আমার বিষাদীনি পর্ব-০৪

0
75

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব:_৪

রাদিফ ভাইয়ের মুখে “বউ” ডাক শুনে মনের মধ্যে যেন অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা রাদিফ ভাই এর প্রতি তো কখনো আমার এইরকম অন্যরকম অনুভূতি তো কখনো হয় নি। আমি যখন কথাগুলা ভাবতেছি তখনি রুমে আম্মু আসলো

“কিরে কখন থেকে ডাকছি খেতে যেতে। রিজবী কে পাঠালাম, পাজি টা গিয়ে বলল,, ছোট মা জানো তুবা আপু না কার সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলতেছে আমার তো মনে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হে।”
” না মানে রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে তো।তার সাথেই কথা বলতেছিলাম”।
আম্মু কোনোরকম আমতাআমতা করে চলে গেলো।
আর এইদিকে আমি ভাবতেছি,, যাক রাদিফ ভাইয়ের সাথে তো বিয়ে হয়ে একদিক দিয়ে ভালোই হইছে অন্তত একটু প্রাইভেসি পাইছি।

___________________
“কি কেমন লাগলো আমার বউয়ের সাথে কথা বলে” রাদিফ

“হ্যাঁ ভালো লাগলো” সিনথিয়া একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো। আর মনে মনে বলল,,
“এই তুবা কে তো আমি দেখে নেবো”।
” আচ্ছা তোমার সাথে বসে কি এক কাপ কফি খাওয়া যাবে?? তুমি কি ফ্রি আছো?? প্লিজ এক কাপ কফি ” সিনথিয়া রাদিফ কে বলল।

“আমার সাথে বেশি সময় নেই। জাস্ট টেন মিনিট। ”
“আচ্ছা চল” সিনথিয়া
এরপর একটা ক্যাপে তে ঢুকে দুইজনের জন্য দুইটা কফি অর্ডার করে।কফি আসতেই সিনথিয়া রাদিফ কে বললো,,
“একটা সেলফি প্লিজ ”
“আচ্ছা নে” রাদিফ

নিচে এসে দেখি

অনামিকা, ইরা,সাবিহা আর তানিশা আপু ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। আব্বু, জেঠুরা কেউ এখনো অফিস থেকে ফিরেনি। সাবা আপু এখনো ভার্সিটি তে থেকে আসে নাই আর রাহা আপি তার শশুর বাড়ি চলে গেছে। আমি গিয়ে ওদের সাথে বোসতেই অনামিকা বলল,,

“অবশেষে আসলেন আমাদের নতুন ভাবি। তা ননন রা সেই কখন থেকে বসে আছে আর ভাবি আসছে এখন। এটা কি হয়”??
আমি অনামিকার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললাম,,

” কিসের ভাবি!!?? আমি আগেও এইবাড়ির আদরের মেয়ে ছিলাম এখনো আছি। কোনো উটকো ঝামেলার সাথে আমাকে বাধাবি নাহ”।

তখন সাবিহা আর ইরা বলে উঠলো,,

“কিহ!! তারমানে রাদিফ ভাই তোর কাছে উটকো ঝামেলা!!?? এই রিজবী কই তুই?? আজকেই এটা রাদিফ ভাইয়ের কানে পৌঁছাবি”।

তখনি রিজভী আমার পাশ থেকে বলে উঠলো,
” এইতো আমি আছি এবং সব শুনেছিও”

আমি বললাম,,
“তুই কখন এলি!!?”
“তুমি যখন রাদিফ ভাই কে উটকো ঝামেলা বলছিলে তখন” রিজভী।

ও আচ্ছা তারমানে তোমরা সবাই একসাথে হয়ে আমাকে লেগপুল করছো। থাকবোই না এখানে আমি এই বলে আমি উঠে কিচেনের দিকে গেলাম। ঐখানে যেতেই দেখলাম ফুফিরা আর আম্মুরা সবাই মিলে কাজ করছে আবার গল্পও করছে। এই দিক দিয়ে আমার ফুফিরা অনেক ভালো। অনেকজন কে দেখি ভাইয়ের বউদের পিছনে ননদ রা লেগে থাকে কিন্তু আমার ফুফিরা অনেক ভালো। নিজেদের ভাইয়ের বউদের কে বোনের মতো ভালোবাসে। আমি কিচেনে যেতেই মেজো আম্মু বললো,,

“কি তুবা, কিছু লাগবে তোদের”??
” নাহ মেজো আম্মু কিছু লাগবে না। ওরা সবাই মিলে আমাকে ওখানে পচাচ্ছে তাই এখানে আসলাম”।
ছোট ফুফি আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,, “তাহলে তুবা মনি তুই এখানে বসে থাক”
যেই বসতে যাবো তখনি ছোট ফুফির মেয়ে তানহা পুচকি আমার হাত ধরে টেনে বললো,,

“তুবা আপি তোমাকে ডাকছে তমাল ভাইয়া”

ড্রয়িংরুমে এসে দেখলাম সব কাজিন গোষ্ঠী কি নিয়েন যেন আলোচনা করছে। আমি যেতেই আনাস ভাইয়া বললো,,
“এই তুবা, তুই যাবি?? তুই যদি যাবি বলিস তাহলে সবাই কে নিয়ে যাবো”।
আমি বললাম,,
” কোথায়”??
তখনি পাশ থেকে তমাল ভাইয়া বললো,,
“ওরা সবাই বলছে আজ কে সন্ধ্যার পরে সবাই নিয়ে ঐ যে, মোড়ের ফুচকা দোকান টা আছে না,, ঐখানে যাবে ফুচকা খেতে। ইরা আর অনামিকা নাকি খায় নাই ঐ দোকানের ফুচকা গুলো। যাবি তুই”??

ফুচকার নাম শুনে তো আমার এখনি জিবে পানি চলে আসছে। সাবিহা, ইরা, অনামিকা আর তানিশা আপু তো আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ এখন আমি যদি না বলি তাহলে সবার যাওয়া ক্যান্সেল। তাই আমি বললাম,,
” হ্যাঁ যাবো।ফুচকা যেখানে আছে সেখানে আমি কিভাবে না যাই”।কিন্তু আম্মুরা যেতে না দিলে!??

তখনি সাবা আপু এসে বললো,,
“কোথায় যাচ্ছিস সবাই??”
আমি বললাম,,
“চলো না সাবা আপু সবাই মিলে মোড়ের দোকান থেকে ফুচকা খেয়ে আসি। কিন্তু আম্মুরা যেতে না দিলে??”

“চল সবাই মিলে খেয়ে আসি। অনেকদিন হয় ফুচকা খাওয়া হয় নি। কিন্তু আম্মুরা??”
তখনি পাশ থেকে ইরহাম ভাই বলে উঠে,,
“মামিদের কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার”

আমরা সবাই তো অবাক। এতক্ষণ যে ইরহাম ভাই চুপচাপ সোফার এক কোণে মোবাইল টিপছে,, সে ইরহাম ভাই এখন আম্মু দের কে রাজি করাবে। তাও সাবা আপু বলার পরপর।ব্যাপারটা একটু খটকা লাগলো।

চারদিকে মাগরিব এর আজান দিচ্ছে। আমরা মেয়েরা নামাজ পড়তে যাচ্ছি আর ভাইয়া রা মসজিদে যাচ্ছে। ওরা মসজিদ থেকে এলেই সবাই যাবো ফুচকা খেতে।

আমি একটা গ্রিন কালার কুর্তি পড়েছি এর মুখে একটু ক্রিম দিয়েছি। আর চুলগুলো কে খোপা করে কাঠি দিয়ে বেধেছি।ব্যাস আমি রেডি। ইরা আর অনামিকা যে লিপস্টিক দিয়েছে সেটা ফুচকা খেতেই চলে যাবে। এই বলে আমি আর সাবিহা ওদের কে পচাচ্ছি।
গেটের কাছে আসতেই দেখলাম তমাল ভাইয়া রা আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
রাস্তায় নেমে সবাই হাটছি। সবাই শুধু আমাদের দিকে ঘুরে ঘুরে দেখতেছে যে,,এই বিশাল ডাকাতের দল যাচ্ছে কোথায়। হাহা

ফুচকা দোকানের সামনে ভিড়। আমরা কোনোরকম গিয়ে সবার জন্য ফুচকা অর্ডার দিলাম। কি সুন্দর পরিবেশ। খোলা আকাশের নিচে চেয়ার টেবিলে বসে ফুচকা খাচ্ছি সবাই মিলে। বাতাস বইছে সাথে আকাশে চাঁদ। ইশ! এখন রাদিফ ভাই থাকলে বেশ ভালো হতো। ছিহ! আমি রাদিফ ভাই কে নিয়ে কি উল্টো পালটা চিন্তা করছি।
দেখতে দেখতে সবার ফুচকা চলে এলো। ফুচকা আসার সাথে আনাস ভাই বললো,,
” এই দাড়া কয়েকটা ছবি তুলি। রাদিফ কে পাঠাবো।”

মাত্র ফুচকা একপ্লেট খেয়েছি আরেক প্লেট যেই অর্ডার করতে যাবো দেখলাম আমার ফোনে যমদূত থেকে ফোন আসছে। মানে রাদিফ ভাই। আমি উঠে একটা সাইডে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম।আমি কিছু বলার আগেই ঐপাশ থেকে রাদিফ ভাই ধমক দিয়ে বলে উঠে,,

” এই কই তুই?? তুই কোন সাহসে আমাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া ফুচকা খেতে গেয়েছিস!!?? আমাকে একবারও বলেছিস। আমি কি মানা করতাম। আর তোর হিজাব কই??!! হিজাব ছাড়া বের হয়েছিস কেন??”

এইদিকে ধমক খেয়ে আমি তো হতভম্ব। আমি একটু নরম সুরে বললাম,,
“আমি সবার সাথে এসেছি। একা আসছি নাকি?? আর ঘোমটা তো দিয়েছি। তখনি পাশ থেকে সিনথিয়া আপুর গলা শুনলাম। ”
রাদিফ বললো,,
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে পড়তে বোস।”

বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলাম। সামনে আবার এক্সাম। পড়ার সময় আমি আর সাবিহা একসাথে বসি না। একসাথে বসলে দুজনে গল্প করি। তাই মেজো আম্মু আমাদের একসাথে বসতে দেয় নাহ।
কিছুক্ষণ পড়ার পর দেখলাম মোবাইল এ মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।ভাবলাম কোনো নোটিশ দিয়েছে কিনা। কিন্তু ফোন হাতে নিতেই দেখলাম অপরিচিত নাম্বার থেকে কিছু ছবি আর মেসেজ আসছে। মেসেজ গুলা ওপেন করেই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে