আংটি পর্ব ৯

0
1034

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতেঃ- অনামিকা ভট্টাচার্য্য

আংটি পর্ব ৯

বিয়ের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী।আজ মঙ্গলবার।ঘোর অমাবস্যার রাত।সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় উর্মিলা দেবীর।উপমা,উপমা বলে চিৎকার করে উঠেন তিনি।পাশ থেকে উনার স্বামী উঠে লাইটের সুইচ অন করলেন।এক গ্লাস পানি খেতে দিলেন স্ত্রী কে।তারপর উপমাকে পাশের রুম থেকে ডেকে নিয়ে আসলেন।উপমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন ওর মা।তারপর কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বললেনঃ-

-উনি স্বপ্নে দেখেছেন এক ভয়ংকর ডাইনী বিশ্রীভাবে হাসছে আর বলছে তোর মেয়ে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বিধবা হবে আর প্রথম সন্তান প্রসবের সময়ই সন্তানসহ মারা যাবে।তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দে যদি ওর অমঙ্গল চাস।আর বাঁচতে চাইলে এ বিয়ে বন্ধ কর।আমার কথার অন্যথা হবে না।যারা আমার কথা না শুনেও বিয়েতে এগিয়েছিল প্রত্যেকের কোন না কোন ক্ষতি হয়েছে।তারপরই ওরা বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।তোর মেয়েকে বিয়ে করলে অরণ্যও বাঁচবে না।হাহাহা…….

এ স্বপ্ন দেখার পর তিনি মা হয়ে কি করে মেয়ের বিয়ে দেবেন।উত্তম বাবু এতোদিন কোনকিছু পাত্তা না দিলেও এবার তিনিও ভয় পেয়ে যান।উপমাও পুরো হকচকিয়ে গিয়েছে।ঠিক করা হয় আগামীকাল সকালে অরণ্যের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সবকিছু জানানো হবে।বাকি রাতটা উপমা বাবা-মায়ের কাছেই থেকে যায়।

পরদিন সকালে অরণ্যের বাবাকে কল দেয়ার আগে উনিই কল করেন।কল করে জানান অরণ্যের মা গতকাল রাতে সেইম স্বপ্ন দেখেছেন।একই সময়টা দুই জায়গায় থাকা দুটো মানুষ কি করে এক স্বপ্ন দেখতে পারে।ব্যাপারটা খুবই রহস্যজনক।এরপর থেকে অরণ্যের মাও ছেলের বিয়ে এখানে করাতে রাজি নন।কিন্তু অরণ্য এই বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছে না।তাই উভয় পরিবার মিলে ঠিক করেন তারা একত্রিত হয়ে একজন ভালো জ্যোতিষিকে দিয়ে উপমা আর অরণ্যের হাত দেখাবেন।

একটা নির্দিষ্ট দিনে একজন জ্যোতিষির কাছে যান তারা।জ্যোতিষি প্রথমে অরণ্যের হাত দেখে বলেনঃ-

-এই ছেলের মৃত্যু খুবই সন্নিকটে।তবে চিরকুমার থাকলে এই মৃত্যু আটকানো যেতে পারে।

উপমার হাত দেখে বলেনঃ-

-এই মেয়ের বৈধব্য যোগ আছে।

এরপর আর কেউ কোন কথা বলেন নি।যে যার বাসায় ফিরে আসেন।ঠিক হয় এই বিয়েটা বাতিল হয়ে যাবে।

দুই বাড়িতে সুনসান নীরবতা।বুকে পাথর চাপা দিয়ে আছে উপমা।ভাগ্যের পরিহাস বুঝি একেই বলে।কতো স্বপ্ন সাজিয়েছিলো দুজন মিলে।দুই পরিবারের আয়োজনের কোন কমতি ছিলো না।সেই স্বপ্ন এক দুঃস্বপ্নে ভেঙে গেলো।অরণ্য একদিন ফোন করে বললোঃ-

-উপমা,অনেক ভেবে দেখলাম জন্ম যখন হয়েছে তখন মৃত্যু তো অনিবার্য।তাই আফসোস রেখে একটা জনম কাটানোর চেয়ে ভালোবেসে মরে যাওয়া ভালো।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই উপমা।যদি তুমি রাজি থাকো তবে সবার অমতেই বিয়ে করবো আমরা।তাছাড়া কলেজ খুলার পর তো এমনিতেও আমাদের বাসায় থাকা হবে না।

-কিন্তু এটা করা কি ঠিক হবে?

-ভুল থেকে যদি ভালো কিছু হয়,হোক না তবে কিছু কিছু ভুল।আমার স্বপ্ন ভাঙার মরমর শব্দ কি তুমি শুনতে পাও না উপমা?তোমার হৃদয়ে কি এই বেদনার ঢেউ কম্পন তোলে না?

-শান্ত হও অরণ্য।আমি তোমাকে ভেবে জানাবো।

************

একদিন উপমার মা উপমাকে জানালেন আজ অরণ্য ওর বাবা-মাকে নিয়ে আসবে।উনি কিছু জরুরি কথা বলতে ওদের ডেকেছেন।তবে এটা বিয়ের ব্যাপারে নয়।উনারা আসতে সম্মত হয়েছেন।

সবাই একসাথে বসে আছেন।উপমার মা বলা শুরু করলেনঃ-

-বিয়ের দশ বছর পরও আমাদের কোন বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছিলো না।ডাক্তার, কবিরাজ কোনকিছুই বাদ রাখি নি।আমি তখন একটা সন্তানের আশায় প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছি।এমন সময় আমরা স্বপ্নে একজন সন্ন্যাসী বাবার খোঁজ পেলাম।গভীর জঙ্গলে বসে তিনি কঠিন তপস্যায় মগ্ন ছিলেন।আমরা স্বপ্নের নির্দেশমতো একদিন সেই জঙ্গলে গেলাম।সন্ন্যাসী বাবা আমাকে একটি ডালিম ফল খেতে দিলেন।আর বললেন এক বছরের ভেতর আমি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেবো।সাথে তিনি আমাকে একটি আংটি দিয়ে বললেন এই আংটিটা তোর মেয়ে প্রথম ঋতুবতী(প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হলে) হবার পর ওর বাঁ হাতের অনামিকায় পরিয়ে দেবে।এই আংটি ওকে সব বিপদ-আপদ থেকে দূরে রাখবে।আর এই আংটিই ওকে ওর সঠিক সঙ্গী খোঁজে দেবে।তবে মনে রাখিস আমার কথা কোনদিন কাউকে বলবি না বিশদভাবে।শুধু বলবে এক সাধু বাবা এই আংটি দিয়েছেন।তবে জীবনে যদি কখনো আবার আমার কাছে আসার খুব প্রয়োজন পরে তবে এই ব্যাপারটা অন্যদের শুনাতে পারিস।

এরপর আমরা বাসায় চলে আসি।এক বছর পর উপমার জন্ম হয়।এগারো বছর বয়সে ও প্রথম ঋতুবতী হয়।তারপর থেকে এই আংটিটা ওর হাতে আছে।এই আংটিটা উপমা ছাড়া আর কেউ কখনো খুলতে পারে নি।এমনকি আমিও না।উপমার কাছে যেদিন শুনলাম অরণ্য এই আংটি খুলতে পেরেছে সেদিন থেকেই অরণ্য কে আমরা উপমার জন্য পছন্দ করে রেখেছি।তারপর সব খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম অরণ্য সবদিক দিয়েই আমাদের উপমার যোগ্য।আমরাও তখন খুব খুশী হলাম।আপনারা বাসায় এসে যখন আমাদের মেয়েটাকে পছন্দ করলেন তখন আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলাম।

এতোটুকু শুনার পর অরণ্য ওর স্বপ্নে দেখা এই আংটি থেকে শুরু করে একে একে সব কথা সবাই কে বলে।অরণ্যের কথা শুনার পর সবাই মিলে আরো বেশি আশ্চর্য হয়ে যান।কিন্তু কেউই কোন সমাধান দিতে পারেন না।কি আছে ছেলেমেয়ে দুটের ভাগ্যে একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।বাবা মা হিসেবে ওদেরই বা কি করণীয়।

কিছুক্ষণ ভাবার পর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে করেই হোক উপমাদের ঠিক করা বিয়ের তারিখের আগেই ওই সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করতে হবে।একমাত্র উনিই এই রহস্যের জট খুলতে পারবেন।কথা হয় আগামীকালই উনারা সেই সন্ন্যাসী বাবার সন্ধানে বের হবেন।তাই আজকের রাতটা উপমাদের বাসায়ই থাকার অনুরোধ করা হয় অরণ্যদেরকে।কিন্তু রাত যেন কিছুতেই কাটছে না।কি দীর্ঘ এই রাত।ঘরে ঘরে প্রতিটা মানুষ জেগে আছেন।একটা নতুন সকালের আশায়।দেখা যাক আগামীকাল সকালের সূর্য কোনো আলোর দিশা দেখাতে পারে কি-না অরণ্য আর উপমার জীবনে।

#চলবে

#পরবর্তী_পর্ব
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/963860724044647/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে