আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-১২+১৩

0
247

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১২ ( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ )
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কি ব্যাপার ইদানীং তুমি এতো চুপচাপ কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার?

তৃষ্ণা ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে সুর্যাস্ত দেখছিলো। মন ভালো নেই। মন ভালোই বা থাকে কি করে? ভালোবাসার পুরুষ কে অন্য নারীর পাশে দেখলে কারোরই মন মেজাজ ভালো থাকে না।
তৃষ্ণা কে কথার প্রতিত্তোরে চুপ থাকতে দেখে রাফি ফের জিজ্ঞেস করলো-
-“ বললে না তো তোমার এতো পরিবর্তন কিসের জন্য?
তৃষ্ণা দৃষ্টি ডুবতে থাকা সূর্যের দিকে চেয়ে বলে-
-“ আমার কোনো পরিবর্তন ঘটে নি রাফি ভাই। অযথা আমাকে নিয়ে না ভাবলেই খুশি হবো।

রাফি ভ্রু কুঁচকাল।
-“ অবশ্যই ঘটেছে তোমার মধ্যে পরিবর্তন। কারন টা বলো কুইক।
-“ হুকুম করছেন?
-“ যদি মনে করো হুকুম তাহলে হুকুমই।
-“ বলবো না।
-“ বলতে হবেই।
তৃষ্ণা ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিবে এমন সময় রাফি তৃষ্ণার হাত টেনে ধরে। তৃষ্ণা রাফির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
-“ চেষ্টা করে লাভ নেই। রাফি নিজ থেকে হাত না ছাড়াতে দিলে তুমি হাত ছাড়াতে পারবে না। সো বৃথা চেষ্টা করো না।
-“ হাত টা ছেড়ে দিন রাফি ভাই।
তৃষ্ণা গমগম মুখের কথা রাফি শুনেও না শোনার ভান করে।
-“ আগে বলো সমস্যা টা কি তোমার? বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিছে নাকি লাইফ নিয়ে হতাশায় ভুগছো?
-“ আপনাকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগছি।
তৃষ্ণার বিরবির করে বলা কথাটা রাফির কান অব্দি ক্লিয়ার ভাবে পৌঁছালো না।
-“ স্পষ্ট করে বলো।
-“ হাত ছাড়ুন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রুমে সন্ধ্যা বাতি জ্বালাতে হবে।
-“ অধরা আছে জ্বালানোর জন্য।
-“ আর আপনি আমাকে জ্বালানোর জন্য?
-“ যেটা ভাবো।
-“ আমি তো কত কিছুই ভাবি।
-“ আর কি কি ভাবো?
তৃষ্ণার টনক নড়ে উঠলো। আবেগের বশে সব বলে দিতে বসেছে। মনের কুঠিরে রাখা লুকায়িত ভালোবাসা কখনও তৃষ্ণা সম্মুখে আসতে দিবে না। রাফির হাত আগলা হতেই তৃষ্ণা রাফির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসে।

ছাঁদ থেকে নেমে সোজা ড্রয়িং রুমে আসতেই অচেনা এক ছেলেকে সোফায় বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। ছেলেটার এখনও তৃষ্ণা কে খেয়াল করে নি,ছেলেটা ফোনে মুখ ডুবিয়ে কিছু দেখতে ব্যাস্ত। তৃষ্ণা ছেলেটার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ এই কে আপনি?
আকস্মিক কথার আওয়াজ কানে আসতে ধরফরিয়ে উঠে ছেলেটা। বুকে ফু দিয়ে দারুন হাসি উপহার দিয়ে বলে-
-“ আমি লিমন,তুষার স্যার আসতে বলেছেন।
রাফি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তৃষ্ণা আর লিমন কে পর্যবেক্ষণ করে। লিমনের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে-
-“ কে আপনি?
লিমন ইতস্ত হয়,কেবলই তো পরিচয় দিলো আবার জিজ্ঞেস করছে।
-“ লিমন আমার নাম।
রাফি লিমনের মাথা থেকে পা অব্দি চোখ বুলায়।
-“ আপনিই সেই নতুন লোক?
-“ জ্বি।
-“ ব্রো আসতে বলেছে?
-“ হ্যাঁ।

রাফি তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ব্রো কে গিয়ে বলো লিমন এসেছে।
তৃষ্ণা চলে যায়। লিমন তৃষ্ণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। রাফি বিষয় টা খেয়াল করে গলা খাকড়ি দেয়। লিমন দৃষ্টি সংযত করে। লিমনের পাশে বসে বলে-
-“ যার তার পার্সোনাল জিনিসে নজর দিতে নিই মিস্টার লিমন।

লিমন বুঝলো না রাফির কথার মানে।
-“ ঠিক বুঝলাম না।
-“ সময় হোক বুঝে যাবেন।
-“ লিমন ফাইল টা এনেছো?
তুষার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে কথাটা বলে। লিমন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফাইল টা হাতে নিয়ে বলে-
-“ জ্বি স্যার,রাতুল ভাই এই ফাইল টা দিয়েছে।
তুষার লিমনের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে চোখ বুলায়। পাকিজা রোডের ওখানে একটা এতিমখানা বানানোর প্ল্যান করছে তুষার। সব প্রায় কমপ্লিট, এখন শুধু কাজ ধরা বাকি বিল্ডিং এর। তুষার ফাইলটায় সাইন করে ফাইল টা আবার লিমনের কাছে ব্যাক করে। লিমন ফাইল টা হাতে নিয়ে বলে-
-“ এবার আমি আসি স্যার?
তুষার থমথমে গলায় বলে –
-“ লাফাঙ্গারের অবস্থা কি?
-“ বেশি ভালো না।
-“ শরীর থেকে জান বের হয়ে গেলে জাস্ট মাটির ত’লে পুঁ’তে রেখে দিবে।

লিমন এক ঢোক গিলে। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে বের হয়ে যায়।
-“ ভাবি যদি কখনও তোমার এই ভয়াবহ রূপের কথা জানতে পারে তখন কি হবে ব্রো?
-“ তুই না বললে জানবে কি করে?
-“ বাই এনি চান্স আমি না বললেও যদি কোনো ভাবে যেনে যায় তখন?
-“ বিয়ের পর জানলে আই ডোন্ট কেয়ার। বিয়ের আগ অব্দি ওর কানে কোনো ভাবে এসব যাওয়া চলবে না।
-“ বিয়ে টা কবে হবে তোমার? তোমার পর তো আমার পালা। তোমার বিয়ে যত দেরিতে হবে আমার বিয়ে তত পিছাবে। তাড়াতাড়ি বিয়ে করে রাস্তা ক্লিয়ার করো।

তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে-
-“ তোর বিয়ে করার জন্য তর না সইলে এখনই কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে আয় কেউ আটকাবে না।
-“ সবার আগে তুমিই না আটকাও বিয়ে করতে গেলে আবার।

বিরবির করে কথাটা বলে রাফি। তানিয়া বেগম তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ সেই কবে থেকে শুনতেছি আমার তুষারের বিয়ে, কিন্তু বাপ এখনও তো মেয়ের বাড়ি যেতে দিলো না তর বাবা। বিয়ে কি হবে না নাকি আমার ছেলের?
-“ তুমি কবে দেখতে যেতে চাও মেয়ে? মেয়ে কিন্তু তোমার পরিচিত।
-“ মেয়ে আমার পরিচিত! কার মেয়ে?
-“ সাহেল আঙ্কেলের মেয়ে। চিনো তো?
-“ আরে হ্যাঁ তোর বাবার বন্ধু। মেয়েটার সাথে এখনও অব্দি দেখা হয় নি। আমি বাপ কালই দেখতে যেতে চাই পুত্র বঁধু কে।
-“ ওকে তুমি অধরা আর তৃষ্ণা গিয়ে দেখে আসো।
-“ ঠিক আছে আমি কালই যাব।
অধরা উপর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছে। বুক টায় কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। সবার মতো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে অধরা পারে না। বরাবরই সে নিশ্চুপ শান্ত প্রকৃতির। মতামত বলতে তার কিছু নেই,সে নির্বাক শ্রোতার ন্যায় শুধু দেখে যায়। মামারা তাকে আশ্রয় দিয়েছে এটাই তো অনেক। সেখানে আগ বাড়িয়ে নিজের জন্য কিছু চাওয়া মানে লোভী প্রমাণ করা। তুষার নাম পুরুষ টি অধরার জীবনে শখের পুরুষ হিসেবেই থেকে যাবে। শখের জিনিস গুলো সবসময় ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে। তুষার ও তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

———————

তৃষ্ণা রেডি হয়ে বসে আছে,মন তার কিছুটা ফুরফুরে লাগছে। ভাইয়ের বউ দেখতে যাবে বলে কথা। শত মন খারাপেও ভালো লাগছে। রেড কালারের একটা গ্রাউন পড়েছে। হালকা পাতলা সেজেছে। অধরা চুপচাপ বসে আছে। পড়নে তার ব্লাক কালারের সেলোয়ার-কামিজ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। মনে তার বিষণ্ণতা, শখের পুরুষের হবু বউ দেখতে যাচ্ছে। তার মত হতভাগ্য কারো আছে নাকি? না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে এসব থেকে দূরে সরে থাকতে।

তৃষ্ণা আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিয়ে বলে-
-“ অধরা আপু চলো যাওয়া যাক।
অধরার ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে। মাথা নাড়িয়ে তৃষ্ণার পেছন পেছন বেরিয়ে যায়। ড্রয়িং রুমে তানিয়া বেগম রেডি হয়ে বসে আছেন। অধরা তৃষ্ণা আসতেই মেয়ে দুটো কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাসায় ছেলেরা নেই,ড্রাইভার কে বলে গিয়েছিল তুষার চিত্রা দের বাসায় পৌঁছে দিতে। ড্রাইভার তুষারের কথা মতো তাদের চিত্রা দের বাসায় পৌঁছে দেয়। তানিয়া বেগম তৃষ্ণা আর অধরা কে নিয়ে বাসায় ঢুকে কলিং বেল বাজাতেই চয়নিকা বেগম দরজা খুলেন। সাহেল আহমেদ বলেছিলেন ও বাড়ি থেকে তুষারের মা বোনেরা আসবে চিত্রা কে দেখতে। সেজন্য চিনতে বেগ পেতে হলো না।
হাসি মুখে দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো। তানিয়া বেগম মেয়েদের নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। চয়নিকা বেগম কুশলাদি করলো তাদের সাথে। ফ্রিজ থেকে মিষ্টি ফল এনে তাদের সামনে রাখলো। তানিয়া বেগম চয়নিকা বেগম কে বললেন তার পুত্র বঁধু কে নিয়ে আসার জন্য। চয়নিকা বেগম সায় জানিয়ে মেয়ের রুমের দিকে গেলো। চিত্রা শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে বসে আছে। শাড়ি পড়ে থাকাটা অস্বস্তিকর। চয়নিকা বেগম শাড়ির আঁচল টেনে মেয়ের মাথায় দিলো। চিত্রা বিরক্তি তে কিছু বলতে নিবে তার আগেই চয়নিকা বেগম বলে উঠে-
-“ নম্র ভদ্র হয়ে থাকবে।
চিত্রা এক হাত দিয়ে মাথার আঁচল টেনে ধরে রাখে। চয়নিকা বেগম চিত্রা কে ধরে বাহিরে নিয়ে যায়। তৃষ্ণা মায়ের সাথে গল্প করতে করতে সবেই একটা মিষ্টি মুখে তুলতে নিচ্ছিলো সামনে তাকাতেই সেই মিষ্টি আর মুখে তুলা হলো না। হা করে তাকিয়ে রইলো সামনে। সামনে ঘোমটা টেনে শাড়ি পড়ে চিত্রা আসছে! সম্ভব কি করে? তার ভাইয়ের তো অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল চিত্রা কি তাহলে সত্যি তার ভাইকে পটিয়েছে! তানিয়া বেগম তৃষ্ণা কে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ গাধার মতো হা করে আছিস কেনো মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে তা না হলে।
তৃষ্ণা মুখ বন্ধ করলো। চিত্রাকে ধরে সোফায় বসায় চয়নিকা বেগম। চিত্রা মাথা নিচু করে রেখেছে যার কারনে সে এখনও তৃষ্ণার মুখ দেখতে পারে নি। তানিয়া বেগম চিত্রার থুতনিতে ধরে চুমু খেয়ে বলে-

-“ মাশা-আল্লাহ আপনার মেয়েটা।
তৃষ্ণা সামনে বসে থাকা ভদ্র মহিলার কথা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে হাসতেই মুখের হাসি সব গায়েব হয়ে যায়। তৃষ্ণা তাকিয়ে আছে তার দিকে। চিত্রা তৃষ্ণা কে আকস্মিক দেখে মুখ থেকে বের হয়ে আসে-
-“ তৃষ্ণা তুই এখানে?
তানিয়া আর চয়নিকা বেগম মেয়েদের মুখের দিকে তাকায়।
-“ তুমি তৃষ্ণা কে চিনো মা?
তানিয়া বেগমের কথা শুনে চিত্রা বলে
-“ জ্বি আন্টি। তৃষ্ণা আর আমি একই ভার্সিটি তে পড়ি। কিন্তু তৃষ্ণা কি আপনাদের রিলেটিভ হয়?

তৃষ্ণা এক ঢোক গিলে। তানিয়া বেগম হাসতে হাসতে বলে-
-“ রিলেটিভ কি গো মেয়ে আমি তৃষ্ণার মা,তোমার ননদ ও।

চিত্রার মাথা ভনভন করে। তৃষ্ণার মা কি তাহলে তুষারের কাকি নাকি ফুপি নাকি খালা?
-“ আপনি আমার কি হন সম্পর্কে?
-“ শ্বাশুড়ি।
-“ আপন?
-“ হ্যাঁ, আপন না তো কি নকল হবো নাকি।
-“ কিন্তু আন্টি আমার তো তৃষ্ণার ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় নি। এই তৃষ্ণা বল না তোর ভাইয়ের না বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বিয়ে তো তুষারের সাথে।
তৃষ্ণার মাথাও ভনভন করছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
-“ তুষার তো আমারই ছেলে। তৃষ্ণার ভাই।
কথাটা কর্ণকুহর হতেই যেনো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য নামক কিছু শুনলো। এদিকে অধরা এক ধ্যানে চিত্রার পানে চেয়ে আছে। মেয়েটার শ্যাম বর্ণ গায়ের রং,ঠোঁট জোড়া গোলাপের পাপড়ির মতো। চোখ দুটো টানাটানা, মুখে জুড়ে একটা কিউট কিউট ভাব। হাসলে গালে টোল পড়ে। মেয়েটাকে এক বাক্য শ্যামকন্যা বলা চলে। চিত্রার থেকে অধরার গায়ের রং ধবধবে সাদা। চিত্রার থেকে হাইট বেশি। সাদামাটা খুব,বই পড়ুয়া, ঘরকুনো সাংসারিক। মেয়েটাকে দেখে তার মন থেকে একটাই কথা ভেসে আসছে-
-“ আমার শখের পুরুষ কে যে নারী পাবে নিঃসন্দেহে সে নারী ভাগ্যবতী। মেয়ে তুমি ভীষণ ভাগ্যবতী আমার শখের পুরুষ কে পেয়ে। তোমার মতো সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম আমার হয় নি তাই তো তাকে জীবনে পেলাম না। আর তুমি না চাইতেই তাকে পেয়ে যাচ্ছো। মেয়ে তোমাকে মাঝে মাঝে বড্ড হিংসে করবো,কারন তুমি আমার শখের পুরুষের বড্ড পছন্দের নারী।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৩( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ তুই সব জানতি আগে থেকেই তৃষ্ণা তাই না যে তোর ভাইয়ের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে? এর জন্য ই বলি তুই কেনো তোর ভাইয়ের পিক নম্বর আমায় কখনও দিস নি আর পরিচয়ই করিয়ে দেওয়ার কথা বললে সবসময় বিভিন্ন বাহানা দেখাতি। এবার বুঝলাম আসল বিষয় টা। কিন্তু তোর থেকে মোটেও এমন মিথ্যা ব্যাবহার আশা করি নি আমি।

চিত্রার বলা কথার প্রতিত্তোরে তৃষ্ণা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। সে তো নিজেই এসব জানতো না। এখন চিত্রা কে বললেও বিশ্বাস করবে না। তার ভাই ও তাকে এভাবে ঘোল খাওয়ালো!
-“ চিত্রা আমি তো তোকে সারপ্রাইজড দিতে চেয়েছিলাম। তুই তো আমার ভাইয়ের হবু বউ এটা আগে থেকেই জানতাম। ভাইয়া বলতে নিষেধ করেছিল তাই বলা হয় নি।

তৃষ্ণা কথাটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। ইচ্ছে করেই মিথ্যা বললো। তার ভাইয়ের না বলার জন্য এমন বাজে ভাবে ফেঁসে গেলো। এবার তার ভাই কেও ফাঁসিয়ে দিল তৃষ্ণা। চিত্রা মুখটা গম্ভীর করে বলে-
-“ একটু আকার ঈঙ্গিত দিয়ে বলতি।
-“ আরে বোকা মেয়ে আকার ঈঙ্গিত তো দিয়েই ছিলাম। বলেছিলাম না আমার ভাই তার হবু বউকে ভীষণ ভালোবাসে। আর তুই বিয়ে ভাঙার জন্য টিপস্ চেয়েছিলি আমি কি দিয়েছি বল?
-“ না।
-“ এ জন্য ই তো দেই নি।
-“ তুই তো তোর পরিচয় ও লুকিয়েছিস।
-“ ঐ যে বললাম ভাইয়ার নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
-“ তোর ভাই আমাকে আগে থেকে চিনতো?
-“ আরে হ্যাঁ ফাস্ট দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছে ভাই।
চিত্রার গাল লাল হয়ে গেলো। অধরা মাথা নিচু করে চুপচাপ দুই বান্ধবীর কথা শুনছে। ড্রয়িং রুমে বসে কথাবার্তা বলছে চয়নিকা বেগম আর তানিয়া বেগম। সবার সামনে পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাচ্ছিল দেখে তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে রুমে আসে।

-“ তুমি ভীষণ মিষ্টি দেখতে চিত্রা।
চিত্রা অধরার পানে তাকালো। তৃষ্ণার থেকে জানা হয়েছে এটা ওর কাজিন। অধরার পাশে বসে লাজুক হেঁসে বলে-
-“ আপু তোমার ভাইয়ের পাশে মানাবে আমায় খুব তাই না? সে সুদর্শন আর আমি মিষ্টি।
কথাটা অধরার বুকে তীরের বেগে এসে বিঁধল। ব্যাথা যুক্ত হৃদয় নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলে-
-“ একদম পারফেক্ট হয়ে মানাবে।
-“ আসো তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি।
চিত্রা অধরা কে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। অতি সন্তপর্ণে সবার অগোচরে অশ্রু টুকু মুছে নিলো।
-“ তুমি খুব সুখী হবে দেখো।
চিত্রা অধরা কে ছেড়ে দেয়।
-“ দোয়া করো আপু।
-“ সর্বদা করে যাব।

————-

-“ দাদাজান আপনারা ফিরবেন কবে?
-“ এই তো দাদু ভাই সপ্তাহ খানের মধ্যে ফিরবো তোমার দাদিজান কে নিয়ে।

তরিকুল খানের কথায় ভাবান্তর হলো তুষার। হজ্জ করতে গিয়েছে তরিকুল খাঁন ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাঁন।
-“ সঠিক ডেট বলতে পারবেন না দাদাজান?
-“ আজ তো ২২ তারিখ ২৭ তারিখে হয়তো টিকিট। কোনো সমস্যা হয়েছে?
-“ না দাদাজান আপনাকে আর দাদি জান কে ২৭ তারিখ একটা সারপ্রাইজ দিব।
-“ কি সারপ্রাইজ তুষার?
-“ বলে দিলে সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ থাকে কি করে?
-“ সেটাও ঠিক। এবার ফিরে কিন্তু ঘরে একটা নাতবউ চাই।
-“ তার জন্য দেশে ফিরতে হবে।
-“ ফিরছি তাহলে ২৭ তারিখ।
-“ জ্বি সাবধানে ফিরবেন।

তুষার তার দাদার সাথে কথা বলে সামনে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার সেদিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ ফিরলি কখন।
-“ এখনই।
-“ কিছু বলবি?
-“ রুমে ঢোকার পারমিশন দাও আগে।
-“ আয়।
-“ তুমি চিত্রা কে বিয়ে করছো আগে বলো নি কেনো ভাইয়া?
-“ ভেবে দেখ তো কখনও জিজ্ঞেস করেছিস কি না মেয়ে টা কে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?
তৃষ্ণা ভেবে দেখলো। আসলেই সে কখনও জিজ্ঞেস করে নি।
-“ না। কিন্তু আমি যখন বললাম চিত্রার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন তো বলে দিতে পারতে।
-“ কি বলে দিতাম,বিয়ে ভাঙার টিপস্?
-“ না সেটা না এই যে ছেলেটা তুমিই।
-“ মনে রেখেছি বিষয় টা পৃথিবীতে একমাত্র তুই সেই বোন যে তার ভাইয়ের বিয়ে ভাঙার জন্য তার হবু বউকে টিপস দিতে চেয়েছিল।
-“ আচ্ছা বাদ দাও। তোমার এই বিষয় লুকানোর জন্য কতটা বিব্রতিকর পরিস্থিতি হয়েছিল। চিত্রা আর আমি দু’জন দু’জনকে দেখে জাস্ট হতবিহ্বল। কোনোরকমে মিথ্যা বলে বুঝ দিয়ে এসেছি।
-“ গুড।
তৃষ্ণা হতাশ হলো। গুড কেনো বললো তার ভাই? জিজ্ঞেস তো করবে বাহবা দিবে তা না করে গুড বলছে। দ্যিস ইজ ঠু মাচ ব্যাপার হলো।
-“ তোমার গুড তোমার কাছেই রাখো ভাই লাগবে না আমার।

কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে যায়। রাফি তুষারের রুমে আসছিল তৃষ্ণা কে বের হয়ে যেতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে?
তৃষ্ণা দাঁড়ালো। কোমরে হাত গুঁজে বলে-
-“ আমাকে দেখলেই কি হয়েছে এটাই কেনো বের হয় আপনার মুখ দিয়ে? আর কোনো শব্দ নাই আপনার ডিকশনারিতে?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো তৃষ্ণার কথায়।
-“ আমার ডিকশনারি তে অনেক শব্দ আছে,কিন্তু সেগুলোর ভার তুমি সইতে পারবে না মেয়ে।
-“ মশকরা করছেন আমার সাথে?
-“ মোটেও না।
-“ তাহলে এটা বলছেন কেনে?
-“ সত্যি ই তো বললাম। আমার ডিকশনারি তে থাকা শব্দ গুলো একবার মুখ থেকে বের হলে মেয়ে তোমার সুস্থ ভাবে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে। সো সেগুলো ডিকশনারি তেই চাপা বদ্ধ থাকুক।
-“ আজাইরা প্যাচাল সরেন সামনে থেকে।
তৃষ্ণা রেগেমেগে বসার ঘরে যায়। তানিয়া বেগম সোফায় রিলাক্স মুডে বসে। তৃষ্ণা গিয়ে তানিয়া বেগমের পাশে বসতেই তানিয়া বেগম ফুরফুরে মেজাজে বলে উঠে –
-“ তোর দাদা দাদি আসলেই আমি তুষারের বিয়ে ঠিক করবো। পুত্র বঁধু ঘরে নিয়ে আসবো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নাতিনাতনির মুখ দেখবো। এর আগে একটা কাজ করবো।
তৃষ্ণা রাগান্বিত চেহারা নিয়েই বলে-
-“ কি কাজ করবা?
-“ আরে তোর ও তো বিয়ে দেওয়া লাগবে। তুষার টা শেষ হলে তার পর তোর বিয়ে আর তা না হলে রাফির বিয়ে।
-“ আমি বিয়ে টিয়ে করবো না মা। রাফি ভাই কে বিয়ে দাও।
-“ ওমা কেনো? ব্রেকআপ হয়ে গেছে নাকি তোর?
তানিয়া বেগমের অবাক হয়ে বলা কথাটায় তৃষ্ণার মুখ হতবিহ্বল হয়।
-“ ধূর কিসের ব্রেকআপ, মা হয়ে কি বলো এসব।
-“ আরে মা তো কি হয়েছি,আমার মতো মা পাবি নাকি বলতো? দেখ যদি ঐ ছেলেটার সাথে তোর ব্রেকআপ হয় তাহলে বল মা আমি ছেলেটার সাথে কথা বলবো।
-“ কোন ছেলের কথা বলছো তুমি?
-“ এখন ছেলেটাকে চিনতেও পারছিস না তুই? স্বীকার কর মা, আমি সবসময় তোকে সাপোর্ট করবো।
-“ তুমি আমার মাথা টা আউলিয়ে দিয়ো না মা। একেই যা হযবরল কান্ড ঘটছে তার উপর তুমি কিসব বলে যাচ্ছো মাথায় কিছু ঢুকছে না।

তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। তানিয়া বেগম ভাবনায় পড়ে গেলো,মেয়ে তার অতি শোকে এমন হয়ে গেলো নাকি? রাফি তানিয়া বেগমকে একা একা বিরবির করতে দেখে এগিয়ে বলে-
-“ কি ব্যাপার চাচি একা একা কি বিরবির করছো?
-“ আমার তৃষ্ণা টা বুঝি পাগল হয়ে যাবে রে।
-“ তোমার মেয়েতো পাগল করে অন্য কে। সেখানে তোমার মেয়ে নিজে পাগল হবে কেনো?
-“ আর বলিস না মেয়ে আমার প্রেম করে,আমি মা হয়ে বললাম তাকে সবসময় সাপোর্ট করবো তার বিনিময়ে সত্যি টা বলবি,ও বললোই না।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই রাফির মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যায়। হাস্যোজ্জ্বল মুখ চুপসে গম্ভীর হয়।
-“ তৃষ্ণার বয়ফ্রেন্ড আছে?
-“ আরে হ্যাঁ। দেখতে শুনতেও নাকি সুন্দর।
-“ তুমি কি ওর বিয়ে দিতে চাইছো?
-“ তৃষ্ণা হ্যাঁ বললে দিয়েই তো দিবো।
-“ তোমার মেয়ে কি বললো?
-“ সে বিয়ে করবে না। হয়তো মনমালিন্য চলছে দুটোর মাঝে।

রাফি ওহ্ বললো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,এর জন্যই কয়েকদিন যাবত তৃষ্ণার মধ্যে এতো পরিবর্তন এসেছে!বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়েছে। বাহ ভালোই তো। তলেতলে রিলেশন করলো আর সে জানতেও পারলো না! দেখে নিবে তৃষ্ণার সো-কোল্ড বয়ফ্রেন্ড কে রাফি। রিলেশন করা জন্মের মতো শিখিয়ে দিবে। কিভাবে করতে হয়।

——————–

-“ এই আপনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন,তৃষ্ণার ভাই আপনি আমাকে বলেন নি কেনো? আমি একদিক দিয়ে আপনাকে বিয়ে না করার কত প্ল্যান করছি আর অন্য দিকে বলেছি তৃষ্ণার ভাই কে ভালোবাসি। জেনেশুনে শুধু মজা নিয়েছেন।

চিত্রার বলা কথার প্রতিত্তোরে তুষার কিছুক্ষণ চুপ রইলো।
-“ ইচ্ছে করেই বলি নি।
-“ কিন্তু কেনো?
-“ এমনি।
-“ কাজ টা মোটেও ঠিক হয় নি।
-“ জানি তো।
-“ রেগে আছি আপনার উপর ভীষণ। রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করুন পুরুষ।
-“ বেলকনিতে একবার আসুন।
-“ এত রাতে বেলকনিতে গিয়ে কি করবো?
-“ আহ আসুনই না।

চিত্রা ফোন কানে নিয়েই বেলকনিতে যায়। প্রথমে আকাশ পানে তাকিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ জোড়া আটকে যায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ টাকে দেখে।
-“ প্রেয়সীর কি রাগ ভাঙলো এই অধম কে দেখে?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে