আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১১

0
2798

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন কে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিলাম ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি
–অন্নি তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তুমি কি জানো তুমি যে ভুল ধারনা নিয়ে এই অপরাধ গুলো করছ
–কিসের ভুল ধারনা নিজের বাবা কে ভালো সাজাচ্ছ তোমার বাবা আমার আব্বু আম্মুকে খুন করেছে এটাই সত্যি
–ভুল অন্নি তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আব্বু কেন খুন করতে যাবেন
–কারন এই বাংলো, ঢাকার ফ্ল্যাট, দুইটা কম্পানি সবকিছু দুজনের নামে ছিল আর তোমার বাবা আব্বুকে খুন করে সবকিছুর মালিক একা হতে চেয়েছে আর এখন উনি সব একা ভোগ করছে
–আচ্ছা তুমিই বলো আব্বু আর আঙ্কেল তো খুব ভালো বন্ধু ছিল তাহলে আব্বু বন্ধু হয়ে কি বন্ধুকে খুন করতে পারেন
–হ্যা পেরেছে তো লোভে পরে তোমার বাবা আব্বু আম্মুকে খুন করেছে
–তাহলে তোমাকে খুন করলো না কেন তোমার বাবা মায়ের অবর্তমানে তো সব সম্পত্তি তোমারই হবে তাই না
–আমাকে তোমরা খুঁজে পাওনি তাই খুন করতে পারনি
–ভুল করছ অন্নি আব্বু তোমার বাবা মা কে খুন করেননি খুন করেছে তো….
–কে খুন করেছে বলো
–(নিশ্চুপ)
–খুন তো তোমার আব্বুই করেছে তাই চুপ হয়ে আছ
–আসল খুনি কে সেটা বললে তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই এখন বলতে চাইছি না তুমি খুঁজে দেখ পাও কি না
–চাচ্চু বলেছেন তোমার আব্বুই খুনি তাই আমার আর খুঁজার প্রয়োজন নেই
–আব্বু যে খুনি তার প্রমান দিয়েছে তোমার চাচ্চু
–না
–তাহলে বিশ্বাস করেছ কিভাবে প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা যায় না
–চাচ্চু তো আমাকে মিথ্যে বলবে না
–হ্যা মিথ্যে বলবে না কিন্তু সত্যি যে বলেছে এইটারও তো প্রমান নেই খুন করার সময় কি তোমার চাচ্চু ওখানে ছিলো যদি থেকেই থাকতো তাহলে তোমার আব্বু কে বাঁচায়নি কেন
–(নিশ্চুপ)
–যখন খুন হয় তখন তুমি তোমার চাচ্চুর বাসায় ঢাকা ছিলে আমরাও বাংলোতে ছিলাম না ঘুরতে গিয়েছিলাম ফিরে এসে দেখি আঙ্কেল আন্টি কে খুন করা হয়েছে তাহলে আব্বু কিভাবে খুন করলেন বলতো
–তাহলে চাচ্চু আমাকে বললো কেন
–যেদিন খুন হয়েছিল সেদিন কি তোমাকে লাশ দেখানো হয়েছিল
–না চাচ্চু বলেছে আমি অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে ছিলাম
–তুমি কি এইটা জানো তোমার আম্মু জায়গায় মারা গেলেও তোমার আব্বু একদিন পর মারা গিয়েছিলেন
–কি
–হ্যা আর তখনি উনি আব্বুকে সব বলে গেছেন খুনি তোমাকে খুন করতে পারে এই ভেবে উনি তোমার নামে সব সম্পত্তি আব্বুর নামে দিয়ে যান আর উইল করে যান তোমার আঠারো বছর হলে তুমি এই সম্পত্তি ফিরে পাবে
–তাহলে কি চাচ্চু আমাকে মিথ্যে বলেছে কিন্তু মিথ্যে বলবে কেন
–অন্নি তুমি ভুলের জগতে বাস করছ খুঁজে দেখ খুনি তোমার চোখের সামনেই আছে তোমার আপনজনই কেউ একজন
–কে
–আমি বলবো না বললে বিশ্বাসও করবে না তারচেয়ে ভালো তুমি নিজে খুঁজে বের করো তবে হ্যা কখনো যদি খুঁজে ব্যর্থ হও আব্বুর কাছে যেও আব্বুর কাছে প্রমান আছে কে আসল খুনি
–তাহলে এখন নিয়ে চলো তোমার বাবার কাছে
–এখন সম্ভব নয়
–কেন
–আব্বু যদি জানতে পারেন তুমি উনার সেই ছোট্ট অরনী তাহলে অনেক খুশি হবেন কিন্তু যখন জানতে পারবেন তুমি উনাকে খুনি ভেবে এতোকিছু করেছ আর উনার ছেলেকে ভালোবাস না মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেছ তখন উনি অনেক কষ্ট পাবেন, মাত্র হার্ট এট্যাক করেছেন উনি আবার কোনো বড় আগাত দিতে চাইনা
–শুনো এসব বলে লাভ নেই আমি জানি উনিই আব্বু আম্মুর খুনি আর তুমি খুনির ছেলে, আমার তো ভয় হয় কখন জানি তুমি আমাকে খুন করে ফেল
–আরে পাগলী তোমাকে খুন করার ইচ্ছে তো দূরের কথা একটা ফুলের টোকা দিতেও কষ্ট হয়, বৌভাতের দিন তোমাকে তাপ্পর দিয়ে তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি সারা রাত কেঁদেছি বুঝতে পেরেছ একবারও….?
বুঝনি কারন তুমি আমাকে ভালোবাস না তাই এতো কষ্ট দিতে পার
–কষ্ট দিয়েছি বেশ করেছি আরো বেশি দেওয়া উচিত ছিল
–তুমি কখন কিভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছ তা সব জানি কিন্তু কখনো কিছু বলিনি, ইচ্ছে করে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছ, হসপিটালে এসি বাড়িয়ে দিয়েছ, পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছ এখানে এসেও আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্লেন ছিল তোমার সবকিছু জানি কিন্তু কিছুই বলিনি কেন জানো তুমি যদি কষ্ট পেয়ে কাঁদো সহ্য করতে পারবো না
–সবকিছু জানো কিভাবে
–তুমি আমাকে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতে সন্দেহ হয়েছিল তোমার ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে জানতে পারি তোমার চাচ্চুর সাথে কথা বল আর তখন জানতে পারি তুমি সেই অরনী, এসি যখন বাড়িয়ে দিয়েছিলে তখন আমি সজাগ ছিলাম, ছাদে যখন পরী কে কিডন্যাপ করার কথা বলছিলে তখন শুনেছি, খুন করার কথা বলেছ তোমাকে খুন করার ইচ্ছে থাকলে তখনি করতাম যখন তুমি আমাদের সবার কলিজার টুকরা পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছিলে কেন করিনি জানো
–কেন
–কারন তোমার জায়গায় থাকলে আমিও এসবই করতাম
–মানে
–তোমাকে আমি দোষ দিব না কারন তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আর প্রত্যেক সন্তানই তার মা বাবার খুনের প্রতিশোধ নিতে চাইবে সেটা যেভাবেই হউক
(অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে আছি এতোকিছুর পরও তাসিন আমাকে অপরাধী বলছে না)
–যা হবার হয়েছে অন্নি এবার সব ভুলে যাও প্লিজ চলো আমরা সব নতুন করে শুরু করি
–আব্বু আম্মুর খুনিকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই ভুলতে পারবো না আর ভালো করে শুনে রাখ আমি তোমাকে ভালোবাসি না ছয়মাস পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব
–(তাসিন আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো “কিভাবে ভালো বাসাতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি ছয়মাস আমার জন্য যথেষ্ট সময়”)
একটি মুচকি হাসি দিয়ে তাসিন চলে যেতে লাগলো, দরজার কাছে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “অন্নি ভুলেও তোমার চাচ্চু কে বলো না যে আব্বু তোমার বাবা মায়ের খুনি না এইটা তুমি জানতে পেরেছ যদি বলো তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে”

তাসিন বাইরে চলে গেলো আমি আস্তে আস্তে এই রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গেলাম, মাথা ঘুরছে কি হচ্ছে এসব আমার সাথে চাচ্চু বলছে তাসিনের আব্বু খুনি আর তাসিন বলছে অন্য কেউ, আচ্ছা তাসিন চাচ্চু কে বলতে নিষেধ করলো কেন এর মধ্যে আবার কি প্যাচ আছে তাহলে কি চাচ্চু আসল খুনি…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে