আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৫

0
1996

#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৫
#জাফিরাহ_জারিন
রুমে ঢুকে রিদিম দেখলো নিয়া খাটের একপাশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।তার পাশে ছোট্ট এক বছর বয়সী রিশান খেলনা নিয়ে খেলা করছে।রিদিম গিয়ে নিয়াকে ডাকলো।
“নিয়া,আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
“তুমি কিছু বলবে তার আগে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
“কি বলবে??”
“রিদিম আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই।আমার পক্ষে আর এই সম্পর্কটা রাখা সম্ভব না।”
“মানে??”
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“মানেটা খুব সহজ।আমি ডিভোর্স চাই।”
নিয়ার এই কথাটা যেন বুলেটের মত আঘাত হানলো রিদিমের বুকে।
“দেখো নিয়া।আমরা কোনো রিলেশনে নেই যে তুমি এভাবে সম্পর্কটা ভেঙে দেবে।আমরা বিবাহিত আর আমাদের একটা ছেলেও আছে।”
“দেখো রিদিম আমি এসব কিছু জানি না।আমি শুধু মুক্তি চাই ব্যস।”
নিজের বাবা-মাকে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে ভয়ে কান্না করে দিল রিশান।রিশানের কান্না শুনে ইলারা বেগম ছুটে এলেন।তিনি এসে দেখেন যে রিশান কাঁদছে আর অন্যদিকে নিয়া রিদিমের সাথে ঝগড়া করছে।
ইলারা বেগম গিয়ে রিশানকে কোলে তুলে নিলেন ও রিশানের কান্না থামালেন।
“কি হয়েছে তোমাদের??ঝগড়া করছো কেন তোমরা??আর এইদিকে যে রিশান দাদুভাই কাঁদছে সেদিকে কারোর খেয়াল নেই।”
“দেখুন মা ঝগড়া আমি না আপনার ছেলে করছে।আমি তো সোজাসুজি তার কাছে ডিভোর্স চেয়েছি।কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।”
নিয়ার কথা শুনে ইলারা বেগম অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেলেন।
“এসব কি বলছো বৌমা!!তুমি ডিভোর্স চাইছো কেন??আর তুমি একবারও রিশান দাদুভাইয়ের কথা ভাবছো না!”
“আপনার তো খুব পছন্দ আপনার নাতিকে।তো রেখে দিন নিজের কাছে।আমি তো রিশানকে নিয়ে যেতে চাই নি।”
“আর কিছু বলবে??”
খুবই শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“না।আমার ডিসিশন ফাইনাল।আই ওয়ান্ট ডিভোর্স। ”
নিয়া রিদিমের প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিল।
“ওকে।আমি উকিলের সাথে কথা বলছি।আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডিভোর্স পেয়ে যাবে।”
এই বলে রিদিম তখনই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রিদিমের কথা শুনে নিয়া এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ইলারা বেগম রিশানকে তার কাছে নিয়ে গেলেন।রিদিম আর রিশান, এই দুইজনের জন্য ইলারা বেগমের কাঁদছেন। তিনি জানেন তার ছেলে নিয়াকে কতটা ভালোবাসে।কিন্তু নিয়ার কাছে এ ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।আর ছোট্ট রিশানের এখন মা-বাবা দুজনকেই দরকার।সে কি করে থাকবে মা ছাড়া!!!
এক সপ্তাহ পর,
আজ রিদিম আর নিয়ার ডিভোর্স হয়ে গেছে।রিদিম একবার চেয়েছিল নিয়াকে বলতে যে “রিশানের কথা ভেবে অন্তত সম্পর্কটা নষ্ট করো না।” কিন্তু রিদিম বলে নি।কারণ নিয়া মা হওয়ার যোগ্য না।যার নিজের সন্তানের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই সে মা নামের কলঙ্ক।
______________________________________
দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেছে।রিশানের বয়স এখন ৩ বছর।এখন সে কথা বলতে পারে,হাটতে পারে সব পারে।রিশান এখন সারাদিন তার দাদীর কাছেই থাকে।আর রাতে বাবার কাছে থাকে।আগে সে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করতো।কিন্তু সে যখন বুঝলো যে তার মায়ের কথা বললে বাবা কষ্ট পায় তখন থেকে আর রিশান তার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করে না।কারণ রিশান সবথেকে বেশি তার বাবাকে ভালোবাসে।রিদিমও এখন রিশানকে নিয়েই থাকে।এখন আর নিয়ার কথা মনে হয় না।এখন তো রিদিম নিয়াকে ধন্যবাদ দেয় কারণ নিয়া রিদিমকে তার বেচে থাকার অবলম্বন রিশান দিয়ে গেছে।
আজ মিহি বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে।ইদানিং তার বাবার শরীরটা ভালো নেই।ডক্টর দেখানো দরকার।মাহিম মাত্র ক্লাস ১০ এ পড়ে।এখন সে বাবাকে ঠিকমত ডক্টর দেখাতে পারবে না।মিহির মা একা কিছু করতে পারবেন না।তাই মিহি দেশে ফিরছে।কিছুক্ষণ আগেই প্লেন বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করেছে।মিহি সেখান থেকে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরলো।বাড়ি ফিরেই সে সবার আগে নিজের বাবার কাছে গেল।মিহির বাবা নিজের মেয়েকে পেয়েই অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছেন।এরপর মিহি তার মা এবং ভাইয়ের সাথে দেখা করলো।মিহিদের বাড়িতে আজ অনেক বছর পর আবার সেই আগের রূপ ফিরে এলো।____________________________________
আজ ইলারা বেগম মিহির সাথে দেখা করতে এসেছেন।তার সাথে রিশানও এসেছে।
ইলারা:ভালো আছো মিহি মা??
মিহি:জ্বি মামণি।তুমি কেমন আছে??
ইলারা:এইতো আছি কোনো রকম।
রিশান:দিদা!!এইটা কে??
ইলারা:এইটা তোমার মিহি আন্টি।
রিশান একবার মিহিকে ভালো করে দেখে নিলো।তারপর গিয়ে মিহির কাছে দাঁড়ালো। মিহি শুধু চুপচাপ রিশানের কর্মকাণ্ড দেখছে।
রিশান:আন্টি আন্টি!!!তুমি আমার সাথে খেলবে??
মিহি রিশানকে কোলে তুলে নিল।
মিহি:তুমি খেলতে চাও??
রিশান:হুম।
মিহি:তাহলে চলো খেলি।
মিহি রিশানকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে মিহি আর রিশান দুজনে মিলে খেলছে।মিহির মা আর ইলারা বেগম গল্প করছেন।অনেক্ষণ পর ইলারা বেগম বাড়ি যেতে উদ্যত হলেন।তিনি মিহির রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন। মিহি আর রিশান খেলছে।মিহি রিশানের সাথে দুষ্টুমি করছে আর রিশান হাসছে।নিজের নাতিকে এভাবে হাসতে দেখেন নি ইলারা।রিশান আজ মন খুলে হাসছে।হঠাৎ করেই ইলারা বেগমের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।তিনি আর দেরী না করে মিহির মার কাছে গেলেন।
ইলারা:আমার একটা আবদার আছে।রাখবেন??
মিহির মা:কি আবদার আপা??
ইলারা:আমি মিহিকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই।দেবেন আপনার মেয়েকে??
মিহির মা এরকম আবদার শুনে একটু বিস্মিত হলেন।
মিহির মা:দেখুন আগে মিহির মতামত নেওয়া উচিৎ।
মিহির মা মিহিকে ডাকলেন।মিহি রিশানকে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে মায়ের কাছে এলো।
মিহি:ডাকছিলে মা??
মিহির মা:হ্যা।ইলারা আপা তোকে কিছু বলতে চান।
মিহি:কি বলবে মামণি??
ইলারা:রিশানের মা হবে??
মিহি যেন এই কথাটা আশা করে নি।যেই মানুষটার বউ হওয়ার স্বপ্ন মিহি এতবছর ধরে দেখেছে আজ তা সত্যি হবে।মিহির একবার ইচ্ছে করছিল না বলতে।পাচ বছর আগে যখন মিহি তার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছে তবে আজ কেন?? কিন্তু ছোট্ট রিশানেত দিকে তাকিয়ে মিহি “না” বলতে পারে নি।রিশানের একজন মা দরকার।ছেলেটা তবেই ভালোমত বেড়ে উঠবে।তাই রিশানের কথা চিন্তা করে মিহি রাজি হয়ে যায়।রিশান তো খুব খুশি।সে তো এখন থেকেই মিহিকে “মাম্মাম” বলে ডাকতে শুরু করেছে।রিদিম প্রথমে রাগ হয়েছিল বিয়ের কথা শুনে।কিন্তু রিশানের খুশি দেখে রিদিমও আর না করতে পারে নি।অবশেষে মিহি আর রিদিমের বিয়েটা হয়েই গেলো।
বর্তমান,
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে যে রাত ১১টা বাজতে চললো।রিদিম এতক্ষণ তার অতীতের ভাবনায় ডুবে ছিল।সত্যিই অতীত এক অদ্ভুত জিনিস।রিদিম গাড়ির চাবিটা হাতে করে গ্যারেজে গেল।এখন তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
বাড়ি ফিরে কলিংবেল চাপতেই মিহি ছুটে এসে দরজা খুলে দিল।এতক্ষণ সে রিদিমের অপেক্ষায় ছিল।এত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেওয়াতে রিদিম বেশ অবাক হলো।মেয়েটা এখনও তার জন্য জেগে বসে আছে।কিন্তু আরও অবাক হলো যখন মিহি দরজা খুলে দিল।
চলবে…………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে