My Mafia Boss পর্ব-১

0
10247

My Mafia Boss পর্ব-১
Writer:Tabassum Riana

রুহী!!!রুহী!!! একাধারে ডেকেই চলছেন মিস জেনিফার।কোনো সাড়া শব্দ নেই রুহীর।মরে গেল নাকি এ মেয়ে?সামনের দরজাটা শব্দ করে খুললেন জেনিফার জোরে রুহীর নাম ধরে ডাকলেন রুহী!!!!
ঘুমিয়ে আছে রুহী।খুব ক্লান্ত আজ।বাথরুম ধোয়ার কাজটা আজ ওকেই করতে হয়েছে।মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলো রুহী।জন্মের পরপরই মা মারা গিয়েছিলেন।বাবা আরেকটা বিয়ে করে চলে গেছেন।মামা মামীর কাছেই বড় হয়েছে রুহী।মামী একেবারেই সহ্য করতে পারেননা ওকে।মামা আদর করলে ও মামীর সামনে প্রকাশ করতে পারতেননা।লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো রুহী।একদিন মামীর কথায় অতিষ্ঠ হয়ে এই এতিমখানায় মামা দিয়ে গেছেন ওকে।ঐদিন মামার পা ধরে খুব কেঁদেছিলো রুহী।মামা নিজেই নিরুপায় ছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে রেখে যান রুহীকে এতিম খানায়।প্রায় দেখতে আসতেন সেটাও মামীর সহ্য হতোনা।তাই কমিয়ে দিয়েছেন আসা।জেনিফার এবার রুহীকে ধাক্কা দিলো কি মহারানী এতো করে ডাকছি উঠার নাম নেই এখনো।

চোখ খুলল রুহী।খয়েরী বর্ন চোখ গুলো দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে মিস জেনিফারের দিকে।চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে যেন এখুনি পানির বন্যা বের হবে।উঠে বসলো রুহী,কিছু কি হয়েছে?আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো মিস জেনিফারকে।তোর মামা এসেছে বলে দম নিলেন জেনিফার।রুহীর চোখে মুখে হাসির ঝলক ফুঁটে উঠলো সত্যি???হ্যা, প্যাকিং কর তোকে নিয়ে যাবে।যাওয়ার কথা শুনে হাসি চলে গিয়ে একরাশ আতংক ভর করলো রুহীর মিষ্টি চেহারায়।কি হলো যা প্যাকিং কর অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করে আছেন তোর জন্য বিরক্তি বলল জেনিফার।যাবোনা আমি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল রুহী।সেটা তোর মামাকে গিয়ে বলনা।আমাকে শুনাচ্ছিস কেন বলেই ভেংচি কাঁটলেন জেনিফার।রুহী এবার কিছু না বলেই উঠে পড়লো।কই মামা?আমার কেবিনে অপেক্ষা করছেন যা দেখা করে আয়।হুম মাথা নিচু করে বেরিয় গেল রুহী গন্তব্য মিস জেনিফারের কেবিন।কেবিনে এসে মামা কে দেখে ভীষন অভিমান হয় রুহীর।গলা ধরে আসতে চায়।প্রায় ৬মাস পর দেখতে আসছেন মামা।দরজার কাছে দাড়িয়ে অশ্রুসংবরন করার চেষ্টা করছে রুহী।

আফজাল হোসেন বলে উঠলেন কিরে মা কথা বলবিনা?অভিমান করেছিস মামার সাথে?অভিমান করারই তো কথা কতদিন পর এলাম।ভালো আছিস তুই?চোখের পানি থামাতে পারলো না রুহী কেঁদেই দিলো ।কথা নাই আপনার সাথে।আফজাল হোসেন উঠে রুহীকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।কাঁদিসনা মা মা এলাম তো।আর দেরি হবেনা।এবার দেরী হয়েছে কেন জানিস?মামার থেকে সরে এলো রুহী কেন?অবন্তীর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আপির বিয়ে ঠিক হয়েছে রুহী বড় বড় চোখ করে ফেলল।হ্যারে ঠিক হয়েছে তাইতো আজ নিতে এলাম তোকে।ব্যাগ গুছাসনি?যা মা জলদি গুছিয়ে নেয়।মামাকে না করতে পারলোনা রুহী রুমের দিকে এগোলো।

মা মা!!!!বাবা কই?অবন্তী জিজ্ঞেস করলো আনিলা ইসলামকে।কি করবি বাপ দিয়া?নিজের মাইয়ার তো চিন্তাই নাই যতো চিন্তা ঐ পোড়াকপাইল্লা রুহীর লাইগা।মা তোমার সমস্যা কি রুহীকে নিয়ে?ওর সাথে কেন এমন করো?বাপের মাইয়া বাপের মতোই হইছোস।ঐ লুইচ্চা ব্যাডা বিয়া কইরা গেছেগা আর আপদটারে কান্ধে ঝুলাইয়া দিছে।তুই তো আমার মাইয়া আমার কষ্টটাতো তোর বুঝার দরকার।তোমার সাথে কথা বলে লাভ নাই গেলাম আমি পাকঘরের সামনে থেকে চলে এলো অবন্তী।আনিলা ইসলাম বিড়বিড় করছেন এখনো।এসব একটু ও ভালো লাগেনা অবন্তীর।রুহীকে ওর ভীষন পছন্দ।মেয়েটা ভীষন লক্ষী আর সাংসারিক।ওকে অপছন্দ করার কারন আছে বলে মনে হয়না অবন্তীর।চুল গুলো কে উঁচু করে ঝুঁটি করে নেয় অবন্তী।নুহাশের সাথে ঘুরতে যাবে আজ।নুহাশ ওর ফিয়্যান্সে।৫বছর প্রেম মেনে নিয়েছে সবাই।এতদিন অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে ভাবতেই বুকটা ভরে গেল অবন্তীর।গলায় উড়না জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অবন্তী।ব্যাগ কাঁধে চেপে দরজা খুলতেই রুহী অবন্তীকে জড়িয়ে ধরলো।কেমন আছো আপু?আরে রুহী ভালো আছি।কেমন আছিস তুই?তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগছে।আমার ও।ভিতরে আয়না।বাবা কই?
মামা কই জানি গেল আমাকে দিয়ে।সমস্যা নাই। হুম ভিতরে ঢুকতেই আনিলা ইসলাম তেড়ে এলো রুহীর দিকে কি মুখ পুড়া কাল সাপিনী আসছেন?এখন তো আপনার খাতির দারি করবে আপনার মামা আর আপনার বোন।মা কি সমস্যা তোমার? মাত্রই তো এলো।খাতির দারি করবোনা কেন?অবশ্যই খাতির দারি করবো আমার বোন ও।রুহীর হাত ধরলো চল অবন্তী।রুহীর চোখ জোড়া ভিজে গেছে।রুহীকে রুমে নিয়ে এলো অবন্তী দরজা আটকিয়ে খাটে বসালো রুহীকে।অবন্তীর প্রচন্ড রাগ লাগছে নিজের মায়ের ওপর।রুহীর দিকে চোখ পড়তেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো অবন্তীর। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে রুহী।রুহীর পাশে এসে বসলো অবন্তী কাঁদিস না প্লিজ রুহী জানিস তো মা এমনই।সমস্যা নেই আপু মামী ঠিক বলেছেন।আমি মা মরা মেয়ে অলক্ষিনী। ওনি মুরব্বি খারাপ কিছু তো বলেননি।এখন এসব কথায় কষ্ট পাইনা সয়ে গেছে।আর কিছু বলতে পারেনা অবন্তী মন খারাপ হয়ে যায় ভীষন।হঠাৎ অবন্তীর ফোন বেজে উঠে। নুহাশ কল করছে।ফোন রিসিভ করে কানে দিলো অবন্তী।হ্যালো নুহাশ!কি হলো কই তুমি?আরে রুহী আসছে। কাল মিট করি আমরা?আজ পারছিনা।ওকে মন খারাপ করে বলল নুহাশ।প্লিজ রাগ করোনা বাবু কাল আসতে ললিপপ নিয়ে আসবো তোমার জন্য হি হি হি হেসে দিলো অবন্তী।রুহী ও হাসছে অবন্তীর কথা শুনে, বোনটা পারে ও।না জান তুমি আসলেই চলবে ললিপপ লাগবেনা।হুম।কই তুমি অবন্তী প্রশ্ন করলো।এইতো গাড়িতে বসলাম তুমি আসবেনা তাই আর থেকে কি লাভ?প্লিজ নুহাশ রাগ করোনা।আরে না রাগ করবো কেন?রুহীকে সময় দাও।কয়দিন পরতো পুরোপুরিভাবে আমার হয়ে যাবা।তখন পুরোটা সময় আমার।হুম বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা রাখছি রুহী কে কিছু দেই অনেক্ষন ধরে বসে আছে কিছু খায়নি।হুম দাও বায়।বায়।ফোন কেঁটে খাটের ওপর রাখলো অবন্তী। রুহীর দিকে তাকিয়ে বলল যা ফ্রেশ হয়ে নেয়।হুম আপু খাট থেকে নেমে লাগেজের দিকে এগোলো রুহী।আকাশী বর্নের স্যালোয়ার কামিজটি বের করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

পাকঘরে এলো অবন্তী রুহীর খাবার রেডি করতে।মা রুমে আছেন তাই ভালো দেখে মাছের একটু টুকরো ডাল আর মিষ্টি কুমড়া ভাজি রুমে নিয়ে এলো অবন্তী। রুহী বের হয়নি এখনো। খাটে বসে ফোন টিপায় মন দিলো অবন্তী।আফজাল হোসেন ঘরে ঢুকতেই আনিলা চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।কি???বোন মাইয়্যারে আবার আমার ঘাড়ে তুলছোস?শান্তি দিবিনা একটু ও তাইনা?মায়ের লগে এডাও মরলো না ক্যান?খুব ক্লান্ত লাগছিলো আফজাল হোসেনের। স্ত্রীর এসব কথা বার্তা সহ্য হচ্ছেনা তার।তারওপর বোনকে নিয়ে কথা বলছে। নরম মানুষ আফজাল হোসেন ঝগড়া পছন্দ করেননা।
আরে আনিলা আসার সাথে সাথে এমন করছো কেন?সপ্তাখানিকেরই তো ব্যাপার অবন্তীর বিয়েটা হয়ে যাক দিয়ে আসবো।আনিলা বেগম কিছু না বলে খোপা করে বাথরুমে ঢুকলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে