একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব-১৫+১৬+১৭+১৮

0
563

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz

মানতাশা আরও বেশি অবাক হয়, এজাজের পাশে তার মা কে দেখে। সে কোনোমতে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে সালাম জানায় আসমা আক্তার কে। পাশেই রয়েছে মানতাশার মা বাবা। মানতাশা কে দেখে তার বাবা বললেন, সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। পথিমধ্যে এজাজের সাথে দেখা হলো।

আসমা আক্তার বললেন, কাল বোনের বাসায় গিয়ে রাতে ওখানেই থেকে যাই। সকাল সকাল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কারণ আমার দেবর আসবে জানিয়েছে তো। ভাবলাম তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে আয়োজন শুরু করি। কিন্তু ভাই সাহেব আমাকে দেখেই জোর করে এখানে নিয়ে আসলেন।

মানতাশার মা মরিয়ম বেগম বললেন, বেশ করেছে! সেই সুবাদে আপনার সাথে দেখাটাও হয়ে গেল। মানতাশা কে কত করে বলেছি এজাজ কে বলতে আপনাকে নিয়ে আসার জন্য। ব্যস্ততার জন্য এজাজের নাকি সময় হয়ে উঠছিল না।
-তাই? কই? এজাজ তো আমায় কিছু বলেনি? আজই মাত্র জানলাম আপনারাও ওদের সম্পর্কের কথা জানেন।

মানতাশার দিকে তাকালো এজাজ। সে বারবার তাকে আসতে নিষেধ করার কারণে মা কে কিছু জানায়নি এজাজ। আর মরিয়ম বেগম বলছেন অন্যকিছু। মানতাশা তার সাথে মিথ্যে বলল কেন?

এজাজ বলল, আসলে আমি একটু জব খোঁজা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই সময় হয়নি।
-সময় হয় না বাবা। সময় করে নিতে হয়। দেখো আজ হুট করেই দেখা হয়ে গেল।

এই বলে মরিয়ম বেগম আসমা আক্তারের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে মানতাশার কুচকানো ভ্রু এর দিকে নজর যায় এজাজের। সে যে বিরক্ত হচ্ছে তার চোখ মুখের ছাপ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
কী চলছে মানতাশার মনে?
.
.
গতকালই মাত্র কক্সবাজারে যাওয়ার কথা উঠেছিল। আজই যে কক্সবাজারে চলে আসবে ভাবেনি আজরা।
কক্সবাজারের নামকরা হোটেলের একটিতে উঠেছে তারা। তিন রুম বিশিষ্ট হোটেলের রুম দেখে আজরা বলল, দুইজন মানুষের জন্য এত গুলো রুমের প্রয়োজন ছিল না। একটা নিতে পারতেন?

ইনতিসার হেসে বলল, এক রুম নিলে নিজের বাড়ির মতো ঘুরাফিরা করতে পারতে?

জবাবে আজরা কিছু বলল না। দু’জন দুই ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। আজরা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো, ইনতিসার এখনো ওয়াশরুমে। তার ক্লান্ত লাগছে ভীষণ। সে শুয়ে পড়ে। কখন যে চোখ দু’টো লেগে আসে টেরই পায়নি সে।
ইনতিসার এসে দেখলো, আজরা ঘুমিয়ে গেছে। সে আর ডাকলো না তাকে। তবে তার খিদেও পেয়েছে। এখানে বসেই নিজের জন্য খাবার অর্ডার করে। একবার ভেবেছিল বাইরে যাবে। কিন্তু আজরা নতুন জায়গায় এসেছে, তাকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। এই ভেবে আর গেল না সে।
খাবার আসলে খেয়ে সেও শুয়ে পড়ে। তারও বিশ্রামের প্রয়োজন।
কিন্তু ফোনের রিং বাজলে উঠতে হয় তাকে। দ্রুত সে পাশের রুমে চলে আসে আজরার ঘুম ভাঙবে বলে। অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে বলল, হ্যালো?

ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ শুনে বলল, কে?
-মানতাশা! আজরা কে ফোনে পাচ্ছি না। তাই আপনাকে করলাম।
-ওহ! সে ঘুমিয়ে আছে। ব্যাগ থেকে হয়তো ফোন বের করেনি।
-পৌঁছে গেছেন এত তাড়াতাড়ি?
-হ্যাঁ। ফ্লাইটে এসেছি তো।
-আজরা ভয় পেয়েছে বিমানে?
-খুব।
-প্রথম উঠেছে তাই।
-ব্যাপার না। এখন তো প্রায় উঠা লাগবে। অভ্যেস হয়ে যাবে তার ও। আচ্ছা ভালো থেকো। ও উঠলে ফোন দিতে বলব তোমাকে।

এই বলে ফোন রাখে ইনতিসার। এদিকে মানতাশা এসব শুনে নিজের ভাগ্যের উপর পরিহাস করে বলল, আজরা বিমানে করে দেশ বিদেশ ঘুরবে আর তুই এজাজের সাথে রিকশা নিয়ে আশেপাশে ঘুরতে থাকিস! প্রেম করেও পড়েছি এক বিপদে। ছাড়তেও পারছি না। এখন তো মা বাবাও এজাজ কে পছন্দ করে ফেলেছে। জব পেলেই বিয়ে পাকাপোক্ত হবে। কীভাবে আটকাবো এসব!

এসব ভাবতে ভাবতেই এজাজের ফোন এলো। মানতাশা তা রিসিভ করলো না। কারণ সে জানে, এজাজ আবারও নানা প্রশ্ন করা শুরু করবে। এজাজ কাল থেকে তাকে বিরক্ত করছে তার প্রশ্নের উত্তরের জন্য। সে জানতে চায় কেন মানতাশা তাকে মিথ্যে বলে এতদিন পরিবার কে আসতে নিষেধ করেছে?
সবাই তো বেশ খুশি। তবে কেন সে এমনটা বলেছিল?
মানতাশা কী সত্যিটা বলেই দেবে? যে সে বিয়ে করতে চায় না এজাজ কে?
.
.
সাজির এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। নাবীহার সামনে বসে রয়েছে সে। চুপচাপ নাবীহা কে দেখে সে বলল, এভাবে ভেঙে পড়লে তো হবে না। শক্ত হতে হবে তোমাকে। অন্তত তোমার পরিবারের জন্য!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাবীহা বলল, আমি ঠিক আছি। তোমার কী খবর বলো? সব ঠিকঠাক চলছে?
-হু। তোমার জন্য একটা জবের সন্ধান পেয়েছি। কল সেন্টারে। ট্রাই করবে নাকি?
-এত পড়াশোনা করে কল সেন্টারে জব?
-চাকরির বাজার তো জানোই কেমন। ঘুষ না দিলে নিজ যোগ্যতায় ভালো চাকরি পাওয়া মুশকিল।

বাইরে শোরগোলের শব্দে সাজির ও নাবীহা দু’জনেই বেরুলো। নাফিসা ফোনে তার আগের স্বামীর সাথে ঝগড়া করছে। কথা শুনে বুঝলো, সে কাবিনের টাকা দিতে রাজি নয়। দরকার হলে নাফিসা কে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সে। কিন্তু নাফিসা যেতে রাজি হয় না। সে তালাক দিয়েছে। এখন কীভাবে ও বাড়ি যাবে নাফিসা! তার সাথে তো নাফিসার কোনো সম্পর্ক নেই এখন। কাগজে কলমে আলাদা হওয়াটাই বাকি রয়েছে শুধু। তাছাড়া ও বাড়ি আর যেতেও চায় না নাফিসা। এত অত্যাচার সহ্য করা যায়!

এসব শুনে সাজির বলল, জীবনে টাকা পয়সারও দরকার আছে তাইনা?

নাবীহা কিছু বলার আগেই তার পাড়ার বান্ধবী দের দেখতে পায়। তাদের দেখে নাফিসা ফোন রাখে। সাজিরও ড্রয়িংরুমে এসে বসে। নাবীহা তাদের নিয়ে ভেতরে আসে। তারা নাবীহার হালচাল জিজ্ঞাসা করতে এসেছে। তাকে শান্তনার বাণীও শোনাচ্ছে।
কথার এক ফাঁকে একজন বলল, আজরার সাথে কথা হয়েছে আর?

না সূচকভাবে মাথাটা নাড়ে নাবীহা। সে শুনে বলল, সে তো কক্সবাজার গেছে। পাসপোর্ট থাকলে দেশের বাইরে যেত হানিমুনে। কত বড়ো কপাল তার তাইনা?

আরেকজন বলল, এই কপাল তো আমাদের নাবীহারও হতে পারতো। সেই রিজেক্ট করেছে ইনতিসার কে। হ্যাঁ রে নাবীহা, তুই ভুল করেছিস এটা করে। এখন দেখ! টাকার জন্য তোর বাবাটাও চলে গেল। বোনটা পড়ে আছে বাসায়। আর ভাই এর এডমিশন এর ঠিক ঠিকানা নেই। সবকিছুতে আবেগ চলে না রে। ইনতিসার কে বিয়ে করলে ভাগ্য খুলে যেত তোর।

এমনিতেই মনমানসিকতা ভালো নেই নাবীহার। এসব শুনে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠে তার। তবুও নিজেকে সামলে নেয় নাবীহা।
সে শুধই বলল, আমার ভাগ্যে এসবই ছিল হয়তো।
.
.
ঘুম ভেঙে নিজেকে হোটেল রুমে আবিষ্কার করে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লো আজরা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তারা এসেছিল দুপুরের পর পরই! ইনতিসার বলেছিল ফ্রেশ হয়ে খেতে যাবে। বিকালে যাবে সমুদ্র দেখতে। আর সে কিনা পুরা সময়টা ঘুমিয়ে নষ্ট করলো!
নিজের উপরে রাগ হলো আজরার। পাশের রুমে আসতেই ইনতিসারের দেখা পেল সে। টিভিতে খেলা দেখছে সে। আজরা কে দেখে বলল, উঠে গেলে যে?

আজরা তার পাশে এসে বলল, আপনি ডাকলেন না কেন আমায়?
-কত আরামে ঘুমোচ্ছিলে তুমি।
-একটা দিন নষ্ট হয়ে গেল।
-মোটেও না! তোমার যতদিন ইচ্ছে থাকব এখানে। দরকার হলে ঘুমিয়েই সময় পার করো। কোনো সমস্যা নেই।
-আর আপনার অফিস?
-এখানে বসেই সেরে নেব।
-আচ্ছা!
-হু। ভালো কথা! খিদে পায়নি তোমার?
-একটু পেয়েছে!
-ফ্রেশ হয়ে নাও। খাবার আনাচ্ছি।
-এখানে?
-হু। কেন? বাইরে গিয়ে খেতে চাও?
-বাইরে যেতে ইচ্ছে তো করছে।
-তবে রেডি হয়ে নাও।

আজরা চটজলদি ফ্রেশ হয়ে আসে। শাড়ি পরতে চাইলে তাকে বাঁধা দেয় ইনতিসার। সে বলল, সবই শাড়ি এনেছ নাকি?
-হ্যাঁ।
-শাড়ি পরতে হবে না সবসময়। কোনো অনুষ্ঠানে বা মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলে পরতে পারো।
-বাসায় কেউ কিছু বলবে না?
-নাহ! যুগ আধুনিক। আমার মাকেও শাড়ি পরতে দেখেছ বাসায়?
-বাসায় নাহয় পরব না। কিন্তু এখন যে সব শাড়িই এনেছি!
-কী আর করবে! পরে নাও।

দু’জনে তৈরী হয়ে বেরুলো। নাস্তা শেষে ইনতিসার আজরা কে নিয়ে মার্কেট এ আসলো। প্রবেশ করতে করতে বলল, কিনে নাও ইচ্ছে মতো পোশাক। শাড়ি পরে ঘুরে মজা পাবা না। কাল থেকে প্রচুর ঘুরাঘুরি হবে কিন্তু!

আজরা কয়েকটা টপস ও সালোয়ার কামিজ কিনে নেয়। এসব করতে করতেই রাত হয়ে যায়। তারা বাইরে থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসে।

এতটুকুতেই আবারও ক্লান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইনতিসার বলল, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। আমার অফিসের কিছু কাজ রয়েছে যা সারতে হবে।

দু’জনেই ফ্রেশ হয়ে আসে। আজরা শুয়ে পড়ে আর ইনতিসার অন্যরুমে বসে ল্যাপটপ নিয়ে। যদিও আজরা বলেছিল তাকে এই রুমে বসতে পারবে। কিন্তু ইনতিসার জানে, আজরার বিশ্রামের প্রয়োজন। এত লম্বা সফরের অভ্যাস নেই মেয়েটির। তাই হয়তো এতটা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে সে।

অফিসের একটা দরকারি ছবি গ্যালারি তে খুঁজতে গিয়ে নাবীহার ছবি সামনে আসে ইনতিসারের। যা সে ডিলিট করতে ভুলে গিয়েছিল। ছবিটি দেখে হঠাৎ নাবীহার কথা মনে পড়ে তার। মেয়েটির বাবা মারা যাওয়াতে বেশ দুঃখী হয়ে গেল সে। এখন ভালো আছে তো?
তবে এর চেয়ে বেশি ইনতিসারের ভাবনায় আজ নাবীহা এলো না। সে ছবিটি ডিলিট করে দিয়ে তার কাজে মন দিলো। সাথে একটা বিষয় সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারছে, কেবল আজরাতেই মুগ্ধ হয়ে থাকতে চায় সে।
এই ভেবে আজরার রুমের দিকে পা বাড়ায় ইনতিসার। মেয়েটা আবারও ঘুমিয়ে গেছে। গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে সে। এসি চালু থাকার কারণে হয়তো ঠান্ডা লাগছে। এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়ে আজরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো ইনতিসার। কী নিষ্পাপ সেই মুখটা! এমন একটি মেয়ের প্রেমে না পড়ে কী থাকা যায়?
.
চলবে
.
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz

-তুমিও তো ছেলেটার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারো?

মরিয়ম বেগমের কথা শুনে দিদার আলম বললেন, এটা আমার মাথায়ও আছে। খোঁজ নিচ্ছি আমি। ছেলের পরিবার ভালোই। বাড়তি কোনো ঝামেলাও নেই। ঘরবাড়ি আছে। এখন একটা চাকরি করলেই মানতাশা কে নিয়ে সুখে দিন পার করে ফেলতে পারবে। সুখে থাকতে এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই, যদি না পরিবারটা ভালো হয়। তার মা মানতাশা কে বেশ পছন্দ করেছেন। তাই না?
-আমিও খেয়াল করেছি। মহিলাটা বেশ হাসিখুশি। ভালোই থাকবে আমাদের মেয়েটা।

আড়াল থেকে মা বাবার কথোপকথন শুনে বিরক্ত হলো মানতাশা।
তার পছন্দ কে যে তারা গুরুত্ব দেবে বেশ বুঝতে পেরেছিল সে। তাইতো এজাজের মুখোমুখি তাদের হতে দিতে চায়নি। আজরার জন্য সব হয়েছে। সে যদি বিয়েতে এজাজকে আসতে না বলতো এসব হত না। তার উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে মানতাশার।
নাহ, এভাবে আর বিষয়টা কে এগিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। আরও বেশি দেরী হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং এজাজের সাথেই কথা বলে সম্পর্ক টা থেকে সরে আসতে হবে। আরও বেশি দেরী হওয়ার থেকে এটা করাই শ্রেয়।
এই ভেবে এজাজ কে ফোন করে দেখা করতে বলল মানতাশা। ফোন রেখে ভাবতে লাগলো, কী বলে সরে আসবে তার কাছ থেকে।
.
.
আজ একটা ইন্টারভিউ আছে নাবীহার। চাকরিটা হলে ভালোই বেতন পাবে। সাজিরের ডিউটি থাকার কারণে নাবীহার সাথে যেতে পারছে না সে। এদিকে নাবীহার মা নায়লা খাতুন সে একা যাচ্ছে বলে বেশ চিন্তিত। কেননা মেয়েটা সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তায় চলাফেরা করলে তো সমস্যা। তাই তার ছোটো ভাইকে সাথে নিয়ে যেতে বলে। এদিকে আবার নাফিসাও নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। তাই তাকেও নিয়ে যেতে বলতে পারছেন না। কিন্তু নাবীহা তার ছোটো ভাই কেও নিলো না। মা কে “কিছু হবে না। আমি ঠিক আছি” এই বলে শান্তনা দিয়ে একাই বেরিয়ে পড়লো।

ঘরের সামনে এসে রিকশা নিতে চাইলেও থেমে গেল সে। এখান থেকে রিকশা না নিয়ে সামনে হেঁটে গিয়ে বাসে উঠলে কিছুটা টাকা সাশ্রয় হবে। এই ভেবে রিকশা না নিয়ে হাঁটতে শুরু করে নাবীহা।
রাস্তার মাথায় এসে প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট অপেক্ষার পর লোকাল বাস পেল সে। যদিও কয়েকটা বাস আগেও পেয়েছিল কিন্তু সিট খালি ছিল না। এই সময়ে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিজীবীরা বেশি যাতায়াত করে। যার কারণে সিট খালি পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই অপেক্ষা করতে হয় সিট খালি থাকা বাসের জন্য।

বাসে উঠে মহিলা আসনে একটি মেয়ের পাশে বসলো সে।
বাস চলতে শুরু করে। তার গন্তব্যস্থল এখান থেকে খানিকটা দূরে। তাই সময় পার করার জন্য ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো নাবীহা।
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই ফেইসবুকে লগইন করা হয়নি। আজ লগইন করতেই আজরার আইডিতে তার ও ইনতিসারের ছবি দেখতে পেল সে। আজরা কাল রাতে একটি ছবি দিয়ে পোস্ট করেছে-
অবশেষে স্বামীর সাথেই কক্সবাজারে আসা হলো।

একজন তাতে কমেন্ট করেছে-
ভেবেছিলাম দেশের বাইরে যাবি। কক্সবাজার কেন?

আজরা রিপ্লাই করে-
পাসপোর্ট নেই আমার। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত বাইরেও যাব।

ছবিটা আবারও দেখতে থাকে নাবীহা।
যাত্রী নামছে বলে বাস থামে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে একজন যাত্রী ছুটে এসে নাবীহার হাতের ফোনটি নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। নাবীহা কিছু বুঝে উঠার আগেই সে ফোনটি নিয়ে ছুটে অন্যদিকে চলে যায়। এই ঘটনায় নাবীহার সাথে সাথে হতভম্ব হয়ে যায় সকলেই।
একজন হেল্পার কে বলল, ওরে ধরতে পারেন নাই?
-আরে ভাই আমার গাড়ির ভাড়াও না দিয়া ভাগছে। কিছু বুঝবার উঠতে পারিনাই। চোর ব্যাটা বড়ো চালাক।

নাবীহার মনটা একেবারেই খারাপ হয়ে গেল। এই সময়ে তার ফোনটা নিয়ে গেল! হাতে টাকা নেই যে নতুন একটা ফোন কিনে নেবে। আজকাল কী ফোন ছাড়া চলা যায়?
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সমুদ্রে পাড়ে চলে গিয়েছিল আজরা ও ইনতিসার৷
আজ যেন এক নতুন ইনতিসার কে দেখলো আজরা! পানি তে তো নেমেছেই সে। সাথে আজরাকেও নামিয়েছে। যদিও আজরা চায়নি। কিন্তু তার জোরাজোরি তে যেতে বাধ্য হয়। প্রথমত ভয় পেলেও ইনতিসারের সাহস পেয়ে তার ভয় কিছুটা কাটে। সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে নিজেকে সামলে নিতেও শিখে যায় সে।
সমুদ্রের পানিতে ইনতিসারের সাথে ভালো একটা সময় কাটায় আজরা।
ভিজে একাকার হয়ে যায় তারা। ওভাবেই ফিরে আসে হোটেলে। দু’জন দুই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়।
ইনতিসার বেরিয়ে এসে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
এদিকে আজরা ফ্রেশ হয়ে টের পেল সে কাপড় আনতেই ভুলে গেছে। ইনতিসারের সামনে এভাবে তোয়ালে প্যাচিয়ে বেরুতে লজ্জা করছে তার। তাই সে ইনতিসার কে ডেকে তাকে একটি কাপড় দিতে বলল।

ইনতিসার তার ব্যাগ খুলে শুরুতেই যে ড্রেসটি পেল তা নিয়ে আজরা কে দিলো ওয়াশরুমের দরজার ফাঁকে। আজরা তা হাতে নিয়ে দেখলো, ইনতিসার তাকে নাইটি দিয়েছে। এই সময়ে সে নাইটি পরবে?
পরক্ষণে আজরার মুখে হাসি ফোটে। সে ভেবেছে ইনতিসার ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। হয়তো সে চায় আজরা এটাই পরুক। তাই আজরা নাইটি পরেই বেরিয়ে আসে।

ইনতিসার এসির তাপমাত্রা ঠিক করছিল দাঁড়িয়ে। পেছনে ফিরে আজরা কে গোলাপি রঙের নাইটিতে দেখে চমকে উঠে সে।
আজরা ধীরগতিতে এগিয়ে আসে ইনতিসারের সামনে। সে অবাক হয়ে বলল, এই সময়ে নাইট ড্রেস পরলে যে?

আজরা তার কথা শুনে নিজেও অবাক হয়ে বলল, আপনিই তো দিলেন?

ইনতিসার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল, ওহ শিট! এটা নাইট ড্রেস ছিল? দুই পার্টের হওয়ার কারণে আমি সেভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। ব্যাগে প্রথমে যেটা পেয়েছি সেটাই খেয়াল না করে দিয়ে ফেলেছি।
-ওহ! আমার কাপড় বেশিরভাগ ড্রয়ারেই রেখেছি। যার কারণে নাইট ড্রেসটা হয়তো ব্যাগের শুরুতে পেয়েছেন।
-ড্রয়ারে যে কাপড় রেখেছ এটাই আমি জানি না। কারণ আমার কাপড় চোপড় পাশের রুমের ড্রয়ারে।
-ব্যাপার না। আমি এটা বদলে নিচ্ছি।

এই বলে ড্রয়ার টেনে কাপড় বাছাই করতে থাকে আজরা। ইশ! কী ভেবেছিল সে? ভেবেছিল ইনতিসার ইচ্ছে করেই এটা তাকে পরতে দিয়েছে। আর এখন শুনছে ভুলক্রমে।
এসব ভাবতে ভাবতে কাপড় নিয়ে ড্রয়ার বন্ধ করার সময় অন্যমনস্ক থাকায় আজরা হাতে ব্যথা পেয়ে মুখে শব্দ করে উঠে। সাথে সাথেই তার হাত থেকে কাপড়ও মেঝেতে পড়ে যায়। ইনতিসার দ্রুত তার কাছে এসে হাত ধরে বলল, লেগেছে?
-খুব বেশি না! তবে ব্যথা করছে।

ইনতিসার তার হাত দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এদিকে আজরা তাকে দেখতে।
কালো রঙের টি-শার্ট পরে আছে ইনতিসার। তার ফর্সা শরীরে এটি বেশ মানিয়েছে। এটা তার স্বামী? ভাবতেই মনের মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে আজরার।

ইনতিসার বলল, নাহ। বেশি লাগেনি।

এই বলে সে আজরার দিকে তাকালো। দেখলো আজরা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। ইনতিসার আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বলল, কী হলো?

ঘোর কাটতেই আজরা বলল, ও কিছু না।

এই বলে সে পাশ ফিরতে যাবে ঠিক তখনি নিচে থাকা কাপড়ের সাথে পা লেগে পড়ে যেতে চায়। সাথে সাথেই ইনতিসার তাকে ধরে ফেললো। আজরা ভয়ে জড়িয়ে ধরে ইনতিসার কে। ইনতিসারও তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কী হলো বলো তো তোমার? ঠিক আছ?

ইনতিসারের বুকে জায়গা পেয়ে কোনো কথাই যেন আজরার মুখ থেকে বেরুচ্ছে না। অস্পষ্ট ভাবে বলল সে, হুম।

এই বলে ইনতিসার কে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো সে। ইনতিসার তাকে আবারও ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে গলার চেইনটা ইনতিসারের টি-শার্ট এর বোতামের সাথে লেগে গেল।
ইনতিসার বলল, আমি ছাড়িয়ে নিচ্ছি।

চেইন ছাড়ানোর সময় আজরার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো ইনতিসার। তাকে ভেজা শরীরে নাইটিতে বেশ মানিয়েছে। এত কাছাকাছি থেকে ইচ্ছে করছে আরও কাছে যেতে আজরার।
হঠাৎ আর এই ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না ইনতিসার। চেইন ছাড়িয়ে আচমকা নাইটির ফিতায় হাত দিলো সে। এক টানে ফিতেটা খুলে ফেললো। ঘটনার আকস্মিকতায় আজরা নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। ইনতিসার তার আরও কাছে এসে নাইটির উপরের অংশটি খুলে ছুড়ে মারে মেঝেতে।
এইবার আজরা লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে যায়। ইনতিসার পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে তার ভেজা চুলে নাক ডুবালো। আজরার চুলের ঘ্রাণে মাতাল হওয়ার অবস্থা তার। তার চুলে নাক ঘষতে শুরু করলে আজরা ছুটে গিয়ে বিছানার উপরে বসে যায়। এরপর লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে।
ইনতিসার হেসে তার পাশে এসে বসলো। এরপর আরও কাছে গিয়ে তার কপালে আলতো করে চুমু খেলো। আজরা চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। দু’জনেই বিছানায় শরীরের ভার ছেড়ে দেয়।
হঠাৎ ইনতিসারের মনে হলো, আবারও তাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই এসব শুরু করা কী ঠিক হলো?

এই ভেবে সে সরে যেতে চাইলো। কিন্তু এইবার আজরা তাকে আঁটকায়। টি-শার্টের কলার ধরে রেখে তার দিকে চোখ মেলে তাকায়। তার চাহনি দেখেই ইনতিসার বুঝলো সে কী চায়। মুচকি হেসে আজরার ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে দেয় সে।
এতক্ষণ তারা অতল সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল আর এখন হারাতে শুরু করে সুখের সমুদ্রে। আজরার কাছে মনে হলো তা অতল সমুদ্র থেকেও গভীর!
.
.
ইন্টারভিউ টা ভালোই দিয়েছে নাবীহা। কিন্তু অফিস রুম থেকে বেরুনোর পর পরই শরীরটা খারাপ লাগছে তার। চারদিক ঝাপসা দেখছে সে। ব্যাগ ঘেটে মোবাইল খুঁজতে থাকে সাজির কে ফোন দেওয়ার জন্যে। তৎক্ষনাৎ ফোন হারানোর কথা মনে পড়ে তার। সে ওয়েটিং রুমের একটা সিটে বসে পড়ে ধপাস করে। মনে হচ্ছে পুরো শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। পাশের একজন থেকে ফোন নিয়ে সাজির কে কল দেয় নাবীহা। সাজির রিসিভ করতেই তাকে এসব কথা জানায় নাবীহা। সাজির বলল, আমি তো এখন বের হতে পারব না। স্যারের সাথে দরকারি কাজে আছি। এখানে আমাকে প্রয়োজন।
-কিন্তু আমার শরীরে যে একটুও শক্তি নেই মনে হচ্ছে!
-টেনশনে ফেলে দিলে আমায়। তুমি প্লিজ কিছুক্ষণ বসে রেস্ট নাও। আমি দেখছি কী করা যায়!

এই বলে সাজির ফোন রাখলো। মিনিট পাঁচেক পর সেই নাম্বারে কল দিলে পাশেরজন নাবীহা কে ফোন দেয়। নাবীহা রিসিভ করতেই সাজির বলল, ছুটি ম্যানেজ হলো না। আসলে কর্মচারীরা কি আর যখন তখন ছুটি পায়? তবে এই কাজটা শেষেই বেরুতে পারব বলেছে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে পারবে না?

নাবীহা বলল, কী আর করার! ফ্রি হয়ে জানাইও।

ফোন রাখার পএ তার মানতাশার কথা মনে পড়ে। পাশের জন থেকে অনুমতি নিয়ে সে ফোন দেয় মানতাশা কে। মানতাশা আর এজাজ একটি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করছে। নাবীহার ফোন পেয়ে এসব শুনে থেমে যায় মানতাশা। চিন্তিত হয়ে এজাজ কে বলল, আগে নাবীহা কে বাসায় দিয়ে আসি। ওর শরীর খারাপ লাগছে।
-সে কী!
-হু।
-আমিও যাব। চলো।

মানতাশা ও এজাজ অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। নাবীহার কণ্ঠস্বর শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে মানতাশা। ঠিক করে বাসায় নেওয়ার আগে তাকে ডাক্তারের কাছে নেবে। কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে, শরীর খারাপ তার।
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৭_১৮
#Saji_Afroz

নাবীহা কে ডাক্তার দেখিয়ে তাকে নিয়ে তার বাসায় আসে মানতাশা। সাথে এজাজও ছিল। তাকে চলে যেতে বলে নাবীহা কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মানতাশা। হঠাৎ নাবীহার শরীরে জ্বর এসেছে। মাথাটা ভার হয়ে আছে। ভাগ্যিস এজাজ ও মানতাশা সঠিক সময়ে গিয়েছিল। নাহলে একা বাড়ি ফেরার মতো শক্তি তার শরীরে ছিল না। পথিমধ্যে মানতাশার জোরাজোরিতে ডাক্তারও দেখিয়ে এসেছে। নাবীহার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডাক্তার খরচ ও মেডিসিনের বিল দিয়েছে মানতাশা। যদিও এজাজ জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু নাবীহা চায়নি ওসব এজাজ দিক। মানতাশা দেওয়াতে সে ধার হিসেবে নিতে রাজি হয়।

নায়লা খাতুন মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। তাকে শান্তনা দিয়ে নাবীহা বলল, আমি ঠিক আছি। কিছু টাকার প্রয়োজন। মানতাশা কে দিতে হবে।

একথা শুনে মানতাশা অভিমানী স্বরে বলল, ওসব আমি নেব না। বান্ধবীর জন্য এতটুক আমি করতে পারি না?
-করেছিস তো।
-ফেরত দিতে চাইছিস কেন এখন? রাগ করব বললাম।

নায়লা খাতুন কেও টাকার প্রয়োজন নেই জানালো সে। তিনি বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু নাস্তার তো প্রয়োজন আছে। বসো আমি কিছু নিয়ে আসি।

এই বলে তিনি বেরুলেন। সাজিরের ফোন আসে মানতাশার কাছে। ফেরার সময় তাকে সব ফোনে জানিয়েছিল মানতাশা।
সে রিসিভ করতেই সাজির বলল, নাবীহার কী অবস্থা?
-বাসায় নিয়ে আসলাম। জ্বর শরীরে। ডাক্তার রেস্ট নিতে বলেছে।
-ভাগ্যিস তোমরা গিয়েছ। আমাকেও আর বেরুতে হলো না। একেবারে অফিস শেষে বেরুবো। নাবীহা কে জানিও, ওকে দেখে বাসায় যাব আমি।
-আচ্ছা।

ফোন রেখে মানতাশা বলল, আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ।
-কেন?
-সাজির ভাই এর যদি নিজস্ব অফিস থাকতো তবে তুই কল করার সাথে সাথেই চলে আসতে পারতো। এখন অন্যের কোম্পানি তে জব করে বলে হুটহাট বেরুনোর সময় নেই।
-স্বাভাবিক। কর্মচারীরা নিয়মের বাইরে কিছু করতে পারে না।
-নিজের কপাল তো নিজেই পুড়ালি। ইনতিসার কে বিয়ে করলে এই দশা হত তোর?

বিরক্তির সুরে নাবীহা বলল, এখন অন্তত এসব বলিস না।
-তুই ভুল করেছিস। কিন্তু আমি করব না।
-মানে?
-আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এজাজের সাথে সম্পর্ক শেষ করার।

নাবীহা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মানতাশার দিকে। মানতাশা বলল, তোদের দু’জনের লাইফ দেখে আমার কাছে আজরার লাইফটা কেই বেস্ট মনে হলো। এইরকম একটা জীবন আমিও চাই।
-এতদিনের সম্পর্ক এক নিমিষেই শেষ করবি?
-যেই সম্পর্কে খুশি হতে পারব না সেই সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে কী লাভ?

নাবীহার শরীর খারাপ লাগার কারণে বেশি কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। শুধু বলল, টাকা পয়সাতেই সব সুখ হয় না রে।
-হয় হয়। আজরা কেই দেখ!
.
.
ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আজরা। আজ হুট করে এমন কিছু হয়ে যাবে ভাবেনি সে। নিজেকে এখন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে তার। একটা নারীর জীবনে এটাই তো চাওয়া, স্বামীর ভালোবাসাটা পাওয়া। আর সেটা পেয়ে ধন্য আজরা।
মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে নেয় আজরা। বাইরে বেরিয়ে দেখলো ইনতিসারও ফ্রেশ হয়ে এসেছে। চোখাচোখি হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় আজরার মুখটা। ইনতিসার মৃদু হেসে বলল, রোমান্স করে মন ভরেছে কিন্তু পেট ভরানোরও প্রয়োজন আছে নাকি? চলো খেয়ে আসি কিছু।

আজরাও হেসে বলল, একটু বসুন। আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছি।

এই বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে তৈরী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজরা। তার দিকে তাকিয়ে থাকে ইনতিসার।
আজরার সাথে জীবনের নতুন ধাপে পা দিতে পেরে সেও আনন্দিত।
.
.
নাবীহার বাসা থেকে বেরুতেই এজাজের দেখা পায় মানতাশা। এজাজ নাবীহার বাসা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে দেখে ছুটে এসে মানতাশা বলল, তুমি যাওনি এখনো?
-তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-কিন্তু আমি তো তোমায় চলে যেতে বলেছিলাম। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?
-তুমি কিছু বলতে চেয়েছিলে তা শোনার জন্য।

মানতাশা ভেবেছিল আজ আর এজাজ কে কিছু জানানো হবে না। কিন্তু প্রকৃতি ও হয়তো চায় না তারা একসাথে থাকুক। তাই আজই এজাজ সব জানতে চলেছে।
মানতাশা বলল, পাশের পার্কটি তে গিয়ে বসি?
-চলো।

দু’জনে একটি গাছের নিচের বেঞ্চের উপরে এসে বসে। মানতাশা কে চুপচাপ দেখে এজাজ বলল, কী হলো? বলো কী বলতে চেয়েছিলে?

মানতাশা আমতাআমতা করে বলল, আসলে তুমি কীভাবে নেবে বিষয়টা বুঝতে পারছি না।
-বিষয় যেমন হবে তেমনই নেব। বলো তুমি?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানতাশা বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।

মানতাশার মুখে এমনটা একটা কথা শোনার জন্য কিছুটা হলেও প্রস্তুত ছিল এজাজ। কারণ গত কয়েকদিনে তার ব্যবহারে এজাজ একটু হলেও ধারণা করতে পেরেছিল সে এই সম্পর্ক তে খুশি না। তাই দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা তে সে খুশি হতে পারছিল না।
এজাজ উত্তেজিত হলো না। শুধু বলল, এর কারণ?
-তোমার প্রতি আগের মতো টান আমি অনুভব করি না।
-টান অনুভব না করার মতো কী করেছি আমি? বরং আমার সবটা দিয়ে তোমায় ভালোবেসেছি। নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে?
-আমি আমাদের সম্পর্ক টাতে খুশি হতে পারছি না। অখুশি মন নিয়ে নতুন জীবন শুরু করব?
-তুমি কী সময় নিতে চাচ্ছ?
-আমি সবটা শেষ করতে চাচ্ছি।

এই বলে অন্যদিকে ঘুরে তাকালো মানতাশা।
এতদিনের সম্পর্ক হুট করে মানতাশা শেষ করতে চাইলেও এজাজ সে দূরে সরে যাবে এটা যেন ভাবতেই পারছে না।
শেষ চেষ্টাটুকু তো সে করতেই পারে! এই ভেবে এজাজ বলল, আমি এখনো জব পাইনি। এটা কী সমস্যা? পেয়ে যাব। এর আগে বিয়ে হবে না। এভাবে হুটহাট কোনো ডিসিশন নিও না প্লিজ। আরও কিছুদিন সময় নাও।
-আমি অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর বললামই তো, আমি খুশি হতে পারছি না এই সম্পর্কে।
-কিন্তু কেন? আমি তোমাকে ভালোবেসেছি, সামর্থ্য অনুযায়ী সবই করেছি তোমার জন্যে। তোমার খুশি কীসে আমায় বলো? আমি সব করব তোমার জন্য।

এইবার না বলতে চেয়েও মানতাশা বলতে বাধ্য হলো, ইনতিসারের মতো ধনী হয়ে দেখাতে পারবে?

এজাজের কাছে সবটা স্পষ্ট হয়ে গেল। মনে করে দেখলো, আজরার বিয়ের কথাবার্তা হওয়ার পর থেকেই মানতাশার মাঝে এই পরিবর্তন দেখা গেছে।

সে বলল, এটাই তাহলে তোমার অখুশির কারণ?
-আজরার মতো মেয়ে যদি ইনতিসারের মতো কাউকে পায়, তোমার মনে হয় না আমার জন্যেও ওমন কেউ যোগ্য?

মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না এজাজের। কিন্তু বুকের ভেতর থেকে আসা ভারী নিঃশ্বাসটা কোনো মতেই আটকাতে পারলো না সে।

তাকে নিশ্চুপ দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে মানতাশা। ব্যাগ থেকে এজাজের মা এর দেওয়া চেইনটা বের করে তার পাশে রাখলো। এরপর বলল, আমাকে ভুল বুঝো না। তোমাকে অন্ধকারে রাখার চেয়েও সত্যি বলে মুক্তি করে দিলাম। ভালো কাউকে জীবনে পাবে তুমি। আমিও যে আমার জীবনে বেস্ট কাউকেই চাই!

এজাজ মাথা নিচু করে বসে রইলো। মানতাশা তার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হাঁটতে শুরু করে।

তার পথের দিকে তাকিয়ে এজাজ বলল, আমার যে তোমাকেই দরকার। একথাটা বলতে পারলাম না তোমায়। কারণ তোমার কাছে আমার সেই যোগ্যতাও যে নেই। তোমার কাছে আমি অতি নগন্য আর আমার এই চাওয়াটাও মূল্যহীন।

রিকশায় বসে প্রশান্তির এক নিঃশ্বাস ফেলে মানতাশা। বুকের ভেতর থেকে বড়ো একটা পাথর সরে গেছে তার।
এখন সে নিজের ইনতিসারের মতো কাউকে নিজের জীবনে চায়। যে কিনা তার সকল চাহিদা পূরণ করবে।

বাসায় এসে হাসনার দেখা পায় মানতাশা। তাকে নিয়ে রুমে আসে সে। হাসনা বলল, সবাই ওয়েট করছে রেজাল্ট জানার জন্যে।
-কীসের?
-বারেহ! ইনতিসার কে পটানোর কথা ছিল না তোর?
-সে তো আজরা কে নিয়ে হানিমুনে গেছে।
-আর তুই যেতে দিলি?

মানতাশা অবাক হয়ে বলল, আমি কে নিষেধ করার?
-কিছু করে আটকাবি না ওদের?
-তোর কী আমাকে সিরিয়ালের ভিলেন মনে হয়? দেখ ওসব মজার ছলে বাজি ধরেছি। এতটাও সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।
-নাকি হার মেনে নিচ্ছিস? আমি হলে জাস্ট দুইদিন সময় লাগতো।

খানিকটা রেগেই মানতাশা বলল, হানিমুনে না গেলে আমার জন্যও এটা ব্যাপার ছিল না।
-এখন ব্যাপার হয়ে গেছে। হানিমুন থেকে এসে তোকে আর পাত্তাও দেবে না সে।
-একশোবার দেবে।
-তার মানে চ্যালেঞ্জ কমপ্লিট করবি তুই?
-ছেড়ে দিয়েছি তো বলিনি!

কাকে কী বলে উত্তেজিত করানো যায় ভালোই জানে হাসনা৷ সে শুধু চায় এই তিন বান্ধবীর বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আর এটা মানতাশা কে দিয়েই সম্ভব। সে জানে, মানতাশা বিষয়টা দুষ্টুমির ছলে এসব করলেও আজরা জানলে তা কখনোই মেনে নেবে না। আর এতেই দুরত্ব বাড়বে তাদের। তার চাওয়া পূরণ হওয়ার দিনের অপেক্ষায় রয়েছে সে।

.

তিনদিন পর কক্সবাজার থেকে ফিরে আসলো ইনতিসার ও আজরা। ইলারা জামান ও ইলহাম শেখ তাদের সাদরে ভেতরে প্রবেশ করালেন। ড্রয়িংরুমে এসে বসলো সকলে। আজরা ও ইনতিসারের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন ইলারা জামান। বেশ বুঝতে পারলেন, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এটাই তো তিনি চেয়েছিলেন! ইনতিসারের মনে আজরাকে নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকুক এমনটা তিনি চাননি।

ইনতিসার ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ইলারা জামানের ইশারায় ইলহাম শেখও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান।
তিনি আজরার কাছে এসে বললেন, কেমন করলে ঘুরাঘুরি?
-অনেক বেশি এনজয় করেছি আমি। কক্সবাজার আসলেই অনেক সুন্দর।
-শুধু সুন্দর জায়গা দেখেছ নাকি সুন্দর মুহুর্তও তৈরী করেছ?

শাশুড়ী মা এর কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল আজরা। তিনি একগাল হেসে আজরার হাত ধরে বললেন, কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তোমাদের ইচ্ছেটা জানতে চাই। ফ্যামিলি প্লানিং নিয়ে কোনো কথা হলো দু’জনের মাঝে?

আজরা না সূচকভাবে মাথা নাড়লে তিনি বললেন, সবে বিয়ে হলো! ব্যাপার না। তবে এ নিয়ে কথা বলতে ক্ষতি কী? এতে করে দু’জনের মাঝে আগ্রহও টা বাড়বে সাথে বাড়বে ভালোবাসা।

আজরা মাথা নিচু করেই বসে রয়েছে। তার অবস্থা বুঝতে পেরে তিনি বললেন, যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আজরা রুমে প্রবেশ করতেই ইনতিসার কে ওয়াশরুম থেকে বেরুতে দেখলো। ইনতিসার বলল, তুমিও গোসল সেরে নাও। ভালো লাগবে।

আজরার মুখে দুষ্টু হাসি দেখে সে জিজ্ঞাসা করলো, হাসছ যে?
-হানিমুনে যেতে না যেতেই মা অনেক বেশি এক্সাইটেড।
-কীসের জন্য?
-নাতী নাতনীর মুখ দেখার জন্যে।

ইনতিসার হেসে বলল, কিছু বলেছে?
-হু। আমরা এই বিষয়ে কী ভাবছি জিজ্ঞাসা করেছে।

এই বলে আজরা ওয়ারড্রব খুলে তার কাপড় নিতে থাকে। আচমকা ইনতিসার তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কী বললে?
-লজ্জায় একটা কথাও বলতে পারলাম না।

তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইনতিসার বলল, মা এর আশা পূরণ করে দিই। কী বলো?

হাত দিয়ে আলতো করে ইনতিসারের বুকে মেরে আজরা বলল, আপনিও শুরু করলেন?
-এখনো কই করেছি? করব নাকি?

এই বলে আজরার মুখের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নেয় ইনতিসার। তাকে এক ঝাটকায় সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যায় আজরা। ইনতিসার হেসে বলল, মা এর সাথে সাথে কিন্তু আমিও এক্সাইটেড!
.
.
.
-এজাজের বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন একবার। মেয়েকে যে বাড়িতে পাঠাব তা দেখে আসা ঠিক হবে না? এমনিতে আমি খোঁজ নিয়েছি, সবই ঠিক আছে। তবুও একবার যাওয়া প্রয়োজন। এতে করে সম্পর্কটাও গাঢ় হবে।

দিদার আলমের কথা শুনে মরিয়ম বেগম বললেন, নিজ থেকে যাওয়ার কথা বলব?
-হু। তারা তো এজাজ জব পায়নি বলে সংকোচে থাকে। আমি চাই এটা দূর হোক। জব পায়নি তাতে কী? পেয়ে যাবে!
-আচ্ছা আমি আপাকে ফোন দিচ্ছি।

মরিয়ম বেগমের কল পেয়ে রিসিভ করলেন আসমা আক্তার। সালাম জানিয়ে তিনি বললেন, কেমন আছেন আপা?

তিনি সালামের উত্তর জানিয়ে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-ভালো। আমিও চাচ্ছিলাম একটা খবর নিতে আপনার।
-তাই!
-জি আপা। ভাইয়া, মানতাশা ভালো আছে?
-জি। আসলে আমরা আপনাদের বাসা থেকে ঘুরে আসতে চাচ্ছিলাম।

একথা শুনে মুখে হাসি ফোটে আসমা আক্তারের। তিনি বললেন, সত্যি বলছেন?
-জি। আসতে পারি আমরা?
-কী যে বলেন না আপা! আমার মনের কথা বলেছেন একদম। আপনারা যদি কিছু মনে করেন এই ভেবে বলিনি! একবার কেন! এখন থেকে আসা যাওয়া তো লেগে থাকাই উচিত।
-আপনিও কী যে ভাবেন না! কী মনে করব? বরং যেতে পারলে আনন্দিত হব।
-তবে দ্রুত চলে আসুন।
-কাল আসি?
-নিশ্চয়। সাথে মানতাশা কেও নিয়ে আসবেন।
-আচ্ছা।

কিছুক্ষণ কথা বলা শেষে ফোন রাখলেন তারা। এজাজ বাসায়ই আছে। আসমা আক্তার এজাজের কাছে এসে খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, বাজারে যেতে হবে। ভালো বাজার করে নিয়ে আয়।
-কেন?
-মানতাশার মা ফোন দিয়েছিল। তারা আসবেন জানালো।
-তারা আসবেন?
-বারেহ! মেয়ে কোন ঘরে বিয়ে দিতে চায়ছেন দেখবেন না?

এজাজ বুঝতে পারলো, মানতাশা হয়তো তাদের কিছুই জানায়নি। কিন্তু এজাজ তার মাকেও আর অন্ধকারে রাখতে পারে না। সে ড্রয়ার টেনে মানতাশার ফেরত দেওয়া চেইনটা হাতে নিলো। এরপর তা মা এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল- এসবের আর প্রয়োজন নেই। জিজ্ঞেস করো মানতাশা কিছু জানায়নি তাদের?

তিনি চেইনটা হাতে নিয়ে বললেন, এটা তো আমি মানতাশা কে দিয়েছিলাম।
-ফেরত দিয়েছে।
-কিন্তু কেন?
-সে আমায় বিয়ে করতে চায় না।

তিনি অবাক হয়ে বললেন, মানে কী?

একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এজাজ বলল, কারণ তার মনে হচ্ছে আমার সাথে খুশি হতে পারবে না।

কী বলবেন খুঁজে পাচ্ছেন না আসমা আক্তার। শুধু অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।
এজাজ বলল, আর কিছু আমায় জিজ্ঞাসা করো না মা। আর আমি ঠিক আছি। যেভাবে যা চলছে চলতে দাও।

এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এজাজ। আসমা আক্তার ছেলের কষ্ট হচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারলেন। সাথে সাথেই তিনি মরিয়ম বেগম কে ফোন করে বললেন, আপনাদের মেয়ে চেইন ফেরত দিচ্ছে আর আপনারা বাসায় আসতে চাচ্ছেন। কিছুই তো বুঝলাম না!

মরিয়ম বেগম অবাক হয়ে বললেন, কীসের চেইন?
– সম্পর্ক থাকাকালীন মানতাশা কে ভালোবেসে একটা চেইন পরিয়ে দিয়েছিলাম।

মরিয়ম বেগম যে তার গলায় একটি চেইন দেখেছিলেন স্পষ্ট মনে আছে। এটা কে দিয়েছে জিজ্ঞাসা করাতে মানতাশা মিথ্যে বলেছিল সেদিন।
তিনি বললেন, ফেরত দিয়েছে বলতে?
-সে নাকি এই বিয়েটা হোক তা চায়না।
-আমাদের কিছু তো বলেনি!
-জিজ্ঞাসা করুন আপনার মেয়েকে, আমার ছেলের সাথে এমনটা কেন করছে সে? একজনের মন ভেঙে কখনো সুখে থাকতে পারবে না মানতাশা। এটা এক মা এর বলা কথা। মনে রাখতে বলবেন তাকে।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আসমা আক্তার। এদিকে মরিয়ম বেগম রেগেমেগে সবটা জানালেন দিদার আলম কে। মানতাশা বাসায় নেই। তার বাসায় আসার অপেক্ষা করছেন তারা। তারাও জানতে চান, এই মেয়ের সমস্যা কোথায়!
.
.
.
নাবীহার সামনে বসে আছে সাজির। এক বাটি রসমালাই তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খেয়ে নাও?
-রসমালাই! তুমি এনেছ?
-হু। সেদিন তুমি খেতে চেয়েছিলে। কিন্তু বেতন না পাওয়ার কারণে আনতে পারিনি। আজ বেতন পেয়েই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।

নাবীহা হেসে খাওয়া শুরু করে। পাশেই মানতাশা রয়েছে। সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ সাজিরের ফোন এলে সে বারান্দার দিকে যায়। এরমধ্যে আজরার ভিডিও কল আসলো মানতাশার ফোনে। সে রিসিভ করলে আজরা বলল, নাবীহা কোথায়? ওকে অনলাইনে পাচ্ছিলাম না। তাই তোকে ফোন দিলাম।
-কীভাবে পাবি? ওর না ফোন নিয়ে গেল?
-ওহহো! আমার মনেই ছিল না। দে তো ওকে।

কথার ফাঁকে একজন বুয়া এসে আজরার জন্য তার প্রিয় একটি চকোলেট কেক রেখে গেল। তা দেখে মানতাশা বলল, কেক? কার জন্মদিন আজ?
-কারও না। ইনতিসার অফিস থেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা। আসার সময় কেক নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু উনি পাউন্ড কেক পাঠিয়ে দিয়েছেন।
-বাহবা!

নাবীহা কে দেখে আজরা বলল, কেমন আছিস রে?
-এখন সুস্থ। তুই কেমন আছিস?
-আমিও ভালো আছি।

অল্প কিছুক্ষণ কথা বলেই শাশুড়ী আসাতে ফোন রাখে আজরা। সাজিরও বারান্দা থেকে আসে। সে পকেট থেকে একটি পুরাতন এন্ড্রয়েড ফোন বের করে নাবীহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা তুমি ইউজ করো। সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়েছি। পরে একটা ভালো থেকে নিয়ে দেব।
-এসব করতে গেলে কেন আবার?
-আরে রাখো তো! আর আমি চললাম এখন। কাজ আছে। তোমরা গল্প করো।

বিদায় জানিয়ে সাজির চলে গেল। মানতাশা ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বলল, বেশি হলেও আড়াই থেকে তিন হাজার দিয়ে এটা নিয়েছে হবে।
-আমার ফোনের প্রয়োজন ছিল। আজকাল এন্ড্রয়েড ছাড়া চলা যায় না।
-আমি কী বলতে চাইছি তুই বিষয়টা বুঝতে পারিসনি।
-কী?
-তোর রসমালাই খেতে ইচ্ছে করেছিল আরও দু’দিন আগে। খেতে পারলি আজ। কিন্তু আজরা কে দেখ! বলার সাথে সাথেই কেক হাজির। তাও কত বড়ো কেক! ভাগ্য হতে হবে ওর মতন। সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন ইউজ করার মতন নয়। তাই তো আমি সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি এজাজের সাথে। তুইও বিষয়টা ভেবে দেখতে পারিস।
.
.
.
শাশুড়ী যেতেই ইনতিসার কে ফোন দিলো আজরা। কেকের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আসার সময় নিয়ে আসলেও হত!
-আমার বউ এতক্ষণ অপেক্ষা করবে! এটা হয় না।

মুচকি হাসে আজরা। সে কী করছে জানতে চাইলে আজরা বলল, নাবীহার সাথে কথা বলছিলাম। আমি ভাবছিলাম কী ওকে একবার দেখতে যাব। আজকে ওকে ভিডিও কলে দেখে বোঝাই যাচ্ছে, অনেকটা শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।
-হ্যাঁ যাও না।

একটু থেমে আজরা বলল, আমি ওকে একটা উপহার দিতে চাচ্ছিলাম। যদি নিয়ে আসতেন?
-কী?
-একটা ফোন। ওর ফোন ছিনতাই হয়েছে।
-বেশ তো। কোন মডেল দিতে চাও আমাকে জানাও। নিয়ে আসব।
-আপনার পছন্দ মতন নিয়ে আসবেন।
-আচ্ছা।

এই বলে ফোন রাখে আজরা। কালই নাবীহা কে দেখতে যাবে ঠিক করে সে।
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে