অধিকার পর্ব-০৯

0
3016

#অধিকার #নবম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

“আমার মত একটা মেয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করতে পারে এক রাতের মধ্যে”
মনে মনে কথাটা বলে রুহি শিউরে ওঠে।
সোফায় পা তুলে বসে রুহি চকলেট খাচ্ছে,,
ইরাদ গোসলে গেছে একটু পর ওরা ঘুরতে বেড় হবে।
এমন না যে ইরাদের সাথে বিয়ে তে রুহির মন খারাপ বা এটা খারাপ লাগছে কিন্তু ওর বিয়ের সময়ের কোনো কথাই তো ওর মনে পড়লো না।
এটা কি ঠিক? বিয়ে নিয়ে মেয়েদের কত শত প্ল্যান থাকে আর রুহির নাকি একটা ছবিও নেই।
তবুও ইরাদ ওর স্বামী,, যার সাথে কাল পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক ছিল না,, আর সেই ছেলেটাই রুহির সাথে সবচেয়ে পবিত্র একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছে,, এটা ভেবে যেন রুহির চেহারার চমকই বেড়ে গেছে সকাল থেকে।

আরিশা কল দিলো রুহিকে
-হাই নিউলি ওয়েডেড ব্রাইড
-হাই আপু
-শুনো তোমার হাতে কাল মেহেদী দেখিনি আজকে কিছু ইন্সট্যান্ট মেহেদী পাঠিয়েছি,, লাস্ট টাইম ইন্ডিয়া গিয়ে তোমার ভাইয়া আর আমি কিনে এনে ছিলাম। ওগুলো আলরেডি ডিজাইন করা তুমি জাস্ট ডিজাইনটা হাতে বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে ৫ মিনিটে।
-আপু কি দরকার ছিলো কষ্ট করার?
-ইশশ, যা বলো না? কষ্টের কি হইসে?
-তাড়াতাড়ি বউ সেজে আসো সুন্দরীতমা
-আচ্ছা আপু রাখছি
রুহির খুব লজ্জা লাগছে,,

ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে গেছে,, গ্রে কালারের প্যান্ট হোয়াইট শার্ট দেখতে একদম সুপুরুষ। যে কোনো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ এমনটাই হয়তো কল্পনায় থাকে,, আজ রুহির কল্পনা সত্যি হয়ে গেছে। রুহি খাটে বসে হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যাস্ত আর ইরাদকে দেখছে চুপিচুপি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মাধ্যমে। ইরাদ রুহিকে দেখে হাসছে মিটিমিটি,, রুহির যে সাজগোজের এত শখ তা ইরাদ জানতোই না, কাল যদি রুহিকে ওমন সুন্দর করে সাজতে না দেখতো। সাজে যদি কেউ দক্ষ নাহয় তাহলে ওত সুনিপুণভাবে কেউ রেডি হতে পারেনা।

আজ কথা খুব একটা মুখে নাহলেও দুইজন দুইজনের পাশে থাকাটায়ই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করছে। দুইজনের চেহারা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে,, আজ সকাল থেকেই চেহারার নূর বেড়ে গেছে ওদের৷ মানুষিক শান্তি থাকলে যে চেহারার নূর বাড়ে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই দুইটা মানুষ।

রুহির কথার মাধ্যমে ভাংলো ওদের মৌনতা
-এইযে শুনুন,,
-জ্বি
-কোথায় যাবো এখন?
-চা বাগান দেখবেন আজ? নাকি হামহাম জলপ্রপাতে নিয়ে যাবো যদি চান?

রুহির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো,,
-সত্যি?? আমাকে হামহাম জলপ্রপাত দেখতে নিয়ে যাবেন?
-হুম নিয়ে যাবো। আজ যাবেন?
উচ্ছাসিত কন্ঠে রুহি বলল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো আজকেই।
-ঠিক আছে চলুন তাহলে।

রুহি লাগেজ খুলে যেন ওর মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ বেশির ভাগ শাড়ি নিয়ে এসেছে ও আর কিছু সালোয়ার কামিজ। যা পরে ও কিভাবে যাবে জলপ্রপাতে?
ইরাদ রুহির গাল ফুলানো দেখে বুঝে গেলো সে এখন কি নিয়ে চিন্তা করছে।
ইরাদ একটা প্যাকেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে বলে
-এটা পরে নেন আজকে।
রুহি প্যাকেট খুলে দেখে একটা গাড়ো কমলা রঙের টি-শার্ট, বেগুনি প্যান্ট আর বেগুনী জ্যাকেট।
রুহির খুশি দেখে কে!
-কাল তো আমরা এগুলো কিনি নি,, কখন নিলেন ?
-কালই নিয়েছি যখন আপনি আন্টির সাথে ছিলেন, আরো কয়েকটা সেট আছে চাইলে অন্যটা পরতে পারেন।
-উহুম৷ এটাই পরবো আমি।

নিচে লবিতে ইরাদ, রুহি, পিয়াল, আরিশা, তানি আর নিপন একসাথে হলো
তানি আর নিপন পিয়াল আরিশার ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস। যথেষ্ট মিশুক।
আজক সবাই মিলে একসাথেই দু’টি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটের শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দীর হামহাম জলপ্রপাতে যাবে।
ওরা পাচজনই আগে সিলেট এসেছে কিন্তু রুহির প্রথম বার সিলেট ভ্রমণ এটা। ও কিছুই জানেনা এই সম্পর্কে। পিয়ালের পরিচিত একটা জিপ আছে ওরা সেটাই ভাড়া করে পানসি রেস্টুরেন্ট থেকে বেশ কিছু খাবার দাবার নিয়ে বেড় হয়ে গেলো,, শ্রীমঙ্গল এর
বিখ্যাত সব চা বাগান গুলোর মাঝে দিয়ে ওরা সব গুলো পথ পাড়ি দিচ্ছিল,, এতটা প্রাকৃতিক সবুজ শ্যামলা সৌন্দর্য দেখে প্রায় সবার মন ভালো হয়ে গেলো কিন্তু রুহি দেখছিলো একদম বিস্মিত ভাবে সব কিছু। এত সুন্দর আগে কখনো ও দেখেনি ওর চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ দেখাচ্ছে। সবাই তো সবার মত ব্যাস্ত কিন্তু ইরাদ শুধু দেখছে রুহিকে,, ওর বউ এই মেয়েটা। দুনিয়ার পেচঘোচ, গোলক ধাধা সব কিছু থেকে দূরে যার মন। এই বাচ্চা মেয়েটা যত মায়া লাগাতে পারে তা মনে হয় বিরল।

যখন ওরা ট্রাকিং এর রাস্তায় এসে থেমেছে তখন রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করে,,
-এসে গেছি আমরা? কিন্তু হামহাম জলপ্রপাত দেখতে পাচ্ছি না কেন?
রুহির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো,,
ইরাদ তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললো
-আরো পথ বাকি এখান থেকে ট্র্বাকিং শুরু হবে,,,
-আরো বাকি?? কতটুকু??
-এই মাত্র শুরু হলো আসল রাস্তা যাওয়ার।
বলে আরিশা হেসে দিলো।
রুহি কিছু বুঝতে পারলো না।
সবার সাথে হাটা শুরু করলো,,
কিছুদুর যাওয়ার পরে তানির পায়ে জোক ধরলো,, রুহির চোখে পরলো ও এক চিতকার দিলো
এটা দেখে পিয়াল সাথে সাথে লবণ বেড় করে দিলো
নিপন পিয়ালের হাত থেকে লবণ নিয়ে তানির পায়ে দিয়ে দিলো এদিকে রুহি ভয়ে পুরো শেষ।।
তানি- ভয় পেয়ো না। এখানে আসলে এরকম হয়।
আরিশা- হ্যাঁ ভাবি।
ওদের কথা শুনে রুহি কান্না করছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে। আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে অসহায়ের মতো।
ইরাদ- কি হয়েছে আপনার?
রুহি- ভয় হচ্ছে অনেক। আমি জোক খুব করে ভয় পাই,, এখন আমাকেও যদি ধরে??
পিয়াল- ধরবেই তো ভাবি। বলে হো হো করে হাসলো,,
রুহির চোখমুখ দেখে বলল
আরিশা- এই এগুলো বলে ভয় দেখায়াও না
রুহি- আমি সত্যি জানতাম না এখানে এগুলো থাকবে এত করে।
রুহির কথা শুনে ইরাদ কিছু না বলেই রুহিকে হুট করে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে হাটতে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
– চল সবাই বেশি দেরি হয়ে যাবে নয়তো।
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
ইরাদ সামনের দিকে তাকিয়ে হাটছে,, সবটা মনোযোগ ওদিকেই আর রুহি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওকেই দেখছে।
ভয় যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে।
সবাই যাচ্ছে প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সামনে একটা হাটু সমান পানির ডোবা আসলো
এই পথে আরিশা আর তানি ভাবছিলো হয়তো নিপন আর পিয়াল ওদের কোলে নিয়ে পার করে দিবে কিন্তু ওদের বলা সত্যেও ওরা তা করলো না।
রাগে আরিশা তো পিয়ালকে বকা শুরু করে দিয়েছে
-বিয়ের এত বছরে জীবনে ও এভাবে কোলে নিয়ে আমাকে এই রাস্তা গুলো পার করিয়ে দিসো??
-নিজে পারো তুমি এই সব রাস্তায় নিজেকেই সামলাতে পারিনা, আর তাছাড়া ইরাদের মত আমার এত শক্তি নেই আমাদের।
নিপন ও তানির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো পিয়াল ঠিক বলছে।
আর এদিকে রুহির লজ্জা লাগছে অনেক৷ ইরাদ মিটিমিটি হাসছে রুহি চোখ নামিয়ে রেখেছে,, চোখে চোখে ওদের কথা হয়,, যা মন দিয়ে অনুভব করতে হয়,, মুখ দিয়ে প্রকাশ করা লাগে না।
রুহি মনে মনে ভাবছে আল্লাহ এত ভালো একটা স্বামী ওকে উপহার দিয়েছে,, আল্লাহকে লাখোকোটি শুকরিয়া করলেও কম হবে।
আর ইরাদ ভাবছে এমন একটা লক্ষ্মি বউকে আজীবন এভাবে আগলে রাখতেও ওর কষ্ট নেই।

এভাবেই একটা সময় ওরা হামহাম জলপ্রপাতে চলে আসলো,,
ইরাদের গলায় এক হাত রেখে অন্য হাতে ঝর্নার দিকে তাক করে রুহি আদুরে গলায় বলে,,
-ওখানে যাবো আমরা?
-হুম যাবো।
এমন সময় পিয়াল বলে
-ভাবী এখন নামবেন আপনার জামাইয়ের কোল থেকে?? নাহয় আমাদের বউরা আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলবে।
এই কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– নামাবো?
-হুম,,
রুহি সবচেয়ে বেশি উচ্ছাসিত,, বাচ্চাদের মত খিলখিল করে হাসছে আর আরিশা, তানি ওদের সাথে পানিতে ভিজছে
ইশারা দিয়ে কয়েকবার ইরাদকে ডেকেছে
ও বলেছে কিছুক্ষণ পরে আসবে,,
ইরাদ চুপচাপ দাড়িয়ে রুহিকে দেখছে
ওর যেন আর কিছুই আবিষ্কার করতে ইচ্ছা করে না
এখন শুধু রুহিকেই দেখতে ইচ্ছা করে ওকে ভালো রাখতে ইচ্ছা করে। ইরাদের এভাবে রুহিকে দেখা পিয়ালের চোখ এড়ালো না,,
– সত্যি একটা বলবি ইরাদ?
– হ্যাঁ জিজ্ঞেস কর
-তুই এই বিয়েতে খুশি তো?
– হ্যাঁ খুশি,, রুহিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি অনেক। মেয়েটা আমাকে একটা শান্তি দেয়,, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি। মাহিরা যাওয়ার পরে আর বাচার ইচ্ছা ছিলো না, তখন ও আমাকে বাচতে সাহায্য করেছে।
– এখনো কি মাহিরা কে…..?
– না এখন আর ভালোবাসি না ওকে।
– হয়তো আমি ওকে সুখী করতে পারিনি তাই তো চলে গেছে, আর যে আমাকে ছেড়ে ভালো আছে সে ভালো থাকুক কষ্ট পেয়ে কিই বা হবে?
-ভাবিকে কবে প্রপোজ করেছিলি?
-এখনো করিনি
– কি বলিস?
-হুম করবো শীঘ্রই।
ইরাদের কথায় পিয়াল খুব খুশি হলো।

বেশ অনেকক্ষণ পানিতে খেলে রুহি ক্লান্ত হয়ে গেছে,, ইরাদকে উদ্দ্যেশ করে রুহি জানতে চাইলো
-আজকের মত ঘোরাঘুরি শেষ না?
-উহুম,,একটা জিনিস বাকি
-এখানে আর কি আছে ঘুরে দেখার?
-আসুন দেখাচ্ছি।
এই বলে রুহিকে একটা সাইডে নিয়ে গেলো ইরাদ,, সেখানে ছিপছিপে পানি পাহাড়ের হালকা ছায়া ও আছে,, রুহির হাত ধরে ওকে সেই হালকা হালকা পানির মধ্যে বসার ইশারা দিয়ে ইরাদ বলে,
-পাখির কথা,, ঝর্ণার কথা,, আকাশের বাতাসের সবার কথা শুনতে চান?
-হুম চাই
সেই পানিতে হেলান দিয়ে রুহি শোয়ার পরে ইরাদ ওকে চোখ বন্ধ করতে বললো,,
রুহি চোখ বন্ধ করে শুনতে পাচ্ছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ,, বাতাসের শো শো আওয়াজ,, পানির কলকল শব্দ। সব কিছু যেন খুব রুহির সাথে কথা বলছে,, আন্তর থেকে সবটাই রুহি অনুভব করতে পারছে।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ও হাসছে মিটিমিটি,, আর ইরাদের হাতের কব্জিটা মুঠো করে ধরে রেখেছে।
প্রায় ৫-৭ মিনিট পরে ও চোখ খুলে বসলো,,
-ভালো লেগেছে?
-হুম অনেক।
-এখন বেড় হই?
-জ্বি
-কিন্তু এত দেরি হয়ে গেছে আমরা যাবো কিভাবে?
-আজকে রাতটা তাহলে হামহামেই থাকেন ভাবী?
কথাটা বলে পিয়াল হাসছে।
রুহি অবাক হয়ে ইরাদের দিকে তাকালো,,
-থাকা যাবে?
-হুম যাবে,, থাকবেন?
-জ্বি আবশ্যই
-কিন্তু কোথায় থাকবো?
-আমাদের এক বন্ধুর বাসা ওইদিকের পাহাড়ে চাইলে আজ রাত ওখানে থাকতে পারি আমরা।
-ওকে থাকবো আমরা
বলেই রুহি খুশি হয়ে আরিশা কে জড়িয়ে ধরলো।
আরিশা হেসে বলে
-আমাকে না ধরে তোমার জামাইকে ধরো,, ওরই প্ল্যান এগুলো।
-বউকে খুশি করতে জানে ইরাদ ভাই
কথাটা তানি বললো,,,

শায়ানের বাসা সামনের একটা পাহাড়ে,, বাসাটা বেশ বড় আর খুব সুন্দর করে সাজানো এখানে ৬টা রুম আছে রান্নাঘর আর বসার ঘর বাদে। শায়ান চাকমা না এটা ওদের শখের বাড়ি,, মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে বউকে নিয়ে এ ছাড়া একটা কাজের লোক আছে ও দেখাশোনা করে। এখন শায়ান আর রাফিয়া আর ওদের বাচ্চা রাশি (৩ বছর) এখানে ছিল বিধায় ওরা থাকতে আসতে পেরেছে,
সবাই এসে চেঞ্জ করে নিয়েছে।
রুহি কালো একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে আর ইরাদ কালো একটা শার্ট আর কালো প্যান্ট। ওরা একরকম কাপড় নিয়ে ঢুকেনি চেঞ্জ করতে কিন্তু মিলে গেছে,, সবাই ভেবেছে ওরা ম্যাচিং করে পরেছে ইচ্ছা করে তাই দুষ্টুমি করলো কিছুক্ষন।

রাতে সবাই ডিনার করে নিলো,,
শায়ান রাশিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসলো সবাই এখন আড্ডা দিবে বাড়ির বাইরের দিকটায়।
বেশ ঠান্ডা লাগছে তাই কিছু কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে পিয়াল,,
আরিশা- আসো গানের কলি খেলি?
তানি- হ্যাঁ আসো
রাফিয়া- আমি পারি না গান করতে
পিয়াল- তোমার বর তো পারে তোমারটা ও গেয়ে দিবে তুমি শুধু গানের নাম বলে দিলেই হবে
ইরাদ- রুহি আপনি খেলবেন?
রুহি- হ্যাঁ খেলবো,, মজা হবে।
পিয়াল- গাইস,,, একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
সবাই সবার মতামত নেয় আর এদিকে দেখো নতুন দম্পতি নিজেদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত।
রুহি লজ্জায় শেষ।
আরিশা- তুমি আজকে কি শুরু করলে বলো তো? তোমার কথায় বেচারি লজ্জা পাচ্ছে।
পিয়াল-সত্যিই তো বলেছি।
ইরাদ- হ্যাঁ ভালো করসি। আমার বউয়ের সাথেই তো কথা বলছি। তোর কি?
ইরাদের কথা শুনে রুহি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এত সুন্দর লাগলো “আমার বউ” কথাটা রুহির কাছে।
যেন বার বার কানে বাঝছে পুরো কথাটা। এই প্রথম ইরাদ বললো ওকে আমার বউ। আত্না ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত কথাটা লাগলো,, পুর্ণ তৃপ্তি কাজ করছে মনে।

গোল হয়ে সবাই বসেছে,, রুহি আর ইরাদ মুখোমুখি একটা সময় গানের কলি খেলতে খেলতে রুহির কাছে আসলো “প”
রুহি কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো এরপর
গাইতে শুরু করলো..

“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

(এই লাইন গুলো যখন শুরু করলো সম্পুর্ণ ৬টি লাইন ইরাদের দিকে তাকিয়েই গাইলো)

ভাবিনি কখনো
এ হৃদয়ে রাঙানো
ভালোবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে
দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াবো আমি

সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলবো হেসে
এক পলকেই পৌঁছে যাবো
রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে
আকাশে হারিয়ে
যত্নে রেখো গো তুমি

সেই মেঘেরই আঁচল
এনে আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং তুলিতে আঁকবো ঘর
রুপ কুমারীর দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে”

সবাই করতালি দিলো রুহির গান শুনে।
পিয়াল- দেখেছিস ভাবী কত ভালোবাসে তোকে?
ইরাদ- তোর এখন লাভগুরু সাজতে হবেনা।
ইরাদের ভালো লাগছে,, রুহি কি ওকে ভালোবাসে? কেন যেন এখন মনে হচ্ছে হ্যাঁ রুহি ওকে ভালোবাসে। মনে হচ্ছে রুহিকে বলে দেওয়ার উচিত “ভালোবাসি তোমাকে”

এরই মাঝে রাশি ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিলো,, সবাই ওকে কান্না থামানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত কিন্তু না,, সে কারো কথাই শুনতে রাজি না,,
যেই রুহি ওকে কোলে নিলো তখনই কান্না থেমে গেলো একদম। ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রুহি বের হলো ঘর থেকে।
রাফিয়া- ভাবী তুমি কিভাবে পারলে? আমার মেয়ে ও কিন্তু ওকে ঠান্ডা করতে আমিও পারিনা মাঝে মাঝেই।
-আমি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসি, আমার বেশির ভাগ ফ্রি সময়ই কলেজে ওঠার পর বাচ্চাদের ওয়ার্ডে পার করতাম, ওদের একটু ট্যাকনিক্যালি হ্যান্ডেল করলেই হয় ভাবী।
রাফিয়া- শিখিয়ে দিও আমাকে
-আচ্ছা ঠিক আছে।

সবাই স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমাতে চলে আসলো কিন্তু হঠাৎ ইরাদের মনে পড়ে গেলো,
“রুহি বাচ্চা ভালোবাসে”
আর আমি তো পিতা হতে পারবো না কোনোদিন।
কথাটা মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইল ও।

(চলবে!)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে