ত করে না, না করে উঠলেন। কি করে যে বুঝাই! বলছেন একেবারে উনার মেয়ের বিয়ে খেয়ে যেতে।”
ইমাদ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল, “আচ্ছা।” পরক্ষণেই হাত থমকে গেল ওর! চোখের মণি স্থির! মেয়ের বিয়ে? কড়ির পরিবার বিয়ে ঠিকও করে ফেলেছে! সর্বনাশ। তিন চারটে বোতাম খোলা অবস্থাতেই ইমাদ আবার ঘর থেকে বের হয়ে গেল। শার্টের বোতাম লাগিয়ে বের হওয়ার মতন অবস্থা তার এখন নেই।
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে