একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০২

0
4342

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

মৌ বারবার রাশেদের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ওর শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।কিন্তু দুই তিন পা ফেলতেই থেমে যেতে হলো কারণ সামনে ওই ছেলেটা যে একটু আগে মৌ এর সাথে কথা বলছিলো।ছেলেটা পথ আগলে দাড়ালো।পথরোধ করায় রাশেদ চড়াও হয়ে বলল,’এই পথ আটকেছিস কেনো?পথ ছাড়।আর এখান থেকে যা নাহলে এখানেই তোকে পুঁতে রেখে দিবো।বাঁচতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে যা।’

ছেলেটা একটু ভ্রু কুঁচকে মুখে গাম্ভীর্য ধারণ করে বলল,’আপনি ওনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো?’

‘এই তোরে কৈফিয়ত দিমু ক্যান?বাইরের পোলা হইয়া আমার লগে গলা চড়ায় কথা কস তোর তো সাহস কম না।’এটা বলেই রাশেদ ছেলেটাকে থাপ্পড় মারতে নিলেই ছেলেটা সিনেমা স্টাইলে থাপ্পড়টা আটকে ঘুরিয়ে চারটে চড় মারলো।চার নাম্বার চড়টা মেরে বলল,’এই যে তোর এলাকায় দাড়িয়ে তোকে চড়ও দিয়ে দিলাম।যা তোর বাপ দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীকে ডাক।দেখি কে আমার কি বাল ফালায়।’
রাশেদ চারটা চড় খেয়ে রাগে অপমানে রক্তচক্ষু নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,’তুই দাড়া।তোরে আজকে কোপাইতে না পারলে আমার নাম রাশেদ না।’

রাশেদের কথা শুনে ছেলেটা কৌতুকে হেসে টিটকিরি দিয়ে বলল,’তাইলে তোর নাম কি দিবি?’
রাশেদ রাগটা হজম করে মৌ কে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে ছেলেটা নিজের একটা হাত দিয়ে মৌ এর হাত ধরে বলল,’ওনাকে না।তুই একা গিয়ে তোর চেলা পেলা চৌদ্দ গোষ্ঠী নিয়ে আয়।আমি এখানেই দাড়াইছি।’

রাশেদ মৌ এর হাত ছেড়ে দিয়ে একবার ছেললটার দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরলো।আজকে এই ছেলের লাশ ফেলে দিতে না পারলে ও আজীবন মাথা ন্যাড়া করে রাখবে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো।এদিকে রাশেদ অনেকটা দূর চলে যাওয়ার পর ছেলেটা বাইকে বসে মৌ কে বলল,’হা করে কি দেখছেন?তাড়াতাড়ি বাইকে উঠুন।ওরা চলে এলে আর যাওয়া যাবে না।’

মৌ ইতস্তত করতে করতে বলল,’আমি আপনার সাথে যাবো কেনো?’
ছেলেটা বলল,’কারণ আমকে শিরিন ভাবি পাঠিয়েছে।বলেছে আপনাকে নিয়ে যেতে।’
মৌ বিশ্বাস করতে পারলো না।হতেও তো পারে লোকটা মেয়ে পাচারকারী!ওকে ধরে নিয়ে পাচার করে দিবে!এগুলো ভেবেই মৌ ইয়া বড়ো এক ঢোক গিললো।মৌ এর মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে সে ছেলেটাকে বিশ্বাস করছে না।নিজেকে বিশ্বাস করানোর জন্য ছেলেটা নিজের ফোন থেকে একটা ছবি বের করে দেখিয়ে বলল,’এই দেখুন আমি আর ভাবি।’
মৌ হাতে নিয়ে দেখলো আসলেই ছেলেটার সাথে শিরিন আপুর ছবি।আপু আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে।মৌ ওনাকে আরো দুইবছর আগে দেখেছে।তখন চিকনই ছিলো।ছেলেটা মৌ এর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল,’এবার তো আসুন প্লিজ!ওরা আসলে চারটা চড়ের বদলে আমার চারশো টুকরা করবে।’ছেলেটা কথাটা কিছুটা অসহায় শোনা গেলো।মৌ এর হাসি পেলো।তখন তো কি বড় বড় গলায় বলেছিলো চৌদ্দ গোষ্ঠী নিয়ে আসতে আর এখন হাওয়া বের হচ্ছে।তবে হাসি আসলেও এই সিরিয়াস সময়ে মৌ হাসলো না।ছেলেটার পেছনে উঠে বসলো।কিন্তু বাইকে স্টার্ট দেওয়ার আগেই রাশেদ আর আরো কয়েকজনকে দেখ যাচ্ছে।হাতে লাঠিসোঁটা।ওদের দেখেই ছেলেটা কালবিলম্ব না করে বাইকে স্টার্ট দিয়ে দিলো।তারপর পিছনে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে ওদের একপলক দেখে সামনে তাকিয়ে হেঁড়ে গলায় গান ধরলো,’

আজ ম্যা উপার,আসমা নিচে।
আজ ম্যা আগে,জামানা হ্যায় পিছে।’

মৌ নিঃশব্দে হাসলো।স্টেশনে পৌঁছে বাইক থেকে নেমে ছেলেটা বলল,’আপনি একটু দাড়ান আমি এই বাইকটা দিয়ে আসছি।’

মৌ দাড়ালো।ছেলেটা বাইকটা দিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এলো।এই বাইকটা স্টেশনের একজনের থেকে ধার নিয়েছিলো মৌ কে আনার জন্য।দিতে চায় নি অবশ্য কিন্তু পাঁচশ টাকা দেওয়ার পর রাজি হয়েছে।

ছেলেটা ফিরে এসে মৌ এর থেকে ব্যাগটা চাইলো কিন্তু মৌ বলল,’না থাক।আমি পারবো।’
ছেলেটা আর কিছু বলল না।ট্রেন আসতে লেট হবে তাই ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলো।রুমে মানুষ দিয়ে ঠাসা।কোনো মতে একটা সীট পেলো বসার।সেটায় মৌ বসল।আর ছেলেটা দাড়িয়ে রইলো।এখন সাড়ে ছয়টা।ট্রেন আসবে সোয়া সাতটায়।আরো পয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।আশেপাশে কয়েকটা দোকান খোলা দেখলো আসার সময়।হোটেলও বোধহয় মাত্রই খুলেছে।ছেলেটা মৌ’কে বলল,’কি খাবেন আপনি?’
মৌ মাথা নেড়ে জানালো সে কিছু খাবে না।ছেলেটা একটু বিরক্ত চোখে তাকালো।ভাবলো কি নাকউঁচু বাপ রে!
নিজের জন্য পরোটা আর ভাজি এনে দাড়িয়ে দাড়িয়েই খেয়ে নিলো।

ট্রেন চলে এসেছে প্লাটফর্মে।মৌ কে নিয়ে ট্রেনে উঠলো ছেলেটা।একটা বগিতে উঠে দুজনেই মুখোমুখি বসলো।এভাবেই সীট কাটা হয়েছে।সীটে বসে ছেলেটা ফোন বের করতেই সেখানে কল এলো।রিসিভ করে বলল,’হ্যাঁ ভাবি বলো।’

ওপাশ থেকে শিরিন বলল,’তোরা কোথায় রে?’

‘এই তো ট্রেনে উঠেছে।’

‘সমস্যা হয় নি তো কোনো?’

‘হতে হতে বেঁচে গেছি।’

‘মৌ কোথায়?’

‘আমার সামনেই বসে আছে।’

‘ওকে একটু ফোনটা দে।’
ছেলেটা ফোনটা মৌ এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।মৌ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কানি দিলো।ওপাশ থেকে শিরিন বলল,’ভয় পেয়ো না মৌ।ও আমার দেবর রুশান।আমি কাল পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি তাই আসতে পারি নি।তাই ওকে পাঠিয়েছি।সংকোচ করো না কেমন!’

‘আচ্ছা আপু।’

‘নাস্তা করেছো?’

‘না আপু।’

‘কি!ওই বদমাশটা এখনো তোমায় না খাইয়ে রেখেছে।ওকে একটু ফোনটা দাও।’

মৌ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনের লাইন কেটে গেলো।তাই ফোনটা রুশানের কাছে দিয়ে দিলো।রুশান আবার ভাবিকে ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করে শিরিন বলল,’এই বদমাশ।ওকে এখনো না খাইয়ে রাখলি কেনো?’

রুশান মুখ বাঁকা করে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলল,’তোমার বোন যেই নাক উঁচু!আমি জিগ্যেস করেছিলাম কিছু খাবে কি না!কিন্তু সে না বলল।’

‘গাধা!ও এমনিই ভয় পেয়ে আছে তাই না করেছে।যা ওকে নাস্তা কিনে দে।’

‘আচ্ছা দিচ্ছি।এবার না খেলে আমি কিছু জানি না।’

‘খাবে,খাবে।’
ফোন রেখে রুশান ট্রেন থেকে নামলো নাস্তা কেনার জন্য।আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে ট্রেন ছাড়ার।রুশান দৌড়ে হোটেলে গেলো।কিন্তু এখানে সিরিয়াল কোনোমতে মানুষজনকে ঠেলেঠুলে নাস্তা কিনে আবার দৌড়ে ট্রেনে ফিরে এলো।ট্রেন আস্তে আস্তে চলতে শুরু করেছে।রুশান বগিতে ফিরে এসে মৌ’কে নাস্তার প্যাকেট’টা দিলো।মৌ প্যাকেট হাতে নিলো কিন্তু সংকোচের জন্য খেতে পারলো না।রুশান ব্যাপারটা বুঝলো।তাই কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে রইলো।
খাওয়া শেষে মৌ মিনমিনে গলায় বলল,’পানি খাবো।’

কিন্তু রুশান শুনতে পেলো না।কানে হেডফোন থাকায়।এখন ওকে ডাকবে কিভাবে সেটাই ভাবছে মৌ!ভেবে না পেয়ে আর ডাকলোই না।এদিকে এতক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরই মৌ ডাকছে না দেখে রুশান নিজেই তাকালো।দেখলো মৌ চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য পানি খেতেও ডাকলো না এতো ভয়!এতো সংকোচ!রুশান একটু আগে কিনে আনা পানির বোতলটা মৌ এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।মৌ হাত থেকে নিয়ে পানি পান করে রেখে দিলো নিজের কাছে।এরপর আর তেমন কোনো কথা হয় নি।মৌ ট্রেনের জানালা দিয়ে সাই-সাই করে ছুটেচলা প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত আর রুশান ঘুমাতে!সীটে হেলান দিয়ে সে ঘুমাচ্ছে।বাইরে থেকে মিষ্টি একটা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ওর মুখমন্ডল।সামনে দিকের বড়চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে।ছেলেটা বোধহয় ঘুমাতে ঘুমাতেও হাসে।তাই তো শ্যামলা মুখশ্রীতে এক অপার্থিব হাসি লেগে আছে।

অনেক্ক্ষণ পর মৌ এর ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার পড়লো এবং আর্জেন্ট!কিন্তু কিভাবে যাবে?ওয়াশরুম কোথায়?এর আগে তো ট্রেনে ওঠে নি।আবার রুশানকে বলতেও লজ্জা লাগছে।তবে বলতে তো হবেই!কিন্তু কিভাবে বলবে।
‘এই যে আমি একটু টয়লেটে যাবো এভাবে?নাকি আমাকে একটু টয়লেটে নিয়ে যাবেন এভাবে?নাকি টয়লেট’টা কোন দিকে এভাবে!’

মনে মনে কিভাবে বলবে এগুলো এগুলোই ভাবতে থাকলো।হঠাৎ পাশের সীটের একটা বাচ্চা তার মা’কে বলল,’মা হাগু দিবো।’
বাচ্চাটা কি সুন্দর বলে দিলো আর মৌ এখনো মুখই খুলতে পারলো না।তবে মৌ’কে উশখুশ করতে দেখে রুশান বলল,’কিছু বলবেন?’

‘না মানে..!’

‘কি না মানে?’

মৌ হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেললো,’আমি হাগু দিতে যাবো।’

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে