অনুভূতি পর্ব ২৩

0
1861

অনুভূতি
পর্ব ২৩
মিশু মনি
.
৩৬.
মেঘালয় বলল, “ইনি হচ্ছেন আকাশ আহমেদ, আমার একমাত্র বাবা, আর ইনি হচ্ছে মিসেস আহমেদ,আমার গর্ভধারিণী মা।”
বলেই বাবা মায়ের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বললো, “আর আমি হচ্ছি তাদের একমাত্র ছেলে,মেঘালয় আহমেদ।”
মিশু মেঘালয়ের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মেঘালয়ের মা অবাক হয়ে একবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার তাকাচ্ছেন ওনার স্বামীর দিকে। মেঘ কি বলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। উনি মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুই বিয়ে করে ফেলেছিস? সত্যি বিয়ে করেছিস? আমাদের না জানিয়ে?”
মেঘালয় হেসে জবাব দিলো, “আম্মু, তোমার জন্য এই পুতুলটাকে পছন্দ করে এনেছি। দেখো তো ভালো লাগে কিনা? তোমার ভালো লাগলে তবেই না বিয়ে পর্যন্ত আগাবো তাইনা? কি করে ভাবলে তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবো?”
আম্মু মেঘালয়ের কান টেনে ধরে বললেন, “পাজি ছেলেটা। এভাবে বললে ভয় লাগে না? এই মেয়েটাকে দেখার জন্যই রোজ রোজ সুপার শপে যাওয়া হতো তাইনা?”
– “উম আম্মু। কানটা ছাড়ো, লাগছে তো।”
– “লাগুক, সুপার শপে এত সুন্দর পুতুল পাওয়া যায় আমার তো জানা ছিলোনা।”
মিশু হাসলো। মেঘালয় কত সুন্দর সবকিছু সামাল দিলো। এখন যদি মিশুকে ওনাদের পছন্দ হয় তাহলে তো বিয়ের ব্যবস্থা ওনারাই করবেন। মিশু তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। যদি বিয়ের কথাটা সরাসরি বলতো তাহলে মা অনেক কষ্ট পাবেন সেটা ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তখন ওনাদের আচরণ এরকম নাও হতে পারতো।
ওর বাবা মিশুকে কাছে টেনে নিয়ে সোফায় বসে পড়লেন। মিশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “নাম কি তোমার মা?”
– “মিশু মনি।”
-“দেখতেও খুকি খুকি,নামটাও খুকি খুকি।”
মেঘালয় বললো, “আব্বু ওর স্বভাব,আচরণ সবই বাচ্চা স্বভাবের। ছেলেমানুষি ভাবটা এখনো যায়নি।”
মিশু লজ্জা পেলো খুব। মেঘালয় মাকে জাপটে ধরে বললো, “আমি কি তোমাকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারি বলো? আমিতো জানি, আমি বিয়ে করতে চাইলে তুমি নিজেই বিয়ে পড়িয়ে দিবে।”
মা ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “হুম আমার লক্ষী ছেলেটা। বউ তো পছন্দ হয়েছে,এবার তবে বিয়ের আয়োজন করি?”
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, “সেকি! এত তাড়াতাড়ি কেন?”
– “তোকে পর্বত থেকে দূরে রাখার এই একটাই উপায়।”
মেঘালয় মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো, “সেজন্য এই বাচ্চা ছেলেটাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছো? বিয়ে হলেই তো আমি পর হয়ে যাবো। তখন মিশু আমাকে তোমার কাছে ঘেষতেই দেবেনা।”
মিশু ক্ষেপে বললো, “আমি দিবো না? এখন কি দিচ্ছি না? আমার উপর একদম দোষ চাপাবেন না বলে দিচ্ছি।”
মিশু গিয়ে মেঘালয়ের মায়ের পাশে বসলো।বললো, “আপনার ছেলেটা আমাকে মিছেমিছি দোষ দিচ্ছে। আমাকে দেখে কি আপনার ডাইনি মনেহয়? রাক্ষসী রানী কটকটির মত আমার চেহারা?”
মা মিশুর এমন সরলতা দেখে মুগ্ধ হলেন। উনি মিশুর গাল টেনে দিয়ে বললেন, “গালদুটো কি গোলাপি! বাচ্চাদের মতন। এই পুতুলটাকে পেলি কই মেঘ?”
বলেই উনি মিশুকে আদর করে দিলেন। মিশুও ওনার আদর পেয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। ভাগ্যিস মেঘালয় বাসায় বিয়ের কথাটা জানায় নি। জানালে হয়ত এখন যেমন মিশুকে আদর করে বুকে টেনে নিয়েছেন, তখন সেটা করতেন না। বরং খুব আঘাত পেয়ে দূরে সরিয়েও দিতে পারতেন। মেঘালয়ের বুদ্ধি আছে বলতে হবে। কিভাবে সবকিছু সামলে নিলো!
মেঘালয় উঠে গিয়ে ওর বাবার পাশে বসলো। বাবা ওর কানে কানে বললেন , “রাতে কি এখানেই ছিলি নাকি?”
মেঘালয় ফিসফিস করে জবাব দিলো, “না, সায়ানের বাসায় ছিলাম। বলেছি তো।”
বাবা আবারো ফিসফিস করে বললেন , “আমাদেরকে হুট করেই এখানে আসতে বললি তাই ভাবলাম, হয়ত ওকে নিয়ে এখানেই থাকিস। তা, বিয়ে টিয়ে করে ফেলিস নি তো?”
– “ধুর আব্বু, কি যে বলোনা।”
– “বিয়ে ছাড়াই একসাথে থাকিস? কিভাবে সম্ভব?”
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, “মানে! একসাথে থাকবো কেন?”
বাবা ফিসফিস করে বললেন, “গলায় দাগ দেখতে পাচ্ছি। মাফলার সরে গিয়ে কামড়ের দাগ উঁকি দিচ্ছে।”
মেঘালয় কাশি দিয়ে উঠলো। গলার মাফলারটা ঠিক করে কাশতেই লাগলো। বাবার হাতে ধরা খেয়ে গেলো একদম। কি লজ্জার ব্যাপার! লজ্জায় মাথা তুলতে পারলো না ও। বাবার কানেকানে বললো, “একটু আধটু তো এমন হয়ই আব্বু। বোঝো না?”
– “হা হা হা, সবই বুঝি। ঠোঁট দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
মেঘালয়ের ইচ্ছে করলো লজ্জায় এক ছুটে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পালিয়ে যায়। বাবার সাথে সবসময়ই ও খুব ফ্রি। তাই বলে এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে ভাবেনি কখনো। বাবা বললেন , “লিভ টুগেদারের চিন্তা ভাবনা ভূলেও করিস না। বিয়ের ইচ্ছে হলে বলিস। মেয়ে পছন্দ হয়েছে খুব, আমাদের এনাফ সেবা যত্ন করতে পারবে। অনেক ভালো একটা মেয়ে।”
মেঘালয় বাবার কানেকানে বললো, “তোমাদের সেবা যত্ন করতে পারলেই হলো? আমার পারবে কিনা সেটাও দেখতে হবে তো।”
বাবা মেঘালয়ের মাথায় একটা চাটি মেরে বললেন, “আপনার চেহারায় যে পরিমাণ আলো ঝিকমিক করছে, তাতে আমাদের কিছু বুঝতে বাকি নেই।”
– “আব্বু, প্লিজ আর লজ্জা দিওনা। আমার পছন্দ কেমন সেটা বলো?”
– “তোর পছন্দের উপর আমার ষোলআনা নির্ভরতা আছে। যেটা খাটি তুই সেটাই নিবি আমি জানি। তবে ভেবেছিলাম মেকাপ আর লিপস্টিক মাখা কোনো হাই লেভেলের মডার্ন মেয়েকে দেখবো,কিন্তু এ তো দেখছি একেবারে ন্যাচারাল বাঙালী মেয়ে।”
– “আমার পছন্দ বাবা।”
এতক্ষণ দুই বাবা ছেলে ফিসফিস করে কথা বলছিলো। মিশু আর ওর মায়ের মধ্যে ইতিমধ্যে ভাব জমে গেছে। মেঘালয় সেদিকে তাকিয়ে ওর বাবাকে বললো, “আব্বু মিশুর একটা থাকার জায়গা লাগবে। এ শহরে ওর থাকার কোনো জায়গা নেই। এখন দায়িত্ব তোমার কাছে ট্রান্সফার করলাম, তুমি কি করবা করো।”
– “তোর প্রেমিকা কোথায় থাকবে সেই চিন্তা আমার কেন? সিস্টেমে বিয়ের কথা বলছিস সেটা বুঝতেই পারছি।”
বলেই বাবা হেসে উঠলেন। মেঘালয় ও হাসতে হাসতে বললো, “আব্বু, খুব মজা নিচ্ছো? সিরিয়াসলি শোনো,আমরা তো কেউ এ বাড়িতে থাকিনা। আমাদের এখানে আসতে আরো মাস ছয়েক দেরি হবে। এতদিন ও এখানেই থাকুক না।”
বাবা একটু কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, “থাকতে পারে। কিন্তু একা একা এখানে কিভাবে থাকবে? ওর ফ্যামিলি কোথায়?”
– “কেউ নেই ওর। এখন আমি আর তোমরাই ওর সব।”
– “ওহ আচ্ছা, তাহলে এখানেই থাকুক। একটা কাজের লোকের ব্যবস্থা করে দিস। সে দেখাশোনা করবে।”
মেঘালয় বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “উফফ আব্বু, ভালোবাসি তোমাকে। আম্মুকে বুঝিয়ে বলো ব্যাপার টা।”
– “সে না হয় বলবো। এখন লাঞ্চ করবো কি বাইরে? নাকি খাবার নিয়ে আসবি?”
– “বাইরে লাঞ্চ করবো। লাঞ্চ করে আমরা একটু বের হবো। আর আজকে রাতে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে সিলেট যাচ্ছি। কয়েকটা দিন থেকে আসবো, তুমি একটু সবকিছু সামলে নিও আব্বু প্লিজ।”
বাবা আবারো মেঘালয়ের কানের কাছে এসে বললেন , “বন্ধু বান্ধব মিলে যাচ্ছো? নাকি হানিমুনে যাচ্ছো?”
মেঘালয় ক্ষেপে গিয়ে বললো, “খুব মজা নিচ্ছো। দেখো, নিরীহ পেয়ে আমার সাথে এভাবে মজা নিবা না।”
– “নিরীহ? হা হা হা।”
বাবা হাসতে লাগলেন। মেঘালয় ও হাসছে মুখ টিপে। এদিকে মিশু আর মা কিসব ব্যাপার নিয়ে যেন আলাপ করছে। হয়ত মিশুর ফ্যামিলি আর পড়াশোনা এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছেন। মেঘালয় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। বাবা মায়ের উপর ওর ভরসা ছিলো যে তারা ওর পছন্দকে গুরুত্ব দিবেন। আর নিজের উপর এতটুকু ভরসা ছিলো যে,সবকিছু ঠাণ্ডা মাথায় সামলাতে পারবে। মিশুকে যে কেউ পছন্দ করবে সেটার জন্য ওর প্রতি ষোলআনা ভরসা করা যায়। সবাইকে খুব দ্রুত আপন করে নিতে পারে ও। ফাইনালি, বাসার ঝামেলাটা মিটে গেলো কোনোরকম জটিলতা ছাড়াই! উফফ!
বাবা উঠে করিডোর দিয়ে হাটতে হাঁটতে অন্যদিকে গেলেন। আম্মুকেও সাথে নিয়ে গেলেন। মেঘালয় এই সুযোগে একটু এগিয়ে এসে মিশুর কাঁধে মুখ গুঁজে বললো, “এখন থেকে এই বাড়িটা তোমার।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “আমার মানে!”
– “তুমি এখানেই থাকবা।”
– “এটা কার বাড়ি?”
মেঘালয় মিশুকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, “আমি ভার্সিটিতে উঠেই আব্বুর সাথে একটা বিজনেস শুরু করেছিলাম। যদিও আব্বুই সব সামলায়, আমার শুধু শেয়ার ছিলো। ওই বিজনেস থেকে একটা পয়সাও কখনো নেইনি,সবটাই জমিয়ে রেখেছিলো। সেটার টাকায় এই বাড়িটা কিনেছি। আমার বোন তো ইউল্যাবে পড়ে,ওর ক্যাম্পাস ওই বাসা থেকে কাছে। সেজন্যই এখানে থাকা হয়না।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “কত্ত বুদ্ধি তোমার! সবকিছু সামলাও কিভাবে?”
মেঘালয় মাথায় আঙুল দিয়ে বললো, “এই মগজের খেলা সব। আজকে বাবার এতদূর আসার পিছনে আব্বুর ব্রেইনটাই কাজ করেছে। আব্বুর ফ্যামিলি’র অবস্থা ভালো ছিলোনা।”
– “আমি কি একাই থাকবো এখানে?”
– “ভেবেচিন্তে কাউকে ঠিক করে দেবো, সে বাসার কাজ করতে তোমাকে হেল্প করবে। আর আমিতো প্রায়ই আসবো।”
– “তুমি যখন আসবা, যাবা, পাবলিক তখন দেখবে না?”
– “নাহ। আমিতো রাতের অন্ধকারে আসবো আমার বউয়ের কাছে।”
বলেই মিশুর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। মিশু বললো, “তুমি আসলেই খুব খারাপ। তোমার মাথায় খুব শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল কিলবিল করে।”
মেঘালয় হো হো করে হেসে উঠলো। মিশুকে জাপটে ধরে বললো, “কয়েকটা দিন যাক, আব্বু আম্মু নিজে থেকেই আমাকে তোমাকে বিয়ে করতে বলবে। সেজন্যই সিস্টেমে ওদের সাথে দেখা করিয়ে দিলাম। আমাদের ওই বাড়িতে দেখা করালে আব্বু আম্মুর কাছে স্বাভাবিক লাগতো সবকিছু। যেহেতু তাদেরকে এখানে ডেকে এনেছি, এখন ওনারা চিন্তা ভাবনা করবেন আমাদেরকে নিয়ে।”
– “কি বুদ্ধি! তুমি চাইছো ওনারা নিজে থেকে বিয়ের ব্যবস্থা করুক? তুমি তাদেরকে বলবা না?”
– “এইতো বুঝেছো। আমি চাচ্ছি আব্বু আম্মু নিজে থেকে আমাকে বলুক বিয়েটা করে ফেলতে। আর তারা যেন নিজে থেকে তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গিয়ে রাখে। এখানে একা একা ফেলে রাখবে না কখনো, আব্বু দায়িত্ববোধ ব্যাপার টা খুব মেনে চলে।”
মিশু মেঘালয়ের দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “তোমার মাথায় খুব কুটনি বুদ্ধি। কুটনি বুড়া একটা।”
– “হা হা হা। আর তুমি কুটনি বুড়ি।”
– “তুমি বাবা মায়ের সাথে দেখা করাবে বলোনি কেন?”
– “হুট করেই তাদের সামনে দাড় করালে তোমাকে কতটা নার্ভাস লাগে,সেটা দেখার জন্য। মজা লাগছিলো।”
মিশু মেঘালয়ের বুকে দুটো কিল বসিয়ে দিয়ে বললো, “সাধে কি বলি তুমি খুব খারাপ? আমি নার্ভাস হচ্ছিলাম আর তুমি মজা পাচ্ছিলে সেটা দেখে। অবশ্য আমি একদম সারপ্রাইজড! এই বাড়ি, তোমার রুমের সৌন্দর্য, সুইমিংপুল, ফাইনালি বাবা মায়ের সাথে দেখা করা, সবটাই আমার জন্য গ্রেট সারপ্রাইজ ছিলো। যদিও প্রথম থেকেই তুমি আমাকে সারপ্রাইজড করে দিচ্ছো।”
মেঘালয় হাসলো। মিশুর মুগ্ধ চোখ দেখতে ওর খুবই ভালো লাগে। সেজন্যই সারপ্রাইজ দিতে চেষ্টা করে ও। মুগ্ধ হলে মিশুর চেহারায় একটা পবিত্র ভাব চলে আসে যেটা মেঘালয়কেও মুগ্ধ করে দেয়। সেজন্যই তো এতকিছু করা!
মিশু বললো, “সেই কবে থেকেই শুধু সারপ্রাইজ দিচ্ছো। একজন সেলিব্রেটি এত সহজে কারো সাথে মিশতে পারে সেটা জানতাম না। আর তুমি আবার আমার মত সরল একটা মেয়ের প্রেমে পড়লে। এ সবই সারপ্রাইজ! তুমি গান গাও সেটা জানতাম না, তুমি বিজনেস করো সেটাও জানতাম না। সত্যি আমি এতবার অবাক হই যে অবাক হতে হতে একবার দুম করেই হয়ত হার্ট এটাক হয়ে যাবে আমার।”
মেঘালয় হেসে বললো, “তোমার মুগ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করে মিশু পাগলী, তোমার সরলতা আমাকে আকৃষ্ট করে।”
– “এখন ছাড়ো, আব্বু আম্মু এসে পড়বে। তুমি না বলেছিলে আমার চুলের একটা গল্প আছে। সেটা বলো।”
– “সেটা আরেকদিন বলবো।”
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে ভদ্রছেলের মতন সোজা হয়ে বসলো। আব্বু আম্মু চলে আসলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। মিশুর সাথে বসে অনেক্ষণ গল্প করলেন ওনারা। তারপর সবাই একসাথে বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। রেস্টুরেন্টে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো মেঘালয়। গাড়িটা সিলেটে নিয়ে যাবে, কিছুদিন থাকতে হবে এছাড়াও অনেক ব্যাপার নিয়ে কথা হলো। বাবার কাছে চাওয়ার আগেই তিনি বেশ কিছু টাকা দিয়ে দিলেন মেঘালয়ের হাতে। মেঘালয় আব্বুকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো।
মিশুকে নিয়ে মার্কেটে এসে দুটো ড্রেস কিনলো ওর জন্য। একটা শাড়ি,দুটো কামিজ,গেঞ্জি, প্যান্ট এসব কিনে নিয়ে সায়ানদের বাসায় ফিরলো। মিশু একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। ওর এখন চিন্তা হচ্ছে মেঘালয়কে নিয়ে। ছেলেটাকে যত সময় যাচ্ছে,ততই ওর রহস্যময় লাগছে। মেঘালয়ের চোখেও রহস্য খেলা করে। মিশু ভেবেছিলো মেঘালয় ধনী পরিবারের সন্তান,কিন্তু এতটা ধনী সেটা কল্পনাও করেনি। এতকিছু থাকার পরও সে নেভারল্যান্ডে যাওয়ার সময় সিএনজিতে কেন নিয়ে গেলো? তার নিজেরই তো গাড়ি আছে। সবসময় পলওয়েল কারনেশনের মত শপিং কমপ্লেক্সে সে কেনাকাটা করে, বড়বড় মার্কেট গুলোতেও দেখি সবাই ওকে চেনে। সে কেনই বা মিশুর শপে রোজ রোজ গিয়ে হাজির হতো? মাঝরাতে স্টেশনে হাটাহাটি করা, দুম করেই ট্রেনে গিয়ে ওঠা এগুলো তো বাচ্চাদের কাজ। মেঘালয় কেন এসব করে! রহস্য রহস্য! ছেলেটাকে এখন বড্ড রহস্যজনক লাগছে। মিশু গালে হাত দিয়ে ভাবছে মেঘালয়কে নিয়ে। যে বাড়িতে নিয়ে গেলো সেটা তো ফাঁকাই ছিলো, তবুও সায়ানদের বাসায় বিয়ে পড়ালো। এত এত প্রশ্ন মিশুর মাথায় জড়ো হচ্ছে যার কূলকিনারা কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা ও।
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে