আংটি পর্ব ৮

0
1259

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতেঃ-অনামিকা ভট্টাচার্য্য

আংটি পর্ব ৮

আজ উপমাকে দেখতে আসবেন অরণ্য আর ওর বাবা-মা।সব কটা রুম নিজের হাতে গুছিয়ে স্নানে যায় উপমা।তারপর রান্নাঘরে এসে মাকে একটু হেল্প করে।যদিও ওর মা বারবার না করছিলেন।তারপর নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়।ওর আজ একটু একটু টেনশন হচ্ছে।আবার ভালোও লাগছে।উপমা পরেছে সবুজ রঙের সিল্ক শাড়ী।আঁচলের সাথে মিলিয়ে খয়েরী ব্লাউজ।কানে স্বর্ণের দুল।গলায় সোনার চেইন।বাঁ হাতে ব্রেসলেট।ডান হাতে চুড়ি পরেছে।পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে দিয়েছে।চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে।ঠোঁটে মেরুণ রঙের লিপস্টিক।কপালে খয়েরী টিপ।সেজেগুজে নিজের রুমে বসে আছে।

উর্মিলা দেবী আজ মহাব্যস্ত।কাজের মহিলা সবকিছু কেটেকুটে দিচ্ছে।তিনি রান্না করছেন।উপমার বাবা বার বার জিজ্ঞেস করছেন বাজার থেকে আর কিছু আনতে হবে কি-না।আর একটু পরপর রান্নাঘরে গিয়ে উপমার মাকে তাড়া দিচ্ছেন।অতিথি আপ্যায়নে যেন কোন ত্রুটি না হয়।

কলিংবেলের শব্দ শুনে দৌড়ে গেলেন উত্তম বাবু।অতিথিরা এসে গিয়েছেন।ওদের অভ্যর্থনা জানিয়ে ড্রয়িংরুমে এনে বসান।অরণ্যরা ওদের রাজশাহীর বিখ্যাত ফজলি আম এক কার্টুন আর পাঁচ জাতের মিষ্টি নিয়ে আসছে।খাবারগুলো কাজের লোক ভিতরের রুমে নিয়ে যায়।অরণ্যের বাবা অরিন্দম চ্যাটার্জী ফুড অফিসে চাকরি করতেন।এখন রিটায়ার্ড করেছেন।মা রমিতা দেবী গৃহিণী।

একটু পর উর্মিলা দেবী কাজের মেয়ে সমেত নাশতা নিয়ে আসেন।টেবিলের ওপর ফলের জুস,ছানার মিষ্টি,ক্ষীরের সন্দেশ আর শিঙারার প্লেট রেখে বলেনঃ-

-এই সব নাশতা আমার মেয়ে উপমা ঘরে বানিয়েছে।এমনকি ফলের জুসটাও ও-ই ব্লেন্ড করেছে।

-সব খাবারই হোম মেইড।ফুড অফিসার বলে কথা!তাই আমরা আর বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসার রিস্ক নেই নি।
বললেন উপমার বাবা।এই কথা শুনে সবাই হাহাহা করে হেসে উঠলেন।

-আরে বাহ!প্রতিটা আইটেম খুব চমৎকার হয়েছে।
এবার মামণিকে নিয়ে আসুন।উর্মিলা দেবী বললেন।

একটু পর উপমা রুমে আসলো।সবাই কে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।মেয়েকে দেখে উনাদের খুব পছন্দ হলো।

-মামণি, আমাদেরকে কিন্তু একটা গান গেয়ে শুনাতে হবে।ড্রয়িংরুম ভর্তি তোমার মেডেল আর প্রাইজগুলো দেখে তো আমাদের গান শুনার লোভ বেড়ে গিয়েছে।

অরণ্যের মায়ের কথায় উপমা তানপুরা হাতে নিয়ে একটি নজরুলগীতি গেয়ে শুনালো।

মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর
নমো নম, নমো নম, নমো নম।
শ্রাবণ-মেঘে নাচে নটবর রমঝম, রমঝম, ঝমরম
(ঝমঝম, রমঝম, রমঝম)।।
শিয়রে বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু নীপ-সম, নিরুপম, মনোরম।।
মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনু ঢালি’ দেবতা মোর
হায় নিলে না সে ফুল, ছি ছি বেভুল,
নিলে তুলি’ খোঁপা খুলি’ কুসুম-ডোর।
স্বপনে কী যে কয়েছি তাই গিয়াছ চলি’
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায় প্রিয়তম, প্রিয়তম, প্রিয়তম।।

গান শেষে অরণ্যের বাবা বললেনঃ-

-এ মেয়ে তো দেখছি রূপে লক্ষী,গুণে সরস্বতী আর রন্ধনে অন্নপূর্ণা আপনি তো রত্নগর্ভা বেয়াইন সাব।তবে এমন রত্নটিকে আর বেশীদিন আপনাদের ঘরে ফেলে রাখবো না।খুব শীঘ্রই বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে হবে।

-আপনারাও কম কিসের?আমাদের অরণ্য বাবার মতো ছেলে লাখে একটা মিলে।আমরা সব খোঁজ খবর নিয়েছি।ওরকম ব্রিলিয়ান্ট,ভদ্র,নম্র,দায়িত্বশীল,পরোপকারী ছেলে এখনকার যুগে পাওয়া মুশকিল।উপমার মা বললেন।

-আজ থেকে আমাদের উভয় পক্ষেরই দুটো সন্তান হলো।আমরা পেলাম মেয়ে আর আপনারা পেলেন ছেলে।উর্মিলা দেবী বললেন।

অরণ্যের বাবা বললেনঃ-

-তবে আর শুভ কাজে দেরী কিসের?পুরোহিত মশাই দেখুন তো পঞ্জিকায় এ মাসে বিয়ের তারিখ কোনটা সবার প্রথমে আছে।সেটাই ফিক্সড করি তাহলে।

তার আগে মেয়েকে আশীর্বাদ করে নেই।একজোড়া কানের ঝুমকা দিয়ে উপমাকে আশীর্বাদ করলেন উনারা।উপমার বাবা-মাও সোনার চেইন দিয়ে অরণ্যকে আশীর্বাদ করলেন।

এবার অতিথিদের খাওয়ার পালা।ডাল,বেগুনী,রুই মাছ ভাজি,ইলিশের মাথা আর আলু দিয়ে মুড়িঘণ্ট,সর্ষে ইলিশ,পাবদা মাছের চচ্চড়ি,কৈ মাছে ঝোল,খাসির মাংস আর সবশেষে ঘরে পাতানো দই ও টমেটো চাটনি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হলো।

-অনেকদিন পর এমন ভুড়িভোজ করলাম বেয়াই মশাই।যাও তো মা।অরণ্য কে নিয়ে একটু ছাদে ঘুরে এসো তো।

উর্মিলা দেবীর কথায় উপমা অরণ্যকে নিজেদের ছাদে নিয়ে গেলো।এই প্রথম ওরা একটু একান্তে কথা বলার সুযোগ পেলো।

-ব্রেইন উইথ বিউটি।তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় উপমা।কি মিষ্টি দেখাচ্ছে তোমায় মাই বিউটি কুইন।

-তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে এই মেরুন রঙের পাঞ্জাবি তে।একেবারে জামাই জামাই ভাব।

-আহা!যা বললে।তোমাদের ছাদটা তো খুব সুন্দর।

নয়নতারা,অপরাজিতা,হিমচাঁপা,কুঞ্জলতা কতো জাতের ফুল।একপাশে একটা দোলনা ঝুলছে।উপমার ইচ্ছে হলেই এখানে বসে দোল খায়।পানির ট্যাংকির পাশে টাইলস দেয়া পাকা বেদী।উপমার বসার জায়গা এটা।

কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নেমে আসলো ওরা।একটু পর খুশীমনে
অতিথিরা বিদায় হলেন।

*************

বিয়ের আর মাত্র বারো দিন বাকি।দুই পরিবারেই উৎসবের আমেজ।চলছে বিয়ের জোর আয়োজন।অরণ্যদের বাড়ি নতুন করে রঙ করানো হচ্ছে।অরণ্য নিজের রুমের দেয়ালে উপমার পছন্দ অনুযায়ী পেইন্টিং করিয়েছে।দরজা জানালার পর্দা,বেডকভার,এমনকি ঘরের ফুলদানি পর্যন্ত উপমার পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়েছে।বিয়ের শপিং করতে অরণ্য ঢাকায় আসে।একসাথে দুজন মিলে শপিং করেছে।বিয়ের কার্ড ছাপতে দিয়েছে।এখন শুধু সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় আছেন সবাই।যবে দুজনার চার হাত এক হয়ে যাবে।

উর্মিলা দেবী বিয়েতে সবাই কে নিমন্ত্রণ করবেন।যারা এতোদিন ধরে উনার মেয়েকে নিয়ে কুকথা বলেছে আড়ালে আবডালে ওদের কেউ বাদ যাবে না নিমন্ত্রিত লিস্ট থেকে।একমাত্র মেয়ের বিয়ে খুব ঢালাও করে দিবেন তারা।উপমার বাবাও দু হাত ঢেলে খরচা করবেন মেয়ের বিয়েতে।

এতোকিছুর মাঝেও মেয়ের বাড়ি বলে কথা।মাঝে মাঝেই অন্তরে বিষাদের সুর বেজে উঠে। এ সুর যে কনে বিদায়ীর সুর।

এক একটা দিনকে যেন এক একটা বছর মনে হচ্ছে অরণ্যর।কবে ওর মন মানসী কে একান্ত নিজের করে পাবে সে।কতো স্বপ্ন সাজিয়েছে উপমাকে নিয়ে।বিয়ের পর অনেক জায়গায় ঘুরতে যাবে তারা।হানিমুনে যাবে সুইজারল্যান্ডে।নতুন সংসারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে দুটি প্রাণ।দেখা যাক এই স্বপ্ন কি আদৌ সত্যি হয়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে