অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১০

0
1153

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১০ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আজ অন্তরিক্ষে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি দুপুরের সময় হলেও এখন এই কালো মেঘের ভেলার জন্য এখন সন্ধ্যা নামছে মনে হচ্ছে। চারিদিকে নির্ঝুম বৃষ্টি আসার আগমুহূর্ত। বাতাসের তীব্রতা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে গাছপালা সব লন্ডভন্ড। পাখিগুলো ডানা ঝাপটে নিড়ে ফিরছে। সেদিন ওমন ভাবে কথাগুলো বলে জারা চলে আসছিলো আর পিছু ফিরে চাই নি শান অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিল জারার দিকে জারা। আর কিছু আলাদাভাবে বলে নি সেদিনের পর জারাও শানকে যতসম্ভব এড়িয়ে চলছিল শানকে আর অপমান করার সুযোগ দেয় নি। বাসার সব আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে। জারা আজ বাসা থেকে বের হবার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগটাই সে কাজে লাগাতে চাই এরপর আর আব্দেও সুযোগ হবে কি-না কে জানে।

জারা বাসা থেকে অনেক দূরে সাথে আছে ফেন্ড সার্কেল। জারার আগের কথা ভাবলে হাসি পায় আগে ফেন্ডদের জন্য কত মন খারাপ কত কান্নাকাটি আর এখন ভাগ্য করে ক’টা ফেন্ড পাইছে। সাত বছরের ফেন্ডশিপ তাদের কলেজ ফেন্ড তারা কলেজে উঠেই সকলের সাথে দেখা হয়েছে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্বতা গভীর হয়েছে। এই ক’বছরে কত মান-অভিমান, ঝগড়া, মারামারি করেছে তবুও কেউ ছেড়ে যায় নি। সবাই আলাদাভাবে নিয়ে পড়াশোনা করলেও দিনশেষে সকলে একটা সময় বের করে নিয়েছে নিজেদের মতো সময় কাটানোর জন্য। জারাকে নিজের এখন লাকি মনে হয় ওদেরকে পেয়ে। জারার সম্পর্কে A to Z সব কিছু জানে। জারাও ওদের থেকে কিছু লুকাই নি। জারাকে ওরাই বদলে দিয়েছে ওরাই সাহস জুগিয়েছে।

জারা এদিক ওদিক হেঁটে হেঁটে ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছে না হাটতে হাটতে কিছু দূর চলে এলো এখানে যা একটু নেটওয়ার্ক পাচ্ছে। সাথে সাথে কল দিলে শান্তির কাছে শান্তি তখন দুপুরে সকলের খাবার বেরে দিচ্ছে ইশা আর শানকে আজ অফিস থেকে আসলাম সাহেব বাসায় আসেনি। শান্তি ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে বলল

-‘ হ্যালো জারা কোথায় তুই দুপুর হয়ে গেলো এখনো বাসায় আসলি না কেনো? ‘

-‘ মনি শুনো না আ……. ‘

বলে থেমে গেলো ওপাশ থেকে জারার কন্ঠ ভেসে আসলো

-‘ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি হচ্ছে পালক এসব এখানে এটা তোদের বেড রুম নায় পাবলিক প্লেস আর তোরা ওফ্ফ কন্ট্রোল করতে শেখ ‘

পলক বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুচকে বলল

-‘ তুই এইহানে কোথা থেইক্কা টপকাইলি যা ভাগ এনতে আমি আমার বউয়ের লগে রোমাঞ্চ করি তাও তোগো এতো সমস্যা সবসময় আমাদের রোমাঞ্চের ১২ বাজায় দেওয়ার জন্য তোরা তো আছিস ‘

প্রীতি লজ্জায় লাল হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো জারা সবটা দেখে ভেংচি কেটে বলল

-‘ হুহ্ যাইতাছি তোগো প্রিত দেখার কোনো ইচ্ছা বা শখ কোনোটাই নেই ‘

জারা অন্য দিকে গিয়ে ফোন কানে দিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি কিছু শুনো নি তো? ‘

শান্তি হেসে বলল

-‘ না আমি কিছু শুনি নাই তুই নিশ্চিতে থাক ‘

পাশ থেকে ইশা বলল

-‘ আমি কিন্তু অনেক কিছু শুনছি ‘

-‘ হ্যা তুমি তো পাজির হাড্ডি তুমি তো শুনবাই ‘

-‘ এভাবে বলতে পারলে আপু তুমি যাও তোমার সাথে কথা নাই ‘

-‘ আচ্ছা যা কথা বলতে হবে না শুনো না মনি আজ না আমি বাসায় ফিরতে পারবো না কাল ও ফিরতে পারবো কি-না সন্দেহ আমি তোমাকে একজ্যাক্ট টাইম বলতে পারছি না ‘

শান্তির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

-‘ আচ্ছা খাইছিস কিছু? ‘

-‘ না একটু পরে খাবো তোমরা খেয়ে নাও আমার জন্য অপেক্ষায় থেকো না ‘

-‘ আমার চিন্তা হয় তুই সাবধানে থাকিস নিজের খেয়াল রাখিস তোদের সাথে রুহান আছে তো? ‘

-‘ হ্যাঁ আছে মনি তুমি এতো টেনশন করো না প্লিজ ‘

-‘ আপু তারাতাড়ি বাসায় এতো আমি তোমার থেকে গল্প শুনবো কিন্তু ‘

-‘ শুনিস এখন রাখছি আর শুনো আমাকে যদি ফোনে না পাও তাহলে টেনশন করার দরকার নাই এখানে নেটওয়ার্ক নাই আবার আমার ফোনের চার্জ ও তেমন নাই ‘

-‘ আচ্ছা তুই সাবধানে থাকিস রাখছি ‘

জারা ফোন রেখে দিলো। এতোক্ষণ শান চুপচাপ সব শুনছিল জারা ফোন কেটে দিতেই বলল

-‘ ও বাসায় আসবে না মানে রাতে বাসার বাইরে থাকবে?? ‘

ইশা কোনো কিছু না ভেবেই ফট করে বলে ফেললো

-‘ হ্যাঁ প্রায় বাসার বাইরে থাকে কেসের জন্য ‘

শান এবার রেগে খাবার ছেড়ে উঠে বলল

-‘ বাড়ির বউ বাইরে থাকবে এটা কেমন কথা আম্মু তুমি ওকে অন্তত শাসন কর ‘

শান্তি বেগম শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ তুমি জারাকে বউ হিসেবে মানো? সম্মান করো? জারাকে সবসময় সবার সামনে তুমি ছোট করে কথা বলো যে দিন নিজে ঠিক হবে সেদিন এসব কথা বলতে আসবে ‘

শান দমলো না উল্টো উত্তর দিলো

-‘ আচ্ছা আমি সব মানলাম তাই বলে রাতে বাসার বাইরে থাকবে কেনো? ‘

শান্তি বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ তোমাকে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে জারাকে নিয়ে ভাবার জন্য অনেকের সময় আছে ‘

-‘ ও তাই না-কি কি যেনো নাম বললে রুহান নাকি ঔ ছেলের সাথে জারার বিয়ে ঠিক করছ? কালও আমি রুহানের নাম শুনছি ‘

-‘ যায়ই করি তুমি কি জেলাস? ‘

শান চেয়ারে শব্দ করে ফেলে চলে গেলো। শান্তি বেগম তাকিয়ে রইলো ছেলের যাবার দিকে তিনি ছেলের মনভাব বুঝতে পারছেন না। শান নিজই কাউকে নিজেকে বুঝতে দিচ্ছে না। শানের কিছু ব্যবহার জঘন্য আবার কিছু বিষয় ভাবার মতো যা অন্য রকম। শান্ত বেগম আনমনে হাসলেন মনে মনে তিনি ছক কষে নিলেন কিভাবে দুজনকে এক করা যায় মুখে বলল ‘ এবার পালাবি কোথায়? প্রকাশ করতেই হবে ভালোবাসার কথা’

ইশা মুখে ভাত নিয়ে সবটা দেখলো খাবার কথা ভুলে গেছে যেনো। মায়ের কথা শুনে পানি দিয়ে ভাত গিলে বলল

-‘ কি করবে আম্মু তুমি? ‘.

-‘ দেখ না কি করি! ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে