আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১২

0
2997

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

–অন্নি এই অন্নি
–হুম
–এই ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছ কেন
–কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি
–তুমি ঠিক আছ তো (চোখ মেলে তাসিনের দিকে তাকালাম ফ্লোরে কিভাবে আসলাম আবার ঘুমিয়েও পরেছিলাম কিছুই বুঝতে পারছি না, মাথাটা কেমন যেন করছে অতিরিক্ত টেনশন করার কারনে হয়তো)
–বিছানায় গিয়ে ঘুমাও
–হুম
ফ্লোর থেকে উঠতে চাইলাম তখনি মাথাটা কেমন যেন করে উঠলো সাথে সাথে পরে গেলাম

ভেবেই নিয়েছিলাম এখন পরে গিয়ে বুঝি মাথাটা ফেটে গেছে কিন্তু পরার আগেই তাসিন ধরে ফেলেছে, ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আছে আমাকে, আস্তে আস্তে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম আজো ওর চোখ দুইটা আমার চোখে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ওকে এভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছি খুন তো ওর বাবা করেছে আর তাসিন তো বলছে খুনি অন্য কেউ তাহলে ওকে কষ্ট দেওয়া কি আমার ঠিক হচ্ছে
–অন্নি
–হুম
–কি হয়েছে তোমার (তাসিন কাঁদছে ওর দুচোখ থেকে পানি টুপটুপ করে আমার উপরে পরছে আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ওর দিকে মাথা নিচু করে ফেললাম, তাসিন আমাকে কোলে তুলে নিল তারপর বিছানায় শুয়ে দিল)
–চুপ করে শুয়ে থাকো
–আমার কিছু হয়নি
–তা তো দেখতেই পারছি
–তাসিন….
–অন্নি প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না চলো সব ভুলে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করি (কিছু না বলে চুপ করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, তাসিন মৃদু হেসে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, দুজনের ঠোটের মধ্যে সামান্য ফাক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো তাসিন ওর ঠোটের উষ্ণ ছুঁয়া আমার ঠোটে ছুঁয়ে দিবে কিন্তু আমি তো এমন কিছু চাই না আমি তাসিন কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না, এক ঝটকায় তাসিন কে দূরে সরিয়ে দিলাম ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
–কি হলো অন্নি
–তাসিন আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
–বুঝেছি আমাকে ভালোবাস এইটা বলবা তো তাড়াতাড়ি বলে ফেলো প্লিজ বিয়ের পর একবারো তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারিনি
–তাসিন আমি ফিরে যেতে চাই
–মানে
–আমি তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছি না চাচ্চুর কাছে চলে যাবো
–অন্নি ফাজলামো করনা প্লিজ
–আমি সিরিয়াসলি বলছি
–আমার সাথে থাকতে চাওনা কেন তুমি না আমায় ভালোবাস
–না আমি তোমাকে ভালোবাসি না
–আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতো (ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু তোমার প্রতি কেমন যেন এক মায়া জন্মে গেছে” এই মায়া বাড়তে দেয়া যাবেনা আমি মুক্তি চাই)
–কি হল চুপ হয়ে আছ কেন বল
–(ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একদমে বলে দিলাম “আমি তোমাকে ভালোবাসি না”)

তাসিন আমাকে ছেড়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে গেলো, জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে, আমি বিছানায় উঠে বসলাম তাসিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “মাফ করে দিও তাসিন তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করার জন্য, আমি এতোটা খারাপ মেয়ে নই শুধু তোমার বাবার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না, তোমাকে কষ্ট না দিয়ে উনাকে শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমান নেই তাই উনাকে পুলিশে দিতে পারিনি আর কাউকে খুন করার মতো এতো সাহস আমার নেই যদি থাকতো তাহলে খুনের বদলে আমিও খুন করতাম”

তাসিন চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার কাছে এসে বসলো তারপর একটুখানি হেসে বললো
–অন্নি তুমি যা চাও তাই হবে কিন্তু তোমার চাচ্চুর কাছে যেতে পারবে না
–কেন
–আমি জেনে শুনে তোমাকে বিপদে ফেলতে পারবো না তাছাড়া আমার পরিবারের সবাই জানে তুমি অনাথ মেয়ে ডিভোর্স এর আগে তোমার চাচ্চুর কাছে গেলে সবাই জেনে ফেলবে
–তাহলে আমি কোথায় যাবো
–ছয়মাসের আগে তো ডিভোর্স হবে না এই সময়টুকু তুমি তোমার কলেজের হোস্টেলে থাক আমি সব ব্যবস্থা করে দিব
–হুম
–আর হ্যা ভালো করে পড়াশুনা করো
–হুম
–এখান থেকে আগামীকাল যাই আজ ভালো লাগছে না বাসায় গিয়ে সবাইকে বলেই তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–ঠিক আছে

রাত আটটা বাজে কিন্তু এই বাংলোতে মনে হচ্ছে গভীর রাত, তাসিন সেই সন্ধ্যায় বেরিয়ে ছিল এখনো ফিরার নাম নেই একা একা খুব ভয় করছে, খাটের এক কোনে বসে আছি হঠাৎ ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো তাসিনের মেসেজ “ভয় পেয়ো না আমি বারান্দায় আছি”
আমি ভয় পাচ্ছি তাসিন বুঝলো কিভাবে ভালোবাসলে হয়তো প্রিয়জনের মনের অনুভূতি বুঝা যায়

রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসলাম তাসিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে হাতে সিগারেট একটু অবাকই হলাম কারন তাসিনের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল না, আমি আসছি বুঝতে পেরে সিগারেট হাত থেকে পেলে দিল
–বাইরে কেন এসেছ এখানে খুব ঠান্ডা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–তুমি ঘুমাবে না
–এখানে ভালো লাগছে
–তোমার ঠান্ডা লাগবে তো, তোমার তো আবার ঠান্ডা লাগলে সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়
–সবাই বাইরের কষ্ট দেখে তাই এমন করে ভিতরের কষ্ট তো আর কেউ দেখে না
–তাসিন
–অন্নি আর একটা বার ভেবে দেখনা প্লিজ তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে
–আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
–যা এত্তোগুলো বছরে ঠিক হয়নি তা আর কখনো ঠিক হবে না সেই ছোট বেলায় ভালোবেসে ছিলাম হারিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু ভুলতে পারিনি প্রতিটা মুহূর্তে কষ্ট পেয়েছি
–দেখ তাসিন আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি আর বাসতে পারবোও না তুমি তোমার জীবনটা নতুন করে শুরু করো
–নতুন করে শুরু করতে হলে তোমাকে ভুলতে হবে যাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি তাকে ভুলবো কিভাবে
–চেষ্টা করো পারবে
–পাগলী (বলে একটু হাসি দিল)
–সারা জীবন একা থাকবে নাকি
–হয়তো
–পারবে
–(আবারো হাসল)
–হাসছ যে
–এমনি
–তাসিন
–যাও ঘুমিয়ে পর সকালে রওনা দিতে হবে আর যা চাইছ তাই হবে আটকাবো না আর তোমাকে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না তাসিনের সাথে অন্যায় করেছি জানি কিন্তু তাসিন কে ভালোবাসাও আমার পক্ষে সম্ভব না চাচ্চু মেনে নিবেন না তাছাড়া আমি জানি তাসিনের বাবা আমার আব্বু আম্মুর খুনি, মেয়ে হয়ে নিজের মা বাবার খুনির ছেলে কে ভালোবাসবো কিভাবে….?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে