অমানিশা পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
271

ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
শেষ পর্ব

গোধূলি বাসায় এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। ভীষণ কান্নার দমকে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল ওর। সাব্বির এতো নীচ এটা ও ভাবতেও পারেনি। ওর সাথে এতো খারাপ আচরণ কিভাবে করতে পারল। ও ভেবেছিলো ওকে দেখে হয়তো ভয় পাবে। কৈফিয়ত দেবার চেষ্টা করবে। আর গোধূলী ওসব কিছুই শুনবে না এবার। ওর মুখোশ খুলে দিয়ে সরে আসবে। কিন্তু সাব্বির উলটো ওকেই ফাঁদে ফেলল। এখন কি করবে গোধূলী। বাড়িতে কিভাবে বলবে যে ওর ভালোবাসার মানুষটা ওকে এভাবে ঠকিয়েছে।

কিনে আনা বিষটা হাতে নিলো ও। এখুনি এই কলঙ্কিত জীবনটা শেষ করে দেবে ও। ঔষধটা নাকের কাছে আনতেই বমি চলে আসল। নাক চেপে ধরে মুখে নিয়ে নিলো কালো রঙের পাউডারটা।‌ সাথে সাথেই জিহ্বায় প্রচন্ড জলুনি শুরু হলো। সাথে উৎকট গন্ধে নাড়িভুঁড়ি উলটে আসতে লাগল। গোধূলি ছুটে বাথরুমে ঢুকে গেলো। বেসিনে দাঁড়িয়ে হরহর করে বমি করে ফেলল। জলদি করে পানি মুখে নিয়ে কুলি করে ফেলতে লাগল।

এটা কি করতে যাচ্ছিলো ও। আর একটু হলেই জীবনটা হারাতে বসেছিল। ভীষণ একটা ভয় আঁকড়ে ধরল ওকে। কিছুতেই মরতে পারবে না ও। সাব্বিরের মতো শয়তানের জন্য ও কেনো মরতে যাবে। বরং সাব্বিরের কাছ থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে সে চেষ্টাই করতে হবে ওকে।

মনে মনে ঠিক করল এখন কিছুদিন আপাতত চুপচাপ থাকবে ও। সাব্বিরের যেমন খুশি চলুক। ও আর এসব বিষয়ে নাক গলাতেও চায় না। যে ওকে রেখে অন্য কারো কাছে চলে গেছে তাকে নিজের করে রাখার কোনো ইচ্ছে নেই ওর। এখন শুধু সাব্বিরের কাছে থাকা ঐসব ছবি ভিডিও উদ্ধার করার চেষ্টা করবে ও।
সাব্বির বাড়ি ফিরল পরদিন। ফিরেই গোধূলীর ওপর চড়াও হলো।

তোর সাহস হলো‌ কিভাবে ঐ বাসায় যাওয়ার। আমার পেছনে গোয়েন্দা গিরি করার মজা বোঝাব আজ।

গোধূলিকে উলটা পালটা কিলঘুষি মারতে থাকল। গোধূলি দাঁতে দাঁত চেপে থাকল।

মারতে মারতে একসময় ক্লান্ত হয়ে সাব্বির ছেড়ে দিলো ওকে।

আর যদি কখনো এমন ভুল হয় তোকে খুন করে ফেলব।

গোধূলি বলল,

আর কখনও এমন হবে না।

রামিসার বাবা দেশের বাইরে থাকেন বছরের বেশিরভাগ সময়। গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। উনি থাকেন বারিধারার ফ্লাটে। স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ কয় বছর হলো। একমাত্র ছেলে দেশের বাইরে সেটেলড। এক বিদেশিকে বিয়ে করেছে। আর মেয়ে রামিসা সংসার করতে পারেনি। ওনার দেয়া একটা ফ্লাটে একাই থাকে। উনি বারিধারার এই বাসায় থাকতে বলেছিলেন।‌কিন্তু মেয়ে এখানে থাকতে চায় না। ওর একলা জীবন পছন্দ।

মেয়ে সম্পর্কে নানা কথা কানে আসে ওনার। কিন্তু ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে ছোটকালের মতো আর শাসন মানে না। পিতা-মাতার শাসনকে তখন তারা শেকল মনে করে। সারাজীবন তিনি টাকার পেছনে ছুটেছেন। সংসারের দিকে তাকানোর সময় হয়নি। অথচ এসব কিছুই তিনি করেছেন সন্তানদের জন্য। আজ সন্তানেরা নিজেদের মতো করে জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে কোনো তৃপ্তি নেই। সবার ছন্নছাড়া জীবন।

তার ছেলে কানাডাতে নিজের মত জীবন যাপন করছে। পরিবার থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলা চলে। মেয়েটা এখানে নিজের ইচ্ছায় চলাফেরা করছে।

তবে এতটা অধঃপতনে গেছে এটা তিনি ভাবেননি। মেয়েটা এডিক্টেড হয়ে গেছে। তার দেয়া টাকা-পয়সা বেহিসেবি উড়াচ্ছে নেশার পিছনে। আজেবাজে ছেলেদের সাথেও সময় কাটাচ্ছে। ফ্লাটে ছেলে নিয়ে থাকে। ওখানের কিছু পরিবার অভিযোগ দিয়েছে রামিসার নামে। ও নাকি এপার্টমেন্টে নোংরা কাজ কারবার করে।

তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়েকে কোনোরকম কোনো হাতখরচ দেবেন না। যা কিছু লাগে উনি কেনাকাটা করে দেবেন।টাকা না পেলে এসব করতে পারবে না আর।

বাবার এই সিদ্ধান্ত রামিসা ভীষণ খেপে গিয়েছে। বারিধারায় এসেছে বাবার সাথে কথা বলতে।

রামিসার বাবা নাশতা করছিলেন। রামিসা বলল,

তুমি আমার খরচ বন্ধ করেছো কেনো?

তুমি যা করে বেড়াচ্ছো তাতে তোমাকে টাকা দেয়াতো দূর, বাড়িতে বন্দি করে রাখাটাই ঠিক হবে।

আমাকে তুমি বন্দি করতে চাও। কেনো তোমার লাইফেতো আমি কোনো বাগড়া দেইনি। তুমি নিজের মতো করে চলছো। তোমার অবহেলার জন্য আমার মা চলে গেছে।

আজেবাজে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তোমার মা রোগেভুগে এই পৃথিবী ছেড়েছেন। আর দায়ী যদি কেউ হয় তবে সেটা তুমি। তোমার জন্য ভাবতে ভাবতেই অসুস্থ হয়েছিল রিমা।

সব মিথ্যা। নিজেকে বাঁচাতে তুমি এসব কথা বানানো বন্ধ করো। বিদেশ গিয়ে তুমি কি করো না করো কে দেখছে। আমি আমার মতো চলছি, তোমার কোনো সমস্যা তো করছি না।

মুখ সামলে কথা বলো রামিসা। আমি কি করি মানে! যত যাই বলো এখন থেকে আর একটা টাকাও তুমি পাবে না।

আমার সম্পত্তি আমাকে দিয়ে দাও। তোমার থেকে কোনো টাকা চাইবো না আর।

তোমার বলতে কিছু নেই। আমি যতদিন বেঁচে আছি সব আমার। আর তুমি যদি না শোধরাতে পারো তাহলে এমন ব্যবস্থা করতে বাধ্য হব যেন আমার মৃত্যুর পর এক কানা কড়িও তুমি না পাও।

হাতের কাছে একটা দামি শোপিস রাখা ছিল। ওটা আছড়ে ভেঙে ফেলল রামিসা। তারপর গালিগালাজ করতে করতে বের হয়ে এলো।

বেরিয়েই সাব্বিরকে কল করল।

তুমি কোথায়?

এইতো অফিসে।

এখুনি একবার দেখা করতে পারবা?

অফিসের পরে আসি?

না,এখুনি আসো।

আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।

সাব্বির অফিস থেকে বেরিয়ে রামিসার ঠিকানা দেয়া কফিশপটায় গেলো।

রামিসাকে খুব অস্থির লাগছে।

কি হয়েছে জান। কোনো সমস্যা?

হুম,বাবা টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সেকি,কেনো!

কে যে কি বলেছে। কিছুই বুঝলাম না।

আমার মনে হয় সব ঐ চয়ন হারামজাদার কাজ।

আমারও সেরকমই মনে হচ্ছে।

তোমার সাথে আমার সম্পর্ক সহ্য করতে পারছে না।

আচ্ছা বাদ দাও। ওকে পরে দেখে নেব। আপাতত হাজার পনেরো টাকা ম্যানেজ করো।

আমি?

হুম তুমি।

আমি হঠাৎ করে টাকা কোথায় পাব।

সেটা বললে হবে নাকি। এতদিন আমি তোমাকে চালিয়েছি। এখন আমার দিনকাল খারাপ যাচ্ছে আর তুমি এমন বললে হবে নাকি।

আচ্ছা আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।

এখন খাওয়াও কিছু। এখনো কিচ্ছু খাইনি।

সাব্বির অর্ডার দিতে গেল। রামিসা মেনুকার্ড নিয়ে নিজেই অর্ডার করল।

বিল দিতে গিয়ে সাব্বিরের পকেট ফাঁকা হয়ে গেলো।

সাব্বির একটু ঝামেলায় পড়ে গেলো। এখন রামিসাকে ওর চালাতে হলেতো তো বিপদ। ওর মতো মেয়ের যা খরচের হাত। সাব্বিরের পুরো মাসের স্যালারি এক নিমিষেই শেষ করে ফেলবে ও।

তবুও কয়টা দিন কষ্ট করে হলেও রামিসাকে খুশি রাখতেই হবে। বড়লোকের দুলালী।‌ বাবা ক’দিন আর টাকা না দিয়ে থাকতে পারবে। কিছুতেই ওকে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

বাসায় ফিরে সাব্বির গোধূলীকে ঘরে ডেকে নিয়ে কাছে টানল। ওর ঘাড়ে নাক ঘষে দিতে দিতে বলল,

তোমার কাছে বিশ হাজার টাকা হবে?

টাকা! আমার কাছে টাকা কোথায়।

প্লিজ একটু দেখো না। তুমি চাইলেই জোগাড় করতে পারবে।

আমি এক টাকাও দিতে পারবো না।

পারবে পারবে। তোমার ভিডিওগুলো অবশ্য ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।

কিসব বলছেন!

হুম,টাকা না দিলে ভিডিও সব তোমার পরিবার আর আত্মীয় স্বজনের ফোনে চলে যাবে।

আপনি এমন কিভাবে করছেন আমার সাথে। একটুও কি মায়া হয় না আমার জন্য। আমি সবাইকে ছেড়ে শুধু আপনার কথায় ঘর ছেড়েছি।

তাহলে বোঝো তুমি কতটা স্বার্থপর। অচেনা একটা ছেলের জন্য বাড়ির লোকদের ধোকা দিয়েছ। তোমার মতো মেয়েরা আসলেই স্বার্থপর। এই যে এতদিন ধরে আমার ঘাড়ে বসে খাচ্ছো তার খরচ কত কোনো ধারণা আছে? আমি এত কথা শুনতে চাইনা। আমার টাকাটা লাগবেই লাগবে। আর পুলিশের কাছে গিয়ে লাভ নেই। এইটা তখন অন্য কেউ ছড়িয়ে দেবে।

গোধূলি ভেবেছিল যা হবার হবে। চুপচাপ ভালো থাকার অভিনয় করে যাবে। এভাবে একদিন ওর ওসব ছবি,ভিডিও পেয়ে গেলে সরে যাবে। কিন্তু এ কোন নতুন বিপদে পড়ল ও। টাকা না দিলে সাব্বির ভিডিও ফাঁস করে দেবে। পুলিশের কাছে গেলে হয়ত ওকে ধরবে কিন্তু তার আগেইতো ওর ভিডিও সবার হাতে হাতে পৌঁছে যাবে।

মরতেও ভীষণ ভয় ওর। কিছুতেই মরতে পারবে না ও।

রাত্রি আপাকে কি সব খুলে বলবে। দেখা যাক আপা হয়ত কিছু একটা বুদ্ধি বের করতে পারবে।

পরদিন বাবার বাড়িতে গেল গোধূলী। আপা খুব সুন্দর একটা শাড়ি পরে বের হচ্ছে। আপা কত সুখী এখন। আর ও, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে।
কেমন একটা ইগো ঘিরে ধরল ওকে। সবার কাছে ছোট হবে কিভাবে! কিছুই বললো না ও আপাকে। উলটো টাকার কথা বলল,

আপা একটা কথা ছিলো।

এখুনি বলবি?

হুম। তোমার কাছে বিশ হাজার টাকা হবে?

হবে। কিন্তু টাকা দিয়ে কি করবি তুই। কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি।

গোধূলি বানিয়ে বলল,

আমি কোচিং এ ভর্তি হব। তার ফি লাগবে। সাব্বির পরে দিয়ে দেবে।

ও আচ্ছা। তুই থাক। আমি বিকেলে দেব।

গোধূলি হাফ ছেড়ে বাঁচল। তবে যেভাবেই হোক সাব্বিরের কাছে থাকা ওর ভিডিও পেতে হবে ওকে। নাহলে এভাবে দিনের পর দিন ওকে ব্লাকমেইল করতেই থাকবে সাব্বির।

রাতে সাব্বির টাকা পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। গোধূলিকে জড়িয়ে বলল,
যাক, এতদিনে মনে হচ্ছে তোমাকে বিয়ে করাটা বৃথা যায়নি। এমন লক্ষী থাকলে আর কি চাই। জীবনটা সুন্দর লাগে খুব।

আমি কিন্তু আর কোনো‌ টাকা দিতে পারবো না।

সেটা পরে দেখা যাবে।

সাব্বির তখুনি বেরিয়ে গেলো। রামিসার বাসায় গিয়ে ওর হাতে দশহাজার টাকা দিলো। রামিসা বলল,

মাত্র দশ!

হুম, আপাতত এটাই পেয়েছি।

ধূর,এটা দিয়ে কি হবে?

আরে আপাতত এটা দিয়ে চলি। আঙ্কেল কতদিন আর রাগ করে থাকবেন। ঠিকই আবার তোমাকে টাকা দেবেন।

রামিসা মুখে হুম বললেও ভীষণ বিরক্ত হলো। সাব্বিরের মুরোদ জানা হয়ে গেলো ওর। এই ছেলেকে দিয়ে চলবেনা সেটা বুঝে গেলো। তবে মুখে আর কিছু বললো না।

ঐদিন রামিসার বাড়িতে ইয়াবার আসর বসল। সারারাত দু’জন এনজয় করল।

এভাবে সময় কাটতে লাগল। গোধূলি সাব্বিরের ফোন থেকে ওর কোনো ভিডিও খুঁজে পায়না। ফোন লক করে রাখে সাব্বির। একদিন আড়চোখে লকের প্যাটার্ন দেখে ফোন আনলক করেও কিছু পায়নি। ওসব অন্য কোথাও রেখেছে হয়ত।

এদিকে দিন দিন রামিসা যোগাযোগ কমিয়ে দিলো।

এক নাইট ক্লাবে রামিসার সাথে পরিচয় হলো এক শিল্পপতির ছেলের, নাম পরাগ। রামিসা একা বসে ছিল। পরাগ এসে রামিসার সাথে আলাপ করল। ড্রিঙ্কস অফার করল। রামিসা মাতাল হয়ে গেলো। এক পর্যায়ে মাতাল রামিসাকে জড়িয়ে আলো আঁধারের মাঝে চুমু খেল পরাগ। রামিসা ওর ফাঁকা ফ্লাটে পরাগকে নিয়ে আসে। সারারাত উদ্দাম আনন্দ করে ওরা দু’জন।

সাব্বিরের সাথে যোগাযোগ একেবারেই কমিয়ে দিলো রামিসা।

সাব্বির এখন রামিসাকে যখন তখন ফোনে পায় না। ফোন করলেই বেশিরভাগ সময় রামিসা ফোন কেটে দেয়। রিসিভ করলেও বলে,

আজ দেখা করতে পারবো না। পরে জানাব।

সাব্বিরের কেমন একটু খটকা লাগে। রামিসা কি ওকে এভয়েড করছে। আরো দু’দিন একই ঘটনা ঘটার পর সাব্বির সোজা চলে যায় রামিসার ফ্লাটে। দাড়োয়ান বাঁধা দেয়। কিন্তু সাব্বির সোজা দৌড়ে ওপরে উঠে আসে।

বেল বাজাতেই দরজা খোলে রামিসা।

ঘরটা ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে আছে।

তুমি এখন?

কেনো,কি সমস্যা।

এভাবে না বলে চলে আসছ কেনো? আমিতো ডাকিনি তোমাকে।

কি আশ্চর্য! আমার তোমার এখানে আসতে অনুমতি লাগবে কেনো।

সাব্বির রামিসাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে পরাগকে দেখতে পেল। অর্ধনগ্ন হয়ে বেডে আধশোয়া হয়ে আছে।

সাব্বির বলল,
ও এই তাহলে কারণ। নতুন ভাতার।

মুখ সামলে কথা বলো।

ইউ ব্লাডি বিচ। কি মুখ সামলাব। তোর মতো মা*র সাথে আবার কিভাবে কথা বলতে হবে।

খবরদার যদি উলটা পালটা বকছো। ছোটলোক কোথাকার।

আমি ছোটলোক দাঁড়া দেখাচ্ছি এখুনি।

রামিসাকে রেগে গিয়ে ধাক্কা মারল সাব্বির।

ছিটকে গিয়ে কাঁচের টেবিলে মাথা লেগে অনেকটা কেটে গেল রামিসার। গলগল করে রক্ত বেরুতে থাকল। পরাগ উঠে এসে সাব্বিরকে ধরে ফেলল। ওর চিৎকার শুনে আশেপাশের ফ্লাট থেকেও লোকজন বেরিয়ে আসল। পরাগ চিৎকার করে বলতে থাকল,

কেউ একজন পুলিশ ডাকুন। এই লোক রামিসাকে খুন করেছে।

সাব্বির পালাতে পারলো না। পুলিশ এসে ওকে এরেস্ট করে নিয়ে গেলো।

গোধূলি যখন খবরটা পেলো তখন সোজা বাসায় চলে গেলো। এটাই সঠিক সময় । সব ইগো ভুলে রাত্রিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।

কি হয়েছে গোধূলী। কাঁদছিস কেনো?

গোধূলি রাত্রিকে সব খুলে বলল।
আয়ানসহ বোনকে নিয়ে থানায় গেল ওরা।

সাব্বির গোধূলীকে দেখেই কাঁদত থাকল।

গোধূলি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানতাম তুমি আমার এত বড় বিপদ জেনে ঠিক আসবে। আমাকে একটাবার বের করার ব্যবস্থা করো। আমি আর এসব করবো না।

গোধূলি বলল,

আমিতো এসেছিই আপনার এই বিপদের কথা জেনে। কিন্তু কি বলেনতো কর্মফল ভোগ করতেই হয়। আমি যেমন আমার কর্মের ফল ভোগ করেছি, আপনাকেও করতে হবে।

কি বলছো এসব। ঠিক আছে আমাকে যা শাস্তি হয় দিও। এখন আমার জন্য একটা উকিল ব্যবস্থা করো প্লিজ।

আপনার মা আপনার জন্য যা করার করবে। আমি শুধু আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার চাইতে এসেছি।

সাব্বির হুংকার করে উঠল,

আমাকে কি আজীবন আটকে রাখতে পারবে নাকি। বের হয়েই তোর ভিডিও ভাইরাল করে দেব।

হুম সেটা জানি বলেইতো এসেছি। যেন আমার ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ভবিষ্যতে কখনো আমাকে ব্লাকমেইল করতে না পারেন।

জেল হাজতে প্রকাশ্যে এই হুমকির কথা সবটাই রাত্রি ভিডিও করল আড়ালে থেকে। তারপর নারী নির্যাতন মামলা ঠুকে দিলো। সেইসাথে ব্লাকমেইল করে চাঁদাবাজির অপরাধের মামলা করল।

সাব্বির সবদিক থেকেই ফেঁসে গেলো। ওর মা উকিল ধরল কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে পারলো না। রামিসা বেঁচে গেলেও ওর বাবার করা এটেম টু মার্ডার মামলায় আর গোধূলীর করা আলাদা আলাদা মামলায় ওর সাজা হয়ে গেলো।

গোধূলি এই ভয়াবহ জীবন থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি বদলে গেছে। ও ওরসব ভুল বুঝতে পেরেছে। মা বোনের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আবার পড়াশোনা শুরু করেছে । রাত্রির সাথে আয়ানের ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে। রাত্রি শশুর বাড়িতে গেছে। গোধূলি দক্ষ হাতে সংসার আর মায়ের দেখাশোনা করছে সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। মা আর বোনকে কত কষ্ট দিয়েছে সেসব মনে হলে এখনও অপরাধী লাগে নিজেকে। তবে মায়া আর ভালোবাসা দিয়ে সেসব ভুল শুধরে নিয়েছে ও।

অমানিশা কেটে এক আলোকিত জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে গোধূলী।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে