আমার তুমি পর্ব-০৪

0
365

#আমার_তুমি
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুই বোস।
আমি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”

কথা টা বলে সালেহা বেগম সারা কে ডাকতে এক জন কাজের মহিলা কে বলে।
প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জা সঙ্গে বসে টুকটাক কথা বলে।
কিন্তু ওর মন টা বড্ড খারাপ।
তবে মুখে যথেষ্ট কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
এই বাড়িতে কেউ জানে না মিতা সওদাগর প্রিয়তার সাথে খারাপ ব্যবহারের কথা শুধু সারা বাদে।
মূলত প্রিয়তাই চায় না ঘরের কথা বাহিরে কেউ জানুক আর তার পরিবারের বদনাম হোক।তাছাড়া শুধু মিতা সওদাগরই তো একটু কঠোর আর সবাই তো বেশ ভালোবাসে তাকে।
প্রিয়তা আর আম্বিয়া মির্জা কথার মাঝেই এক জন মেইড ট্রে তে করে প্রিয়তার আনা পিঠা আর মোয়া দিয়ে যায়।
পেছন পেছন সালেহা বেগমও এসে প্রিয়তার পাশে বসে।
বাড়িতে পুরুষ লোক কেউ নেই।
কিন্তু প্রিয়তার চোখ কাউ কে খুঁজে চলেছে।
এর মধ্যে সারা এসে হাজির হয়।
সারা এসেই সেন্টার টেবিলের উপর খাবার দেখে বুঝতে পারে এ গুলো প্রিয়তাই নিয়ে এসছে।
আর ওর ছোট মস্তিষ্ক এটাও ভেবে নিলো প্রিয়তা কে ওর মা নিশ্চয়ই এসবের কিছুই ছোঁয়াই দেয় নি।
সারা তৎক্ষনাৎ একটা মেইড কে একটা ছোট বক্স আনতে বলে রান্না ঘর থেকে।
প্রিয়তা কে আম্বিয়া মির্জা সালেহা বেগম খেতে বললেও সে কিছুই মুখে নেয় নি সে খেয়ে এসছে বলে এড়িয়ে গেলো।
কাজের লোক বক্স নিয়ে এলে সারা সেটায় ঝটপট কয়ে এক টা পিঠা সেটায় পুরো কাঁধে থাকা ব্যাগটায় নিয়ে সবার কাছ হতে বিদায় নিয়ে প্রিয়তা কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।

———–

-“বেশি ব্যথা করছে না?
ইস, কি লাল হয়েছে দেখেছিস?”

-“ভালো হয়ে যাবে।
তাছাড়া দোষ তো আমারই।”

সারা প্রিয়তার কথার পিঠে আর কিছু বলে না ওর খুব খারাপ লাগছে স্যার কি করে পারলো এতো জোরে মারতে।
মাত্র তিন দিন বন্ধ করেছে।
আর কই অন্য সময় তো স্কুল বন্ধ করলে কাউ কে মারে না তবে প্রিয়তা কে কেন মারলো?
সারা এ-সব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার হাতে রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে পানি ঢালে।
তার পর একটা টিসু দিয়ে হাত টা আস্তে আস্তে করে মুছিয়ে দিলো।
আলতো করে ফু দিয়ে মলিন মুখ করে জিজ্ঞেস করে উঠে

-“এখন বেশি জ্বলে?”

প্রিয়তা মুচকি হেসে বাম হাত টা সারার গালে রেখে জবাব দেয়

-“একটু।”

-“বাসায় গিয়ে কিন্তু মলম লাগাবি।”

-“আচ্ছা।”

-“স্কুল ছুটি দিয়েছে চার টায়।
এখন সাড়ে চার টা বাজে।”

হঠাৎ সাদনানের কণ্ঠ শুনে সারা প্রিয়তা দু জনেই চমকে উঠে। সাদনান, রাহান দু জনেই দাঁড়িয়ে আছে তাদের থেকে কিছু টা দূরে।
সাদনানের গায়ে সাদা একটা সার্ট যা দেখে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে আসে।
এই লোকের কি আর সার্ট নেই সব সময় এক সার্ট পড়ে থাকে।আর ওনি কি জানে না ওনাকে সাদা রঙে কত টা মারাত্মক সুন্দর লাগে ওনাকে। প্রিয়তা নিজের মনেই কথা গুলো ভাবে।
তবে প্রিয়তা ভীষণ খুশি হয়।
আজ সারা দিন একবারও দেখা মিলে নি লোক টার।
ভেবেছিল হয়তো আজ দেখা পাবে না।

-“যাচ্ছিলাম তো।
ওই প্রিয়তার হ,,,,,

সারা আর কিছু বলতে পারে না প্রিয়তা সারার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
সারাও আর কিছু বলে না। সাদনান ভ্রু কুঁচকে নেয় সারা কে চুপ করে যেতে দেখে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সাদনানের পেছন থেকে রাহান বলে উঠে

-“কি হলো?
বলছো না কেন প্রিয়তার কি?”

-“কিছু না।”

ফট করে বলে উঠে প্রিয়তা।
সাদনানের ততক্ষণে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু প্রিয়তার জবাবে ভ্রু কুঁচকে নেয়।
এই মেয়ে এমন নার্ভাস কেন?
সাদনান কথা টা মনে মনে ভেবেই বোনের দিকে আঁড়চোখে একবার তাকালে আর অমনি সারা চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করে।

-“হাত দেখি।”

-“ক,, কেন?”

আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা।
সাদনান চোখ বন্ধ করে নেয়।
রাগ হচ্ছে এই মেয়ের উপর কোনো দিন শান্তি দিবে না তাকে।
প্রথমত পৃথিবীতে এসছে লেইট করে।তারউপর ভীষণ বাজে ভাবে প্যারা দেয় তাকে এই মেয়ে। একবার শুধু সময় হোকে সুদে আসলে সব উসুল করে নিবে।কথা গুলো ভেবেই
সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে চোখ খুলে এক ঝটকায় প্রিয়তার ডান হাত ধরে সামনে এনে থমকে গেলো সাদনান।
বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
যেনো কেউ ধারালো অস্ত্রের দিয়ে খুঁচাচ্ছে।
চোখ রাগে লাল হয়ে আসে।
প্রিয়তা সে দিকে তাকিয়ে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ভয়ে আবারও মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান ভাই তাকে ভালোবাসে না কিন্তু সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সারা আর তাকে বেশ যত্ন করে আগলে রাখে।

-“কি হয়েছে?”

-“কিছু না তো।
আমি বাড়ি যাবো।”

-“আমি জানতে যাচ্ছি কে করেছে এটা?”

সাদনানের ধমকে কেঁপে উঠে ছোট প্রিয়তা।
সারাও ভাইয়ের এই রূপ দেখে কিছু টা ভয় পায়।
তার ভাই নিশ্চয়ই এখন এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটাবে।সারা নিশ্চিত।
তার ভাইয়ের মনে যে কি চায় সে এটাই এই আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারে না।
সারার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা মিনমিন করে বলে উঠে

-“রাস্তায় পড়ে গিয়েছে।”

-“মিথ্যা।
সত্যি টা বলো।”

ঠান্ডা স্বরে বলে উঠে সাদনান।
প্রিয়তা ততক্ষণে হাত ছাড়িয়ে নিলো।
সারা এগিয়ে এসে ভাইয়ের থেকে দূরত্ব রেখেই প্রিয়তা কে আগলে দাঁড়িয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠে

-“তিন দিন স্কুল আসে নি।
তাই স্যার মেরেছে।”

-“কোন স্যার?

-“ক্লাস টিচার।
কবির খাঁন।”

সারার কথা শুনে সাদনান চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
কিন্তু রাগ টা কে গিলে নিলো সে।
এখন কিছুতেই উল্টো পাল্টা কিছু করা যাবে না।আর এই মেয়ের সামনে তো আরে আগেই না।
ভেবেই সাদনান রাহান কে কিছু বলে নিজে বাইকে বসে সারা আর প্রিয়তা কে তার পেছনে বসার জন্য বলে।
কিন্তু প্রিয়তা সে তো অবাক ভীষণ অবাক।
এটা সম্ভব?
সারা গিয়ে আগে বসে তার পর প্রিয়তা কে বসতে সাহায্য করে।
সাদনানের বলিষ্ঠ শরীরে এই বাইকে বসার পর শুধু আর এক জন পুরুষ বসার জায়গা রাখে। কিন্তু সারা,প্রিয়তা দুজনেই স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে কম হওয়া সাদনানের পেছনে দুইজন অনায়েসে বসতে পারে।
প্রিয়তার মনে পড়ে না কবে লাস্ট সাদনান তাকে বাইকে নিয়েছে।
ছোট বেলায় প্রায় নিতো।কিন্তু প্রিয়তা জেএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আর নেয় নি।
আর আগের মতো ঠিক করে কথাও বলে না।

-“তুই বাড়ি যা।
আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে আসছি।”

মির্জা বাড়ির সামনে বাইক থামিয়ে সারা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে সাদনান।
সারা নেমে পড়ে।
প্রিয়তা কে আবারও হুকুমের স্বরে বলে উঠে

-“ঔষধ লাগাবি কিন্তু।
আর কাল তো স্কুল বন্ধ তুই আসবি না আমি যাব?”

-“তুই যাস।
মনি আসতে দেবে না।”

মলিন হেসে জবাব দেয় প্রিয়তা।
সাদনান এদের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইক স্টাট দেয়।
আর আকস্মিক ঘটনায় প্রিয়তা চমকে উঠে চোখ বন্ধ করে খামচে ধরে সাদনানের সফেদা সার্ট এর পেছনের অংশ।
তার পর আস্তে আস্তে যখন বাইক এর গতি স্থিতিশীল হয় তখন প্রিয়তা সুন্দর করে সাদনানের কাঁধে হাত রেখে বসে।

চার, কি পাঁচ মিনিট এর মাথায় বাইক টা এসে সওদাগর বাড়ির গেইট এ রাস্তায় থামে।
আর প্রিয়তা নেমে দাঁড়ায়।
কিছু বলবে তার আগেই সাদনান বলে উঠে

-“সাদনান তার জিনিস কি করে যত্নে রাখতে হয় সেটা ভালো করেই জানে।
আর মিথ্যা বলা টা একদম উচিত হয় নি।যদিও তুমি বা সারা না বললে আমার কিছু আসতে যেতো না।
এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া খবর টা পেতে দু’মিনিট সময়ও লাগতো না।”

কথা গুলো শেষ করেই সাদনান প্রিয়তা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে
বাইক স্টাট দিয়ে চলে যায়।
প্রিয়তার মন টা খারাপ হয়ে যায়। কি বলে গেলো এসব?
কিন্তু প্রিয়তা সব ভাবনা বাদ দিয়ে মনে মনে আফসোস সুর তুলে
ইস একটু কথা বলা হলো না লোক টার সাথে।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে