আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-০১

0
356
  • #আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ ২
    #সূচনা_পর্ব
    #Raiha_Zubair_Ripti

    -“ শুনো মা আমি কোনো রাজনীতি করে বেড়ানো লাফাঙ্গার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। এদের বিয়ে করা মানে সারাদিন দুশ্চিন্তায় ভয়ভীতিতে থাকা,সুস্থ ভাবে সংসার করা যায় না, শত্রুর অভাব থাকে না এদের। মাঝেমধ্যে দু’চার ঘা খেয়ে হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি থাকে। বুঝতে পারছো বিষয় টা? আমি বিয়ের পর এতো স্ট্রেস নিয়ে বিধবা হতে চাই না। আমি বিয়ে করতে চাই কোনো সাধারণ ছেলেকে। বাবা কিভাবে পারলো এমন ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে!

    কথাগুলো বলে লম্বা শ্বাস টানলো চিত্রা। আড়চোখে একবার মায়ের দিকে তাকালো। ফুপির বাড়ি থেকে নিজ বাসায় এসেছে চিত্রা আজ দিন চারেক হলো। এসেই জানতে পারে তার বাবা তার কোনো এক বন্ধুর ছেলের সাথে তার বিয়ের বন্দবস্ত করছে। কিছুটা উৎফুল্ল ছিলো বিয়ে নিয়ে চিত্রা। হয়তো তার বাবা তার ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিবে কিন্তু যখন শুনলো বাবার বন্ধুর ছেলে বলতে তার বাবার মতোই কোনো রাজনীতিবিদ তখন উৎফুল্ল টা মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেলো,মনে এঁটে সেটে জেঁকে বসলো এর প্রতি তীব্র বিরুদ্ধতা। চিত্রার মা চয়নিকা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেললেন। স্বামী কে পইপই করে বলেছিলেন যে মেয়ে তার এসব রাজনীতি পছন্দ করে না। এই রাজনীতি করা নিয়েই বাবা মেয়ের মধ্যে বেশ খানিকটা দূরত্ব এসেছে। এখন আবার সেই রাজনীতি করা ছেলেকেই মেয়ের জন্য সিলেক্ট করেছেন সাহেল আহমেদ। স্বামীর মুখের উপর কথা বলার সাহস ও নেই তার। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে মেয়ের পানে তাকালো।

    চিত্রা তার মায়ের তাকানো দেখে চোয়াল শক্ত করে বলে-
    -“ দেখো মা একদম ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করবে না আমায়। এই বিয়ের জন্যই বুঝি জরুরি তলব জানিয়ে ফুপির বাড়ি থেকে আমায় এখানে আনলে। আগে টের পেলে কস্মিনকালেও আসতাম না এখানে।

    চয়নিকা বেগম হাতে সোফার পাশ থেকে একটা প্যাকেট এনে চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
    -“ শুধু শুধু ওভার রিয়াক্ট করছিস চিত্রা। জাস্ট দেখা করে আয়, দেখা করলেই বিয়ে হয়ে যায় না। দেখার পর না হয় তোর বাবাকে কোনো একটা ক্ষুত দেখিয়ে বলবি যে তোর পছন্দ হয় নি ছেলে।

    চিত্রা প্যাকেটের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে লেমন কালারের একটা সুতি শাড়ি। মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল-
    -“ এই দেখা করলেই বিয়ে হয়ে যায় না বলে বলে কত মেয়ের এই দেখা করতে গিয়েই বিয়ে হয়ে গেছে তার কোনো ধারনা আছে তোমার?
    -“ আস্তে কথা বল তোর বাবা শুনতে পাবে তো। আজ বিকেলে ছেলেটার সাথে তোর দেখা করার কথা সময় মতো চলে যাস মা,এ নিয়ে আর অশান্তি করিস না।
    -” বিয়ে কিন্তু আমি করবো না।
    -“ পরের টা পরে ভাবা যাবে। আগে দেখা তো করে আয়।

    কথাটা বলে বসা থেকে উঠে চলে গেলেন চয়নিকা বেগম। চিত্রা প্যাকেট টা হাতে নিয়ে নিজের রুমে আসলো। প্যাকেট টা বিছানায় রেখে শাড়ি টা বের করে। সামান্য দেখাইতো করবে আর সেটার জন্য নাকি রংঢং করে শাড়ি পড়তে হবে ছ্যা!

    -“ চিত্রা কি রাজি হলো?
    চয়নিকা বেগম রুমে ঢুকতেই প্রশ্ন টি ছুঁড়ে দেয় সাহেল আহমেদ। চয়নিকা বেগম বিছানায় বসে বলেন-
    -“ এখনও রাজি হয় নি,তুমি তো জানো এসব রাজনীতি করা ছেলে সে পছন্দ করে না তাহলে কেনো এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছো?

    সাহেল আহমেদ হাতে ঘড়ি পড়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে-
    -“ মেয়ের ভালোর জন্যই এসব করা। চারিদিকে শকুনের চোখ পড়েছে মেয়ের উপর। ওর চাইতে ভালো ছেলে আর দুটি নেই। সঠিক মানুষের হাতেই আমার রত্ন আমি তুলে দিচ্ছি যার অযত্ন কখনই সে করবে না।
    -“ সেটা না হয় আমরা বুঝছি কিন্তু তোমার মেয়ে তো বুঝছে না।
    -“ সে নিজেও আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে। ঠিক ৩ টা বাজে চিত্রা কে রেডি করে পাঠিয়ে দিবে। আর বলে দিবে এমন কোনো কাজ তাকে করতে না যাতে আমার সম্মানহানি হয়। আর হ্যাঁ বাড়ির গাড়ি করে পাঠাবে।

    কথাটা বলে সাহেল আহমেদ বেড়িয়ে যায়। সাহেল আহমেদ এলাকার একজন চেয়ারম্যান। খুবই নিষ্ঠাবান, সৎ,যার কারনে টানা কয়েক বছর ধরে তার পদ টাকে সে ধরে রাখতে পেরেছে। বিরোধী দলের লোক রা অনেকবার সাহেল আহমেদ কে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারে নি। এ নিয়ে চিত্রা আর সাহেল আহমেদের মধ্যে মন কষাকষি চলছে। চিত্রা চায় না এই সব রাজনীতি তার বাবা করুক। প্রতিটা মুহূর্তে আতঙ্কে থাকতে হয়। না জানি কখন কোন সংবাদ শুনতে হয়। এবার বিরোধী দলরা তার একমাত্র মেয়ের দিকে নজর দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা আকবর তার ছেলে আরহামের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এনে ছিলেন। সাহেল আহমেদ সরাসরি প্রস্তাব টা প্রত্যাখ্যান করেন। সাহেল আহমেদ জানেন একবার নজর যখন তার মেয়ের উপর পড়েছে তখন তারা কিছুতেই বসে থাকবে না।

    এ-ই সকল কথা সাহেল আহমেদ তার বিশ্বস্ত বাল্যবন্ধু তামিম খান কে বললে তিনি চিত্রা কে তার ছেলের বউ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব রাখেন। তার বন্ধু তামিম খান একজন এমপি৷ পরবর্তী নির্বাচনে তার ছেলে দাঁড়াবেন এমপি পদে। সাহেল আহমেদের থেকে যখন আশা স্বরূপ উত্তর না পান তখন তামিম খান ফের প্রশ্ন করেন তার কোনো অসুবিধা আছে কি না?

    সাহেল আহমেদ ইতস্ততবোধ করেন। তার জানা মতে মেয়ে তার রাজনীতি করা ছেলেকে বিয়ে করবে না। কিন্তু তামিম খানের ছেলের মতো ছেলে আর দুটো হয় না। দায়িত্বশীল একজন মানুষ। এমন ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেলে সবাই গর্ববোধ করবে।
    -“ আসলে তামিম তুই তো জানিস আমার মেয়ে রাজনীতি করা লোকজন দেখতে পারে না। এই রাজনীতি নিয় আমার আর আমার মেয়ের মধ্যে বেশ খানিকটা দূরত্ব। চিত্রা কি রাজি হবে সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।

    তামিম খান সাহেল আহমেদের কাঁধে হাত রেখে বলে-
    -“ আরে প্যারা নিচ্ছিস কেনো? আমার ছেলের উপর ভরসা আছে,আমার ছেলে ঠিক চিত্রা কে রাজি করিয়ে ছাড়বে। আমার কথা ফেলতেই পারবে না, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাক। আর আকবর কেও দেখে নিবো।

    সাহেল আহমেদ কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হন।

    দুপুর দুটো বাজে, চয়নিকা বেগম মেয়েকে বুঝাতে বুঝাতে হাঁপিয়ে গিয়েছেন। তার মেয়ে কিছুতেই শাড়ি পড়বে না। উপায়ন্তর না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলো। চিত্রা পেস্ট কালারের একটা কুর্তি পড়ে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে নেয়, মুখে মাস্ক পড়ে। তার অভ্যাস যেখানেই যাবে মুখে মাস্ক থাকবেই। চয়নিকা বেগম কপাল চাপড়ালেন। চিত্রা হ্যান্ড ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। মনে মনে অনেক কিছু এঁটে নিলো বিয়ে ভাঙার জন্য।

    মিনিট কয়েকের মধ্যে গাড়ি এসে থামলো পাঁচ তলা একটা মলের সামনে। মলের ঠিক পাঁচ তলা মানে ছাঁদে একটা ক্যাফে আছে। আসার আগে মা বলে দিয়েছিল। চিত্রা সোজা লিফটে উঠে পাঁচ তলায় চলে গেলো। ক্যাফেতে ঢুকেই দেখলো ক্যাফেতে দু চারজন কাপল বসে আছে। চিত্রা বুঝতে পারলো না ঠিক কোন টেবিলটায় গিয়ে সে বসবে। আসার আগে কেনো যে সব শুনে আসলো না তার জন্য নিজেকে চড় দিতে ইচ্ছে করছে। চয়নিকা বেগম কে ফোন দিয়ে সাইডে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো চিত্রা। এমনিতেই বিরক্ত তার উপর ধাক্কা বিরক্ত টা এবার রাগে পরিবর্তন হলো। কিছুটা জোরে বলল-
    -“ আরে কানা নাকি দেখে চলতে পারেন না?

    কথাটা বলে পাশ ফিরতেই দেখতে পায় একজন সুদর্শন পুরুষ কে। গায়ে ব্লাক কালারের শার্ট।চোখে কালো সানগ্লাস। একপলক চিত্রার দিকে তাকালো লোকটা। তারপর কোনো কিছু না বলে একটা টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। এদিকে ফোনের ওপাশে চয়নিকা বেগম হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছেন। চিত্রা তার মায়ের ডাক শুনে বলে-
    -“ মা আমি চিনবো কি করে লাফাঙ্গার কে?
    চয়নিকা বেগম নিজেও বিপাকে পড়লেন। সে এখন চিনাবে কি করে মেয়েকে। সে তো নিজেও জানে না শুধু একনজর দেখেছিলো ছেলেটাকে। মেয়েকে ফোন রাখতে বলে স্বামী কে কল দেয়।

    এদিকে চিত্রা একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসে। বারবার হাত ঘড়িতে তাকাচ্ছে। হঠাৎ একটা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে চিত্রার সামনে চেয়ার টেনে বলে-
    -“ হাই আমি রাফি। আপনি চিত্রা আ’ম আই রাইট?

    চিত্রা একবার তাকালো রাফির দিকে। মুখ জুড়ে তরতর করে ঘাম চুইয়ে পড়ছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। মুখে লেগে আছে হাস্যোজ্জ্বল হাসি। দেখতে বাচ্চা টাইপের। নাম যখন বলেছে তার মানে এই ছেলের সাথেই তার বাবা বিয়ে ঠিক করেছে। মনে মনে বিশ্বজয়ী হাসি দিলো। বিয়ে ভাঙার উপায় পেয়ে গেছে সে।
    -“ আপনিই সেই লাফাঙ্গার রাজনীতিবিদ ছেলে?দেখুন আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আপনাকে দেখতে পিচ্চি একটা ছেলে মনে হয়। আপনাকে কে বলেছে রাজনীতি করতে? আপনার তো মাঠে ব্যাটবল খেলার কথা। তা না করে রাজনীতি করে বেড়ান। দু চার ঘা খেলে তো পাল্টা দিতে পারবেন না উল্টা ওখানেই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ে থাকবেন। আপনাকে বিয়ে করে লাইফ টা রিস্কে নিতে চাই না।

    রাফি চিত্রার কথা শুনে হতবিহ্বল হয়। পাশের টেবিলে থাকা ভাইয়ের দিকে তাকায়। তার ভাই অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এক ঢোক গিলে, এসেছিল ভালো করতে আর এসে কি-না নিজের নামে এসব শুনতে হচ্ছে! যেখানে সে রাজনীতির রাজ ও করে না।

    ( আসসালামু আলাইকুম, আশা করি ভালো আছেন।ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। সিজন টু টা অন্যভাবে শুরু করলাম। আশা করি রেসপন্স করবেন সবাই।)

    #চলবে?

  • একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে