আমি শুধুই তোমার সিজন০২ পর্বঃ০৩

0
1761

#আমি_শুধুই_তোমার?
#সিজন০২
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

জানোয়ারটা ঘুমিয়ে পড়তেই ইনশিরা গায়ে জামা জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো।এখনই সময় এখন না বের হলে সয়তানটা জেগে গেলে আর বেরোনো যাবে না।দরজা খুলে বের হওয়ার আগে জানোয়ারটার মুখের দিকে একবার চেয়ে মনে মনে বলল’এইতো আর কিছুদিন মনের মতো ঘুমিয়ে নে তারপর থেকে কবরে ঘুমাবি।’এই বলে ইনশিরা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।এখন আনুমানিক সকাল ৬.০০ টা।ইনশিরা খুব তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলো।হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলো বাসায় গিয়ে কি বলবে!!সত্যিটা সে কাউকে বলবে না।হাটতে হাটতেই সামনে তাকালো।সামনে তাকিয়েই চক্ষু চড়কগাছ ইনান একদিকেই জগিং করতে করতে আসছে।ইনশিরা তাড়াতাড়ি একটা গাছের আড়ালে নিজেকে লুকালো।কারণ এখন ইনান ওকে দেখলে একশোটা প্রশ্ন জিগ্যেস করবে তারপর সত্যিটা জেনে যাবে।আর ও একবার জানলে মাথায় তুলে ফেলবে সব আর আমি আমার মিশন সাকসেস করতে পারবো না।আমি চাই ওই জানোয়ার গুলো কে আমি শাস্তি দেই।আর কেউ এট মধ্যে না আসুক।ইনান চলে যাবার পর ইনশিরা গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে বাসার দিকে চলে গেলো।বাসায় পৌঁছে কলিং বেল চাপতেই ওর মা দরজা খুলে দিলো।ওর মা ওকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে জিগ্যেস করলো”কি রে কোথায় গিয়েছিলি?তোকে এই দুইদিন কতো খুজেছি!”

“মা একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।”

“আমাদের বলে গেলেই পারতি।তাহলেই তো আমরা চিন্তা করতাম না।”

“আসলে মা খেয়াল ছিলো না আর চার্জও ছিলো না ফোনে।”

“আচ্ছা চল।তোর বাবা ভাইতো অস্থির হয়ে আছে।থানায় জিডি করে এসেছে।”

“ওহ!মা আচ্ছা চলো ওদের সাথে কথা বলে আসি।”

ইনশিরা বাবা ভাইকে কোনোরকম বুঝিয়ে ঘরে গিয়ে গোসল শেষ করে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ঘুমালো।তারপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটি আসলো।ভার্সিটির গেটে পা রাখতেই কোথা থেকে যেনো চিলের মতো এসে হাজির হলো ইনান।ওর সামনে এসেই জিগ্যেস করলো”কোথায় গিয়েছিলে?”

“তোমাকে বলতে বাধ্য নই।” বলেই ইনশিরা হাটা শুরু করলো।

ইনান ওর ধরে আটকে বলল”বলতে বাধ্য তুমি।বলো বলছি।”

“সিনক্রিয়েট করবে না বলে দিলাম।”

“তুমি যদি না বলো তাহলে সিনক্রিয়েট কেনো আরো বেশি কিছু করবো।”

“যেটাই করো আমি বলবো না।”

ইনান ইনশিরার হাত ছেড়ে দিয়ে রেগে চলে গেলো।ইনশিরা ভেবেছে সে বেঁচে গেছে।কিন্তু সে বাচেনি।ইনান গিয়ে আদ্রিকে বলল”আদ্রি শোন।”

“হুম বল।”

“শোন ইনশিরা ভার্সিটিতে এসেছে।”

ইনানের কথা শুনে আদ্রি বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বলল”কখন?”

“এইতো মাত্রই এসেছে।কিন্তু কই গেছে কিছুই বলছে না।আই থিংক তোকে সব বলবে।তুই ওকে জিগ্যেস কর কই গেছে আমার কথা কিচ্ছু বলবি না।আমি জানি ও তোর থেকে প্রমিস নিবে যে আমাকে বলতে না।তুই প্রমিস দিয়ে দিস।”

“কিন্তু প্রমিস দিলেতো বলতে পারবো না।”

ইনান বাঁকা হেসে বলল”তোকে কে বলতে বলেছে আমি ওর মুখ থেকেই শুনবো তুই আমাকে কলে রেখে ফোনটা পকেটে রাখবি।”

আদ্রি হেসে বলল”গ্রেট।ওকে আমি এখনই যাচ্ছি।”

“ঠিকাছে তবে সাবধানে।”

“ওকে।”

আদ্রি ক্লাসে গিয়ে দেখলো ইনশিরা বসে আছে।আদ্রি ওর পাশে গিয়ে বলল”কি রে কই গিয়েছিলি?”

ইনশিরা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল”চল আমার সাথে কথা আছে।”

“আচ্ছা চল।”আদ্রিও বেঞ্চ থেকে উঠে ইনশিরার সাথে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো।তারপর ভার্সিটির পিছন সাইডে গেলো।যেখানে মানুষ তেমন একটা আসে না।ইনশিরা এসেই আদ্রিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আদ্রি হতভম্ব হয়ে জিগ্যেস করলো” কাদছিস কেন?”

ইনশিরা কাদতে কাঁদতেই সব বলল।সব শুনে আদ্রি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।এদিকে ইনানও ফোনে সব শুনলো।ওর চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো।ওর মন চাইছে জানোয়ার গুলোকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলতে।ওর সাথে আয়াশও সবটা শুনে আপসেট হয়ে গেলো।সবটা বলে ইনশিরা আদ্রির হাত ওর মাথায় নিয়ে বলল”তুই আর আমি ছাড়া এটা কেউ জানবে না।আমি ওদেরকে একাই শাস্তি দেবো।তুই ইনান আয়াশ কাউকে বলবি না।”

আদ্রি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো তারপর ইনশিরার চোখ মুছে দিয়ে দুজনেই ক্লাসে এলো।

আর এদিকে ইনান আর ক্লাস গেলো না রাগে বাসায় চলে আসলো।ওর পিছনে পিছনে আয়াশও আসলো।ইনান বাসায় এসেছি একটা ফুলদানি আছড়ে ভেঙে ফেললো।আয়াশ ওকে থামিয়ে বলল”শান্ত হ ভাই।”

“পারবো না শান্ত হতে।ওদের কুচি কুচি করে যদি আমি কুত্তা দিয়ে না খাওয়াইছি তাইলে আমার নামও ইনান চৌধুরী না।”

“কিন্তু কিভাবে ইনশিরাতো চায় ও একাই দিবো।”

“হ্যাঁ ও একাই দিবো কিন্তু এর পিছনে আমি থাকবো।আমি যে থাকবো ও টেরও পাবে না।”

“তো প্য্লান কি?”

“ওকে আগে ফলো করতে হবে দেখতে হবে ও কি করে তারপর আমাদের যা করার আমরা করবো।ভার্সিটি থেকে বের হলেই ও কোথায় যায় কি করে সব খবর আমার কাছে আসবে।আর আমি এটাও জানি ও কি করতে পারে।আমার যতসম্ভব ধারণা আজ ও ওইখানে যাবে যেখানে ওকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।”

“হুম তাহলেতো আমাদের ওকে ফলো করা উচিত।”

“হুম ঠিক বলেছিস।এখনই চল।”

আয়াশ আর ইনান বেরিয়ে গেলো।ওরা ভার্সিটির সামনে আসতেই দেখলো ইনশিরা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।ওরাও লুকিয়ে ওকে ফলো করা শুরু করলো।হঠাৎ ইনশিরা একটা বাসার সামনে থেমে গেলো ওড়ানা আর সফটিপিন দিয়ে মুখে নেকাব বেধে নিলো।তারপর ভেতরে গিয়ে একটা ঘরের দরজায় টোকা দিলো।একটা লোক দরজা খুলতেই ইনশিরার চোখ জ্বলে উঠলো ইচ্ছে করছে এখনই ওকে পুতে ফেলতে কিন্তু নিজের রাগ সংযত করে বলল”মুই বরিশাল গোনের তে আইছি।মোর থাহার জায়গা নাই।আল্লার রস্তে মোরে আমনের বাসায় ঝিয়ের কাম দিয়ে থাকবার দিবেন?”

জানোয়ারটার চোখ খুশিতা চকচক করছে।ও হেসে বলল”সমস্যা নেই তুমি এখানেই থাকো।”

“আইচ্ছা।খাড়ান মুই মোর গাট্টি পোটলা লইয়া আইতে আছি।”

লোকটা বলল”আচ্ছা যাও।”

ইনশিরা একটু দূর গিয়ে নেকাবটা খুলে বাসায় চলে আসলো।আয়াশ আর ইনান দূর থেকে সব দেখলো কিন্তু ইনশিরা লোকটার সাথে কি কথা বলল কিছুই বুঝলো না।অবশেষে তারাও বাড়ি ফিরলো।

ইনশিরা মাগরীবের নামাজ পড়ে নিচে নেমে মাকে বলল”মা আজ আমি আসতে পারবো না।একটা এসাইনমেন্টর জন্য ওপির বাসায় থেকে যেতে হবে।”

ইনশিরার মা বলল”আচ্ছা যা।সাবধানে যাস।”

ইনশিরা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।ওর পিছনে আরো দুজন ওকে ফলো করছে।ইনশিরা ওর ব্যাগ থেকে একটা সিরিজ আর একটা চাকু বের করলে তার একটা বোতলে কি যেনো বের করে হাসলো।তারপর সব আবার রেখে দিলো।আজ রাতে শুধু প্রতিশোধের আগুন জ্বলবে!!ইনশিরা ওই বাড়ির সামনে এসে আবার যথারীতি নেকাবটা আটকে দরজা টোকা দিলো।লোকটা দরজা খুলতেই ও ঢুকে গেলো ভিতরে।তারপর আবার দরজা আটকে গেলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে