অমানিশা পর্ব-০৭

0
174

ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ৭
(১৮+)

গোধূলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দ্রুত হেঁটে সোজা বড় রাস্তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এসময় ওদের পাড়ার লতিফ চাচা রিকশা থেকে নেমে গোধূলির সামনে দাঁড়ালেন। গোধূলির বুকটা ধক করে উঠল। ওর কেবল মনে হচ্ছে সবাই বুঝতে পারছে ও পালিয়ে যাচ্ছে। লতিফ চাচা গোধূলিকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

কি ব্যাপার গোধূলি মা, কোথায় যাচ্ছো?

গোধূলি আমতা আমতা করতে করতে বলল,

এইতো আঙ্কেল স্কুলে।

এখন‌ স্কুলে!

না মানে স্কুলে কোচিং করতে যাব।

ও,তা বাসায় সবাই ভালো আছে তো?

জ্বি সবাই ভালো আছে।

তুমি এই রিকশায় চলে যাও। এখন রিকশা পাবে না সহজে।

গোধূলি দ্বিধায় পড়ে গেল। সেতো যাবে নিউমার্কেট। এই রিকশায় গেলেতো চাচার সামনে বলতে হবে। রিকশাওয়ালা বলল,

আপা ওঠেন। কোন স্কুলে যাইবেন?

গোধূলি উঠে বসে বলল,

পি এন স্কুল।

রিকশা জোরে ছাড়তেই ও পেছনে ফিরে দেখল লতিফ চাচা চলে যাচ্ছেন।

ও রিকশা ওয়ালা কে বলল,

ভাই, স্কুল না, নিউমার্কেট চলেন।

রিকশাওয়ালার পেছনে ঘুরে বলল,
স্কুলে যাবেন না?

না,একটু নিউমার্কেট দরকার আছে। ওদিকে চলেন।

গোধূলির আবারও মনে হলো রিকশা ওয়ালা বুঝে ফেলেছে যে ও পালিয়ে যাচ্ছে।

নিউমার্কেট পৌঁছে গোধূলি ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল। চারপাশে খুঁজতে লাগল সাব্বিরকে। কোথাও দেখা যাচ্ছে না। একটা বড় কসমেটিক এর দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নাহ, সাব্বির কোথাও নেই। তবে কি ও আসবে না?

এমন হলে গোধূলি ফিরে যাবে।‌ আর মিনিট দশেক দেখে ও বাসায় চলে যাবে। মাতো এতক্ষণে টের পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই। যাই হোক, গিয়ে হয়তো একটু বকা খেতে হবে। ও বলবে যে কোচিং এ যেতে বের হয়েছিল।

এসব ভাবতে ভাবতেই সাব্বির কে দেখতে পেল। একটা সাদা রঙের কার থেকে বাইরে বের হয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশে খুঁজছে। গোধূলি এগিয়ে গেল।

তুমি কখন এসেছ?

এইতো দশ মিনিট হলো।

কোনো সমস্যা হয়নি তো?

না।

আচ্ছা উঠে বসো গাড়িতে।

গোধূলি গাড়িতে উঠে বসতেই সব টেনশন দূর হয়ে গেল। এতক্ষণ শুধু মনে হচ্ছিল কেউ বুঝি দেখে ফেলল। এখন নিশ্চিন্ত হয়ে গাড়ির ভেতরে বসল। সাব্বির উঠে ড্রাইভারকে বলল,

রেলস্টেশনে যাও।

গোধূলি বলল,

স্টেশন কেন?

আমরা চট্টগ্রাম যাব। ওখানে এক বন্ধুর বাড়িতে উঠব। সেখানে থেকে কক্সবাজার। একেবারেই হানিমুন সেরে আসব।

আর বিয়ে?

আরে পাগল বিয়ে করেতেইতো বন্ধুর ওখানে উঠব। তা না হলেতো সোজা কক্সবাজার চলে যেতাম। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না তাই না? মনে করছ তোমার সাথে সময় কাটিয়ে ধোকা দেব।

আরে না,এমন কিছু না।

ভয় পেওনা। আজ থেকে তুমি আমার বৌ।

একথা বলেই সাব্বির গোধূলিকে কাছে টেনে নিল। গোধূলির একটু অস্বস্তি লাগল। ড্রাইভার এর সামনেই গোধূলির শরীর অশ্লীল ভাবে ছুঁতে শুরু করল সাব্বির। লুকিং গ্লাসে ড্রাইভার আড়চোখে সব দেখল।

নাজমা গোসল শেষে বাইরে বের হবার জন্য দরজা খুলতে গেলে দরজা খুলল না। নাজমা দরজা ধরে ঝাঁকা ঝাঁকি করতে থাকলেন। নাহ দরজার আবার কি হলো। নাজমা এবার গোধূলিকে ডাকতে লাগলেন নাম ধরে,

ও গোধূলি, গোধূলি মা, দরজাটার কি হলো দেখতো মা। কোথায় যেন আটকে গেছে।

বেশ ক’বার ডাকার পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে নাজমা ভাবলেন গোধূলি হয়তো ছাদে গেছে। তিনি জোরে জোরে ধাক্কা দিলেন। প্রায় আধঘন্টা পরেও যখন কোনো সাড়া পেলেন না, তখন তার মাথায় এলো বিষয়টা। তিনি আঁচ করলেন কি ঘটেছে। সাথে সাথে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো নাজমার। জ্ঞান হারিয়ে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে গেলেন তিনি।

ট্রেনে উঠেও কেমন ভয় করতে লাগল গোধূলির। ওর শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি বাবা এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন,

কোথায় যাচ্ছিস গোধূলি, নাম বলছি এখুনি।

এসব ভাবতে ভাবতেই দেখল সাব্বির প্লাটফর্মে দাড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। ভীষণ ম্যানলি লাগছে ওকে। স্মোক করা ছেলেদের ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগে গোধূলির কাছে। সাব্বির ওর দিকে তাকিয়ে আছে। গোধূলির ভীষণ ভালো লাগছে। সব চিন্তা দূর হয়ে গেল মূহুর্তে। সাব্বির এগিয়ে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,

কিছু খাবে?

গোধূলি বলল,

নাহ,এখন ক্ষিধে নেই।

টেনশন হচ্ছে।

এখন আর হচ্ছে না।

আচ্ছা আমি আসছি।

সাব্বির চোখের আড়ালে চলে গেল। একটু পরেই হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন দুলে উঠল। গোধূলি জানালায় তাকিয়ে সাব্বিরকে খুঁজতে লাগল। ট্রেনের গতি বাড়ছে। কিন্তু সাব্বিরকে দেখতে পেলো না কোথাও। গোধূলির টেনশনে হাত ঘামতে শুরু করেছে। মাথার দু’পাশে দপদপ করছে। ট্রেন পুরোদমে চলতে শুরু করলে ও দাঁড়িয়ে পড়ল। প্লাটফর্ম পেরিয়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে ট্রেন। ঠিক এমন সময় সাব্বিরকে আসতে দেখে বসে পড়ল গোধূলি।
সাব্বির এসে বসল পাশে।

আপনি কোথায় গিয়েছিলেন। ট্রেন ছেড়ে দিল, আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
সাব্বির একটা জুসের বোতল ওর হাতে দিয়ে বলল,

আমাকে নিয়ে এখন থেকেই এত ভয় তোমার?

হবে না! আপনি দৌড়ে ট্রেনে উঠেছেন তাই না?

হুম।

যদি পড়ে যেতেন।

পড়ে গেলে মরে যেতাম।

এমন করে বলে কেউ!

কেনো,আমি মরলে তুমি কষ্ট পেতে?

গোধূলি মাথা নিচু করে বলে,

হুম।

সাব্বির মুখটা এগিয়ে এনে বলে
লজ্জা পেলে তোমায় অনেক সে*সি লাগে। ইশ! এখন মনে হচ্ছে বাই রোডে গেলেই ভালো হতো। একটু আগে খাওয়া সিগারেটের গন্ধ পায় গোধূলি। ওর ভালো লাগে গন্ধটা। সেইসাথে সাব্বিরের বুনো চাহুনি দেখে নেয় এক নজর।

গোধূলি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু ওর হাসিমুখ সাব্বির ঠিক দেখতে পায়।

চট্টগ্রামে যখন ওরা নামল তখন রাত প্রায় নয়টা। গোধূলির ক্ষিধে পেয়েছে। এই প্রথম চট্টগ্রাম এসেছে গোধূলি। সম্পূর্ণ অচেনা শহরে আধচেনা এক পুরুষের সাথে এসেও ভয় করছে না ওর। সাব্বির একটা সি এনজি ঠিক করল। ওরা এসে পৌঁছাল সাব্বিরের এক বন্ধুর বাসায়। ঠিক বাসা বললে ভুল হবে। ফ্লাট বাসাটার একটা রুমে ওর এক বন্ধু বৌসহ থাকে। আরেক পাশে দুইজন ব্যাচেলর থাকে মেসের মতো। পরিবেশটা কেমন হোটেল হোটেল।

সাব্বিরের বন্ধুর বৌ তনিমা এলো ওদের সাথে কথা বলতে। বয়স ২৪/২৫ হবে। ভীষণ মিষ্টি দেখতে। ছেলেপুলে নেই। একবছর হয় বিয়ে হয়েছে। বাসাটা ওরা নিয়ে দুই বন্ধুকে সাবলেট দিয়েছে।

সাব্বির ওদের আলাপ করিয়ে দিলে তনিমা গোধূলিকে তার ঘরে নিয়ে গেল। রুমে ঢুকেই বলল,

পালিয়ে এসেছো?

না মানে,,,

বুঝতে পেরেছি। তোমার বয়স কত মেয়ে? দেখেতো মনে হচ্ছে অনেক ছোট।

ক্লাস টেনে এবার।

এমা! মাত্র টেন।

জি।

মানিয়ে নিতে পারবে বরের সাথে?
বয়সের এতো ফারাক।

পারব।

আমারও লাভ ম্যারেজ। তবে পালাতে হয়নি। বাড়িতে প্রেসার দিয়েছিলাম ।পরে মা বাবাই বিয়ে দিয়েছেন। তবে তুমি কিন্তু ভারী সুন্দর ভাই। ছেলেদের কচি সুন্দরী মেয়ে হলে আর কিছু লাগে না। এমন বৌকে ওরা মাথায় তুলে রাখে। আমার তো ক্লাসমেটের সাথে বিয়ে হয়েছে। সমবয়সী বলে কদর কমতে সময় লাগেনি। কত কি যে করতে হয় বরের মন রাখতে।

গোধূলি বুঝল এই মহিলা একটু মুখপাতলা মানুষ। কোনো রাখঢাক করতে জানে না।

সাব্বির এসেই বাইরে গিয়েছে। গোধূলি ফ্রেশ হয়ে তনিমার সাথে কিছু সময় গল্প করল। সেসবের বেশিরভাগ আজকালকার প্রেম নিয়ে। ‌গোধূলিকে বলল,

বিয়ে হয়ে গেছে?

না এখনো হয়নি।

বলো কি! বিয়ে ছাড়াই চলে এলে? আজকাল কত কি হচ্ছে। আমার এক বান্ধবীর কি হয়েছে শুনবে? বিয়ের নাম করে ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে রাঙামাটি নিয়ে গিয়ে একটা রিসোর্টে তিনদিন তিনরাত থেকে ওকে রেখে উধাও হয়ে গেছে।

গোধূলির ভালো লাগছে না কথা বলতে। এই মহিলা তাকে ভয় দেখাচ্ছে। সাব্বির যে কখন আসবে। সাব্বির আসল দু’ঘন্টা পর। গোধূলি ভেতরের একটা রুমের বারান্দায় বসেছিল।‌ সাব্বির বিরিয়ানি কিনে এনেছে‌ সবার জন্য। তনিমা টেবিলে সাজিয়ে গোধূলিকে ডেকে আনল।

গোধূলি এসে দেখল টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে।‌ সাব্বির খাওয়া শুরু করেছে। ওকে রেখেই খেতে বসে গেছে সাব্বির। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল।

তনিমা ওকে ডেকে বলল,

এসো ভাই, খেয়ে নাও। তোমার বর আনিয়েছে বিরিয়ানি।

গোধূলি তনিমার পাশে বসে পড়ল।
রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেল। এতক্ষণ এসব নিয়ে অনেক কথা বললেও তনিমা গোধূলিকে নিজের ঘরে না রেখে ওদের দুইজনের জন্য আলাদা ঘর দিলো।

তনিমা ওর বরসহ ঘুমিয়ে পড়েছে। গোধূলি একটা ঘরে একা বসে আছে।‌ সাব্বির পাশের ঘরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। গোধূলিকে বলে গেছে একটু পরেই চলে আসব।
গোধূলি শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি। হঠাৎ ভারি কিছুর চাপে ওর ঘুম ভাঙল।

শরীরের ওপর হামলে পড়েছে একটা পুরুষ শরীর। অন্ধকারে ঠিক দেখা যাচ্ছে না। উৎকট গন্ধ আসছে মুখ থেকে। গো গো আওয়াজ বের হচ্ছে মুখ থেকে। গোধূলি ভয়ে বলে উঠল,

কে আপনি?

আমি সাব্বির। তোমার বর।

এমা কি করছেন এসব, ছাড়ুন।

তুমি তো আমার বৌ।

এখনো তো বিয়ে হয়নি।

কালকেই তো বিয়ে করছি আমরা। এমন করে না ডার্লিং।‌ সেই কখন থেকে তোমাকে আদর করার জন্য পাগল হয়ে আছি।

কাল এসব করবেন। আজ না।

আরে কি এমন ক্ষতি হবে। আজ, আজকেই হবে। কোনো কিছুই শুনতে চাই না। এতো সময় তোমার কাছে থেকে পাগল লাগছে আমার। তোমাকে চাই এখুনি।

কি খেয়েছেন আপনি?

ঐ ওরা জোর করে,,,,

গোধূলি ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু সাব্বিরের শক্তির সাথে পারলো না। আর কোনো উপায় নেই। আর তাছাড়া ওর এখন একটু একটু ভালো লাগছে। সাব্বির হয়ত নেশা করেছে। কেমন জড়ানো কন্ঠে কথা বলছে। শেষে গোধূলিও দুইহাতে সাব্বির কে আঁকড়ে ধরল। সাব্বির সর্বশক্তি দিয়ে গোধূলির শরীর নিয়ে খেলায় মেতে উঠল।

রাত্রি বাড়ি ফিরল পাঁচটার পরে। বাইরে টুকটাক কেনাকাটা ছিলো। তাই একটু দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে দেখল বাইরের দরজা খোলা। ও মাকে ডাকল,
মা মা, কোথায় গেলে।

কোনো সাড়া নাই। হাতের ব্যাগ রেখে ভাবল মা হয়তো পাশের কোনো বাড়িতে গেছে। কিন্তু এভাবে দরজা খুলে তো যায়না কখনো। রাত্রি মায়ের ঘরে উঁকি দিলো। এমন সময় গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল। বাথরুম থেকেই আসছে। রাত্রি জলদি গিয়ে দরজা খুলে দেখল নাজমা মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছেন।

রাত্রি চিৎকার করে উঠল,

তোমার কি হয়েছে মা? পড়ে গেলে কিভাবে!

রাত্রি মাকে ধরে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো।

নাজমা হাপাতে হাপাতে বলল
গোধূলি কোথায়?

আশেপাশে সব জায়গায় খোঁজা হলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না। গোধূলি কোচিং সেন্টারে, বন্ধুদের বাসায় কোথাও যায়নি।

তরফদার সাহেব বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে রইলেন ঝিম ধরে। কারো সাথে কোনো কথা বললেন না। দশটার দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলো ওনার। আধঘন্টা পর একপাশে কাত হয়ে পড়লেন। হাসপাতালে এডমিট করতে হলো। ডাক্তার জানালেন অতিরিক্ত টেনশনে স্ট্রোক করেছেন।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে