অধিকার পর্ব-১৩

0
2937

#অধিকার #ত্রয়োদশ
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

-কি হয়েছে আপনার?? শরীর খারাপ??
-মাহিরা এসেছে।
– কে?
-আপনার প্রাক্তন স্ত্রী,, সে আপনার বেড রুমে এখন।

কথাটা শুনে ইরাদ হতভম্ব হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায়,,

রুহি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ইরাদ ওর সাথে আর কোন কথা না বলে মাইরার কাছে চলে গেল। জিনিসটার রুহি মনে ভীষণ পীড়া দিলে। প্রায় 20 মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে,, রহিরা দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যেন শেষ হয়ে আসছে,, হয়তো মনের এত বড় পীড়া দেখে শরীর অবশ হয়ে আসছে,,রুহি আস্তে করে মাটিতে বসে পড়ল। হঠাৎ করে ব্যাগের দিকে চোখ গেল,, একটা বক্স দেখা যাচ্ছেভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা,, রুহি সেটা খুলে দেখল। ভেতরে একটা লাল টকটকে শাড়ি,, সাথে একটা চিরকুট লিখা ।
“কোনো দিন বাবা হতে না পারার পীড়া আমার মনেও অনেক আঘাত এনেছে কিন্তু এত কিছু হওয়ার পরেও আমাকে গ্রহণ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে প্রিয়তমা।”
ইতি,,
তোমার ইরাদ ।

রুহির কান্না এবার বেড়ে গেল। চোখের পানি এখন আর কোন বাধা মানছে না। তাহলে কি এই খবর ইরাদ ওকে দিতে চেয়েছিল? ইরাদের প্রতি রুহি ভালোবাসা,, যত্ন কিছুই কি ওর চোখে পড়েনি? ইরাদের মনে কি তাহলে মাহিরাই ছিল?? নাহ,, তারপরেও রুহি একবার ইরাদকে জিজ্ঞেস করবে এভাবে তো হতে পারেনা,, রুহি তো ইরাদের বিয়ে করা বউ। প্রাক্তন স্ত্রী কে এভাবে এনে কি আসলেই ইরাদ সুখী হতে পারবে? এত গুলো দিনে কি ও রুহি ভালোই বাসেনি? অনেক গুলো কথাই তো মাথায় ঘুরছে কিন্তু ইরাদকে ও এত কিছুই জিজ্ঞেস করবেনা
শুধু জিজ্ঞেস করবে ও কি রুহি কে ছেড়ে দিতে চায় কি না? যদি তাই হয় তাহলে ও আর এক মুহুর্ত ও থাকবেনা এখানে। কোনো অধিকার ও দেখাবে না ইরাদের ওপর।

রুহি মনে সাহস জুগিয়ে ইরাদের ঘরের দিকে পা বাড়ালো,, সামনে গিয়ে দেখে দরজা আটকানো ভিতর থেকে। কিন্তু ইরাদের আওয়াজ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
“তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ”

কথা গুলো রুহির কানে যেন সূচের মত বিধছিল,, যেও ভয়টা পেয়েছিল সেটাই তাহলে সত্যি হলো।
ইরাদ মাহিরাকে ভালোবাসে,, তাহলে রুহির এখানে আর থাকার কোনো অর্থ হয় না। ইরাদের জীবনে ও কোন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে চায়না।

রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। রুহি ছোট একটি চিরকুট লিখল ইরাদের জন্য।
যেদিন রুহি প্রথম এসেছিলো এখানে তখন নিজের পড়নের জামা জুতো যা ছিলো সেগুলো পরে নিয়ে মেইন গেইটের কাছে চলে গেলো,,
পেছন ফিরে আর একবার তাকিয়ে সব দেখে নিলো,, এসবই তো মাহিরার ছিলো,, মাঝে ও কিছুদিন এসেছিলো,, আজ আবার বিদায়ের পালা চলে আসলো,, চোখ মুছতে মুছতে রুহি বেড় হয়ে গেলো,, অজানা এক গন্তব্যে।

ইরাদ বাসায় ঢুকে যখন শুনতে পেলো মাহিরা এসেছে,, কিছু মুহুর্তের জন্য ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো,,
সাথে সাথেই নিজের বেডরুমে চলে গেলো আসল কারণ জানার জন্য,,
গিয়ে দেখে মাহিরা বিছানার উপরে বসে আছে,, ইরাদ কে দেখেই বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরতে চায়,
ঠিক তখনই ইরাদ একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় মাহিরাকে,,
অবাক হয়ে মাহিরা বলে,,
-ইরাদ?
-এখানে এসেছো কেন?
-আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে,,
কথাটা ইরাদের কাছে কাটার মত লাগলো,,
-চলে যাও আমার বাসা থেকে।
-তোমার বাসা? আমি কিছু না তোমার?
-না তুমি কিছু না,, যখন ছিলে তখন আমি তোমার ছিলাম আর এই বাসাও তোমার ছিলো কিন্তু এখন আমি তোমার জন্য পরপুরুষ বরং তার থেকেও বেশি পর,, কারণ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে,,
– মানি না এই ডিভোর্স,, একটা কাগজের মধ্যেই আমাদের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ?
– মাহিরা আমি অনেক ভালো আছি তুমি চলে গেলে খুশি হবো।
-না যাবো না,
-ঠিক আছে তাহলে থাকো আমি যাচ্ছি।
এই বলে ইরাদ ঘর থেকে যখন বেড় হতে যাচ্ছিলো তখনই মাহিরা দরজাটা লাগিয়ে দরজার সামনে বসে পরলো,,
-বেড় হতে দাও আমাকে
-দিবো না,,
এই মেয়ের সাথে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা ইরাদ, কারণ এর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে ওর নেই,,
কি অদ্ভুত জীবন,, এই রকম একটা সময়ের কতই না প্রতিক্ষা ছিলো ইরাদের,, এমনকি রুহি আসার পরের দিন ও মনে মনে ভাবছিলো আর কি কখনো এই ঘরে মাহিরার সাথে বসে কথা হবে? মাহিরা তো আর ওর কাছে ফিরবে না,, মাহিরাকে তখনো কত মনে পরত,, কত ইচ্ছা করতো ওর সাথে বসে কথা বলার,, সময় কাটানোর,, কিন্তু আজ মাহিরাকে আর ভালো লাগছেনা, ওর প্রতি আর কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা,,
-আমাকে তোমার মেনে নিতেই হবে,, আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরাদ,, বাচ্চা লাগবে না আমরা একসাথে থাকলেই হবে।
এই বলে মাহিরা কান্না করতে শুরু করলো,,
-চলে যাও মাহিরা। আমি তোমাকে আর চাইনা। যে বিবাহিত থাকা অবস্থাতেই পরকিয়া করতে পারে,, অন্যজনের জন্য নিজের স্বামী কে ত্যাগ করতে পারে সে আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না। আর ইসলামী শরিয়াত অনুযায়ী আমরা একে অপরের জন্য হারাম হয়ে গেছি। কোনো ভাবেই আর কিছু সম্ভব না।
-সব ঠিক করে ফেলবো, তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি ইরাদ আমাদের বাসর রাতের কথা গুলো তোমার মনে আছে??
দাড়াও আমার কাছে রেকর্ড করা আছে আমি শুনাচ্ছি তোমাকে,,

মাহিরা মোবাইল থেকে রেকর্ড বাজানো শুরু করলো
ফাইনালী আজ আমাদের বাসর রাত,,
তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ”

পুরোটা ইরাদ চুপচাপ শুনলো এরপর মাহিরার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে হাসলো,,
ইরাদের মুখে হাসি দেখে মাহিরাও হেসে বললো,
-আমি জানতাম তুমি রাগ করে থাকতে পারবেনা আমার ওপরে। এখনো আমাকে ভালোবাসো।

-ভুল বুঝলে, আমি হাসলাম এইজন্য যে আজ এগুলো শুনার পরেও তোমার প্রতি কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা আমার। আমি সত্যিই তোমাকে আর ভালোবাসি না মাহিরা। রুহিকে ভালোবাসি আমি। মেয়েটা আমার জীবনটা স্বাভাবিক করেছে। আমাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে,, ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।

-এমন করোনা ইরাদ,, আমাকে প্লিজ ভালোবাসো,, এরকম করোনা,, তোমার ভালোবাসায় শুধু মাত্র আমার অধিকার।
-বেড় হয়ে যাও,, আমি তোমাকে আর সহ্য করতে পারছিনা।

এই বলেই মাহিরাকে টেনে ইরাদ নিচে নিয়ে এলো,,
চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুহি নেই,, কলিজায় একটা মোচড় দিয়ে উঠলো,, সাথে সাথে মাহিরার হাত ছেড়ে রুহিকে খুজলো সারা বাড়িতে খুজেও পেলো না ওর ফোনে কল করতেই ঘর থেক বেজে উঠলো,,
ইরাদ দেখলো রুহির ফোন ড্রেসিং টেবিলের ওপরেই রাখা হাতে নিয়ে দেখলো লকস্ক্রিনে ওর আর রুহির ছবি,, ফোনটা লক করা, কি হতে পাসওয়ার্ড, রুহি দিয়ে দেখলো ওর ফেভারিট কালার দিয়ে দেখলো হচ্ছে না এরকম কয়েকবার ট্রাই করার পরে নিজের নাম দিলো “ইরাদ” সাথে সাথেই ফোনটা আনলক হয়ে গেলো,,ইরাদের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,, রুহি যে ওকে ভালোবাসে তা আর ইরাদ এর বুঝতে বাকি নেই,, তখনই পাশে রাখা চিরকুটটা দেখে ইরাদ পড়তে শুরু করলো,,

“শুভকামনা আপনার নতুন জীবনের জন্য,, আর হ্যাঁ একটা কথা বাচ্চা জন্ম হওয়া না হওয়া মানুষের হাতে না, তা সম্পুর্ণ আল্লাহার হুকুমে হয়,, তাই নিজেকে ছোট ভাববেন না কখনো,, আপনি মানুষ হিসেবে ভীষণ ভালো,, আপনার মত লোক যে স্বামী হিসেবে পাবে সে অনেক সৌভাগ্যবান,, নিজের যত্ন নিবেন,, আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার ভীষণ ভালো কেটেছে,, কখনো আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি,, তাই আজ ও দিবো না কারণ সেগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো যা ধন্যবাদ দিয়ে প্রকাশ করা যাবেনা,, ভালো থাকবেন,,

ইতি,,
রুহি।

ইরাদ এগুলো পড়ার পরে ওর ভীষণ কষ্ট লাগলো এবং সাথে সাথে রুহির ওপরে রাগ ও হলো,
হাতে চিরকুট দেখে মাহিরা সেটা নিয়ে পরলো
– ভালো হয়েছে ইরাদ ও চলে গেছে আমিও ভুল করেছিলাম তুমিও করেছো। আসো এগুলো ভুলে নতুন করে শুরু করি। এসব বাজে মেয়ে মানুষ কে ভুলে…

-ব্যাস আর একটা কথা না,, চুপ করো নাহয় তোমার গায়ে হাত উঠে যাবে আমার। আমার স্ত্রী কে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করার অধিকার আমি বাইরের কোনো মহিলাকে দেইনি। তুমি যদি এখন আমার বাসা থেকে বেড় না হও তাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো….

-তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে কিভাবে সুখী হও আমি দেখে নিবো ইরাদ।
এই কথা বলে মাহিরা বেড় হয়ে গেলো,,

ইরাদ এই সময় রুহিকে কোথায় খুজবে মাথায় সেই টেনশনই ঘুরছে,,

(চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে