আলো আঁধার পর্ব-১০

0
1055

#আলো_আঁধার

পর্ব ঃ- ১০
~আঁখি দেব তৃপ্তি

পরের দিন সকাল বেলাই শ্রাবণ একাডেমিতে এসে উপস্থিত হলো। তারপর অফিসে গিয়ে একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো।

“আচ্ছা, বিসর্জন পেইন্টিং এর শিল্পী কী আজ আসবেন?”

“আজকে তো সব শিল্পীদেরই আসার কথা। ”

“কেন? আজ বিশেষ কিছু কি?”

“হ্যা, আজকে সেকেন্ড রাউন্ডে যে পেইন্টিং গুলো পৌঁছেছে তার ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”

“ও, তা কখন ঘোষণা করা হবে?”

“বিকেল ৪ টায়।”

“আচ্ছা ধন্যবাদ। ”

যাক আজ ৪ টায় দেখা পাওয়া যাবে শিল্পীর। ছবি আর ওই আলো আঁধার নামের রহস্যটা খুঁজে বের করতে হবে। শ্রাবণ ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়েছিল আজ। তাই ভাবলো মাঝখানের সময়টা ফটোগ্রাফি করে কাটানো যাক। সে কোনো সুন্দর দৃশ্য সে ক্যামেরায় বন্দী করতে খুব এক্সপার্ট।

শহরের রাস্তায় প্রচন্ড উত্তাপ। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে শ্রাবণ আর যে যে দৃশ্য মনে ধরছে তা ক্যামেরায় বন্ধী করে নিচ্ছে। হঠাৎ একটি দৃশ্যে তার চোখ আটকে গেল। একটি মেয়ে একটি পথশিশুকে পানি পান করাচ্ছে। মেয়েটির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে দেখতে অনেক কালো কিন্তু দৃশ্যটা মনোরম। তাই তা নিজের ক্যামেরায় বন্দী করে নিল শ্রাবণ। সামনে একটি ফটোগ্রাফির প্রতিযোগিতা আছে সেটার জন্য বেস্ট কিছু থিমের ছবি তার চাই। প্রতিযোগিতা জিততে পারলে ৭ দিনের ইন্ডিয়া ট্যুর। অনেক দিনের স্বপ্ন এটা শ্রাবণের। ঈশান কিছু দিন পর পরই বাইরের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যায়। এসব দেখে বেশ হিংসে হয় শ্রাবণের। তার নিজের সেরকম কোনো সার্মথ্য নেই। তাই এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তার এতো স্বপ্ন।

বিকেলবেলা আবারও এক্সিবিশনে উপস্থিত হলো শ্রাবণ। কিছুক্ষণ পরই ১ম রাউন্ডের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শ্রাবণের বিশ্বাস ওই পেইন্টিংটি ঠিক ২য় রাউন্ডে জায়গা করে নিবে। হলোও ঠিক তাই ২য় রাউন্ড ১০টি পেইন্টিং স্থান করে নিল তার মধ্যে বির্সজনও। এবার এক এক করে শিল্পীদের সামনে এসে কিছু কথা বলার জন্য বলা হলো। শ্রাবণ অপেক্ষা করতে লাগলো আলো-আঁধার নামের সেই মানুষটাকে সামনে দেখার।

৫ জন এর পর বিসর্জনের শিল্পী আলো-আঁধারকে সামনে ডাকা হলো।

লোকজনদের মাঝখান থেকে ঘন কালো লম্বা খোলা চুলের একজন ভদ্রমহিলা উঠে গেলেন। তার পড়নে মেরুন রঙের শাড়ি। শ্রাবণ সবার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল তাই মুখ দেখতে পায়নি তখনো। একটুপরই সম্পুর্ন মানুষটা তার সরাসরি এসে দাড়ালো। ওমা এ তো অল্পবয়সী একটি মেয়ে! শ্রাবণ ভেবেছিল কোনো ভদ্রমহিলা হবেন। মেয়েটির গায়ের রং কালো তাই অনকেই একটু কীরকমভাবে তাকাচ্ছে তার দিকে। আরে দুপুরে যে মেয়েটার ছবি তুলেছিল শ্রাবণ সেও একই রঙের শাড়ি পড়ে ছিল তাহলে এই কী সেই মেয়ে? কালো হলেও মেয়েটার চোখে মুখে এক অদ্ভুত মায়া আছে। সাথে সাথেই শ্রাবণের মাথায় একটি আইডিয়া চলে এলো।

সবাইকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে আলো-আঁধার সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললো। তার কথা থেকে বুঝা যাচ্ছিল তার জীবন খুবই কষ্টের ছিল। কিন্তু এতে কেউ তেমন একটা বিচলিত ভাব দেখালো না কারণ আমাদের দেশে একটি কালো মেয়ের জীবন কীরকম হতে পারে তা প্রায় সবারই জানা।

অনুষ্ঠান শেষে শ্রাবণ মেয়েটির সাথে কথা বলতে গেল। মেয়েটি তখন অন্যদিকে ফিরে দাড়িয়ে আরেকজনের সাথে কথা বলছিল।

“কংগ্রাচুলেশনস আলো।”

“ধন্যবাদ আন্টি।”

“দেখেছো আলো আমি বলেছিলাম না তুমি ঠিক পারবে। আজ আমার সত্যি অনেক ভালো লাগছে। সেই গ্রাম থেকে আসা কিশোরী মেয়েটি আজ কোথায় পৌঁছে গেছে।”

“আপনি ছিলেন বলেই এই জায়গায় আসতে পেরেছি আন্টি। সেদিন আপনিই তো আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।”

“কী করে দিতাম না বলো। তোমার মা যে আমার খুব কাছের বান্ধবী ছিল।”

“আপনার প্রতি আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো আন্টি।”

“জীবনে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করো তুমি এটাই আমার চাওয়া। ”

পিছনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর শ্রাবণ বললো-

“এক্সকিউজ মি ম্যাম।”

শ্রাবণের ডাকে ঘুরে দাঁড়ালো আলো।

“জ্বি বলুন।”

“আপনার সাথে একটু কথা বলার ইচ্ছে ছিল।”

“হুম বলুন।”

“এখানে ঠিক সুন্দরভাবে কথা বলার মতো পরিবেশ দেখছি না। আমরা কী বাইরে কোথাও বসতে পারি?”

“আমার হাতে আসলে বেশি সময় নেই।”

“আমি আপনার খুব বেশি সময় নিব না। গতকাল এখানে এসে আপনার পেইন্টিং দেখার পর থেকেই আপনাকে খুঁজছি। ”

“কেন?”

“অনেকটা কৌতূহল থেকে বলতে পারেন। ”

“ও।”

“বাইরে কী বসতে পারি?”

“আচ্ছা চলেন।”

একাডেমির বাইরে কিছু বসার জায়গা ছিল। তেমন লোকজনও ছিল না সেখানে। আলো ও শ্রাবণ সেখানে গিয়ে বসলো। তারপর আলো বললো-

“কী বলবেন বলুন?”

“আগে একটা জিনিস দেখাই।”- বলে শ্রাবণ ক্যামেরা বের করে আগের তোলা ছবিটি আলোকে দেখালো।

” আরে এ তো আমি! তার মানে কী আপনি আগে থেকে চিনতেন আমাকে?”

“না। আমি ফটোগ্রাফি করি। যখন যেই দৃশ্য ভালো লাগে তা ক্যামেরায় বন্ধী করে রাখি। আপনার এই ছবিও সেরকম তোলা। তখন জানতাম না আপনিই সেই শিল্পী যাকে আমি খুঁজছি।”

“ও বুঝেছি। তা আমাকে এতো খুঁজার কারণ? ”

“প্রথমত পেইন্টিং দেখে মুগ্ধ হয়েছি। দ্বিতীয়ত নামটা দেখে মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে।”

“হুম বুঝেছি। ”

“এখন অবশ্য আরেকটা কারণ ও আছে।”

“কী?”

“তা এখন বলা যাবে না।”

[ অসুস্থতার জন্য কিছুদিন গল্প লিখতে পারি নি। কেউ কিছু মনে কইরেন না। গল্পটির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ 🥰]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে