আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৬

0
2099

#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৬
#জাফিরাহ_জারিন
দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথেই রিদিমের চোখ আটকে গেল মিহিতে।শাড়িতে অপরূপ লাগছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই নারীকে।রিদিম যেন সম্মোহিত হয়ে গেছে।সে নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে।
“কি হলো ভিতরে আসুন।”
মিহির কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো রিদিমের।রিদিম ঘরে ঢুকে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেল।মিহি টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলো।রিদিম ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মিহি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
“তুমি খাও নি??”
রিদিম মিহিকে জিজ্ঞাসা করলো।
“না।আপনার জন্য বসে ছিলাম।”
“আমি কি বলেছিলাম বসে থাকতে??”
“রাত ১১:৩০ বাজে।এই সময় আপনার সাথে ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই।চুপচাপ খেতে বসুন।”
রিদিম আর কোনো কথা না বাড়িয়ে খেতে বসলো।কিন্তু আজ যেন রিদিমের গলা দিয়ে খাবার নামছে না।কারণ রিদিম তো মিহিতে আটকে আছে।রিদিম হাজার চেষ্টা করেও মিহির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।মিহি খেয়াল করলো রিদিম খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছে।মিহি জিজ্ঞাসা করলো রিদিমকে,
“কি হলো খাচ্ছেন না যে??”
“কোথায়??আমি তো খাচ্ছিই।”
রিদিম মিহির কথাকে পাশ কাটিয়ে গেল।মিহিও প্রতিউত্তরে কিছু বললো না।রিদিম খাওয়া শেষ করে ছাদে চলে গেল।মিহি খাবারগুলো গুছিয়ে রেখে রুমে চলে এলো।
ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের চুড়িগুলো এক এক করে খুলছে মিহি।মিহির মনে আজ বিষন্নতার মেঘ বিরাজ করছে।এত সুন্দর করে সাজলো সে।তবুও কি রিদিমের চোখে পড়লো না।রিদিম কি একবারও বলতে পারতো না যে,
“মিহি আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
এরকমটা বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো??হঠাৎ করেই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল।কারেন্ট চলে গেছে।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।এর মধ্যে রিদিম ছাদে গিয়েছে।সত্যি মিহি বুঝতে পারে না এই মানুষটাকে। হঠাৎ পেটে কারোর হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠে মিহি।সামনে আয়নার দিকে তাকাতেই বাহিরে থেকে আসা আবছা আলোয় মিহি বুঝতে পারলো যে তার পিছনে রিদিম দাঁড়িয়ে আছে।রিদিম এভাবে জড়িয়ে ধরায় মিহি যেন বরফের মত জমে গেছে।রিদিমের উষ্ণ নিঃশ্বাস মিহির ঘাড়ে পড়ছে।মিহি একদম স্ট্যাচু হয়ে গেছে।সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।রিদিম মিহির ঘাড়ে ছোট্ট করে একটা চুমু খেলো।কেঁপে উঠলো মিহি।রিদিম মিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল।মিহি চোখ বন্ধ করে রেখেছে।রিদিম মিহির মুখটা কাছে নিয়ে এলো।মিহি চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে।রিদিম মিহির ঠোটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।রিদিম যেন মিহিতে হারিয়ে গেছে। রিদিম মিহিকে কোলে তুলে নিলো।আজ রাতটা নাহয় তাদের দুজনের ভালোবাসায় পূর্ণতা পাক।
______________________________________
জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের মিষ্টি আলো মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো মিহির।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।পাশে ফিরে একবার ঘুমন্ত রিদিমের দিকে তাকালো সে।ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা মায়াবি লাগছে তাকে।কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।ধীরে ধীরে মিহি উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে গেল।এরপর সে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।বেরিয়ে মিহি অবাক হয়ে গেল।রিদিম ঘরে নেই।মিহি বাহিরে গেল।পুরো বাড়ি খুজেও কোথাও রিদিমকে পেল না।রিদিমের গাড়িও নেই।তার মানে রিদিম চলে গেছে।কিন্তু তবুও একবার মিহিকে জানিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল রিদিমের।এই কথা ভাবতেই মিহির মনে একটু অভিমান হলো।
___________________________________
নদীর পাড়ে বসে আছে রিদিম।নিজের উপর নিজেরই ধিক্কার হচ্ছে রিদিমের।কাল রাতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি সে।মোহের বশে মিহিকে কাছে টেনে নিয়েছিল সে।কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে যে সে ভুল করেছে।এখন তার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে।তাই আজ সকালে মিহির মুখোমুখি হওয়ার আগেই বাড়ি থেকে চলে এসেছে।
রাত ১০টা,
কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে রিদিম।বাড়ি ফিরেই শুয়ে পড়েছে সে।মিহির কাছে রিদিমের ব্যবহার একটু অন্যরকম লাগছে।সেই সকালে না খেয়ে বেড়িয়েছিল আবার এখন এসে না খেয়েই শুয়ে পড়েছে।সারাদিনে কিছু খেয়েছে কিনা তা জানা নেই মিহির।
“খাওয়া-দাওয়া করবে না??”
মিহি রিদিমকে জিজ্ঞাসা করলো।
“খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”
রিদিমের উত্তর শুনে মিহির খুব রাগ হলো।মিহিও না খেয়ে শুয়ে পড়লো।মিহিও আজকে সারাদিন কিছু খায় নি।কারণ সে জানে না রিদিম খেয়েছে নাকি।দুজনেই সারাদিন না খাওয়া কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
______________________________________
এভাবেই দিন যাচ্ছে।তিনদিন চলে গেছে।রিদিম এখনও মিহির মুখোমুখি হয় না।মিহি ঘুম থেকে ওঠার আগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।আবার অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে।মিহির এসব খুব খারাপ লাগে।রিদিমও ভিতরে ভিতরে অসহ্যকর একটা পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।কিন্তু তা মিহিকে বুঝতে দিচ্ছে না।মিহি ঠিক করেছে আজকে সে এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।
রাত ১টা,
রিদিম কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি গিয়ে রিদিমের পিছে দাঁড়ালো।নিজের পিছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে রিদিম বুঝতে পারলো যে মিহি তার পিছে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু রিদিম কিছু বললো না।
“আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“বলো কি বলবে??”
“আপনি কি আমাকে ইগনোর করছেন??”
“ইগনোর করতে যাবো কেন??”
“তাহলে এরকম কেন করছেন??সকালে আমি উঠার আগেই বেড়িয়ে যান আবার রাত করে বাড়ি ফেরেন।”
“কাজের চাও বেশি তাই।”
“সত্যিই কি তাই??নাকি আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য??”
“তা কেন হতে যাবে??”
এবার মিহির প্রচুর রাগ হলো।মিহি এগিয়ে গিয়ে রিদিমের শার্টের কলার টেনে নিজের দিকে ঘুরালো।
“মজা পেয়েছেন আমাকে??একরাতে কাছে টেনে নেবেন।তারপর আমাকে ইগনোর করবেন।কি ভাবেন কি আমাকে??যদি ভালোই না বাসেন তাহলে সেদিন কাছে কেন টেনে নিলেন??আর…….”
মিহি আর কিছু বলবে তার আগেই রিদিম মিহির ঠোট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিল।
“তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।প্রথমত তোমাকে কেন কাছে টেনে নিয়েছিলাম??এর উত্তর তুমি নিজেই আমাকে করেছিলে।বাসার মধ্যে এভাবে যদি সেজে থাকো তাহলে কোনোমতেই নিজেকে কান্ট্রোল করা সম্ভব নয়।এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্ন।কেন তোমাকে ইগনোর করলাম??কারণ আমার নিজেরই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।কারণ মন থেকে কাছে টেনে নিই নি তাই।”
“তাহলে…”
“ওয়েট।আমার কথা শেষ হয় নি।তুমি এটাই তো জিজ্ঞাসা করবে যে আমি কেন কিছুক্ষণ আগে আবার কাছে টেনে নিলাম।তাই তো??”
“হুম।”
“তার কারণ এই তিনদিনে আমি প্রতিটক মুহুর্তে উপলব্ধি করেছি যে আমি তোমাকে মোহের বশে কাছে টেনে নিই নি।আমি ধীরে ধীরে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।হ্যা মিহি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
মিহি যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।এই কথাটা শোনার জন্য সে এতদিন অপেক্ষায় ছিল।আজ সে তা শুনতে পেল।মিহি হঠাৎ করেই রিদিমকে জড়িয়ে ধরলো।রিদিমও হালকা হেসে মিহিকে জড়িয়ে ধরলো।
চলবে………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে