আমার তুমি পর্ব-০৩

0
383

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুমি এখানে? ”

সাদনান ফ্রেশ হয়ে মাত্র ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসছে।
আর বেরিয়ে এসেই দরজায় প্রিয়তা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে।

-“আপনার টাওয়াল।”
আর বাড়ি টা আমার।আপনি ভুলে যাচ্ছেন।”

-“বাড়ি টা তোমার আমি জানি আর এই রুমে যেহেতু এখন আমি আছি তাই নক করে পারমিশন নিয়ে ঢোকার প্রয়োজন ছিল।”

-“এই আপনি টাই সম্পূর্ণ আমি আমার করে নেবো।”

প্রিয়তা বিরবির করে বলে উঠে।
সাদনানের কান অব্দি তা পৌঁছায় না।তাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“এই মেয়ে কি বিরবির করছো?”

-“কিছু না।
আপনাকে খাবারের জন্য ডাকে।”

কথা টা বলেই প্রিয়তা টাওয়াল টা বিছানায় রেখে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো।

সাদনান টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছে ঘর ছেড়ে নিজেও কি সব বিরবির করতে করতে চলে এলো।

————-

-“আমি ইচ্ছে করে করি নি জান।”

আয়ানের কণ্ঠে অসহায়ত্বের ছোঁয়া।
কিন্তু সামনে দাঁড়ানো রমণী খুব ভাবলেশহীন ভাবে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“তো আমি কি করবো?”

-“তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?”

-“কি ভাবে বলছি?”

-“এই মেয়ে আমাকে রাগাবে না, ফল ভালো হবে না।”

মাইশা কিছু বলে না।
আয়ানের কথা না শোনার মতো করে ছাঁদ হতে নেমে চলে যেতে নেয়।
আর আয়ানের মাথায় ধপ করে আগুন ধরে যায়।
এই মেয়ে একটু বেশি করছে।
ভাবতে ভাবতে আয়ান মাইশার হাত টেনে ধরে।
মাইশা পেছন ফিরতেই আয়ান মাইশা কে এক টানে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে।
শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে মাইশা। কিন্তু যখন ঘটনা বুঝতে পারলো।
আয়ান মাইশা কে আরও কিছু টা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে নিজের বাম হাত প্রেয়সীর ডান গালে রাখে।
আর মাইশা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আয়ান তার প্রেয়সীর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে নিজে কে আর দমাতে পারে না।
মূহুর্তের মধ্যে মাইশার ওষ্ঠ আঁকড়ে ধরে।
মাইশা স্তব্ধ। নড়াচড়া শক্ত করতে পারছে না।চোখ বড় বড় করে আয়ানের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি ভর্তি গালের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আয়ান নিজের ইচ্ছে মতো প্রেয়সীর ঠোঁটে নিজের ভালোবাসার পরশ দেয়।
দীর্ঘ একটা চুম্বন এর পর আয়ান মাইশা কে ছেড়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে।

-“সরি জান।
কিন্তু আমার ছোঁয়া পবিত্র, অধিকার আছে আমার।”

মাইশা কিছু বলে না চুপ চাপ আয়ানের বুকে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

—————-

মাইশা যখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।
তখন আয়ান অনার্স শেষ ইয়ার।স্কুল কলেজ ভার্সিটির এক সাথে হওয়ার সুবিধায় দুই জনের সেখানে থেকে ভালোবাসার প্রণয় হয়।
আয়ান মাইশা কে আগে থেকে পছন্দ করতো।সাদনানের, রাহাতের সাথে বন্ধুত্ব ছিল বিধায় প্রায় যাতায়াতে ছিল মির্জা বাড়ি।
আর তখন থেকে ছোট মাইশা কে ভালো লাগতো। কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করে নি।
কিন্তু আয়ান প্রকাশ না করলেও ছোট মাইশা তখন থেকে আয়ানের পেছন পেছন ঘুরতো।
এভাবে দেখতে দেখতে আয়ান অনার্স ফাইনাল এক্সাম শেষ করে।
আর মাইশা তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হয়।
আয়ান মাস্টার্স করার জন্য শহরে আসার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়।
কিন্তু মাইশার পাগলামি তখন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ততদিনে আয়ানও তার প্রেম নিবেদন করে ফেলে ছিল প্রেয়সীর নিকট।
আর যখন আয়ানের শহরে আসার সব বন্দবস্ত হয়ে এলো।শহরে আসার দিন ঘনিয়ে এলো।
মাইশা তখন নাছোড় বান্দা সে কিছুতেই আয়ান কে ছাড়বে না।
তার মনে ভয় বাসা বাঁধে যদি আয়ান শহরে এসে বদলে যায়।
কিন্তু বেচারি মাইশা তখনো বুঝতো না আয়ান ওকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।
মাইশার পাগলামি যখন আকাশ ছোঁয়া রাত বিরাতে ফোন দিয়ে কান্না কাটি।দেখা হলে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে আয়ান কে যেতে না করা তখন আয়ান বিশাল বড় সিদ্ধান্ত নেয়।
কাউ কে না জানিয়ে ওই দিন কাজি অফিসে গিয়ে সেখানের দুই জন মানুষ সাক্ষী রেখে কাজি দিয়ে বিয়ে করে নেয় তার ছোট জান কে।
আজ ছয় মাসের বেশি সময় হয় ওদের বিয়ে হয়েছে।
কিন্তু এটা কেউ জানে না।

—————

আয়না কে সবার পছন্দ হয়েছে। বিয়ে টা এক মাস পর হবে বলে ঠিক করেছে জাফর মির্জা।
তার বাড়ির বড় নাতি আবার গ্রামের নামী-দামী লোক।
তিনি বেশ জোয়ান এখনো।এলাকার চেয়ারম্যান। বড় ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান। ছোট ছেলে ব্যবসায়ী, বড় নাতি বড় ছেলে আজ্জম মির্জা সাথে রাজনৈতি সাথে বাবার ব্যবসায় দেখা ভাল করে।
আর মেজো নাতি কে সামনে ইলেকশনে এমপি পদে দাঁড় করাবে।
যদি মেজো নাতি তার এসব ধারে কাছেও নেই। কিন্তু তার এলাকায় দাপট আছে। সাথে ব্যবহারের দিক আর এখন কার নিউ জেনারেশন তার নাতির বেশ আয়াত্তে।কিন্তু সমস্যা হলো সে এসব করতে চায় না।
তবে তিনি এবার যে করেই হোক মেজো নাতি কে এমপি পদে দাঁড় করাবেই।
আর এক টা বড় দল থেকে অফারও এসছে।
সেই দলের হয়ে যদি একবার কাজ করা যায় তাহলে নিশ্চিত তার নাতি পাস করে যাবে।
কারণ একটাই গত পনেরো বছর ধরে যেই লোক এমপি পদে আছে তিনি কোনো উন্নতি করে নি শহরে। তাই জনগণ খেপে ফুঁসে আছে।একবার যদি যোগ্য কাউ কে পায় তবে আগের এমপি কে কোনো মতেই আর আসন্নে আসতে দেবে না।
তাই মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় নিশ্চিত।
এবার শুধু নাতি কে রাজি করনোর পালা।
এসব ভাবতে ভাবতেই জাফর মির্জা চায়ের কাপ শেষ চুমুক দেয়।
অতঃপর সওদাগর বাড়ির লোকদের নিমন্ত্রণ করে যায়।
যদিও সওদাগরের বাড়ি তুলনায় মির্জা বাড়ি রাজপ্রাসাদ আর ছেলে সে সম্পর্কে সব জানা আছে।
এখন শুধু ফর্মালিটি আর কি।

———-

প্রিয়তা রেডি হচ্ছে স্কুলের জন্য।
আজ তিন দিন পর স্কুল যাবে ভাবতেই খুশি লাগছে। কত দিন হয় সারার সাথে জমিয়ে কথা বলা হয় না। সব কথা মাথায় কিলবিল করছে।
আসলে প্রিয়তা পড়া লেখায় যে অতটা ভালো তা না আবার ততটা খারাপও না।
স্কুল যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলে সে এই বন্দী জীবন টা থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও রেহায় পায় তাই বাড়ি থেকে বেরুতে পারলেই যেনো সে ভালো করে শ্বাস ফেলতে পারে।
এখানে সব তিক্ত লাগে প্রিয়তার। অন্য কেউ কতক্ষণ তার হয়ে লড়াই করবে।সে নিজে তো করতে পারে না।
আর তার বাবা সে তো তার মাকেই বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছিল।
আর শুধু দায়িত্ব পালন করে ছিল কিন্তু ভুল বসত প্রিয়তা দুনিয়া এসে পড়েছিল।
আর সেই ভুলই তো আজ তিনি মাটির তল হলেন।
যদিও প্রিয়তার ওর মায়ের কথা মনে নেই তবে ওর দাদা বলতো প্রায়ই এসব।
আর বছর তিন এক আগে তিনি প্রিয়তা কে একা করে চলে গেলো।
সবার উপর এই ছোট্ট প্রিয়তার বড্ড অভিমান।
প্রিয়তা এ-সব ভাবতে ভাবতে ব্যাগ এ বই নিচ্ছিল কিন্তু মিতা সওদাগরের ডাকে বাস্তবে ফিরে

-“এই মেয়ে।
কোথায় থাকে মন?”

-“না মনি।
অনেক দিন স্কুল যাই না তাই ভাবছিলাম।
কবির স্যার না আবার ম,,,,

-“হয়েছে হয়েছে তোর ন্যাকামি করা।
এমন ভাব করছিস যেনো তোকে এক বছর পর স্কুল যেতে দিচ্ছি।
আচ্ছা যাই হোক নে এ গুলো ধর।
যাওয়ার সময় মির্জা বাড়িতে দিয়ে যাবি।”

প্রিয়তা কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তিনি বিরক্তিকর মুখ করে কথা গুলো বলে একটা কাপড়ের ব্যাগ প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দেয়।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে নিজে মেয়ের হবু শশুর বাড়িতে কিছু দিচ্ছে।
ব্যাগ টার ভেতর বড় দুই টা বক্স।
প্রিয়তা ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো ব্যাগ টা বেশ ভারি।
না চাইতে কৌতুহল বসত জিজ্ঞেস করেই নিলো মিতা সওদাগরের কে

-“মনি এটার ভেতর কি,,,,,

-“তোর কাছে এখন সব কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে?”

-“না মনি আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করে ছিলাম।
আর এমন হবে না। ”

কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা চোখের পানি আড়াল করতে তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
তার ভীষণ কষ্ট হয়।
কেন মিতা সওদাগরের তাকে একটু ভালোবাসে না একটু স্নেহ করে কাছে ডাকে না? আদর করে একটু খাবার দেয় না?
স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান বলে?

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে