Rain Of Love Part-08 And Last Part

0
3161

#Rain_Of_Love ☔
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৮(শেষ_পর্ব)

সময় যে কারো জন্য অপেক্ষা করে না এই জন্যই হয়তো রিয়া ও ইক্ষাণের বিয়ের সময় চলে আসলো। কিন্তু বিয়েতে খুব বড় সমস্যা হলো। সমস্যাটা হলো রোয়ানকে নিয়ে। রোয়ান শুভ্রাকে বিয়ে করবে বলে জেদ ধরেছে। রোয়ানের জেদের কাছে হার মেনে রোয়ানের বাবা উনার ছোট ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন। শুভ্রার বাবা তো খুব খুশি এক বাড়িতেই তার দুই মেয়ে বউ হয়ে যাবে। উনারা রাজি হয়ে পড়লেন। প্রথম প্রথম শুভ্রা রাজি না থাকলেও বাবা মায়ের জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো।

একসাথে দুই বোন ও দুই ভাইয়ের বিয়ে হলো আজ। শুভ্রার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সেও খুব খুশি এই বিয়েতে। গতকাল পর্যন্ত বাংলার পাঁচ করে রেখেছিল মুখ কিন্তু আজ সে বেশ খুশি। তারিন শুভ্রার কানে ফিসফিস করে বলল……

—” কি রে বিয়ের কনে মুখে এত হাসি কেন?”

—” সময় হলেই বলবো।”

তারিন ভ্রু জোড়া কুচকে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল…..

—” সময় কি আজ না-কি অন্যদিন?”

—” আজকেই একটু ওয়েট কর।আর শোন তোকে এখন কি কি করতে হবে।”

—” বল।”

শুভ্রা তারিনের কানে ফিসফিস করে কি কি করতে হবে বলা শুরু করলো। শুভ্রার কথা অনুযায়ী তারিন শুভ্রা-দের বাসার ছাদে সব ঠিক করলো। একা কিছু পারবে না বলে সিফাত,আবির ও বর্ণের সহযোগিতা নিলো। সিফাত ও আবির একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে……

কি ব্যাপার কি হচ্ছে এইসব কিছুই তো বুঝতে পারছে না তারা। এইদিকে বর্ণ তারিনকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ব্যাপার কি কিন্তু তারিন কিছু বলছে না। তিনজনের প্রশ্ন শুনে তারিন বলল……

—” আজ রোয়ান ভাইয়া শুভ্রাকে প্রপোজ করবে তা-নাহলে শুভ্রা শ্বশুড় বাড়ি যাবে না।”

ছোট বোনের এই আবদারে বর্ণ হাসতে লাগলো কিন্তু আবির ও সিফাত বেশ অবাক। তারিন মনে মনে বলছে……

—-” ভালোই হলো আজ এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করা হবে। এইবার দেখবো রোয়ান ভাইয়া কিভাবে আপনি মনের কথা না বলে থাকতে পারেন।”

বিয়ে পড়ানোর পর তারিন শুভ্রা,রোয়ান, রিয়া ও ইক্ষাণকে নিয়ে ছাদে চলে আসলো। কম সময়ের মধ্যে খুব সুন্দর ভাবেই সাজিয়েছে তারা। রোয়ান,রিয়া ও ইক্ষাণ অবাক হচ্ছে এইসব দেখে। শুভ্রা তখন কোমরে হাত রেখে বলল…..

—” আজ ইক্ষাণ ভাইয়া আপুকে প্রপোজ করবে আর আপুর দেবর মানে আমার একমাত্র স্বামী আমাকে প্রপোজ করবে। প্রোপোজ না করলে আমরা দুই বোন শ্বশুড় বাড়ি যাবো না।”

রিয়া ইক্ষাণকে বলল…..

—” এই প্রপোজ করো তা-নাহলে যাবো না শ্বশুর বাড়ি।”

বেচারা দুই ভাই বউ ছাড়া তো আর যেতে পারবে না তাই শেষমেশ প্রপোজ করেই ফেললো। এইদিকে সিফাত ও আবির রোয়ানের কানে গিয়ে বলছে……

—” এই মেয়েকে কেন প্রপোজ করলি তুই তো সেই বৃষ্টির রাণীকে ভালোবাসিস।”

রোয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুভ্রা একটি ডাইরি নিয়ে আসলো। ডাইরির উপরে লেখা #Rain_Of_Love অর্থাৎ প্রেমের বৃষ্টি। রোয়ান শুভ্রার হাতে ডাইরি-টা দেখে খুব অবাক হলো। শুভ্রার দিকে জিজ্ঞাসা সুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রা হালকা কেশে বলল……

—” লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসতে পারেন মুখে প্রকাশ করলে কি সমস্যা আপনার মিষ্টার বিয়াই ওরফে জামাই ?”

—” এই ডাইরি তোমার কাছে কেন? এইটা তো আমার রুমে থাকার কথা।”

—” গতকাল বিকালে আপনার বাসা থেকেই এনেছি।”

—” আমার বাসায় কখন গেছো তুমি?”

—” গতকাল হলুদ দেওয়ার পর বিকালে আমি, আপু ও তারিন ইক্ষাণ ভাইয়াকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাই। আপনি তো ব্যাচেলার পার্টি করতে চলে গেছিলেন । তখন ভাইয়াই আমাদের নিয়ে যায় আপনাদের বাড়িতে। আপু আর ভাইয়া আলাদা একটু কথা বলতে যাওয়ায় আমি আর তারিন আপনার রুমে যাই। তখন হবু বরের রুম ঘাটাঘাটি করে এই ডাইরি পাই। বাসায় এসে ডাইরি পড়ে বুঝতে পারি আপনি সেই লুকিয়ে থাকা প্রজাপতি পথিক।”

সাত মাস আগে……….

বৃষ্টি প্রচুর বৃষ্টি। চৌরাস্তার মোড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটি মেয়ে নেমে পড়লো। ময়ূর যেমন বৃষ্টি দেখলে পেখম মেলে নাচা শুরু করে ঠিক তেমনি শুভ্রা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নাচতে লাগলো। গাড়ির ভিতর থেকে এই দৃশ্য তাকিয়ে দেখছে রোয়ান। প্রথম দেখায় তার শুভ্রাকে ভালো লেগে যায়। প্রথম দেখায় ভালোবাসা সৃষ্টি তার নাম লাভ এট ফার্স্ট সাইট কিন্তু রোয়ানের কাছে মনে হলো রেইন অফ লাভ। যেদিন থেকে সে শুভ্রার নাম বৃষ্টির রাণী রেখেছে। প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা রোয়ানের অভ্যাস হয়ে গেছে। সিফাত ও আবিরকে শুধু তার ভালোবাসার কথা বলেছে কিন্তু শুভ্রা যে সেই মেয়ে তা জানায় নাই। সেইদিন বাসে যা ঘটেছে সবই ছিল শুভ্রাকে কাছ থেকে দেখার জন্য। অবশ্য চড় মারা নিয়ে শুভ্রাকে সে শাস্তি দিয়ে রাগের বশে।

শুভ্রা প্রতিনিয়ত ফিল করতো কেউ তার পিছু নিচ্ছে তাকে দেখছে কিন্তু মানুষটি তার সামনে আসতো না। শুভ্রা বুঝতে পারতো যে তাকে ফলো করছে সে ছেলে। ছেলেটিকে সব সময় পিছন থেকে দেখেছে সামনে থেকে দেখার সুযোগ সে পায় নাই। নাহ অনেকবার পেয়েছে সামনে থেকে দেখার সুযোগ কিন্তু সে নিজ থেকেই দেখতে চাইতো না। শুভ্রার মনে ছেলেটির জন্য সব সময় অন্য রকম ফিল হতো। সে চাইতো ছেলেটি যেন নিজ থেকেই তার সামনে এসে ধরা দেয়। গতকাল রোয়ানের ডাইরি পড়ে সে বুঝতে পেরেছে রোয়ানেই সেই ছেলে।

তাদের এই লুকোচুরি প্রেমের কথা সবাইকে জানালে সবাই খুব অবাক সাথে খুশি হয়। তারিন তখন চিল্লিয়ে বলা শুরু করলো……

—” ওই তোরা আরেকবার প্রপোজ করবি। কজ আগের প্রপোজ ছিলো বিয়ের আর এখন হবে লুকোনো প্রেমের।”

বর্ণ তখন তারিনের কানে ফিসফিস করে বলে…..

—” ওই চল আমরাও একজন আরেকজনকে প্রপোজ করি।”

তারিন রাগ করে বলল……

—” ছিঃ কি অশ্লীল। দুই বোন আর তাদের বরের সামনে প্রপোজ করতে লজ্জা করবে না। অসভ্য ভাই ও অসভ্য প্রেমিক।”

—” সব কিছুতেই তোর এত লজ্জা কই থাকে রে?”

—” ওই যাও তো পরে কথা বলবো এই নিয়ে।”

বর্ণ মন খারাপ করে ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে রইলো। রোয়ান শুভ্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো……

—-” বৃষ্টি যেমন তোমার মনকে প্রফুল্ল করেছে ঠিক তেমন ভাবেই আমার মনে প্রেমের দোলা দিয়ে গেছে। এলো মেলো চুলগুলোতে যখন বৃষ্টি ছুঁয়ে দিচ্ছি-লো তখন বৃষ্টির প্রতি খুব রাগ ও হিংসা হয়েছিল আমার। সেদিনের সেই প্রেমের ছোঁয়া আজ আমাকে যে এইভাবে রাঙিয়ে দিবে কখনো ভাবী নি। দিন শেষে একটি কথাই বলবো আমাদের মন একজন আরেকজনকে দেওয়ার প্রধান অতিথি কিন্তু বৃষ্টি। সবার প্রেমের একটা নাম থাকে আর আমাদের প্রেমের নাম থাকুক রেইন অফ লাভ। বৃষ্টিকে যদি ক্রেডিট না দেই তাহলে ভীষণ অভিমান হবে বৃষ্টির, বুঝেছো বৃষ্টির রাণী? এখন কি তুমি এই অভদ্র, অশ্লীল, অসভ্য বিয়াইয়ের হাতে হাত রেখে সারা জীবন থাকতে পারবে?”

—” অবশ্যই পারবো বিয়াই সাহেব।”

রোয়ান সবার সামনে শুভ্রাকে কোলে তুলে নিলো। ইক্ষাণ ছোট ভাইয়ের দেখাদেখি সেও রিয়াকে কোলে তুলে নিলো। ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে দুই বোনের রোমান্স দেখে বর্ণ এসে তারিনকে কোলে তুলে বলল……

—” লাভ ইজ লাভ যেখানে লজ্জার কোনো স্থান থাকবে না।”

বর্ণের কথায় সবাই হেসে দিলো।

তিনমাস পরে…….

আজ তারিন ও বর্ণের বিয়ে। অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে তাদের। তারিনের বোন সাদিয়া কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি ছিল না। শুভ্রা ও রিয়ার কথায় শেষমেশ বাধ্য হলো বিয়েতে।

বিয়ের দিন বর্ণ সাদিয়ার সামনে গিয়ে বলল…..

—” আপু আমি জানি আপনি আমাকে এখনও মানতে পারেন নাই। কিন্তু আমি একটা প্রশ্ন করবো উত্তর কি দিবেন?”

—-” বলো?”

—” দুলাভাই তো আপনাকে খুব ভালোবাসে তাই না?”

ছোট বোনের বরের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে লজ্জা পেলো সাদিয়া তবুও বলল…..

—” হুম।”

—” ভাইয়া আপনার জন্য তার পছন্দের খাবার গুলো বাদ দিতে দু বার ভাবলো না। আপনাকে খুশি রাখার জন্য উনি সব কিছুই করছে। শুনলাম আপনি দুই মাসের প্রেগনেন্ট। আপনার মনে মা হওয়ার এক আলাদা আনন্দ সৃষ্টি হয়েছে। জানেন একজন মা যখন তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে তখন তিনি সন্তানের ভালোর জন্য সব কিছুই করতে পারে। যে সন্তান ছোট থেকে এই খাবার ওই খাবার খেতে পছন্দ করত যখন সেই ছেলে বিয়ের পর খাবার দেখেও খায় না তখন একটা মেয়ের যে কষ্ট হয় শুধু সেই মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ধরুন আপনার ছেলে খুব করলা খেতে ভালোবাসে কিন্তু বিয়ের পর খাচ্ছে না তখন আপনার কষ্ট হবে না?”

সাদিয়া মাথা নিচু করে রেখেছে। আসলেই তো মায়ের তো কষ্ট হবেই। সাদিয়া তার ভুল ধারণা গুলো বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলো বর্ণের কাছ থেকে।

—” আপু আপনি আপনার শাশুড়ি মায়ের সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলুন। কথার কাটাকাটি না করে উনাদের বুঝতে শিখুন আমি শুনেছি তারিনের কাছ থেকে যে, ভাইয়া আর উনার বাবা মা বড্ড ভালো। ভাইয়ার যা ইচ্ছা খাবে এতে বাঁধা না দিয়ে উনার পছন্দের খাবার নিজের হাতে রান্না করুন যদি এক প্রকার অস্বস্তি বোধ হয় তাহলে অন্যকে দিয়ে রান্না করান। আর একটা কথা এক মায়ের এক ছেলেকে কোনোদিন খারাপ ভাববেন না। বাবা মায়ের ভালোবাসা এক ছেলে থাকুক আর একশো ছেলে থাকুক সবার জন্যই সমান।”

সাদিয়া খুশি হলো এই ভেবে তার ছোট বোন ভালো একজন ছেলেকে তার জীবনে বেছে নিয়েছে।

__________

শুভ্রা ও রোয়ান খুব ভালোই আছে। এখনও শুভ্রার খুনসুটিতে সারা বাড়ি মুগ্ধ করে। রিয়া ও ইক্ষাণের ভালোবাসা দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে। ইক্ষাণের গায়ের রঙ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে রিয়া তাদের উল্টো বুঝিয়ে এসেছে। তারিন সে তো শুভ্রার জিরক্স কপি। বর্ণকে বার বার ভাইয়া ডেকে ভুল করে আর শাস্তি পায়। শাস্তি গুলোও খুব মজার হয়। কানে ধরে উঠবস করা, কিস করা, শাড়ি পরা, পড়তে বসা । অদ্ভুদ অদ্ভুদ শাস্তি। সব মিলিয়ে তিন জুটি ভালো ভাবেই সংসার করছে। রাগ অভিমান হলেও ভালোবাসার কাছে তা কিছুই না। ভালো থাকুক তাদের সম্পর্ক গুলো। বৃষ্টি এসে যেমন সব ধুলো মুছে দেয় তাদের ভালোবাসাও যেন বৃষ্টির পানির মতো সচ্ছল হোক। কষ্টের মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে এই শহরে সবুজ পাতার হলুদবর্ণ দেয় যে নিমিষে সরিয়ে ।

আকাশে আজ মেঘ জমেছে,
রাগ করেছে ভারী।
আজ নাকি সারাদিন,
রোদের সাথে আরি।
রোদটাও খুব অভিমানী,
উঠতে নাহি চায়,
এই সুযোগে বৃষ্টি নাকি,
দারুন মজা পায়।**

সমাপ্ত………..

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে