My_Mafia_Boss পর্ব-১৪

0
5552

My_Mafia_Boss পর্ব-১৪
Writer:Tabassum Riana

রুহী কেমন একটা ঘোরে চলে গেল।সংসার ব্যপারটা খুব বেশি ভাবাচ্ছে ওকে।সংসারটা ওর?ওকেই সামলাতে হবে?কি করে সামলাবে ঘরটাকে?মানুষটাযে ভীষন রাগী খুব ভয় হয় ওর।রুহীর ভাবনায় ছেদ পড়লো রোয়েনের ধমকে!”কি হলো ভাবছো কি অতো?যাও শোও।কিছু বলতে যেয়ে ও সাহস পায়নি রুহী।গুটিশুটি মেরে খাটের এককোনায় শুয়ে পড়লো।লোকটার পদচারনা শুনতে পাচ্ছে ও।পায়ের একেকটা শব্দে রুহীর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।কেন জানি সে আশেপাশে থাকলে খুব সাহসী মনে হয় নিজেকে।মামীকে আর ভয় পেতে হয়না।হঠাৎ রোয়েন রুহীর হাত ধরে নিজের বুকের ওপর ফেলল।রুহী উঠে যেতে চাইলে ওর কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রোয়েন।রুহী রোয়েনের দিকে তাকাতে পারছেনা। শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

আর যেন বালিশে শুতে না দেখি ধমক দিয়ে বলে উঠলো রোয়েন।রুহী মাথা নিচু করে ঝাঁকালো।রোয়েন রুহীর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে নিজের সাথে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।রুহী শুয়ে ভাবছিলো এ কোন ধরনের সম্পর্কে বাঁধতে চাইছেন ইনি?ভালবাসেন??নাকি আমার ওপর করুনা করে এত কিছু করলেন।গাড়িতে যা করলেন সেটাকি করুনার মধ্যে পড়ে?সেটাতো কাউকে মনের গভীর থেকে চাইলে করা যায়।রোয়েনের বুকে খুব ধীরে হাত রাখলো রুহী।
রোয়েনের প্রত্যেকটা হৃদকম্পন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ও। এভাবে কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়লো রুহী।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই মায়াবতী কে মন ভরে দেখে নিলো রোয়েন।রুহীর গালের ওপর থাকা চুল গুলোকে সরিয়ে দিলো আলতো হাতে।পাশের ছোট্ট এলার্ম ঘড়িটাকে চেক করে রুহীকে বালিশে শুইয়ে উঠে পড়লো রোয়েন।জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে রুহীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে রেগে গেল রোয়েন।এই মেয়ের কি খবর নাই যে ওর ক্লাশ আছে?রুহী!!! রুহী চিৎকার করে ডাকতে লাগলো রোয়েন।

রুহীর ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে পড়লো।হঠাৎ এভাবে চিৎকার করে উঠায় বুক কেঁপে উঠেছে।ক ক কি হলো?রুহী ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো।খেয়াল নেই তোমার ক্লাশ আছে যে?ধমক দিয়ে বলল রোয়েন।যাও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও চিৎকার করে বলল রোয়েন।রুহী দ্রুত খাট থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।পাশের রুমে এসে লাগেজ থেকে স্কুলের জামা বের করে ফ্রেশ হতে চলে গেল রুহী।রোয়েন নিচে এসে নাস্তা বানাতে বলে সোফায় বসে খবরের কাগজ হাতে নিলো।রুহী ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।স্কুলের জামা ঠিক করে নিচে নেমে এলো।রোয়েন খবরের কাগজ পড়ায় মগ্ন। রুহী একটু কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রোয়েন খবরের কাগজ থেকে মুখ সরিয়ে রুহীর দিকে তাকালো।স্কুল ড্রেসে একেবারে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।বেনী করা চুল গুলো কে একপাশে ফেলে রেখেছে রুহী।বেনিটা পেট ছাড়িয়ে আরো নিচে চলে গিয়েছে।কিছুক্ষন রুহীর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওর কাছে এগোতে শুরু করলো।রুহী চোখ নিচে নামিয়ে পিছুচ্ছে ক ক কোন ভ ভ ভুল হয়েছে???পিছুতে পিছুতে বলল রুহী।তুমি পিছাচ্ছো কেন? গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো রোয়েন।

স্যার!!!!!!নাস্তা বলতে গিয়ে কাজের লোকটা ভয়ে মাথা নিচু করলো।রোয়েন রাগী চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে রুহীর কাছ থেকে সরে এলো।নাস্তা করতে এসো রুহীর দিকে ইশারা করে বলল রোয়েন। রুহী মাথা নিচু করে রোয়েনের পিছু পিছু ডাইনিংটেবিলে এসে বসলো।টেবিল ভর্তি খাবার সাজানো,কিন্তু কোনটার নামই রুহীর জানা নেই।রোয়েন রুহীর প্লেটে একটু খাবার বেড়ে দিয়ে রাগী গলায় বলল ২মিনিটে শেষ করো।রুহী চামচে অল্প একটু কর্নফ্লেক্স মুখে নিতেই ওর গা গুলিয়ে উঠলো।দুধের জিনিস একেবারেই পছন্দ না ওর।রোয়েনের সামনে কিছু বলতে ও পারছেনা রুহী।খেতে খেতে রুহীর দিকে চোখ পড়লো রোয়েনের।কি হলো এভাবে খাচ্ছো কেন?ধমক দিয়ে বলল রোয়েন।

ক ক কইইই কিভাবে খাচ্ছি?ভালো মতো খাও নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা বলে চোখ রাঙ্গিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল রোয়েন।রুহী দম বন্ধ করে কোনমতে খেয়ে উঠে পড়লো।রোয়েন রুহী কে নিয়ে বেরিয়ে গেল স্কুলের উদ্দেশ্যে।রুহীকে স্কুলে ছেড়ে রোয়েন কাজে চলে গেল।

ক্লাশের ভিতর ঢুকতেই স্নিগ্ধা রুহীকে এসে জড়িয়ে ধরলো কেমন আছিস রুহী?

এইতো ভালো।তোদের কি অবস্থা রুহী স্নিগ্ধাকে জড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো।

এইতো ভালো।চল ক্লাশে যাই।রুহী আর স্নিগ্ধা ক্লাশে এসে বসলো।
টিচার রুহীর নাম ডাকার সময় রুহীর চোখ উপরে উঠলো।ওকে “রুহী রোয়েন আহমেদ” নামে ডাকা হচ্ছে।স্নিগ্ধা ও অবাক চোখে রুহীর দিকে চেয়ে আছে।রুহী প্রেজেন্ট দিয়ে বসে পড়লো।ওর মাথা কাজ করছেনা। কি হচ্ছে এসব?এভাবে তো একজন ম্যারিড মেয়েকে ডাকা হয় কিন্তু ও তো আনমেরিড তাহলে???
ঐদিনের ক্লাশ শেষ করে বেরিয়ে এলো সবাই।স্নিগ্ধা আর রুহী একটি বেঞ্চীতে বসে আছে।দুজনে হাসাহাসি করছিলো।তখনই ওদের সামনে সোহান নামের ছেলেটি এসে দাঁড়ায়।

হায় রুহী(সোহান)

হ্যালো রুহী মুচকি হেসে বলল।

বাসায় যাবে না?(সোহান)

হুম।

আমি সোহান রুহীর দিকে একটি হাত বাড়িয়ে দিলো।

রুহী সোহানের দিকে একবার আবার ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে।হাত বাড়াতে যাবে তখনই কেউ রুহীর হাত মচকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে জোরে চড় বসিয়ে দিলো।রাগে ফুঁসছে রোয়েন।চোখ দুটো লাল রক্তবর্ন ধারন করেছে।রুহীর হাত এখন ও ছাড়েনি সোহান।রুহী গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে নিচে চেয়ে আছে।
এসব করতে আসিস স্কুলে?ধমক দিয়ে বলল রোয়েন।
স্যার আসলে ও সোহান কিছু বলতে গেলে থামিয়ে দিলো রোয়েন।তোকে কিছু বলেছি?জাস্ট শাট আপ চিৎকার করে উঠলো রোয়েন।সোহান থেকে চোখ সরিয়ে রুহীর দিকে তাকালো রোয়েন আজই তোর শেষ দিন এখানে।চল রুহীর হাত টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে এলো রোয়েন।
রুহী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে নিচে তাকিয়ে। গাল টা ভীষন জ্বলছে ওর চোখ একহাতে চোখ মুচছে রুহী।রোয়েন গাড়িতে খুব জোরে হাত বাড়ি দিলো প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর নিজের ওপর।রুহীর হাত ধরে জোর করে গাড়িতে ঢুকিয়ে নিজে ও বসে পড়লো ড্রাইভিং সিটে।মাথা ঠিক নেই রোয়েন প্রচন্ড স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে ও।কোনো সিগন্যাল মানছেনা।রুহী পুরো জার্নিতে আাড়ি খেয়েছে মাথায়।বাসার সামনে এসে জোরে গাড়ি ব্রেক করলো রোয়েন।গাড়ি থেকে বের হয়ে রুহীর পাশের দরজা খুলে ওর হাত ধরে টেনে বের করলো।রুহীকে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে চলে গেল রোয়েন। রুমে এসে ঝাটের ওপর ছুড়ে মারলো রুহীকে।হাত ধরে কাঁদছিলো রুহী। পুরো লাল হয়ে আছে হাত।রোয়েন ওর কাছে এসে বসে। রাগী চোখে রুহীর লাল হয়ে যাওয়া হাতটি কোলে নেয়।রুহী হাত সরাতে গেলে রোয়েন ওর হাত টান দিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে রুহীর দিকে তাকালো। রুহী আর হাত টানতে পারলোনা।রোয়েন রুহীর হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর আড় চোখে রুহীর দিকে তাকাচ্ছে।রোয়েনের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নিচে নামিয়ে নিলো রুহী।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে