অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৬

0
1312

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খোলার সময় খেয়াল করলাম জানালা তো লাগাতে ভুলে গেছি।
এদিকে দরজার লক খোলা অবস্থায়, তৎক্ষনাৎ ভাবী দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো। আমি চোখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে নজর করলাম, তাকিয়ে দেখলাম ইয়াজ ততক্ষণে জানালাটা বাইরে থেকে হালকা চাপিয়ে দিয়েছে।
ভাবী ভেতরে এসে বললো,
___ভেতরে কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কার সাথে কথা বলছিলে? নাকি কান্না করছিলে? এই ইয়াজ ছেলেটা যে কোথায় গিয়ে বসে আছে আল্লাহ জানে!

এইটুকু বলেই ভাবী জানালায় নজর করে আঙুল দিয়ে বললো,
___আরে এটা তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। কে খুললো?

এটা শুনে আমি চুপসে গেলাম। এখন ইয়াজ একেবারে ধরা! আমি তাকিয়ে বললাম,
___আসলে আমিই খুলেছিলাম!

ভাবী তাকিয়ে বললো,
___ইয়াজ আসছে কিনা দেখছিলে নাকি? বিন্দিয়া তোমার খুব খারাপ লাগছে?

বলতে বলতেই ভাবী জানালাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে অগ্রসর হচ্ছে। আমি আগ বাড়িয়ে তারাতাড়ি জানালার কাছে গিয়ে বললাম,
___আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।

ভাবী ওখানেই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
___ঘুমিয়ে যাও তুমি। সে আসলেও এখন আর ভেতরে আসতে দিওনা। আমিও ঘুমিয়ে যাচ্ছি।
এই যে নাও চাবি, রাতে দরজা একদম খুলবেনা। সকালে খুলবে বুঝেছো?

আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম। ভাবী আস্তে আস্তে চলে গেলো।
ভাবী নিজের রুমে যাওয়ার পরেই আমি জানালা খুলে এদিক ওদিক তাকালাম। আমাকে দেখে এবার সে উপরে না উঠেই জিজ্ঞাসা করলো,
___ইথিলা চলে গেছে?

___ হুম ঘুমাতে গেছে। আর চাবি আমার কাছে।

ইয়াজ অস্থির স্বরে বললো,
___তারাতাড়ি গেইট খুলো তাহলে।

আমি ঘাড় ফিরিয়ে বললাম,
___ নাহ খোলার অনুমতি নেই। সকালে আসবেন, শুভ রাত্রি!

ইয়াজ কোমরে হাত রেখে রেগে বললো,
___ ইথিলা বলেছে না খুলতে? আরে সে তো খোলার জন্যই চাবি তোমাকে দিয়ে গেছে, সকাল হলে তো সে নিজেই খুলতো। আচ্ছা বাদ দাও, বলো কিসের শাস্তি এগুলো? দেরি করেছি বলে?

আমি ঠোঁট বেঁকে বললাম,
___সবকিছুর একসাথে। ওই যে আপনার সাথে দেখা হওয়া প্রথমদিন থেকে শুরু এই পর্যন্ত যত অপমান করেছেন! আমি কিন্তু একটাও ভুলিনি। মনে আছে প্রথমবার আমার সাথে রিকশায় চড়ে কি বলেছিলেন? তো এখন আমার সাথে ঘুমাবেন কি করে? খারাপ লাগবেনা? তার চেয়ে বাইরেই থাকেন, প্রকৃতি দেখতে দেখতে, আশেপাশের ডাস্টবিনের সুগন্ধি শুঁকতে শুঁকতে রাতটা সুন্দর কেটে যাবে।
আমি না হয় এইসব সাজানো ফুলের গন্ধে একাই থাকি, হাঁ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে প্রিয় স্বামী। কাল দেখা হবে।

হাই তুলতে তুলতে জানালা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ বস একা একা হাসলাম। তারপর চাবি হাতে রুমের দরজা খোলে পা টিপে মেইন গেইটের দিকে গেলাম। গেইটটা আস্তে আস্তে খুলেই চমকে উঠলাম। ইয়াজ সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত বুকের উপর ভাঁজ করে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি একটু পিছিয়ে আসলাম। ইয়াজ হুড়মুড় করে এসে গেইট লাগিয়েই পেছন থেকে একটানে আমাকে কোলে তুলে ফেললো।
আমি চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
___কি হচ্ছে কি?

ইয়াজ কোন কথা শুনলোনা। সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
___এই মধ্যরাতে ছাদে কেন?

ইয়াজ বেরসিকভাবে বললো,
___তোমাকে সেখান থেকে একদম নিচে ফেলে দিবো। এতক্ষণ আমার সাথে ফাজলামো করছিলে সেটার শাস্তি!

আমি গলা জড়িয়ে ধরে মুখ বরাবর মুখ রেখে বললাম,
___ফেলে দিয়েন দেখবো কতো সাহস!

ইয়াজ চোখের তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
___হ্যাঁ ফেলবোই তো চিরদিনের জন্য, আমার প্রেমে! আর সাহস না থাকলে কি এভাবে বিয়ে করতে পারতাম?

আমি গলাটা আরো আঁকড়ে ধরে মৃদু হাসলাম।

সে আর দুই সিঁড়ি গিয়েই বললো,
___ এই চাবিওয়ালি, গেইট খুলো।

আমি একহাত দিয়ে ইশারা করলাম কোনটা চাবি, ইয়াজ দেখিয়ে দিলো। তারপর খুলে দিলাম। ইয়াজ দরজা টেনে খুলে আমাকে বললো,
___চোখ বন্ধ রাখো একটু।

কিছু জিজ্ঞাসা না করেই চোখ বন্ধ করলাম।
ইয়াজ আমাকে কোলে নিয়েই একটু এগিয়ে কিছু একটাতে বসায়ে বললো,
___চোখ খুলো এবার।

আমি চোখ খুলে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। পুরো ছাদের ঠিক মধ্যখানে ফুল দিয়ে বিশাল আসন পাতানো। যার একপ্রান্তে আমি বসে আছি। উপরে আকাশে তালার মতো বিরাট চাঁদ, সেটার কিরণে ঝলমল করছে চারপাশ।
আর আমার ঠিক সামনে ইয়াজ দু’হাতে এক ঝুড়ি ফুল উপরে ছড়িয়ে দিয়ে বলছে,
___আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি বিন্দিয়া!

আমি এক মূহুর্ত না বসে একটা দৌঁড় দিয়ে গিয়ে ইয়াজকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। কতক্ষণ চলে গেলো, জানিনা। কিন্তু হঠাৎই ইয়াজ আমাকে স্থির করে দাঁড় করালো,ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিলো।
আমি নিচু হয়ে সেটা তুলে দেখলাম সেখানে একটা লকেট ঝুলছে! কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললাম,
___এটা কি E এর মধ্যে B? দুটোই তো একসাথে বুঝা যাচ্ছে।

ইয়াজ আমাকে আবারও জড়িয়ে ধরলো, আর বললো,
___হ্যাঁ যেমন আমার মধ্যে তুমি আছো!

কিছুক্ষণ আবার নিরব। তারপর বলতে লাগলো,
___বিন্দিয়া এসব কিন্তু আমার বন্ধুরা করেছে। ওদের নিয়ে পার্টিসার্টি শেষ ছিল ৯ টার দিকেই। তারপর ওরা বসে এই প্ল্যান করে সব কিনলো আর ১১ টার পরে ছাদে উঠার জন্য আলাদা মই এনে পেছন দিক থেকে সব উপরে তুলে এসব করলো।কতো আস্তে আস্তে পা ফেলে এগুলো করতে হয়েছে জানো? নইলে ছাদের উপর ভূত আছে ভয়ে বাড়ির সবার কলিজা শুকিয়ে যেতো। আর এইজন্যই আসলে আমি তারাতাড়ি আসতে পারিনি। সরি!

আমি মাথা তুলে বললাম,
___মই এখনো পেছনে লাগানো নাই তো? আপনার বন্ধুরা কোথায়?

ইয়াজ হেসে বললো,
___আরে নাহ, সবাই চলে গেছে কবেই।

তারপর ইয়াজ কি ভেবে যেন আবার আস্তে আস্তে বললো,
___ আমাদের বিয়েটা এতো তারাতাড়ি হয়েছে যে স্বর্ণ কতটুক দিবে, কি দিবে কিছুই আগে বলেনি, সময়ই ছিল না। সবটাই আমার দোষ! তাছাড়া তোমার বাবাও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু হাতের আংটিটা বিয়েরদিন তারাহুরোর মধ্যে কিনে নিয়েছি। বিষয়টা খারাপ লাগছে খুব। সবকিছুরই তো একটা সামাজিকতা আছে তাইনা?

আমি কানে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললাম,

___এই যে মা দুলগুলো আজ পরিয়ে দিলো,আরেকটা আংটিও তো দিলো। আবার আপনি এখন এই এই লকেটসহ চেইন দিলেন। আমার জন্য সবকিছুই অপ্রত্যাশিত ছিল, এমনকি আপনার ভালোবাসাও! আমি ভাবিনি এতো সুন্দর একটা সময় আসবে আমার! আমি এমনিতেই খুব খুশি।

ইয়াজ মাথা নেড়ে বললো,
___উমম মা এই জন্যই বলতো তোকে কিছু দিবোনা,তোর বউকে দিবো! তাহলে শুধু ইথিলা আর বাবা বাকি আছে! আর আমার দেওয়া তো আজ থেকে আজীবন!

আমি ইয়াজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
___ কি বলছেন এসব? আমি কিছু চেয়েছি? আমার জীবনে আপনি থাকলে আমার আর কিচ্ছু চাইনা।
আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি!

সাথে একটা পূর্ণতার হাসি হেসে ইয়াজের কপাল জুড়ে ছুঁয়ে দিলাম ভালোবাসার স্পর্শ!
হ্যাঁ আমি পূর্ণ, একজীবন এখানে থেমে গেলেও আমি হাসতে হাসতে বলতে পারবো আমি আমার ভালোবাসার কাছে বিজয়ী!


পরেরদিন সকাল সকাল ভাবী এসে দরজায় নক করলো।
আমি দরজা খুলতে বললো,
___ইয়াজ কি রুমে আসেনি?

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
___হ্যাঁ আসেনি।

ভাবী রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ মুখ চেপে হাসলাম। তবে আমি মিথ্যে বলিনি। রাতে ইয়াজ সত্যিই রুমে আসেনি। আমি রুমে আসলেও সে ওইসব আয়োজনপত্র সরিয়ে আবার কোথাও চলে গেছে, বলেছিলো নাস্তার সময় আসবে। জানিনা সে কেন আমার কাছাকাছি আসার ব্যপারটা লুকাতে চাইছে। হতে পারে সবাই যা ভাবছে সে তাদেরকেও তাই বুঝাতে চাইছে, কিন্তু আমাকে বুঝাচ্ছে নাহ সবার ধারণা ভুল। সে তার বোনের ভালোবাসার জন্য আমাকে তারাতাড়ি বিয়ে করলেও তার মধ্যে প্রতিশোধের তাড়না নেই, সে নিজের ভালোবাসা এবং তার বোনের সুখে থাকা চায়।

৮ টার দিকে আমি আর আর ভাবী নাস্তা তৈরি করে সবাইকে খাবার দিয়ে শেষ করে তারপর নিজেরা খেতে বসলাম। ভাবী আমার বরাবর চেয়ারে বসেছে, আর আমি এমন একটা জায়গায় বসেছি এখান থেকে ভেতরে কেউ আসলে দেখবো কিন্তু ভাবী দেখতে চাইলে পেছনে তাকাতে হবে।
আমি খাবার সময় বললাম,
___আচ্ছা ভাবী ভাই কি তোমাকে বলেছে উনার কোনো প্রেমিকার কথা?

ভাবী খেতে খেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
___বলেছে সে আমার সাথে সংসার করতে পারবেনা, আমার প্রতি তার কোনো ভালোলাগা, ভালোবাসা,আকর্ষণ নেই। তার জীবনে অন্য কেউ আছে। তাই আমি নিজের জীবন নষ্ট না করে যেন নতুন করে জীবন সাজাই, আর তাকে ছেড়ে দেই। আমি খুব কষ্টে বলেছিলাম আপনি সেটা করেন, আমার দেনমোহরের টাকাও শোধ করে ফেলেছেন, এখন শুধু দুইতিনটা কথা বললেই বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। কিন্তু সে সেটা করবেনা, তাহলে নাকি তোমার বাবা তাকে জায়গা দিবেনা। এমনিতে তার দোষ দিয়ে হলেও যাতে আমি ছেড়ে দেই। শুধু এটা না, বলেছে এরপর আমি ওর বাড়ি গেলে আমার মুখ দেখার আগে সে নিজেকে শেষ করে দিবে,তাই এটা আমাকে করতেই হবে!

কথাগুলো বলতে বলতে ভাবী খাবারে শুধুই ঘাঁটছিলো,আর মুখে নিচ্ছিলোনা। আমি সেটা খেয়াল করে বললাম,
___বাদ দাও। আমার আনস্মার্ট, বুইড়া ভাইয়ের জন্য মন খারাপ করতে হবে না। খাও তো।

ভাবী না চাইতেও একটু হাসলো, আর আস্তে আস্তে খেতে লাগলো। এদিকে আমার খাওয়ার শেষ সময়ই দেখি পা টিপে ইয়াজ ভেতরে প্রবেশ করছে। এসেই আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে খাবার নিয়ে রুমে আসতে। তারপর চুপচাপ চলে গেলো রুমের দিকে।
আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
___আরেকটু খাবো, আমি রুমে গিয়ে খাই?

ভাবী অবাক চেহেরায় বললো
___ ওমা এখানে কি সমস্যা? আচ্ছা ঠিকাছে তোমার যেখানে ভালো লাগে।

তারপর ভাবী সন্দেহচোখে পেছনে আর সামনে একবার তাকালো। আমি সেটাকে খেয়াল না করে কয়েকটা রুটি তুলে নিলাম।
ভাবী রসিকতার সাথে হেসে বললো,
___ বিন্দিয়া, এই কয়দিন উপোস ছিলে নিশ্চয়ই? আহারে তাইতো মুখটা পুরো শুকিয়ে গেছে। নাও নাও আরো নিয়ে যাও। বেশি করে খেয়ে একদম মোটকু হয়ে যাবা। ইয়াজ ত্যাড়ামি করলে যাতে ধরে মাইর দিতে পারো।

আমি হাসতে হাসতে খাবার নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ইয়াজ সোজা হয়ে শুয়ে আছে। আমি খাবার রেখে বসলাম, আমাকে বসতে দেখেই উঠে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
___ ইথিলা আমার উপর বেশি রেগে আছে? কি মনে হয় সামনে পেলে মারতে শুরু করে দিবেনা তো?
বুঝতেছিনা ওর রাগ কমাতে কি করতে পারি, সামনে যাওয়ার উপযোগী অন্তত হতে হবে।

___আমি কি ডাকবো? তাহলেই তবে সামনে যাওয়া সম্ভব!

___ আরে না না, এভাবে না।

___তাহলে আর কীভাবে! আর শুনেন আজকে আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকজন আসবে আমাদের নিয়ে যেতে। দুপুরে যেখানেই থাকেন ফিরবেন কিন্তু।

___আচ্ছা তাহলে আমাকে তুমি নিজ হাতে খাইয়ে তারপর পেছন দিক দিয়ে পালাতে সাহায্য করবে, দুপুরে সময়মতো এসে একদম তোমাদের বাড়ি চলে যাবো, একদিন ওখানে থেকে ফিরলেই ইথিলা সব ভুলে যাবে।

আমি হেসে মাথাটা ঠেলে সরিয়ে তারপর খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে ওকে পেছনের দরজা খুলে দিলাম। যাওয়ার সময় সে গালে একটা চুমু খেয়ে এক দৌঁড়ে সেখান থেকে কোথায় উধাও হলো বুঝতেই পারলাম না।
সেখান থেকে চাবি হাতে ফিরতেই দেখি শাশুড়ী মা আমার সামনাসামনি।
দেখেই চাবিটা লুকিয়ে ফেললাম। মা কাছে এসে গালে হাত রেখে বললো,
___চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

তার উনি নিজের রুমে চলে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে ভাবলাম উনি হয়তো ভাবছে ইয়াজের জন্য এখানে সেখানে আনমনে দাঁড়িয়ে মনখারাপ করছি! আমিও আর কিছু না ভেবে রুমে আসলাম। দুপুরের দিকে আমার বাবা, চাচা,ফুফা,আরো কয়েকজন মুরব্বিরা এসে খাওয়া করলেন আর আমাদেরকে তৈরি হতে বললেন।
এদিকে ইয়াজকে ঘরে না দেখেই আমার বাবার মুখটা অন্ধকার হয়ে ছিল।
আমার রওয়ানা দিবো তখনও ইয়াজ নেই, বাবাসহ অন্যরা চলে গেলো, আর আমরা যে গাড়ী দিয়ে যাবো সেটা অপেক্ষা করছে। আমি সবকিছু নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সে কখন আসবে!
অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরে হঠাৎ দেখলাম ইয়াজ দূর থেকে গাড়ী এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদেরকে ডাকছে। ইথিলা ভাবী এমনি বের হয়ে গেছিলো,তাই সামনে আর এগুতে পারলোনা। কিন্তু বুঝতে পারছে ইয়াজ ভয়ে সামনে আসছেনা। ভাবী হেসে বললো, কয়দিন পালাবে চান্দু, এরপর আসুক!
আমি হেসে দিলাম, আর বিদায় নিয়ে উঠে গাড়ীতে বসলাম। গাড়ী একটু এগুলো, সামনে গিয়ে ইয়াজকে তুলে ছেড়ে দিলো।

আমি ইয়াজের মাথায় দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম,
___এতো দেরি কেন?

ইয়াজ আমার হাতে ধরে অসহায় চোখ করে চুপ করে রইলো। বুঝলাম না ওর চুপ করে থাকার মানে কি। তখনি আস্তে আস্তে বললো,
___তোমার ভাই তোমার সামনে যদি কষ্ট পায়, তোমার কি বেশি খারাপ লাগবে?

আমি এমন প্রশ্নের জবাব কি দিবো বুঝতে পারলাম না। নিরব ছিলাম, এতে হয়তো ইয়াজ উত্তরটাও বুঝে নিয়েছে।

আমাদের বাড়িতে পৌঁছাতেই দেখি আজ এখানে জামাই দেখার ভীড়। ইয়াজের বাড়িতে ছিল বউ দেখার ভীড় আর আমার বাড়িতে জামাই দেখার। সবার কাছে বিষয়টা আশ্চর্যজনক লাগছে বোধহয়। এদিকে নতুন জামাই গাড়ী থেকে নেমে সবাইকে সালাম দিতে দিতে ইয়াজ হাঁফিয়ে উঠলো। এতো মানুষ, মুরব্বিরা দাঁড়িয়ে আছে যে সে সামনে যেতে পারছিলোনা। শেষ পর্যন্ত বলে উঠলো,
___বাবা গো বাবা এতো মানুষ এই বাড়িতে কখন ছিল? আমার সমন্ধীকে ডাকো কেউ, উনার পায়ে ধরে সালাম করতে চাই।

এই খবর কেউ একজন ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিলো, আমিও ভাইয়াকে ডাকতে ভেতরে যেতে চাইলাম, কিন্তু দেখি ভাই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে তারাহুরো করে কোথাও যাচ্ছে,
___আমি এগিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে বললাম, তোমাদের জামাই সালাম জানাতে ডাকছে!

ভাই পরিশ্রান্ত হয়ে আমাকে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করেই বললো,
___আমি একদিনের জন্য মা’র বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি। আর যাওয়ার জায়গা নেই, জামাইয়ের যা লাগে বাবা ম্যনেজ করবে। যাই আমি হ্যাঁ!

তখন ইয়াজ সামনে দিয়ে এসে পেছনে গেলো,আর ভাইয়ের কাঁধ চাপড়ে ধরলো। কাঁধে কেউ চেপে বসলে মানুষ যেমনভাবে চোখ গোলা বের করে হাঁ হয়ে যায়, তেমন করে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে