অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৫

0
1247

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৫ম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

আমি মাথা তুলে ইয়াজের গালে একটা হাত রেখে খুশিতে আবারও কেঁদে ফেললাম।
ইয়াজ এবার ধমকের স্বরে বললো,
___এই এই কি হচ্ছে? এখনো কাঁদছো কেন? আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি আমাকে বিয়ে করে খুশি হওনি?

এটা শুনে আমি ইয়াজের চোখ বরাবর তাকালাম। আর কেঁদে কেঁদে ভেঙে যাওয়া ক্ষীণ গলায় বললাম,
___ ভালোবাসলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন কেন এই কান্নাটা?

সাথে সাথে ইয়াজ খুব কাছে আসলো, আর আমার কানের পাশে এলো হয়ে যাওয়া চুল আর গালে হাত রাখলো, নাকে নাক ঘঁষে ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
___অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছিনা বিন্দিয়া, ছুঁয়ে অনূভব করি!

আমি ওর গলাটা আরো শক্ত আঁকড়ে ধরলাম, ঠোঁটজোড়া কাঁপছে! ইয়াজের কথার বলার সময় তার ঠোঁটের স্পর্শ আমার গালে উপর মৃদু ঠেকছে,চোখ বন্ধ করে ওর নিঃশ্বাসে খুঁজে পাচ্ছিলাম অনূভুতির মহাসাগর! আমি বুঝতে পারছিলাম গাল বেয়ে আসা জলগুলো ইয়াজের ঠোঁটের স্পর্শে থেমে গেছে, এই মূহুর্তের সার্থকতার প্রবাহমান জলের সাথে সে মুছে দিয়েছে বিষাক্ত সেই কয়দিনের বাজে অনূভুতিদেরও! তারপর আমাকে বুকে জড়িয়ে বললো,
___যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, তুমি আমাকে বুঝবে তো বিন্দিয়া? তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমায় আজীবন আগলে রাখবে তো? কখনো ছেড়ে যাবেনা বলো?

আমি আলতো হেসে বললাম,
___কখনোই না। শুধু একটু ভরসা হয়ে পাশে থাকবেন, আমি আজীবন আপনার জন্য লড়ে যাবো!

ইয়াজ মাথার উপরে একটা চুমু খেলো। আর আস্তে আস্তে বললো,
___আমরা এসে পড়েছি প্রায়। ঠিকঠাক হয়ে বসো।

আমি চোখে তুলে দেখলাম আসলেই এসে পড়েছি। ভাইয়ার বিয়ের সময় যেই রাস্তাটা মাটির ছিল সেটাও এখন সরো ইটের পাকা রাস্তা। গাড়ী একদম বাড়ি পর্যন্ত গেলো।
দেখলাম অনেক মানুষ দাঁড়ানো, ছোট বড় সবাই হয়তো বউ দেখতে এসেছে। অনেক দূর থেকেও মানুষ এটা দেখতে এসেছে যে ইয়াজের বোনের ছাড়াছাড়ির পরেও তার ভাই করে সেই ছেলের বোনকেই বিয়ে করে আনলো। তাও এভাবে হুট করে! অবশ্য এই ব্যপারটা রটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
গাড়ী থামার সাথে সাথে ইয়াজ নেমে গেলো। ইথিলা ভাবী হাত বাড়িয়ে আমাকে নামতে সাহায্য করলো।
আমার দিকে একটু তাকিয়েই ইয়াজকে বললো,
___কিরে ভাই এতো কান্না করেছে মেয়েটা, চোখ দুটো ফুলে কি অবস্থা, তুমি দেখোনি?

ইয়াজ হাত দিয়ে হাই তুলতে তুলতে জোরে বললো,
___ তোহ আমার কি হয়েছে? এসব দেখার সময় আছে নাকি? কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিল বলে কাঁদছে, ইচ্ছে হলে আরো কাঁদবে। কাঁদতেই তো আসছে তাইনা? আর এই যে আপনারা এতজন দেখতে আসছেন, ভালো করে দেখে যাবেন। কয়দিন পরে আর নাও দেখতে পারেন!

উপস্থিত সবাই মুখে হাত দিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে গুমগুম করে কানাকানি শুরু করে দিছে। ইথিলা ভাবী আমার দিকে ১০ সেকেন্ড একনাগাড়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
কাঁদতে কাঁদতে বললো,
___বিন্দিয়া আমি তোমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতেছি মনে হয়, তুমি আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও প্লিজ!

আমি প্রতিত্তোরে কিছুই বললাম না। উনি আমাকে ছেড়ে হাত ধরে আস্তে আস্তে ভেতরে নিয়ে বসালো। একেক করে সবাই দেখে গেলো, আর চুপিচুপি অনেক ধরনের কথা বলতে লাগলো। আমি স্পষ্ট না শুনলেও এটা ধারণা করতে পারছি সবাই বলছে, এই ছেলে ইয়াজ তার বোনের জন্য খুব পাগল, সে প্রতিশোধ নিতেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করছে,দেখে নিও দুইদিন পরে ছেড়ে দিবে।
এইধরনের কোনো কথাকে আমি পরোয়া করছিলাম না। কারণ আমি ইতোমধ্যে জানি ইয়াজের উদ্দেশ্য কি! শুধু সবার আড়ালে এদিক ওদিক ইয়াজকে খুঁজছিলাম।
আস্তে আস্তে মানুষের ভীড় কমতে লাগলো। আর আমি স্বাভাবিক হতে লাগলাম। এদিকে আমি এই বাড়িতে কাকে কি ডাকবো তা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ে গেছি। এক বছর ধরে যা ডেকে আসছি তা কি করে বদলাবো বুঝতে পারছিলাম না। তার মধ্যে ভাবী আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলো, আর আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলো। ভীষণ খিদে ছিল, এতক্ষণ লজ্জায় চাইতে পারছিলাম না। খাবার আনার সাথে সাথে হাতমুখ ধুয়ে কোনো শঙ্কা ছাড়াই খেতে শুরু করলাম, খাবারের শেষ দিকে বললাম,
___ ভাবী ভীষণ খিদে আমার, আরো অল্প আনো না?

কেন জানি আমার কথায় ভাবীর চোখ কেমন ছলছল করছিলো। তাও তিনি অভিমান কাতুরে হয়ে বললেন,
___আমাকে আর ভাবী বলোনা। আমি আর তোমার ভাবী হইনা৷ সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন থেকে আমাকে আপু ডাকবে ৷

আমি মুখ পর্যন্ত খাবারটা নিয়েও হাতটা নিচু করে গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
___তুমি ভাবী, এখনো ভাবী। কারণ তোমাদের বিচ্ছেদ হয়নি। এই ডিভোর্সও হয়নি। আমি দেখেছি তোমাদের কাবিননামায় এমন কোনো উল্লেখ ছিল না যে তুমি আমার ভাইকে কোনো রকম সমস্যা হলে ছাড়তে পারবে। বিয়ের সময় কাবিননামায় মেয়েদের এই চুক্তি না দেওয়া হলে তারা ছাড়তে পারেনা। এরপরও যদি আমার ভাই খারাপ কিংবা অবাধ্য হয়ে থাকে তাহলে সেটার জন্য মুরব্বিদের, কিংবা পরিবারের লোকদের জানিয়ে তাকে বুঝিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত, এরপর না মানলে কিংবা বেশি অত্যাচার করলে সে ক্ষেত্রে সবার সিদ্ধান্তে তার সাথে খোলাখুলি তালাকের কার্য সম্পন্ন করা উচিত। কিন্তু তুমি তো এমনটা করো নি, আর মন থেকেও এই বিচ্ছেদ চাওনি। তাহলে কি করে তুমি বলছো তুমি আমার ভাবী হওনা?

ভাবী খাবারের বাটিটা হাতে নিয়ে বললো,
___বিচ্ছেদ কিভাবে হয় কিংবা হয়না সেটা খুঁজে কি লাভ বলো? তোমার ভাই তো আর চায়না।

তারপর আর কিছু না বলেই ভাবী চলে গেলো খাবার আনতে। দুই মিনিটের মধ্যেই এসে আমার সামনে রাখলো আর ধিরে ধিরে বললো,
___বিন্দিয়া তোমার ভাই এতো রাতে যে ফিরে, খেয়ে ঘুমায় তো? নিজে নিজে খাবার বেড়ে খাওয়ার অভ্যাস তো তার মধ্যে কখনোই ছিল না। আর সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য কে ডেকে দেয়?

কথাগুলো বলতে ভাবীর গলা কাঁপছিলো। কথা শেষে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ভিজে উঠা চোখ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলো।

কিন্তু আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
___ভাই এখন আর দেরি করে ফিরেনা। সন্ধ্যার পরেই বাসায় এসে শুয়ে থাকে, আর আমি ভাইয়ার রুম ঝাড়ু দিতে কিংবা খাবারের জন্য ডাকতে গেলে দেখি আনমনে কোনো একদিকে তাকিয়ে বসে আছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। এই কয়দিনে উনার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

ভাবী জোর করে মুখে একটা হাসি টেনে বললো,
___বাহ তাহলে তো ভালোই।

তারপর আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বাকি খাওয়া শেষ করলাম। তখন দরজায় কেউ নক করছিলো। ভাবী খাবারের সরঞ্জাম একপাশে রেখে আমাকে বললো,
___ ফ্রেশ হয়ে একটু সাজগোজ করো, বউদের এমন শুকনো মলিন মুখে মানায়না৷

বলেই ভাবী দরজা খুলতে গেলো। আর আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলাম। কথার ধরনে বুঝলাম আবার একদল বউ দেখতে এসেছে।

ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পরে ভাবীর কথামতো একটু সাজগোজ করে বসলাম। অপেক্ষমাণ বউ দেখা জনগণ এসে দেখে গেলো। তারা যাওয়ার পরেই ইয়াজের মা হাতে একটা বক্স নিয়ে আমার পাশে বসলো। মাথায় হাত রেখে বললো,

___ তুমি যখন তোমার মা বাবার সাথে আমার মেয়ের বিয়ের তারিখে এসেছিলে, তখনি তোমার নম্রমুখের হাস্যজ্জ্বল চেহেরাটা আমাকে টেনেছিলো। কেন জানিনা অদ্ভুত একটা ভাবনা এসেছিলো আমার ইয়াজের জন্য যদি এমন একটা মেয়ে পেতাম! সত্যি সত্যি সেটার বাস্তব ধারণা পেলাম, ইথিলার বিয়ের কয়েকমাস পরেই সে আমাকে বলেছিলো ইয়াজ তোমাকে পছন্দ করে। আর তুমি তো জানোই গতবার তোমার শ্বশুরবাবার পেনশনের টাকায় উনি আর আমি হজ্জ্বে গিয়েছিলাম। সময় ইয়াজ বাদে সবার জন্যই আমি দামী গিফট এনেছিলাম। সারা জীবনের সঞ্চয় সেবার শেষ করে এসেছি, ইয়াজের জন্য আনিনি কারণ তার বউয়ের জন্য এনেছিলাম। কেনার সময়ই তোমার মুখটা আমার চোখে ভাসছিল। এই যে দেখো এই দুলজোড়া আর এই হাতের রিংটা। আজকে বিয়ের আয়োজনের সাথে দেইনি কারণ এটা শুধুই আমার তরফ থেকে তোমার জন্য। তাই চেয়েছি আমার বাড়িতে আসলে আমিই তোমাকে পরিয়ে দিবো।

আমি মুগ্ধ হয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। উনাকে ভীষণ গম্ভীর আর রাগী বলেই এতদিন ধারণা ছিল। কারণ উনি সবসময় কম কথা বলেন। কিন্তু আজকে উনার এই ভালোবাসা আমার খুশির ফোয়ারার বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন!
তারপর তিনি আমার কানে পরে রাখা দুল খুলে উনার ভালোবাসার চিহ্নটা লাগিয়ে দিলেন। হাতের মধ্যমা আঙুলে পরিয়ে দিলেন আংটিটা।
তারপর মাথায় হাত রেখে কপালে চুমু খেলেন। আর বললেন,
___ জানিনা তোমার ভাগ্যে কি আছে, আর ভাগ্য বদলানোর সাধ্যিও আমাদের কারোর নেই। কিন্তু আমার পাগল ছেলেকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় হয়, আমি ছোট বেলা থেকে ওর বোনের জন্য এতো এতো পাগলামি দেখে এসেছি। আজকে ওর বোনের জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়ার পরে তোমাকে এভাবে বিয়ে করার বিষয়টা মাথায় খেলছেনা। সে তোমাকে এড়িয়ে গেলেও তুমি কষ্ট পেওনা মা!

আমি হেসে বললাম,
___ মা আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি সবকিছু সামলে নিবো।

এইটুকু বলেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। কি করে মা ডেকে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। তাই বুঝি লোকে বলে নিজের মা জন্মের পরে লালন পালন করার এক বছরে মা ডাক শুনে, আর শাশুড়ীরা শুনে একদিনে!

তিনি ইথিলা ভাবীকে বললেন আমাকে ইয়াজের রুমে নিয়ে যেতে। তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হতে যাবেন তখনি উনার ফোনে রিং বেজে ওঠলো। পেছনে তাকিয়ে বললো,
___বিন্দিয়ার বাবা ফোন দিয়েছে।

ইথিলা ভাবী এগিয়ে বললো,
___ইয়াজ তোমার ফোন ফেরত দিয়েছে? কিন্তু আমারটা দেয়নি। কতো বড় বেয়াদব।

আমার শাশুড়ী ফোন আমার হাতে দিয়ে বললেন,
___নাও কথা বলো।

আমি ফোন কানে দিতেই শুনলাম বাবার কান্নাস্বর। বাবা বলতেছে,
___বিন্দিয়া মা, ওরা বলছে ইয়াজ নাকি বাড়ির বাইরে থেকেই তোকে ছেড়ে দেওয়ার উল্লেখ দিয়েছে। বাদলের কাছে এমন অনেক কথা ওখানকার মানুষরা বলতেছে? বাদল ভীষণ অস্থির আচরণ করছে, সত্যিই কিছু হয়নি তো?

আমি ভাবী আর আমার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
___বাবা তুমি চিন্তা করো না। সব ঠিক আছে।

বাবা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কে কেমন আছে, খেয়েছি কিনা এসব জিজ্ঞাসা করে ফোন রাখলো।

ইথিলা ভাবী আমাকে ইয়াজের রুমের দিকে নিতে নিতে বললো,
___ একটা মজার ব্যপার কি জানো? ইয়াজের রুমে এই প্রথম অন্য কেউ তার সাথে রুম শেয়ার করবে। এই বাড়ি বানানোর পরে ওর রুমে ওর কোনো বন্ধু পর্যন্ত থাকার সুযোগ পায়নি। সারাঘর জুড়ে ওর যতো আজগুবি যন্ত্রপাতি আর বই ছড়িয়ে থাকতো। এবার তার বউ থাকবে। তাও যাকে সে আগে আসার পরেও তার রুমে একবারও যেতে দেয়নি।

ভাবী কথাগুলো বলে বলে হাসছে, উনার হাসির সাথে আমিও হাসছি। এখানে আসার পরে এখন একটু হাসতে দেখলাম।

রুমে গিয়ে ভাবছিলাম অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক হবে । কিন্তু সেটা ছিল না, এটা পরিপূর্ণ সাজানো। ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
___এসব কে করলো আর কখন করলো?

ভাবী হেসে বললো,
___আমি করেছি সারাদিনে। সাজিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম। জামাই কাছে কিংবা দূরে থাকুক,বিয়েররাতে ঘর সাজানো কিন্তু অত্যাবশ্যক, হাহহাহাহাহা!

ভাবীর সাথেও আমিও হাহাহা শব্দ করেই হাসলাম। এই হাসিটা ভাবীর মুখে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য। বেশিরভাগই উনি হাঁ করে জোরে শব্দ করে হাসেন।

কিন্তু রুমে গিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন,
___এগারোটা বাজে ইয়াজ তো বাসার বাইরে থাকেনা। আজকে এখনো আসেনি মানে!

___চিন্তা করো না চলে আসবে।

অনেক্ষণ কথাবার্তা বললাম। হঠাৎ ভাবী বললো, পৌনে একটা বাজে, কোথায় আছে সে! তুমি বসো তো আমি দেখছি। বলেই ভাবী বের হয়ে গেলো। ভাবী যাওয়ার পরে আমারও অদ্ভুত একটা ভয় লাগছে। সত্যিই সে কোথায়? গাড়ী থেকে নেমে কোথায় গিয়েছিল, এসে খেয়েছিল কিনা আর এখনি বা কোথায় আছে ইয়াজ?
বিয়ের রাতে আমার ভাইও অনেক রাতে বাসায় এসেছিল, সে কি সেটাই করতে যাচ্ছে?
না না উল্টা পাল্টা কিছু ভাব্বোনা। ইয়াজ এমন করবেনা!

রুমের মধ্যেই এদিক ওদিক পায়চারী করছিলাম। তখনই একটা ঠকঠক আওয়াজ হলো, আমি দরজা খোলে দেখলাম কেউ নেই। দরজা বন্ধ করার সময়ও শুনলাম আবার সেই আওয়াজ। তারপর দরজা খোলা অবস্থায় রাখলাম। হ্যাঁ তখনও আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছি। আমি এবার জানালার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে সেদিকে এগুলাম। জানালার কপাটের দ্বারে গিয়ে কান পাতলাম। তখন আবারও আওয়াজ করলো, আমি আস্তে আস্তে বললাম,
___কে?

ফিসফিস করে আওয়াজ আসলো,
___জানালাটা একটু খুলো, আমি তোমার বর!

আমার ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠলো। আমি সেটা বুঝতে না দিয়ে বললাম,
___ আমার বর হলে তো ভেতরে থাকার কথা। আপনি নিশ্চয়ই চোর ডাকাত। না না বাবা আমি জানালা খুলবোনা, আমার শরীরে অনেক গয়নাগাটি, আপনি এগুলো নিয়ে পালিয়ে যাবেন আমি বুঝে গেছি, ভালো ভালো চলে যান নইলে চিৎকার করবো।

এটা বলে আমি মুখ চেপে হাসি থামিয়ে রাখলাম। ইয়াজ অস্থির গলায় বলছে,
___বিশ্বাস করো আমি ইয়াজ। খুলেই দেখোনা! আর ওই দরজায় ইথিলা বসে আছে, আমি গেলে এখন কানমলা খাবো। শুনো, আম্মু ঘুমিয়ে গেছে,তুমি আস্তে আস্তে আম্মুর রুম থেকে চাবিগুলো নিয়ে আসো, আর পেছনের দরজাটা খুলে দাও। প্লিজ বিন্দিয়া।

আমি হাসি থামিয়ে বললাম,
___ এ খোদা কি সাংঘাতিক আজকালকার চোররা, কণ্ঠও নকল করতে জানে। পুরো বাড়ি ছিনতাই করতে চাবি পর্যন্ত চায়! এই আপনি চলে যান তো, আমার স্বামী আমার পাশেই আছে। নাহলে লোক জড়ো করতে বাধ্য হবো!

ইয়াজ এবার জোরে জোরে বললো,
___ঠিকাছে চলে যাচ্ছি…

আমি এবার জানালার একটা পার্ট খুলতে চাইলাম, সাথে সাথে টান দিয়ে দুটো পার্ট খুলে ইয়াজ আমার বামহাত চেপে ধরলো। তাকে দেখে বুঝলাম সে উঁচু কিছুর উপরে দাঁড়িয়ে আছে। নইলে একতলা হলেও এভাবে জানালা পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়ানো সহজ ছিল না।
ইয়াজ রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
___কোথায় তোমার স্বামী, তোমার সঙ্গে না আছে!

আমি ডান হাতের নখ কামড়ে লজ্জা নিয়ে বললাম,
___এই যে আমার সামনে, আমার হাত ধরে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে!

ইয়াজ হাত দিয়ে আমার গলায় ধরে জানালার গ্রিল পর্যন্ত টেনে এনে বললো,
___ আমি চোর?

___হ্যাঁ আপনি মনচোর!

___তাহলে যা বলছি তাই করো, চাবিটা এনে আমাকে ভেতরে আনো।

___না আনবোনা, এত দেরি করে আসলেন কেন?

___এখানে দাঁড়িয়ে আজকের মতো এমন রাতটা পার করতে হবে?

___আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন।

___ উফফ বিন্দিয়া আমি এটা কেন চাইবো, আমাকে বন্ধুরা আসতে দিচ্ছিলোনা। হঠাৎ বিয়ে করছি,দাওয়াত দেইনি তাই এখন ওদের জন্য পার্টি দিতে হয়েছে। খুব কষ্টে এসেছি, প্লিজ দরজাটা খুলো বউ!

আমি ভেংচি কেটে বললাম,
___ সামনের দরজা দিয়ে আসুন। আমি পারবোনা।

___ তুমি পারবেনা?

___না বললাম তো!

ইয়াজ আমার মুখটা এবার আরো কাছে টেনে ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইবে তখনি দরজার বাইরে থেকে ভাবী আওয়াজ করে বললো,

___ এই বিন্দিয়া দরজা লক করলে কেন?

আমি তারাহুরো করে সরে গেলাম। ইয়াজও হুড়মুড় করে নামতে নামতে লাগলো।
আমি দরজার খুলতে গিয়েই খেয়াল করলাম জানালা লাগাইনি!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে