অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১

0
6032
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আজ সকালেই চুহেস সুন্দর নগর এসে পৌচায়, গ্রামটির নাম সুন্দর নগর, গ্রাম টি সত্যি অসাধারন সুন্দর চুহেস এখানে একটা রেস্ট হাউজে উঠেছে
এখানে তার থাকার কোন আপন নীড় নেই স্থায়ী ভাবে সে ঢাকায় থাকে ঢাকা নীল ক্ষেত তার বিশাল বিলাস বহুল বাড়ি মেহেরা মেনশন নামে খুব পরিচিত,,

গ্রামে আসার একটাই কারন ছোটবেলার কিছু স্মৃতি হাতড়ে বের করা, চুহেস এসেই বিশ্রামের জন্য শরির টা এলিয়ে দিলো সোপায় সংগে এসেছে তার বিশ্বস্ত পি এ নিহার

নিহার- স্যার আপনি বেডরুমে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিন সকাল নটার আগে নাস্তা আসবে না বলেছে রেস্ট হাউজের বাবুর্চি

চোখ বন্ধ করেই আরাম করছিলো চুহেস নিহারের কথা শুনে চোখ খুলে বলে, আমি এখন ঘুমাবো না নিহার গ্রাম টা ঘুরে দেখতে হবে বহুদিন পর গ্রামে আসা প্রায় পনেরো বছর হবে এই গ্রাম ছেড়েছি

নিহার – স্যার খারাপ সময় গুলো মনে না করাই ভালো ,

চুহেস- নিহার আমাকে আমার ঐ স্মৃতি গুলোই বাচার উৎসাহ দেয়, আমার এই কোটি কোটি টাকা আমাকে সেটা দিতে পারে না যেটা দিচ্ছে আমার ফেলে আসা স্মৃতি গুলো

নিহার- নাহ মানে স্যার

চুহেস- বুঝেছি তুমি চাইছো আমি এখন একটু ঘুমিয়ে নিই, পরে নাস্তা খেয়ে ঘুরতে বের হতে তাই তো

নিহার- একদম ঠিক স্যার

চুহেস- ঠিক আছে তোমার কথাই রইলো
চুহেস তার সবার ঘরে এসে গা টা এলিয়ে দিলো লম্বা জার্নির পরে সত্যি একটি বিশ্রামের দরকার ,
রেস্ট হাউজের জানালা দিয়ে বাইরে আকাসের দিকে চোখ যায় সত্যি গ্রামের আকাশ অনেক স্বচ্ছ যা শহরে থেকে উপভোগ করা যায় না,

মনে পড়ে এই সুন্দর নগরের এক সুন্দর রাতে বাবুই কে চাঁদ দেখাতে বের হয়েছি কতোইবা তখন আমার বয়স সাত কি বা আট হবে কি বা বুঝতাম তবুও জেঠি মা আমায় অনেক মেরেছে কেনো একা একা বাবুই কে নিয়ে বের হয়েছি তাই, এটা কি কোন অন্যায় হতে পারে,

আজ অনেক গুলি বছর বাবুই কে দেখিনা এখন নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে, আচ্চা ও কি আমাকে দেখে ছিনতে পারবে,আমার কথা কি মনে রেখেছে ঐ টুকু বয়সের মেয়ে কি আমার কথা মনে থাকবে,

এমন সময় কেউ এসে দরজায় নক করলো
চুহেস ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো ঘড়ি দেখলো আট টা বাজে এখনো তো নাস্তার সময় হয়নি তা হলে কে এসেছে

চুহেস- দরজা খোলা ই আছে বিতরে এসো দেখলো দরজা ঠেলে নিহার ঘরে ঢুকলো হাতে নাস্তার ফ্লেট

চুহেস- কি ব্যাপার নিহার সময়ের আগে নাস্তা চলে এলো যে

নিহার- স্যার আপনাকে দেখে বড্ড ক্লান্ত মনে হলো তাই বাবুর্চি কে তাড়া দিয়ে জলদি নাস্তা নিয়ে এলাম খেয়ে আরাম করুন ভালো লাগবে

চুহেস- তুমি আমার কথা এতো ভাবো কেনো নিহার
এই জগতে যার কেউ নিয়ে তাকে নিয়ে এতো ভাবা কি ঠিক

নিহার- স্যার এমন ভাবে বলবেন না শুনতে খারাপ লাগে, আল্লাহ তায়ালা কাউকেই একা করে রাখেন না জীবন চলার পথে কেউ ই একা চলতে পারে না,
সাথীর প্রয়োজন হয়, হয় তো একটু আগে বা একটু পরে তার দেখা পায়

চুহেস- তুমি বলছো আমি এই অভেলায় এসে চলার মতো সাথি পাবো

নিহার- অভেলায় বলছেন কেনো স্যার আপনার বয়স আর কতোই হলো এর থেকে ও অনেক বেশি বয়সে মানুষ বিয়ে করে সংসারি হয়
এর মাঝে চুহেস এর খাওয়া শেষ হয়ে যায় নিহার আর কথা না বাড়িয়ে এঁটো প্লেট গুলো নিয়ে চলে যায়

নিহারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চুহেস ভাবছে আজ কালকার যুগে নিহারের মতো ছেলে পাওয়া সত্যি দুষ্কর, সততা বিনয়ী সব দিক দিয়ে ই অনন্য নইলে আমার মতো উগ্র মেজাজের একটা ছেলের পি, এ, কিছুতেই হতে পারতো না

চুহেস একটা খারাপ দিক হুট হাট রেগে যাওয়া আর সব রাগ যায় নিহারের উপরে,আর কার উপরই বা রাগ ঝাড়বে কেউ তো নেই তার
ঘরে, বাইরে, একজন ই আছে নিহার। আর ঘোটা দশেক কর্মচারী যারা বাড়িতে কাজ ছাড়া আর কোন কিছুতেই মাথা ঘামায় না

বিকেলের দিকে চুহেস গ্রাম টা ঘুরে দেখতে বের হয় সাথে আছে নিহার

নিহার- স্যার আপনি ঘেমে উঠেছেন আপনার মাথার উপর ছাতা টা তুলে ধরি

চুহেস- নাহ দরকার নেই ভালো লাগছে গোধূলি বিকেল, লাল রোদ
হাটতে হাটতে অনেক দূর এসে থেমে গেলো চুহেস
নিহার- স্যার কিছু বলবেন

চুহেস- হুম একটু কদমতলী দিঘীর পাড় যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে ভাবছি কাল সকাল সকাল যাবো আজ এখানেই ঘাসের উপর বসে গোধূলি সন্ধ্যা দেখবো,
বসে পড়লো চুহেস ঘাসের উপর, নিহার বসবে কি বসবে না,ইতস্ত করছে

চুহেস- বসে পড়ো নিহার ভালো লাগবে , তুমি শহরের পরিবেশে জন্ম নিয়েছো গ্রামের এগুলা দেখার সোভাগ্য হয়নি তোমার,আজ যখন সুযোগ পেলে তখন একটু গ্রামের মাটির সাথে মিশে দেখো খুব আনন্দ লাগবে

নিহার ভাবছে স্যার গ্রামের মাটিতে পা দিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে, ঢাকা হলে তো এই দুই দিনে দুই হাজারের ও বেশি ধমক দিতো
তার ছেয়ে বেশি ভাংচুর করতো,
কিন্তু এই সুন্দর নগরের মাটি স্পর্শ করতে ই যেন উনার রাগি আচরণ গুলো কথায় হারিয়ে গেছে

আসতে আসতে সন্ধ্যা ফেরিয়ে রাত নেমে এলো
চুহেস বসে আছে ঘাসের উপরে যেমন টা বিকেলে বসে ছিলো ঠিক তেমন ই ভাবেই বসে আছে একটু নড়চড় করেনি মনে হচ্ছে চুহেস তার দেহ থেকে মনকে আলাদা করে অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে

নিহার- স্যার অন্ধকার হয়ে গেছে চলুন এবার ফেরা যাক

নিহারে কথা শুনে চুহেস চমকে উঠলো এতোক্ষনে মনে হয় তার দেহে প্রান এসেছে নড়েচড়ে বসে বল্লো
-ও হা চলো এবার উঠি সত্যি রাত নেমে গেছে
রেস্ট হাউজে এসে ওরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো

to. be continue

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে