My_Mafia_Boss পর্ব-২৪

0
5107

My_Mafia_Boss পর্ব-২৪
Writer:Tabassum Riana

হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটারের সামনে ছন্নছাড়া অবস্থায় পড়ে আছে রুহী।বাঁ কাঁধের উড়না ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।পিঠের চুল গুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে।হাঁটু গেড়ে ফ্লোরের ওপর বসে আছে রুহী।চোখ জোড়া লাল টুকটুকে হয়ে আছে। জামার গলার কিছুটা অংকরেনি শ রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে ওর। চোখ জোড়া ফুলেেৃআছে। চোখের কোনা বেয়ে অনবরত অশ্রুগড়িয়ে পড়ছে ওর।রক্তাক্ত হাত দুটি চোখের সামনে আনলো রুহী কিছুক্ষন আগে ও মানুষটিকে জাপটে ধরেছিলো পরম ভালোবাসায়।

কিছুক্ষন আগে
রোয়েনের ঘুমভাঙ্গলো মুখে পানির ছিটা পড়ায়।চোখ খুলে তাকায় রোয়েন।রুহী চুল মুচ্ছে।মুখ কঠিন হয়ে উঠে রোয়েনের কি হচ্ছেটা কি?এভাবে পানি ছিটানোর মানে কি?ধমক দিয়ে বলে উঠে রোয়েন। আ আ আমিইইই আসলে বুঝতে পারিনি মাথা নিচু করে রুহী।রোয়েন কেমন যেন ঘোরে চলে যায় ভিজা চুলে রুহীকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে তারা ভাবনাতীত ছিলো রোয়েনের।রুহী চুল বেশ লম্বা আর ঘন।চুল গুলো রুহীর গালের সাথে লেপ্টে আছে।টুপটুপ করে পানি পড়ছে চুল থেকে। রোয়েন উঠে রুহীর দিকে এগিয়ে আসে।রুহী রোয়েনকে একনজর দেখে মাথা নিচু করে ফেলে।বুকের ভিতর ধড়াসধড়াস করে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে কে যেন।রোয়েন রুহীর চুলের ভিতর নাক ডুবিয়ে মিষ্টি ঘ্রান নিতে থাকে। রুহীর এক হাত চেপে ধরে রোয়েন।হাতটি ধীরে রুহীর হাত বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।রুহীর নিশ্বাস খুব দ্রুত উঠা নামা করছে।রোয়েনের হাতটি রুহীর কাঁধ ছাড়িয়ে চুলের ভিতরে চলে গেল।রুহীর ঘাড়ে রোয়েনের হাত বিচরন করছে।রোয়েনের উষ্ঞ ছোঁয়া রুহীকে মাতাল করে দিচ্ছে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় রোয়েন সরে আসে ভ্রু কুঁচকে রুহীর দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে রোয়েন।ক

রুহী আলমারি খুলে রোয়েনের জামা কাপড় বের করে খাটের ওপর রেখে নাস্তা বানাতে নিচে চলে আসে।লোকটার আলু পরোটা খুব পছন্দ আর সাথে সবজি হলে তো কথাই নাই।একচুলায় সবজি বসিয়ে অপর চুলায় পরোটা ছেঁকতে শুরু করেছে রুহী।

স্যার ডার্ক গ্রুপ আজ কিছু একটা করতে পারে।আমাদের লোক ওদের আস্তানার আশেপাশেই ছিলো।ওদের কথা শুনেছে ফোনের অপরপাশের লোকটি বলছিলো।রোয়েনের কপালের রগ ফুলে উঠেছে।চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।ওরা কিছু করার আগেই ওদের উড়িয়ে দেবো আমি রাগী গলায় বলে ফোনটি খাটের ওপর ছুড়ে মারলো রোয়েন।আ আ আ রুহীর চিৎকার ভেসে আসে নিচ থেকে।এই মেয়ে আবার কি করলো?রোয়েন দৌড়ে নিচে চলে আসে।রুহী কল ছেড়ে হাত পানির নিচে দিয়ে কান্না করছে।রোয়েন রুহীর কাছে গিয়ে হাত ধরে দেখলো হাতের পাতা লাল হয়ে গেছে।রুহীর গালে জোরে চড় বসিয়ে দিলো রোয়েন।কেন এসব করতে যাস?যা পারিস না কেন করিস?তোরে কি এগুলা করতে বলছি?চিৎকার করে বলতে থাকে রোয়েন।রুহী গালে হাত দিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে আর রোয়েনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

কি হলো কথা বলিস না ক্যান? কেন করতে গেলি এসব?চাকর বাকর কি নাই?চিৎকার করে বলে রোয়েন।রুহী আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে রুমে গিয়ে খাটে বসে কাঁদতে লাগলো।রোয়েন রুহির কাছে এসে বসে।রোয়েন কে দেখে রুহী সরে যেতেই ওর হাত ধরে ফেলে রোয়েন একদম নড়চড় করবিনা।রুহির হাতের পোড়া জায়গায় মলম লাগাচ্ছে রোয়েন।রুহী আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলো এখানে আগে দম বন্ধ হয়ে আসতো কিন্তু এখন সবচেয়ে আপন এই বাসাটাকেই মনে হয়।আপনার ধমক বকা গুলো আগের মতো খারাপ লাগেনা এখন।

আপনার পাশাপাশি থাকতে ভাল লাগে,সাহস পাই। আপনার অনুপস্থিতি খুব বেশি কষ্ট দেয় আমাকে।যা বানিয়েছিলাম আমার নিজের জন্য নয় আপনার জন্যই বানাচ্ছিলাম।আপনার পছন্দের আলু পরোটা।হাত পুড়েছে আমার আপনি কেন এমন করলেন?আপনিকি বুঝেন না আপনাকে রান্না করে খাওয়া তে ভাল লাগে আমার?কাঁদতে বলছিলো রুহী।রোয়েন রুহীর দিকে এক নজর তাকিয়ে মলম লাগানোয় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে(তারমানে আমার মায়াবতী ও ভালোবাসে আমাকে)ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে রোয়েনের। মলম লাগিয়ে রুহীকে একটানে কোলে তুলে নিলো রোয়েন।রুহী হাতপা ছুড়ে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু রোয়েন নাছোড়বান্দা।নড়লেই রুহীর দিকে রাগী চোখে তাকালে রুহী চুপ হয়ে যায়।রুহীকে ডাইনিং টেবিলে বসালো রোয়েন।রুহীর দিকে নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিলো খাও(ধমক দিয়ে)।রুহী রোয়েনে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।রোয়েন প্লেট হাতে নিয়ে রুহীকে খাইয়ে দিলো এবং নিজে ও খেয়ে নিলো।

নাস্তা সেড়ে দুজনে উঠে রুমে চলে আসে।রোয়েন গোসল সেড়ে বেরিয়ে আসে।রোয়েনের খালি লোমশ বুকে যতোবারই নজর পড়ে রুহীর ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।হঠাৎ চোখ পড়লো রোয়েনের পেটের একপাশে সেলাইয়ের দাগ।রুহী একনজর সেটিকে দেখে রোয়েনের দিকে অবাক চোখে তাকালো।রোয়েন রুহীর দিকে তাকিয়েই শার্ট জড়িয়ে নেয় শরীরে।রুহী আস্তে করে বলল ঐখানে কোন অপারেশন হয়েছিলো?সেটা তোমার না জানলে ও চলবে,ভালো মতো শুনে রাখো কখন ফিরবো জানিনা।আমার ফিরার আগ পর্যন্ত রুম থেকে বের হবানা,আমি মরে গেলে ও না।রাগী গলায় বলে নিচে নেমে যেতে লাগলো রোয়েন।রুহী ও পিছু পিছু নেমে আসে।রোয়েন দরজা খুলতে যাবে তখনই ওর কাঁধে কারোর হাতের ছোয়া পায়।পিছনে তাকিয়ে রুহীকে দেখতে পায় রোয়েন।কি হলো নিচে নামলে কেন ধমক দিয়ে বলে উঠে রোয়েন।কিছু না বলে রোয়েনকে জড়িয়ে ওর বুকে মাথা রাখে রুহী।কেন জানি খুব ভয় হচ্ছে রুহীর মুখ ফোঁসকে বলে উঠে আজ না গেলে হয়না?রোয়েন রুহীর মাথায় হাত বুলিয়ে সরিয়ে দেয় ওকে সরো যেতে হবে আমার ধমক দিয়ে বলল রোয়েন।আরেকটা কথা কেউ মরলে ও নিচে নামবানা বলেই বেরিয়ে যায় রোয়েন।

রুহী কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রোয়েনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রোয়েন যতো দূরে চলে যাচ্ছে রুহীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।রোয়েনকে এখন আর দেখা যাচ্ছেনা।রুহী মুখে হাত চেঁপে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসে।বুকে বালিশ চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে রুহী।নিচে নেমে বারবার দরজার দিকে তাকায় রুহী।রোয়েনের নম্বরে কল দিতেই ঘরে ফোন বেজে উঠলো।রুহী দৌড়ে ফোন খুঁজতে লাগলো।ডাইনিং টেবিলের ওপর ফোন বাজছে।ম্যাম আপনি উপরে যান স্যার জানলে রাগ করবেন কাজের লোকটি বলল।কিছু হবেনা আমার আস্তে করে বলল রুহী।রোয়েনের ফোনটি হাতে নিয়ে রুমে চলে এলো রুহী।কানের সামনে বারবার রোয়েনের বলা কথাটা বাজছে”আমি মরে গেলে ও নামাবানা”রুহীর ভিতর ভিতর খুব ভয় হচ্ছে, অদ্ভুত এক আতংক ওকে গ্রাস করেছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে