অগল্প

0
1020
আমার সামনের চেয়ারে বসা পরিপাটি সুন্দরী। সুন্দরী মেয়েদের সামনে বসে থাকা তেমন একটা সুবিধার না। আসলে সুবিধা আদায় করা যায় না। যদিও যায় তবু আমি পারি না। সুন্দরী দেখার লোভ হয়। এই দেখা দেখতে হয় যত্ন করে,গোপনে। আমি গোপনে না তাকিয়ে প্রকাশ্যে তাকিয়ে বললাম, কত দেরী হবে? সুন্দরী ম্যাডাম জবাব দিলেন, প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট লাগবে। এই ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট এখানে বসে থাকা বিরক্তিকর। ইউনিয়ন অফিসের জন্মনিবন্ধন কক্ষ। খুব বড় কক্ষ নয় এটা। কক্ষের একপাশে একটা ষ্টিলের আলমারি। দেয়ালে টানানো নতুনের মতো একটা দেয়াল ঘড়ি। দেয়ালের আরেক পাশে দুইটা চেয়ার। ছোট একটি টেবিল। টেবিলের পাশে চেয়ারের সংখ্যা তিনটা। একটি চেয়ারে সুন্দরী ম্যাডাম বসা। তার সামনের একটি চেয়ারে আমি। অন্য চেয়ারে আমার সাথে আসা ছোট ভাই। এভাবে এখানে এতক্ষন বসে থাকা যাবে না।গোপনে গোপনে তাকানোও যাবে না। গোপনে তাকানোর মধ্যে তৃপ্তি নেই। আমি সুন্দরীর দিকে না তাকিয়ে বললাম, তবে আমি এতক্ষনে বাহিরে থেকে চা খেয়ে আসি? সুন্দরী ম্যাডাম মিষ্টি করে বললেন, ঠিক আছে।
কিন্তু আমি ঠিক আছে পর্যন্ত ঠিক থাকতে পারলাম না। সুন্দরী ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম, চা খাওয়ার টাকা দিন। আমার কথা শুনে ম্যাডাম অবাক হয়ে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো। লক্ষ করলাম ম্যাডামের চোখ ম্যাডামের চেহারার চেয়েও সুন্দর। কেমন যেন মাদকতাময়। এমন চোখের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা মানেই সুন্দর সর্বনাশ। “আমি চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম, টাকা দিন। যেহেতু আপনার কারনেই অপেক্ষা করতে হবে তাই টাকা আপনাকেই দিতে হবে।” “কেন, আপনার কাছে টাকা নাই?” “অবশ্যই টাকা আছে। আপনার কাজের ফিস এক হাজার টাকা ছাড়াও টাকা আছে। তবে আমি আপনার টাকাতেই চা খাব।” “আমার কাছে ভাংতি নাই।” “তাহলে নোট দিন। চা খেয়ে ভাংতি করে নিয়ে আসবো।” সুন্দরী ম্যাডাম কি জানি কি ভেবে উনার ব্যাগের ভীতর হাত দিলেন। বড় কোন নোট বের হয়নি। বিশ টাকার একটা নোট বের করলেন। কোন কথা না বলেই নোট’টি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমিও কোন কথা না বলে সামান্য হাসি দিয়ে নোট’টা হাতে নিলাম। আমার হাসিতে বুঝাতে চাইলাম যে আপনি মাত্র বিশ টাকার নোট’ই বের করলেন, বড় নোট নাই? ম্যাডাম আমার হাসির রহস্য বুঝলেন কি না জানিনা। আমি টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। চা খেয়ে এসে আমরা আবার ম্যাডামের সামনে বসলাম। আমাদের দেখেই ম্যাডাম কাগজ হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন। উনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমি বললাম, ম্যাডামের টাকা মনে ম্যাডামের মতোই। আপনার টাকার চা’তে প্রচুর মিষ্টি ছিল। ম্যাডাম কোন কথা না বলে চলে গেলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই চেয়ারম্যান-এর সাক্ষর নিয়ে ফিরে আসলেন। বুঝলাম আমাদের কাজ হয়ে গেছে। কিছুক্ষনের মধ্যে আমরাও চলে যাব। চলে যাওয়ার আগে ম্যাডাম’কে কিছুটা হলেও ঘাবড়ে দিতে হবে। ম্যাডামের কাজের ফিস দিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম, ম্যাডাম একটা কথা ছিল। “জ্বি বলুন।” “আপনার আব্বার ফোন নাম্বার’টা দিন।” আমার কথা শুনে সুন্দরী ম্যাডাম খুব ঘাবড়ে গেলেন। যেন আমি বেসম্ভব কিছু বলেছি। উনি কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। “সমস্যা হলে থাক। লাগবে না।” “আব্বার নাম্বার দিয়ে কি করবেন?” “এইতো দিলেন কথা বাড়িয়ে। ভেবেছিলাম আপনার আব্বার সাথে আগে কথাগুলো বলে নেব। তা শুনতেই যখন চান তবে শুনুন, আপনার বিয়ের আলোচনা করবো। আপনার আপত্তি আছে?” “জ্বি না। তবে…।! “তবে কি?” “পাত্র কি করে?” “পাত্র অপ্রতিষ্টিত বেকার। বিয়ে করে বেকারত্ত দূর করার চেষ্টা করবে। নাম্বার দিন। আপনার সাথে পরে কথা হবে। যদি আপনার আলাদা পছন্দ থাকে তবে বলতে পারেন।” “না আমার আলাদা কোন পছন্দ নাই। এই নিন নাম্বার। আমি কাগজে লেখা নাম্বার নিয়ে চলে আসলাম। কিন্তু ফোন দেওয়া হয়নি।
*অগল্প বেলাল আহমেদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে