আশিকি Part-13

0
1803

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Fahmida_Shabnam
#Part_13

সানাহ গার্ল্স হোস্টেলে থাকে। এই চার বছর ও হোস্টেলে থেকেই নিজের স্টাডি কমপ্লিট করবে। ওর আম্মুকে অনেক ভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সানাহ পারমিশন নিয়েছে একা হোস্টেলে থাকার জন্য।

সানাহ কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে এমন সময় ওর আম্মুর কল আসে।

সানাহঃ হ্যালো আম্মিজান,,,

রাহেলাঃ কেমন আছো সানু,,,

সানাহঃ ফার্স্ট ক্লাস তুমি?

রাহেলাঃ তোমাকে ছাড়া কেমন থাকতে পারি,,, তোমার চিন্তায় তো আমার রাতের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে।

সানাহঃ ওফফো আম্মু আ’ম গ্ৰো আপ নাও,,, আমি এখন নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি। এই যে দেখ আমি একদম পারফেক্ট আছি,, তাছাড়া খুব ভালো ভাবেই নিজের খেয়াল নিজে রাখছি। সো ডোন্ট ওয়ারি এবাউট মি,,,,

রাহেলাঃ হুম বুঝেছি আপনি এখন বড় হয়ে গিয়েছেন এবং নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারেন।

কিছুক্ষন মায়ের সাথে কথা বলে সানাহ ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।

বাইরে এসে রিকশার জন্য ওয়েট করছে ও। রিকশা খোজার বাহানায় আশেপাশে আমালকে খোঁজার চেষ্টা করছে সানাহ।

আমাল প্রতিদিন সানাহকে কলেজের জন্য পিক করতে আসে বাট সানাহ যায় না ওর সাথে। আমাল‌ও গ্ৰাহ্য না করে টাইম মত চলে আসে সানাহকে নিতে। সানাহ রিকশা করে গেলে আমাল গাড়ি লো স্পীড করে সানার পিছু পিছু আসে। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করে সানাহ,,,

কিন্তু আজ রাস্তায় আমালের গাড়ি নেই দেখে মুখের হাসি যেনো উধাও হয়ে গেল ওর। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও আমাল আসলো না। সানাহ মন খারাপ করে রিকশায় উঠে যায়। কেমন যেন একটা খালি খালি অনুভূতি হচ্ছে মনের মধ্যে। কিছু একটা যেন মিসিং,,,

প্রতিদিন আমালের হাসি মাখা মুখ দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সানাহ তাই আজ ওর অনুপস্থিত হৃদয়ের কোথাও ব্যথা দিচ্ছে।

সারা রাস্তায় পেছনে তাকাতে তাকাতে এসেছে সানাহ এই বুঝি আমালের গাড়ি দেখা যাবে। কিন্তু নাহ আমাল আসে নি আজ সানার জন্য।

মনে ভয় সৃষ্টি হচ্ছে সানার। আমাল ঠিক আছে তো নাকি ওর কিছু…… ভয়টা।কেমন যেন মনে গেথে যাচ্ছে।

কলেজের সামনে রিকশা থামতেই ধ্যান ভাঙ্গে সানার।

রিকশা থেকে নেমে কলেজের ভিতরে ঢুকে পরলো ও।

আশেপাশে আমালকে খুঁজতে শুরু করে সানার চোখ জোড়া।

হঠাৎ কয়েকজন ছেলে মেয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো সানার। সবার হাতেই একটা করে কার্ড । কিন্তু কার্ড গুলো উল্টা করে ধরেছে তারা। সানাহ বুঝতে পারছে না তারা কি করতে চাইছে।

এক এক জন করে সবাই সাঁড়ি বেধে দাঁড়ায় তার পর একের পর এক করে কার্ড গুলো সোজা করে ধরে,,,,

কার্ড গুলো দেখে সানার চোখ যেন ছানাবরা হয়ে উঠে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ও কার্ড গুলোর দিকে।

প্রত্যেকের হাতের কার্ডে একটা করে শব্দ বা ওয়ার্ড লেখা।

সব গুলো শব্দ মিলিয়ে হয়,,,, I LOVE YOU SANAH WILL U MARRY ME…….

ছেলে মেয়ে গুলো একে একে সরে যেতেই তাদের
পেছন থেকে আমাল বেড়িয়ে আসে।

আমালকে দেখে মনের মধ্যে যেই ব্যথাটা ছিল গায়েব হয়ে যায় ওর। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে নিজের অজান্তেই সানার।

আমালের উপর থেকে চোখ সরানো মুশকিল হয়ে গেছে সানার। আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আমালকে,,,

ধূসর রঙের জ্যাকেট হোয়াইট জিন্স হাতে বয়েজ ওয়াচ। স্কেট্স সুজ আর হাতে স্টারগেজার এর তোরা।

সানাহ হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমালের দিকে আর কলেজের বাকি সবাই তাকায়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আবিদ ওদের মূহুর্ত গুলোকে ক্যামেরা বন্দি করছে।

আমাল এসে সানার সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর সামনে স্টারগেজার ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল,,,

আমালঃ ভালোবাসা কি কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি সানাহ,,, কিন্তু তোমাকে জানার পর আমার মন ভালোবাসাটাকে জানতে চায়। তোমার সাথে ভালোবাসাটাকে অনুভব করতে চায়,,,, আমার অগোছালো জীবনটাকে গোছাতে একটা সানাহ চায় এই মন,,, আই নিড ইউ ইন মাই লাইফ,,, আই লাভ ইউ সানাহ,,,, উইল ইউ বি মাই????

সানার উত্তরের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে আমাল,,, সানাহ এখনো শক্ড এ আছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ও।

সানাহঃ ভালো তো আমি ও বাসি আমাল কিন্তু এতো সহজে তোমাকে ধরা দিবে না এই সানাহ। আরো একটু কষ্ট করো আমিও দেখি তোমার ভালোবাসা আমার জন্য কতটা গভীর,,, (মনে মনে)

সানাহকে চুপ থাকতে দেখে আমাল ধৈর্যহীন হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল।

আমালঃ আরে এয়ার এতো কষ্ট করে প্রপোজ করলাম হ্যাঁ তো বলো,,, ?

সানাহ মনে মনে শয়তানি হাসি দিল তারপর চেহারায় রাগি ভাব এনে বলল।

সানাহঃ আই ডোন্ট লাভ ইউ,, লাভ কি আমিতো তোমাকে সহ্য ও করতে পারি না ভালোবাসা তো দুরের কথা ?

এই সব ড্রামা দেখলে অন্য সব মেয়েরা পটবে কিন্তু সানাহ না,,,,

সানার কথায় আমালের রাগের বদলে কান্না আসছে। এতো কষ্ট করে সব কিছু প্লান করে প্রপোজ করলো আর এই মেয়ে ওকে রিজেক্ট করছে।

আজ অবদি আমালকে না করার সাহস কারো হয় নি কিন্তু আজ,,,

আমাল আর যাই করুক কখনো হার মানতে শেখেনি,,, সানাহকে ওর চাই যে কোন মূল্যে চাই,,,
অনেক বেশি ভালোবাসে ও সানাহকে যা কখনো প্রকাশ করার মতো না।

আমালের ফেস দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে সানার। তাও নিজের হাসি চাপিয়ে ওখান থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সানাহ।

সানাহকে চলে যেতে দেখে আমাল এক কদম দু কদম করে পিছিয়ে কলেজের ভিতরে ঢুকে পরে। আমালকে এভাবে যেতে দেখে সবাই অনেকটা অবাক হয় বিশেষ করে আবিদ। কারন ও জানে আমালকে কেউ রিজেক্ট করবে আর আমাল সেটা এতো সহজে মেনে নিবে দ্যাট্স ইম্পসিবল,,,,

সানাহ কিছুটা দূর যেতেই হঠাৎ সবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পায়,,, সবাই আমালের নাম নিয়ে ডাকা ডাকি করছে। বুক ধক করে উঠলো সানার। তাড়াতাড়ি পেছনে ফিরে তাকালো ও।

আমাল কলেজের সব চেয়ে উচু ভবনের রুফ টপে দাঁড়িয়ে আছে। সানাহ দৌড়ে সবাইকে ঠেলে সরিয়ে সামনে আসে।

আবিদঃ কি করছিস আমাল নাম ওখান থেকে,,,, তোর মাথাটা পুরোই গেছে নাম পরে যাবি,,,

আমালঃ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি সানাহ,,,, I can’t live without you… তুমি যদি আমার প্রপোজ এক্সেপ্ট না করো I swear I will jump…. This is the #Madness_Of_My_Love Sanah…. তোমাকে পাবার জন্য আমি সব করতে রাজি তার জন্য যদি মরতেও হয় I won’t give up…..

আবিদঃ আব্বে মরে গেলে ভালোবাসা দেখাবি কিভাবে ভূত হয়ে? তুই মরে গেলে তোর সানাহ অন্য কাউকে নিয়ে সুখে সংসার করবে কিন্তু তুই? তুই ভূত পেত্নির মত ঘুরঘুর করে আমাদের মতো নিশ্পাপ মানুষদের জ্বালাতন করবি!! নাম বলছি,,,,

আমালঃ তুই চুপ কর,,, আমি মরে ভুত হলে সবার আগে তোকে মারবো একা একা ভূত হ‌ওয়ায় মজা নেই দুই বন্ধু মিলে ভূত হয়ে সবাইকে জ্বালাবো,,,

আবিদঃ ইশশ আমার বয়েই গেছে তোর সাথে ভূত হতে। আমি মরে গেলে আমার এত্ত গুলা গার্লফ্রেন্ড সব বিধবা হয়ে যাবে তাদের কে দেখবে,,,

আবিদের কথায় সবাই ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো। দুই বন্ধু নিশ্চিত পাগল হয়ে গিয়েছে ভাবছে সানাহ,,,

আমাল আর আবিদ তর্কাতর্কি করছে এই সুযোগে সানাহ ভবনের ভিতরে ঢুকে যায়। যত দ্রুত সম্ভব সানাহ উপরে উঠার চেষ্টা করছে।

আমালঃ ডোন্ট ওয়ারি এয়ার তুই মরলে তোর গার্লফ্রেন্ড দের জন্য আমি আছি না আমি তাদের সাহারা দেব,,, আসলে আমালের মন এবং বাড়ি দুটোই অনেক বড় এখানে অনেক মানুষ মিলে মিশে বসবাস করতে পারবে আই উইল টেক কেয়ার অফ মাই ভাবিজ ?

আবিদঃ আব্বে তুই কি দেখবি। তুইতো আমার আগেই মৃত্যু লোকে প্রস্থান করবি,,, আর তোর বড় মন আর বড় বাড়ি নিজের সানার জন্য রাখ। যদি শুনে ওহ স্যরি স্যরি শুনেই তো ফেলছে,,,, সানাহ তুমি……

আবিদ পাশে তাকিয়ে দেখে সানাহ নেই,,,

আবিদঃ আমাল ব্রো তোর সানাহ কোথায় গেল??
আমাল ভালো ভাবে উপর থেকে তাকিয়ে দেখলো সানাহ নেই নিচে,,,

আমালঃ ক‌ই গেল??রিলেশন হ‌ওয়ার আগেই ব্রেক‌আপ ?

আমাল পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সানাহ দৌড়ে উপরে উঠেছে। হাঁপিয়ে গিয়েছে বেচারী।

সানাহকে দেখে আমালের ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। সানার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সানাহ ওর জন্য এতো ঘাবরে গিয়েছে ভাবতেই অবাক লাগছে আমালের।

সানাহঃ কি শুরু করে দিয়েছো তুমি হ্যাঁ,,, এত কর্ণারে কেউ দাঁড়ায় স্টুপিড,,, তুমি কি ভেবেছো এরকম বাচ্চামি করলে আমি হ্যাঁ করব জীবনেও না,,,, চুপচাপ নিচে চলো আমাল,,,

আমালঃ তোমাকে হ্যাঁ বলতেই হবে সানাহ,,, আমি আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য যে কোন সীমা অতিক্রম করতে পারি। আজকে শেষবারের মতো নাহয় আমার #Madness_Love টা দেখে নাও,,,, পিছাচ্ছে আর বলছে আমাল,,, তুমি যে পর্যন্ত আমাকে আই লাভ ইউ না বলবে আমার কদম থামবে না,,,,

আমাল যত‌ই পিছাচ্ছে সানার ভয় তত‌ই বাড়ছে।

সানাহঃ আই থিঙ্ক এখন ফাইজলামি অফ করা লাগবে বাড়াবাড়ি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমাল যদি সত্যিই,,,,

আমাল অনেক কর্নারে চলে গিয়েছে।

আমালঃ গুড বাই সানাহ এখন আর কেউ তোমাকে জ্বালাবে না,,

আর এক কদম পিছিয়ে গেলেই আমাল নিচে পরে যাবে। আমাল কদম পিছাতেই সানাহ চেঁচিয়ে উঠে,,,,

সানাহঃ আমাল স্টপপপ আই লাভ ইউ,,,

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না আমাল ওর কদম থেমে যায়।

আমালঃ আবার বলো ?

সানাহঃ আই লাভ ইউ আমাল,,,, তখ‌ই বলতাম কিন্তু ভাবলাম তোমার সাথে একটু মজা করবো। তোমাকে রাগাবো। কিন্তু তুমি আমার প্লানের বারোটা বাজিয়ে দিলে ?

আমালঃ রিয়েলি সানাহ আমি…… আমাল সামনে আসার জন্য পা বাড়াতেই ব্যালেন্স হারিয়ে পিছলে যায়,,,,

আমালঃ আআআ সানাহহহহ্

সানাহঃ আমালললল

চারপাশ যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সানার শরীর কাঁপছে চোখ দিয়ে পানি পরছে অঝোরে।

আমাল ওর সামনে রুফটপের উপর দিয়ে পরে গেলো।

সানাহ দৌড়ে কর্নারে গিয়ে নিচে তাকালো। নিচে তাকাতেই হা হয়ে গেল ও।

আমাল ঝুলে আছে আর ওর কোমরে দড়ি বাধা। সেই দড়ি আমালের কোমর থেকে ছাদের একটা পাইপের সাথে বাধানো। দড়িটা আমালের শার্টের নিচে ছিল তাই সানার চোখে পরে নি,,,, দ্যাট্স মিন আমাল এতক্ষন নাটক করে ওকে বোকা বানালো।

আমাল উপরে সানার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। তারপর ঝুলন্ত অবস্থায় দু হাত ছড়িয়ে বলল,,,

আমালঃ আই লাভ ইউ সানাহহহহহহ,,,,

সানাহ শুধু শক্ড হয়ে দেখছে।

আমালঃ কি রিপ্লাই দিবে নাকি দড়িটা খুলে ফেলব ?

সানাহঃ আই লাভ ইউ টু ( চোখের পানি মুছে হেসে)

নিচে সবাই চেঁচিয়ে আমালকে বলে,,,,

আমাল ইউউউ রক্সসসস,,,

সানাহ ফিক করে হেসে দিলো আমালের কান্ডে।আর পাগলামো দেখা বাকি আছে আমালের কে জানে?? ভাবছে সানাহ,,,,

আমাল উপরে উঠে আসে তারপর হাত বাড়িয়ে দিতেই সানাহ ওকে টেনে তুলে।

আমালঃ একচুয়ালি ভাবলাম আমি মরে গেলে তোমার কি হবে তাই সেফটির জন্য দড়ি,,, ?

সানাহ আমালকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় তারপর বলে,,,

সানাহঃ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,,,নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে আমি নিজেই তোমাকে মেরে ফেলবো ?( আমালের বুকে কিল বসিয়ে)

To be continued…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে