অপূর্ণতা পর্ব-৬+৭

0
1327

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৬_৭

অদ্রিতার চুপ করে থাকাতে আরিয়ানের রাগ আরও বেড়ে গেল।তাই রাগে আবারও চিৎকার করে বলে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো? আন্সার মি,,, ডেমেট!

আরিয়ানের কথাগুলো শুনে সে অনেক কষ্ট পেল।তার চোখে পানি এসে গেছে। তার এখন মন চাচ্ছে চিৎকার করে কান্না করতে ।কান্না করলে হয়তো একটু হালকা লাগতো কিন্তু তাও করতে পারছে না।বুকের ভিতরটা ভারী হয়ে আছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। নিজেকে সে কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছে না।সে ভাবতেই পারেনি বিয়ের প্রথম রাতেই এমন একটি পরিস্থিতিতে পরতে হবে তাকে।সে ভেবেছিল এখন থেকে তার জীবন নতুন করে শুরু হবে কিন্তু সে ভাবতেই পারেনি তার জীবন নতুন করে শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে।বিয়ে তো এমন একজনের সাথে হয়েছে যে তাকে সহ্যই করতে পারে না।সে ভেবেছে এখন হয়তো তার জীবনে পূর্ণতার ছোঁয়া পাবে কিন্তু যার জীবন #অপূর্ণতা দিয়ে ঘেরা সে কি এত সহজেই জীবনে পূর্ণতা খোঁজে পায়! আরিয়ানকে কিছু না বলেই সে নিজের ঘোমতা খুলে তার দিকে তাকায়।

এই প্রথম অদ্রিতাকে আমি এত কাছ থেকে দেখছি।এর আগে তো তাকে এতকাছ থেকে ভালো করে দেখা হয়নি।তার দিকে তাকিয়ে যেন মুগ্ধ হলাম।সে ফর্সা না হলে কি হবে দেখতে অনেক সুন্দর, অনেকটা মায়াবী চেহারা।চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া, নাকটা একদমই পারফেক্ট, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। দেখতে অসাধারণ লাগছে। এমন নয় যে বিয়ের জন্য মুখে অনেক মেকাপ দেওয়া আজকাল যেমন দেয় আরকি চিনাই যায় না। তেমন না মুখে গায়ের রঙের সাথে মিলিয়ে হালকা মেকাপ দেওয়া।তাতেই তাকে ভালো লাগছে। শুধু গায়ের রঙটা কালো না হয়ে ফর্সা হলেই আমার মনের মতো হতো।শুধু এর জন্যই আমি তাকে মেনে নিতে পারবো না।তার চোখের দিকে তাকাতেই দেখি চোখে পানি এসে গেছে যে কোন মুহূর্তেই যেন তা অশ্রু হয়ে ঝড়ে পরবে।তাকে দেখে এখন আমার নিজেরই খারাপ লাগছে বিয়ের প্রথম রাতেই এই ভাবে এতো গুলো কথা বলা হয়তো ঠিক হয়নি।হয়তো আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছি।তার অশ্রু ভেজা চোখদুটো দেখে নিজের মনের ভিতরে অল্প অপরাধবোধ জাগ্ররত হলো।

এতক্ষনে অদ্রিতা কথা বলা শুরু করলো। অদ্রিতার কথা বলাতে আরিয়ানের ধ্যান ভাঙে সে তো এতক্ষন তার দিকেই তাকিয়ে ছিল একধ্যানে।এই কথাটা ভাবতেই তার রাগ হচ্ছে। এমন একটি কাজ সে কি করে করতে পারে এখন অদ্রিতা তার সম্পর্কে কি ভাববে।

অদ্রিতা এইসব কিছুই খেয়াল করেনি তার তো শুধু আরিয়ানের কথা গুলোই মনে আছে। এতক্ষন যে আরিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে ছিল তাও সে খেয়াল করেনি।তাই সে আরিয়ানকে বললো,,,,

আপনি আমার স্বামী আমাকে আপনি যা খুশি বলতে পারেন।কিন্তু আমার পরিবার অনেক ভালো তাদেরকে আপনি কিছু বলবেন না।তাদের কোন দোষ নেই। আমার সাথে কথা বলে আপনার বাবা আমাকে পছন্দ করেছেন।আমার বাবা তো বলেছেন আমার মেয়ে কালো আপনার ছেলের হয়তো তাকে পছন্দ হবে না।ওকে এই পর্যন্ত অনেকেই পছন্দ হয়নি বলে না করে চলে গেছে।আপনি একবার সবকিছু ভেবে নিন।এত তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। আমরা না হয় আপনার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবো।ওনী বলেছেন ওনার আর কিছু ভাবার নাই সব কিছু ভেবেই তিনি হ্যা করছেন। তাই আমার পরিবারকে কিছু বলবেন না।তাদের কোন দোষ নেই।যা বলার আমাকে বলেন।

অদ্রিতার কথা শুনে আরিয়ানের আবারও রাগ হয় সে রাগে একটু চিল্লিয়েই বলে হ্যাঁ,ঠিক বলছো দোষ তাদের থাকতে যাবে কেন? দোষ তো আমার কপালের।যে তোমার মতো কালো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হলো।এইটা কোনো সিনেমা না। এইটা বাস্তব। আর আমার পক্ষে তোমাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব না।আমাকে আর ডাকবে না।কখনোই আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবে না।আর হে আর একটি কথা আমাদের দুইজন ছাড়া অন্য কেউ যাতে এই কথা না জানে। তাদের সামনে সামনে এমন অভিনয় করবে যাতে মনে হয় আমাদের মাঝে সব কিছু স্বাভাবিক আছে।যা বলছি সবকিছু যাতে মনে থাকে।
এই বলে আমি আবার ওই পাশে ফিরে শুয়ে পরলাম।

অদ্রিতাকে এতকিছু শুনানোর পরেও রাগটা সম্পূর্ণ যায়নি কিন্তু একটু হালকা লাগছে।এখন মনে হচ্ছে রাতে একটু ঘুমাতে পারবো।

আরিয়ান ওই পাশে ফিরে ঘুমিয়ে পরে কিন্তু অদ্রিতার চোখে কোন ঘুম নেই।বিয়ের প্রথম রাতেই সে অঝোরে কান্না করছে।নিজের হাত তুলে দেখছে সে কতটা কালো। আজ এই রঙের জন্যই তো আমি আমার অধিকার, সুখ সবকিছু থেকে বঞ্চিত। মানুষ সুন্দরের পূজারি। ফর্সা গায়ের রং সবার পছন্দ। সবাই সুন্দর মানুষ খুঁজে কিন্তু ভালো মনের মানুষ কেউ চায় না।সবার কাছে এখন মানুষের বাহিরের চাকচিক্য, আধুনিকতা, স্মার্টনেস এই সবই মূখ্য বিষয়। তার মন-মানসিকতা, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ এই সব কেউ দেখে না।কালো হওয়াটাকি এতটাই খারাপ আমাকে ভালোবাসা যায় না।যে আমাকে মানুষ বলে মূল্যায়ন করা যায় না! যে আমাকে সামান্য সম্মান করা যায় না!আমি তো ইচ্ছে করে আর কালো হইনি তবে কেন সবাই এই রঙের জন্য আমাকে এভাবে অপমান করে? কেন সবাই এইটা বুঝতে চায় না আমিও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, অন্য সব মানুষের মতো আমারও কষ্ট হয়। আমারও মন আছে। এই সব ভাবতে সে এভাবেই অনেকক্ষন বসে থাকে। আর নিরবে কান্না করে।একটু পরে সে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে নামাজে গিয়ে দাঁড়ায়।নামাজ পরলে হয়তো মন শান্ত হবে এইভেবে। মোনাজাতে অনেকক্ষন কান্না করে। আল্লাহর কাছে নালিশ করে কেন তাকে এতটা কালো বানিয়েছে।কি এমন ক্ষতি হতো যদি তাকে আরো একটু সুন্দর করে বানাতো। তখন তো তাকে বিয়ের রাতেই নিজের স্বামীর কাছে আর এইভাবে অপমানিত হতে হত না। সেও অন্য সবার মতো নিজের স্বামীর ভালোবাসা পেত। নিজের অধিকার পেত। আল্লাহর কাছে নিজের মনের কথা বলে এখন তার নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।তার মন এখন অনেকটা ফ্রেস লাগছে।সত্যিই নামাজ সকল বিষন্নতা কাটানোর জন্য যথেষ্ট।

নামাজ পরা শেষ হলে সে আরিয়ানের দিকে তাকায়। ফর্সা টান টান মুখ,সিল্কি চুল, ফিটফাট বডি। খুব সুন্দর লাগছে।আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর আর হয়তো আপনি ঠিক বলছেন আপনার সাথে আমাকে মানায় না।আপনার সাথে তো একজন সুন্দরী মেয়েকেই মানায়।আজ আমার জায়গায় একটি সুন্দরী মেয়ে হলে অবশ্যই আপনি রাগ করে থাকতেন না।আমার জন্যই হয়তো আপনার সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই সে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পরে।রাতে কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়েছে না খেয়াল নেই।সকালে ফজরের আজানের সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পরে নেয়।

সকালের হালকা রোদের আলোয় ঘুমতা ভেঙে যায়। রাতের সব কথা মনে পরে।সব কিছুকেই নিজের কপাল ভেবে মেনে নেই।বিয়ের প্রথম রাতেই নিজের বউকে কাছে টানটে পারি নি আর হয়তো কখনোই পারবো না।কত ইচ্ছে ছিল বিয়ের রাতে নতুন বউকে নিয়ে ছাদে জোছনা বিলাশ করবো। দুই জনে একসাথে বসে হাতের উপর হাত রেখে বসে বসে গল্প করবো।সারারাত তার মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিবো। তাকে নিজের মনের সব কথা বলবো কিন্তু তা আর কিছুতেই সম্ভব নয়।এই সব ভাবতে ভাবতেই সে অন্য দিকে তাকায়।আর ঐ দিকে তাকিয়ে তো সে পুরোই অবাক!

এইটা কি কোন সত্যি নাকি কোনো কল্পনা।নাকি ঘুমের ঘোরে আছি বলে এমনটা মনে হচ্ছে!এ আমি কাকে দেখছি!
.
.
.
চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে