আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ_২ পর্ব-৩৭+৩৮

0
233

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৭( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

ডক্টর মরিয়ম মান্নানের সামনে বসে আছে তুষার চিত্রা। ডক্টরের হাতে চিত্রার রিপোর্ট। ডক্টর মরিয়ম মান্নান রিপোর্ট টার দিকে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে তুষারকে উদ্দেশ্য করে বলল-
-“ এই সময়ে যে শারীরিক সম্পর্ক করা ঠিক না এটা আপনারা জানেন না?
তুষার আড় চোখে তাকালো চিত্রার দিকে। বিষয় টা বেশ লজ্জার লাগছে তুষারের কাছে। কিন্তু কিছু বললো না। ডক্টর মরিয়ম মান্নান রিপোর্ট টা তুষারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ এমনি সব ঠিকঠাক আছে। তবে ঐ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবেন।

তুষার মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রিপোর্ট টা নিলো। মনে মনে চিত্রা কে ইচ্ছে মতো বকে নিলো। ডক্টর তো আর জানছে না তার বউ কন্ট্রোলে থাকতে পারে না। চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে-
-“ আসছি তাহলে আমরা।
চিত্রা কে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো কেবিন থেকে। তুষারের মুখে গম্ভীর ভাব বিদ্যমান। চিত্রা কয়েক ঢোক গিললো। তার বোকামির জন্য কতটা লজ্জায় পড়তে হলো। তুষার গাড়ির দরজা খুলে দেয় চিত্রা কে বসার জন্য। চিত্রা উঠে বসে। তুষার ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

গাড়িতে চলছে পিনপিনে নিরবতা। চিত্রা তুষারকে সেই থেকে চুপ থাকতে দেখে আমতাআমতা করে বলে-
-“ আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর?
তুষার কথা বললো না।
-“ আমি জানতামই না ওসব করলে রিপোর্টে ওভাবে ধরা পড়ে যাবে। সরি।
তুষার দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দিলো-
-“ দোষ টা আমারই৷ আমারই উচিত ছিলো তোমার তালে তাল না দেওয়া। যার জন্য লজ্জায় পড়তে হলো আজ। তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।
-“ কত দূরে থাকবেন?
-“ মাঝখানে একটা কোলবালিশ রাখলে যতটা দূরত্ব হয় ততটা।

চিত্রা আর কিছু বললো না। বাসায় ফিরতেই তানিয়া বেগম তুষার আর চিত্রা কে জিজ্ঞেস করলো রিপোর্ট ঠিকঠাক আছে কি না। তুষার জবাব দিলো ঠিকঠাক আছে। তানিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে কুসুম কুসুম গরম দুধের গ্লাস এনে চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। চিত্রা দুধের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে রইলো। বাহির থেকে আসলে ঠান্ডা পানি দিত আগে আর এখন গরম দুধ। তপ্ত শ্বাস ফেলে গ্লাস টা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলো। তানিয়া বেগম চিত্রা কে দুধ খেতে না দেখে ধমক দিয়ে বলল-
-“ খাচ্ছো না কেনো?
চিত্রা তানিয়া বেগমের এমন টুকটাক ধমকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মিনমিন সুরে বলল-
-“ ঠান্ডা পানি খাবো।
-“ দুধ টা আগে শেষ করো ঠান্ডা পানি আনছি।
ব্যাপার টা চিত্রার কাছে লাগলো যেই লাউ সেই কদু। দুধ না খাওয়ার জন্যই তো বললো সে পানি খাবে আর শ্বাশুড়ি তাকে দুধ খাওয়ার পর পানি দিবে। চিত্রা নাক চেপে দুধ টা খেয়ে নিলো। তানিয়া বেগম গ্লাসে ঠান্ডা পানি এনে দেয়। চিত্রা পানিটা খেয়ে উপরে চলে যায়।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তুষার রুমে এসে দেখে চিত্রা মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুষার কিছু বললো না সেটা নিয়ে। টেবিল থেকে মেডিসিনের পাতা থেকে একটা টেবলেট নিয়ে চিত্রার সামনে ধরে বলে-
-“ ভুলে গেছো এটা খাওয়ার কথা?
-“ হুম।
ছোট্ট জবাব টা দিয়ে চিত্রা ঔষধ টা খেয়ে নেয়। তুষার বাতি নিভিয়ে দিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করে। প্রায় মধ্য রাত অব্দি কাজ করে তুষার। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে চিত্রা ঘুমে বিভোর। তুষার স্মিত হেঁসে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বিছানায় আসলো। মাঝখান থেকে কোলবালিশ টা সরিয়ে চিত্রা কে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিলো। চিত্রা মুচকি হেসে দিলো। সেটা দেখে তুষার চিত্রার কপালে চুমু খেলো।

এভাবেই চলল ছয় মাস। চিত্রার পেট আগের তুলনায় বড় হয়েছে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। পেট বড় হওয়ায় দেখতে মোটা লাগে। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে। গায়ের রং আলের তুলনায় কালো কালো হয়ে গেছে। মাথার কালো চুল গুলো ঝড়ে পড়ে এখন অল্প হয়ে গেছে। প্রেগন্যান্সির সময় কত কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো চিত্রা। আগের চিত্রা আর এখন কার চিত্রা কতটা আকাশপাতাল পার্থক্য। প্রায় রাত্রিরে চিত্রা তুষার কে জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা আমাকে কি দেখতে আগের থেকেও বাজে লাগে? খুব মোটা লাগে তাই না? দেখতেও কালো হয়ে গেছি। আচ্ছা আমাকে কি তোমার এখন অপছন্দ হয়?বাহিরে কোনো সুন্দর রমণী পছন্দ হয়েছে?
এসব কথার পৃষ্ঠায় তুষার নির্নিমেষ চোখে চেয়ে থাকে তুষার। চিত্রার গালে আলতো করে দু হাত ঠেকিয়ে বলত-
-“ আগের তুলনায় তুমি এখন বেশ নাদুসনুদুস হয়েছো দেখতে। কি কিউট লাগে ইচ্ছে করে গাল দুটো টেনে ধরি। আর তোমার গায়ের রং আগের তুলনায় কালো হয়েছে কে বলেছে?। প্রেগন্যান্সির সময় এসব হয়েই থাকে। একটা প্রাণের মধ্যে আরেকটা প্রাণ কে প্রতিনিয়ত পালন করছো সেটা কি চাট্টিখানি কথা নাকি? আর রইলো বাহিরে মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না? আমার এতো সুন্দর কিউট হর্নি বউ থাকতে আমি বাহিরে নজর দিবো এমন অরুচি হয় নি আমার।
চিত্রা ঠোঁট উল্টে বলতো- সত্যি?
তুষার চিত্রার গালে চুমু দিয়ে বলতো হুমম সত্যি।

-“ আবার আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছো?
তুষার ওয়াশরুম থেকে ভেজা মাথা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে কথাটা বলে।
চিত্রা আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত গুঁজে বলল-
-“ এতক্ষণ লাগে! বাহিরে যে রাতুল ভাইয়ারা বসে আছে সে খেয়াল কি নেই?
-“ তুমি তৈরি হও নি কেনো?

চিত্রা নিজের দিকে তাকালো। পড়নে তো নতুন মেক্সি। আর কিভাবে রেডি হবে?
-“ আমি তো রেডিই।
-“ কোথায় রেডি? মেক্সি পড়ে আছো।
-“ তো আমি কি পড়বো?
-“ কেনো শাড়ি।
-“ পাগল নাকি। আমি এই অবস্থায় শাড়ি পড়বো হোঁচট খেয়ে পড়ার জন্য নাকি!
-“ ওহ্ সেটাও তো কথা। আচ্ছা চলো নিচে।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রাতুল আর রাতুলের মা রোমিলা বেগম। সামনেই বসে আছে তৃষ্ণা, অধরা,তামিম খাঁন,তাসলিমা খাঁন,তানিয়া বেগম। সবাই একে ওপরের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অধরা আর রাতুলের বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো সামনে মাসরে ১৫ তারিখে। চিত্রা তুষারের হাতে গুতা দিয়ে ফিসফিস করে আফসোস করে বলে-
-“ ইশ বিয়ে টা আমার ডেলিভারের পর হলে কি হতো? আমার পুচকুটাও তার ফুপির বিয়ে খেতে পারতো।
তুষার চোখ টিপে বলে- সমস্যা কি আমি তুমি আবার বিয়ে করবো। বাবা মায়ের বিয়ে খাবে আমার বাচ্চা সেটা কম কথা নাকি?
চিত্রা ভেঙচি কাটলো। বিকেলের দিকে তুষার আর রাতুল বেরিয়ে গেলো। পার্টি অফিসে আসতেই দেখা মিলল হালিম সরকারের সাথে। হালিম সরকার তুষারের কাঁধে হাত রেখে বলে-
-“ শুনলাম ছেলের বাবা হতে চলছো। মিষ্টি খাওয়ালে না তো।
তুষার হালিম সরকারের হাত কাঁধ থেকে সরিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ উনাকে পেট ভরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিস তো।
হালিম সরকার রাতুলের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠে –
-“ রাতুল কে ছাড়া তুমি বড্ড অচল তুষার তাই না?
তুষার ভ্রু কুঁচকালো। হালিম সরকার আর কিছু না বলে চলে গেলো। রাতুল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে-
-“ শুনলাম কাল রাফি আসছে দেশে।
-“ হ্যাঁ। প্রজেক্টের কাজ নাকি শেষ।
-“ শোন কাল কিন্তু সিএমবি যেতে হবে তোকে। ওখানকার রাস্তা ভেঙে গেছে।
-“ আচ্ছা।

অধরা বসে আছে রুমে। মুখে তার লজ্জা মাখা হাসি। চিত্রা থেকে থেকে এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। তাদের থেকে একটু দূরে তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে রাফির সাথে কথা বলছে। মানুষ টাকে কতগুলো মাস পর সামনাসামনি কাল দেখবে। এমনি ভিডিও কলে কথা হয়েছে কিন্তু সেটায় কি আর তৃপ্তি পেতো?
-“ কয়টায় ফ্লাইট কাল আপনার?
ওপাশ থেকে জবাব আসলো-
-“ সন্ধ্যার আগে তোমার কাছে পৌঁছে যাব।
-“ অপেক্ষায় থাকবো সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
-“ হ্যাঁ সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য আমিও অপেক্ষায় আছি।

পরের দিন সকালে,,

তুষার সিএমবি যাওয়ার জন্য রেডি হয়। চিত্রা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুষার কে দেখলো। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ এতে সেজে যেতে হবে কেনো?
তুষার স্মিত হাসলো।
-“ বাহ রে এমপি আমি। যেনো তেনো বেশে গেলে চলে নাকি?
-“ কেনো চলবে না? মেয়েদের দেখাতে হবে আপনার ফিটফাট চেহারা?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই।
-“ বাসায় ফিরবেন না। ওখানেই সংসার পেতে ফেলবেন।
তুষার চিত্রার রেগে বলা কথা গুলো শুনে বলে-
-“ নিজেই একা একা সব ভেবে নাও। আর আমি তাল দিলেই রেগে যাও কেনো?
-“ আপনি আমাকে মানাবেন তা না করে কেনো আমার কথায় তাল মেলান?
ভেঙচি কেটে কথাটা বলে চিত্রা। তুষার গলার টাই টা খুলে ফেলে। ইন করা শার্ট অগোছালো করে বলে- ঠিক আছে এখন?
-“ আশ্চর্য এমন বেশ ধরলেন কেনো?
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে-
-“ তুমিই তো বললে এতো সেজে যেতে না।
-“ আমি তো এমনি কথার কথা বলছি। ইন করেন শার্ট।
-“ না থাক আর করা লাগবে না। সময় নেই।
চিত্রা তুষার নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলে বসে অধরা আর তৃষ্ণা খাচ্ছে। তুষার গিয়ে চিত্রা কে নিয়ে বসে। খাবার খেয়ে চিত্রার কপালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ আসছি। সাবধানে থেকো। সন্ধ্যার আগেই ফিরবো।

চিত্রা মাথা নাড়ালো। তুষার চলে গেলো। চিত্রা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তুষারের যাওয়া দেখলো।

তুষার প্রথমে পার্টি অফিসে গেলো সেখানে রাতুলের সাথে কিছু গুরত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে আলোচনা করলো।

চিত্রা কিছুক্ষণ শ্বাশুড়ি আর দাদির সাথে গল্পগুজব করলো। বেলা হতেই রুমেই গিয়ে গোসল করে নামাজ পড়ে ঘুম দিলো। সেই ঘুম গিয়ে ভাঙলো মাগরিবের আজানের দিকে। চিত্রা বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে হাই তুলতে তুলে রুম থেকে বের হলো। সিঁড়ি দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে নামতেই আকস্মিক বাড়ির দারোয়ান বাড়ির ভেতর দৌড়ে এসে বলল গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। তানিয়া বেগম আর তৃষ্ণা চমকে উঠে। কথাটা আকস্মিক চিত্রার কানে আসতেই সামনে তাকিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই পা পিছলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে পড়ে গেলো। প্রচন্ড ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে চিত্রা। কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে ঘাড় ঘুরায় তৃষ্ণা। চিত্রা পড়ে গেছে। তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দৌড়ে আসে। চিত্রার মাথা কোলে নেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে চিত্রার গালে হাত দিয়ে জোরে বলে উঠে –
-“ মা চিত্রা। ও পড়ে গেছে।
ভয়ে দিকশূন্য তৃষ্ণা। ফ্লোর ভেসে গেছে র’ক্তে। তানিয়া বেগম দৌড়ে আসলো চিত্রার কাছে। চিত্রা পেট ধরে ব্যাথায় ছটফট করছে।
চিত্রার অবস্থা দেখে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। বাসায় কেউ নেই। তাসলিমা খাঁন আর অধরা বেরিয়েছে বাড়ির পাশে হাঁটতে। পুরুষ গুলোও গেছে কাজে।
তানিয়া বেগমের মাথা কাজ করছে না। তুষারের নম্বরে ফোন করলো। ফোন বন্ধ। তামিম খাঁন কে ফোন করতেই তামিম খাঁন ফোন রিসিভ করলো। তানিয়া বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় তামিম খাঁন কে চিত্রার খবর জানালো। তামিম খাঁন তড়িঘড়ি করে চিত্রা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে বলে। সে আসছে। তানিয়া বেগম ফোন কেটে দিয়ে ড্রাইভার কে তাড়াতাড়ি করে চিত্রা কে ধরতে বলে। ড্রাইভারের সাহায্যে তানিয়া বেগম আর তৃষ্ণা চিত্রা কে গাড়িতে উঠায়৷ কারো আর শোনা হলো না সেই এক্সিডেন্টের কথা। চিত্রা কে নিয়ে ছুটে গেলো সবাই হসপিটালে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে খাঁন পরিবার। চিত্রার মা কেঁদে কেঁদে আল্লাহ কে স্মরণ করছে। তৃষ্ণা তানিয়া বেগমের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। তুষার কে এখনও ফোনে পাওয়া যায় নি। ফোন বেজে চলছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। ডক্টর জানিয়েছে চিত্রার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সার্জারি করতে হবে। প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে। ইমিডিয়েটলি বি নেগেটিভের ব্লাড লাগবে। তাদের হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত এখন নেই। তানিয়া বেগম অধরা কে ফোন করছে। অধরার ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ। কিন্তু অধরাও ফোন ধরছে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তানিয়া বেগমের।
এদিকে এত বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেছে কিন্তু যাদের এখন বেশি দরকার তারাই নেই।

তামিম খাঁন না পেরে রাতুল কে ফোন করলো। রাতুলের ফোন বন্ধ বলছে। বিষয় টা মোটেও ভালো লাগলো না। তুষার রাতুলের সাথে লিমন কে এবার ফোন করলো। লিমন ফোন রিসিভ করতেই তামিম খাঁন বলল-
-“ তুষার রাতুল কোথায়?
লিমন হয়তো তাড়ায় আছে৷ কন্ঠ শুনে তেমনটাই মনে হলো। ভেঙে যাওয়া কন্ঠে তড়তড় করে বলল-
-“ তুষার ভাইয়া রাতুল ভাইয়ার কাছে গেছে। রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা তামিম খাঁনের কর্ণকুহর হতেই বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন-
-“ র..রাতুল এক্সিডেন্ট করেছে!কিভাবে?
সবাই চকতি তাকালো তামিম খাঁনের দিকে।
-“ তুষার ভাইয়ার যাওয়ার কথা ছিলো সিএমবি তুষার ভাইয়া মিটিং এর জন্য যেতে পারে নি। তাই রাতুল ভাইয়া গিয়েছিল। আর যাওয়ার পথেই গাড়ি ব্রেক ফেইল করে খাদে পড়ে গেছে।
-“ রাতুল ঠিক আছে তো?
-“ রাতুল ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ খুঁজছে।
-“ আমি আসছি এক্ষুনি।

তামিম খাঁন ফোন কেটে দিতেই তানিয়া বেগম ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে কাঁপা গলায় বলল- র.. রাতুলের কি হয়েছে?
-“ এক্সিডেন্ট করেছে।
দু কদম পিছিয়ে গেলো তানিয়া বেগম। তৃষ্ণা ধরে নিলো। তামিম খাঁন সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে যেতে নিলে সাহেল আহমেদ বলেন-“ আমিও যাই তোর সাথে?
তামিম খাঁন না করলেন। এই পরিস্থিতিতে হসপিটালে শক্ত পোক্ত কাউকে থাকা দরকার।

তুষার হন্যে হয়ে খাদের নিচের দিকটায় রাতুল কে খুঁজে চলছে। ঘন জঙ্গল। রাতুলের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে তুষার। কিন্তু কোনো আওয়াজ ভেসে আসছে না। তুষার হাঁটু গেড়ে বসলো। আকাশের পানে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো। বারবার আল্লাহ কে ডেকে বলতে লাগলো রাতুলের যেনো কিছু না হয়।
আকবর এসেছে ছেলের এক্সিডেন্টের কথা শুনে। যতই হোক ছেলে তো। ছেলের এমন মর্মান্তিক খবর শুনে কোনো বাবাই ঠিক থাকতে পারে না। তুষার কে দেখা মাত্রই তুষারের দিকে তেড়ে যায়। তুষারের কলার ধরে হুংকার দিয়ে বলে- আমার ছেলের যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো না তুষার।

অন্য সময় হলে তুষার রেগে যেত আকবরের এমন স্পর্ধা দেখে। কিন্তু এবার সে পানির মতই শীতল রইলো। পুলিশ এসে জানালো রাতুলের বডি পাওয়া যায় নি। এদিকে রাত ও হয়ে এসেছে।
তামিম খাঁন আসলেন। ছেলের বিধ্বস্ত রূপ দেখে নিজেও ভেঙে গেলেন ভেতরে। রাতুল ছেলেটাকে নিজের ছেলের মতোই দেখে এসেছে এতকাল। ছেলের পাশে এসে বললেন-
-“ পাওয়া গেলো রাতুল কে?
তুষার বোবার মতো দু দিকে মাথা নাড়ালো। পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে তুষার দের চলে যেত বলল। তারা খুঁজবে হন্যে হয়ে। এমপির আত্মীয় বলে কথা।
তামিম খাঁন তুষার কে সাইডে টেনে নিয়ে চিত্রার কথা বললেন। তুষার চিত্রার কথা শুনেই আতঙ্কিত হয়ে বলে-
-“ ও ঠিক আছে তো বাবা?
-“ অবস্থা ভালো না। একদিকে চিত্রা আরেক দিকে রাতুল। আল্লাহ কোন ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে আমাদের?

সাইড থেকে আকবরের কন্ঠ ভেসে আসলো। আকবর যাবে না সে পুলিশদের সাথে থেকেই ছেলেকে খুঁজবে। ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খুঁজতে লাগলো রাতুল বলে। তুষার সেদিকে একবার তাকালো। তামিম খাঁন ছেলেকে ধরে হাঁটা ধরলেন।

খাদের শেষ প্রান্তে গাছের সাথে ঝুলে আছে রাতুল। চেষ্টা এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার। এই খাদ থেকে নিচে পড়ে গেলে নির্ঘাত মৃ’ত্যু হবে। এই উঁচু খাদের নিচে রয়েছে গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা।

আকবর ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে খাদের শেষ প্রান্তে আসে। সামনের দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাঁটতে হাঁটতে আকস্মিক সামনে কিছু পড়ার শব্দ শোনা যায়। আকবর থেমে যায়। ফোনের লাইট সামনে ধরে দেখে তার সামনে পিস্তল রাখা আছে। হঠাৎ এমন জিনিস এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। এগিয়ে গিয়ে পিস্তল টা তুলে নিলো। পিস্তল টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে সেটা হাতে নিয়েই সামনে এগোলো আর রাতুল বলে চিৎকার করে উঠলো। রাতুলের গলায় জোর নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মৃত্যুর দুয়ারে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে কন্ঠ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।

আচমকা চোখের সামনে আলোর রশ্মি দেখতে পেয়ে বুকে এক ফোঁটা আশা জাগে বাঁচার। পরক্ষণেই আলো টি ক্রমশ সামনে এগিয়ে আসে। স্পষ্ট হয় আলোর পেছনে থাকা মুখশ্রী। রাতুল গাছের ডাল শক্ত করে ধরে বলে-
-“ আপনি?
আকবর ছেলেকে পেয়ে যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পায়। পিস্তল টা হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুট লাগায়। রাতুল ভয় পেয়ে যায়। গলায় খানিকটা জোর এনে কষ্ট করে শুধায়-
-“ আপনি মারতে এসেছেন আমায়?
আকবর থেমে যায়। -“ না না আমি তোকে মারতে আসি নি। বাঁচাতে এসেছি।
-“ পিস্তল হাতে করে এসেছেন বাঁচাতে!
আকবর পিস্তল টা সামনে তুলে ধরে। হেঁসে বলে-
-“ না রে পাগল এটা এখানে পেয়ছি। তুই থাক আমি আসছি। নড়বি না। আমি দড়ি নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে আবার ছুট লাগায় পিস্তল টা মাটিতে রেখে। রাতুল ক্লান্ত হয়ে আসে। হাত দুটো অসার হয়ে আসে। চোখ দুটো থেকে বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। বিধাতার কাছে খুব করে বলছে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিতে। কথা গুলো মনে মনে আওড়িয়ে সামনে তাকায়। মুহূর্তে পরিচিত এক মুখশ্রী দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু সেই হাসিটা ক্ষণস্থায়ী হলো না। সামনে থাকা ব্যাক্তি পিস্তল তাক করে রেখেছে তার দিকে। বিশ্বাসের পাহাড় ভেঙে গুড়িয়ে গেলো। মুখ তুলে কিছু বলার আগেই পরপর দুটো গুলি রাতুলের বুকের খাঁচা টাকে ভেদ করে বেরিয়ে যায়। হাত ফস্কে খাদে পড়ে যায় রাতুল। চিৎকার করার সময় টুকুও পেলো না।

আকবর তড়িঘড়ি করে গাড়ির কাছে এসে দড়ি নিয়ে ছুটে যায় ছেলের কাছে। খাদের কিনারায় আসতেই দেখে রাতুল নেই। সহসা বুক ধক করে উঠলো। খাদের কিনারা দিয়ে মাথা খানিক টা ঝুকালো। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। রাতুল কি পড়ে গেছে তাহলে? মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো আকবর। মাথা কাজ করছে না। এটা তো হবার ছিলো না। খেলা পাল্টে গেলো কি করে?

আজ জাহাঙ্গীর নগর ভর্তির এডমিশন পরীক্ষা চলছে। সেই উপলক্ষে ক্যাম্পাসের রাস্তার সাইড দিয়ে বিভিন্ন স্টলের দোকান বসেছে৷ সেখানে অধরাদের ক্লাসের কয়েকজন একটা স্টল দিয়েছে। নানি কে নিয়ে সেই স্টলেই এসেছিল অধরা। ওয়াশরুমে চাপ আসায় তাসলিমা খাঁন কে স্টলে বসিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছিল। হালকা পাতলা ঠান্ডা খেয়ে তারপর দাদি কে নিয়ে বের হলো ক্যাম্পাস থেকে। বাহিরে বের হয়ে অধরা ফোন চেক করতেই দেখে তানিয়া বেগমের ফোন কল। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারে নি। অধরা তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলো। ফোন কানে নিতেই জানতে পারলো চিত্রার খবর। ব্লাড লাগবে। অধরা তাসলিমা খাঁন কে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠলো। যতদ্রুত সম্ভব হসপিটালে যেতে হবে।

হসপিটালে এসে রিসেপশন থেকে সার্জারির রুম নম্বর জেনে ছুটে গেলো সেখানে। সবাই কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা তানিয়া বেগমের কাছে ছুটে গিয়ে বলে-
-“ মামি তুমি বললে ব্লাড লাগবে। আমি এসেছি। ডক্টর কে ডাক দাও।
সাহেল আহমেদ ডক্টর কে ডেকে আনে। ডক্টর আলাদা কেবিনে নিয়ে গিয়ে অধরার থেকে ব্লাড কালেক্ট করে।

তুষার এলোমেলো পায়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ঢুকে। কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির কন্ঠে বলে-
-“ চিত্রা কেমন আছে মা? আর এসব হলো কি করে?
তুষার কে দেখে যেনো মনে বল পেলো তানিয়া। তখনকার সব ঘটনা খুলে বলল তুষার কে। তুষার নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মনের ভেতর বইছে ঝড়। একদিকে স্ত্রী সন্তান আর আরেক দিকে প্রাণপ্রিয় বন্ধু। ধপ করে বসে পড়লো তুষার। কিছুক্ষণ পর পর ওটি থেকে বের হচ্ছে ডক্টর। তুষার উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গিয়ে বলল-
-“ ডক্টর আমার স্ত্রী সন্তান ঠিক আছে তো?
-“ আপাতত কিছু বলতে পারছি না। আল্লাহ কে ডাকুন।
কথাটা বলে ওটির ভেতরে ঢুকে পড়ে ডক্টর৷ ওটির বাহিরে পায়চারি করে তুষার। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর ওটির বাতি নিভে। ধড়াস ধড়াস করে লাফিয়ে উঠলো হৃদপিণ্ডটা।
ডক্টর এগিয়ে আসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-“ বেবিটার অবস্থা ভালো না। কাঁদছে না। কিন্তু শ্বাস কার্যক্রম চলছে।
তুষার অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ আমার স্ত্রী কেমন আছে?
-“ পাঁচ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারবো।
-“ মানে?
-“ অনেক ব্লিডিং হয়েছে। তার শরীর ভীষণ দুর্বল। এখন কতোটুকু সার্ভাইব করতে পারবে সেটা বলা মুশকিল।
-“ আর বাচ্চা টা? কোলে নিতে পারবো আমরা?
তানিয়া বেগম কথাটা বলে উঠলেন। ডক্টর অভয় দিয়ে বললেন- পরিষ্কার করিয়ে দেওয়া হবে।
চলে গেলো ডক্টর। কিছুক্ষণ পর সাদা কপাড়ে মুড়িয়ে এক নবজাতক শিশু কে নিয়ে আসা হলো। তানিয়া বেগম এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলেন। পিটপিট করে তাকাচ্ছে বাচ্চাটা। এই টুকু বাচ্চার তো কাঁদার কথা। কিন্তু বাচ্চাটা কাঁদছে না।
-“ তুষার তোর ছেলে।
তুষার তাকালো। বিরবির করে বলল-
-“ আমাদের ছেলে। কোলে নিলো তুষার। কেবিন থেকে চিত্রা কে বের করে অন্য কেবিনে শিফট করা হলো। তুষার বাচ্চা কে কোলে নিয়েই চিত্রা কে রাখা কেবিনে ঢুকে পড়লো। চিত্রা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। হাতে স্যালাইন। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। তুষার পাশে টুল টেনে বসলো।
-“ বাবু কে দেখবে না চিত্রা? তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকাও। বাবুর তো তোমাকেই প্রয়োজন বেশি। উঠো তাড়াতাড়ি লক্ষীটি।

অধরা কেবিন থেকে বের হলো। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্লাড দিয়ে। তৃষ্ণার কাছে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ চিত্রা আর বাবু সুস্থ আছে?
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়। অধরার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করে বলে-
-“ রাতুল কে ফোন দেই। আসার পথে মিষ্টি নিয়ে আসবে।
কথাটা বলে ফোন দিতে থাকে। আশ্চর্য রাতুলের ফোন বন্ধ বলছে। অধরা বিরক্ত হয়। -“ কাজের সময় পাওয়া যায় না। ফোন কেনো সুইচ অফ বলছে?

তানিয়া বেগম তৃষ্ণা কে বলল অধরাকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে। তৃষ্ণা অধরা কে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। রাতটা চিত্রা আর বাচ্চার কাছে রইলো চয়নিকা বেগম সাহেল আহমেদ আর তুষার।

বাসার বসার ঘরে বসে তৃষ্ণা আর তানিয়া বেগম একে ওপরের দিকে তাকায়৷ সত্যি টা কি করে বলবে এই মেয়েকে সেই সাহস টা পাচ্ছে না। তানিয়া বেগম অধরাকে ধরে পাশে বসিয়ে বলে-
-“ কথাটা কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
-“ কি কথা মামি?
তানিয়া বেগমের কন্ঠ কেঁপে উঠে। তৃষ্ণা এগিয়ে এসে বলে-
-“ আপু।
-“ হু।
-“ রাতুল ভাইয়া..
-“ হুমম রাতুল কি?
-“ রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা বলে শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা। অধরা বসা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো।
অধরা হাসার চেষ্টা করে বলল-
-“ মজা করছিস তাই না?
-“ না। সত্যি রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে। বডি এখনও পাওয়া যায় নি। সে জন্য তোমার ফোন তুলছে না।

অধরা এর প্রতিত্তোরে কি রিয়াক্ট দিবে ভুলে গেছে। এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো তৃষ্ণার দিকে। আচমকা তানিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ সত্যি মাি?
তানিয়া বেগম মাথা ঝাকালো। মুহূর্তে ঢলে পড়ে গেলো অধরা। এমনি তে শরীর দূর্বল ব্লাড দেওয়ায় তার উপর এমন নিউজ, শরীর সইতে পারে নি। তানিয়া বেগম তড়িঘড়ি করে অধরা কে ধরলো। তৃষ্ণা কে তাড়াতাড়ি পানি আনতে বলে। তৃষ্ণা পানি আনে। অধরার চোখে মুখে পানি দেয় কিন্তু অধরা উঠে না। আর তখনই দরজায় কলিং বেল বাজে। তৃষ্ণা গিয়ে দরজা খুলে। রাফি হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তৃষ্ণার মুখে হাসি নেই। তৃষ্ণা কে খুশি হতে না দেখে রাফি ভ্রু কুঁচকায়।
-“ খুশি হও নি?
তৃষ্ণা সরে দাঁড়ালো দরজা থেকে। রাফির চোখ গেলো ফ্লোরে পড়ে থাকা অধরার দিকে। চোখ মুখে বিস্ময় নিয়ে বলল-
-“ অধরার কি হয়েছে?
তৃষ্ণা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-“ আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেনো? চিত্রা হসপিটালে৷ রাতুল ভাইয়া নিখোঁজ ।
রাফি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ মানে?
তৃষ্ণা সব খুলে বলে। রাফি তড়িৎ গতিতে একটা শক খায়। হাতের ল্যাগেজ টা ছেড়ে দিয়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অধরা কে পাঁজা কোলে তুলে রুমে নিয়ে গিয়ে শোয়ায়।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে